হাইকোর্টের রুল-পাবলিক পরীক্ষার সময় হরতাল কেন অবৈধ নয়

পাবলিক পরীক্ষা চলাকালে হরতাল দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পাবলিক পরীক্ষা চলাকালে হরতাল দেওয়া থেকে বিরত থাকতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তারও কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে।


বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ রুল জারি করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মো. ইউনুস আলী আকন্দের করা এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি করা হয়। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, শিক্ষাসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে এ রুলের ওপর শুনানিতে আইনি পরামর্শ দিয়ে আদালতকে সহযোগিতা করতে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ড. এম জহির, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আবদুল মতিন খসরু, ব্যারিস্টার কামালুল আলমসহ ১৫ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ইউনূস আলী আকন্দ গত ২৬ এপ্রিল রিট আবেদনটি দাখিল করেন। সেদিনই রিট আবেদনটি গ্রহণ করে ২৯ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু হরতালের কারণে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চসহ কোনো হাইকোর্ট বেঞ্চ না বসায় সেদিন শুনানি হয়নি। তবে আদালত বসার প্রথম কার্যদিবসেই গতকাল দুপুরে শুনানি হয়। রিট আবেদনকারী ইউনূস আলী আকন্দ নিজে শুনানি করেন। তিনি বলেন, হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে পরীক্ষা দেওয়াও শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার। তাদের এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। পাবলিক পরীক্ষা চলাকালে এভাবে হরতাল আহ্বান সংবিধানের ১৫, ১৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন।
এরপর আদালত অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বিচারপতি মনসুরুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এ এম আমিন উদ্দিন ও শ ম রেজাউল করিমের মতামত জানতে চান। সরকার সমর্থক এ পাঁচ আইনজীবীর মধ্যে শ ম রেজাউল করিম ছাড়া সবাই রুল জারির পক্ষে মত দেন।
ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, হরতাল সাংবিধানিক অধিকার। হরতাল দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার বলে হাইকোর্টের রায় আছে। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়া মৌলিক অধিকার। লাখ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। তাই পরীক্ষার সময় যাতে হরতাল দেওয়া না হয়, সে জন্য আদালত পর্যবেক্ষণ দিতে পারেন।
মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, হরতাল দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষার সময় হরতাল দিলে তাতে পরীক্ষা ব্যাহত হয়। পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অনেক ক্ষতি হয়। এটা জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় ক্ষতিও বটে। জাতীয় ক্ষতির কথা বিবেচনা করে পরীক্ষার সময় যাতে হরতাল না দেওয়া হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে বলা যেতে পারে।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, আশির দশকে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ডাকে চিকিৎসকরা ধর্মঘটে যান। এরপর এ নিয়ে রিট হয়। আদালত সংশ্লিষ্ট পক্ষকে ডাকার পর চিকিৎসকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। তিনি বলেন, সমপ্রতি হিন্দু সমপ্রদায়ের এক পূজার দিনে বিরোধী দল হরতাল দেয়। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতির কারণে সেদিন হরতাল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, হরতাল নিয়ে এর আগেও আদালতের রায় আছে। তাই আদালত সংশ্লিষ্ট পক্ষকে ডাকতে পারেন।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, 'এর আগে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চের রায় আছে। সেখানে হরতালকে গণতান্ত্রিক অধিকার বলা হয়েছে।' তিনি আরো বলেন, 'হরতালে শক্তি প্রয়োগ, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধমূলক কাজ হলে সে জন্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। তাই আপনি একটি পর্যবেক্ষণ নিয়ে রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিতে পারেন।'

No comments

Powered by Blogger.