চিনির বাজার লাগামহীনঃ সরকার নির্বিকার by নোমান চৌধুরী
দেশে চিনির দাম লাগামহীন হয়ে উঠেছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৩৮ টাকা থেকে বর্তমানে ৫৮ টাকায় উঠেছে। মূল্য বৃদ্ধির পারদ যে এখানেই থেমে যাবে এমনটি বলা খুবই কঠিন। আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা আমদানিকারক কারও পক্ষেই এমনটি বলা সম্ভব নয়।
কারণ একটাই। আন্তর্জাতিক বাজার এমনকি চিনি উত্পাদনকারী দেশের বাজারেই চিনির দাম বেড়ে গেছে। ফলে চিনি আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের বাজারে সঙ্গত কারণেই চিনির দাম বাড়বে। চিনিতে আমদানিনির্ভর না হয়ে আমরা স্বনির্ভর হলে এখানে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব পড়ত না। স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্য তো দূরের কথা, আমরা স্বনির্ভরতার স্বপ্নও দেখি না। যদিও আমাদের নীতি-নির্ধারকদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে আমাদের অনেক স্বপ্ন দেখান। আর এতেই আমরা পুলক বোধ করি। কার্যত আমরা চলেছি লক্ষ্যহীনভাবে। চাল নেই, ভারত থেকে আমদানি কর; আলু নেই, ভারত থেকে আমদনি কর; ডিম নেই, ভারত থেকে আমদানি কর। আরও কত কী! মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখন যে চিনি সঙ্কট বিরাজ করছে তা মোকাবিলায় ভারত থেকে চিনি আমদানির কথা বলা হবে না। কারণ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি উত্পাদনকারী দেশ হলেও খোদ ভারতের খুচরা বাজারে আমাদের বাজার অপেক্ষা চিনির দাম চড়া। বর্তমানে সেখানে প্রতি কেজি চিনির দাম ৪৮ রুপি। টাকা অপেক্ষা ভারতীয় রুপির মূল্যমান বেশি। আমাদের স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেই। কেবল উপস্থিত সঙ্কট মোকাবিলার প্রয়াস। বর্তমান চিনি সঙ্কট কিংবা দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সঙ্কট আরও ঘনীভূত না হওয়া পর্যন্ত হয়ত দেখাও যাবে না। সরকার কি ভর্তুকি দিয়ে চিনির দাম স্থিতিশীল রাখবে? এ ধরনের উদ্যোগের অনিবার্য পরিণতি হবে বাংলাদেশ থেকে চিনি ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া। বিকল্প হতে পারে রেশনিং। ডিলারের মাধ্যমে চিনি রেশনিং চালু হলে এর সুফল যে সাধারণ ক্রেতারা পাবেন, এমন ভরসাও ক্ষীণ। এ অবস্থায় সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তা দেখতে সম্ভবত সঙ্কট ঘনীভূত হওয়া পর্যন্তই অপেক্ষা করতে হবে। সাধারণ ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষায় আগেই ব্যবস্থা নেয়া হলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা ছিল না। যদিও ভারত ও পাকিস্তান এ ব্যাপারে বহু আগেই পদক্ষেপ নিয়েছে।
সুযোগ হারাচ্ছি হঠকারিতায়
চিনি কিংবা কোনো কৃষি পণ্যের জন্য আমাদের হা-হুতাশের কোনো কারণ ছিল না। আমরা অনায়াসে চিনি উত্পাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারতাম। দূরদৃষ্টির অভাব ও হঠকারি নীতির ফলে আমাদের চিনি শিল্প বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। বিদেশ থেকে চড়া মূল্যে চিনি সংগ্রহ করে দাম নাগালের মধ্যে রাখতে ভর্তুকি দিতে আপত্তি নেই, আপত্তি কেবল আখ চাষীদের বর্ধিত মূল্য দিতে। আখচাষীরা যদি তাদের আখের ন্যায্য মূল্য পেতেন, তাহলে দেশের চিনি শিল্পের ভিন্ন চিত্র দেখা যেত। চিনি মিলগুলো প্রতি মণ ৬৬ টাকা মূল্যে চাষীদের কাছ থেকে আখ সংগ্রহ করে। আখ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত উন্নতজাতের আখ চাষ করা হলেও প্রতি একরে ৫ থেকে ৬০০ মনের বেশি আখ উত্পন্ন হয় না। আখের ফলন সারা বছরে একটাই। কৃষকরা আখের পরিবর্তে জমিভেদে ধান, আলু ও অন্যান্য যেকোনো রবিশস্য আবাদ করলে তাদের দ্বিগুণ, তিনগুণ লাভ হয়। অন্য ফসল বছরে ২-৩টি ফলাতে পারেন। ফলে আখ চাষে তাদের উত্সাহ নেই। আখ চাষের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে অন্য ফসল লাগানো হলেও সাথী ফসল থেকে কৃষকদের খুব একটা আয় হয় না। ফলে দামের দিক থেকে উত্সাহ কিংবা আকর্ষণ না থাকায় আখ চাষের পরিমাণ দিন দিন কমছে। এ ছাড়া গুড় ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে অধিক মূল্যে আখ ক্রয় করছে। ফলে আমাদের সুগার মিল কর্পোরেশনের মিলগুলো গুড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এতে চিনি উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা যাই থাক না কেন, তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। বাংলাদেশ আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আমাদের দেশে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন আখ উত্পাদন হয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩৭ লাখ টন চলে যায় গুড় ব্যবসায়ীদের হাতে। প্রায় ২৩ লাখ টন চিনি উত্পাদনে ব্যবহৃত হয়। সরকার আখের সংগ্রহ মূল্য আকর্ষণীয় করে নির্ধারণ করলে আখচাষী ও ব্যবসায়ীরা উভয় মিলেই আখ নিয়ে যেতেন চিনি মিলে। কিন্তু কার্যত তা হচ্ছে না। এখন আখ মাড়াইয়ের ভরা মৌসুম (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) চলছে। অথচ আখের অভাবে একের পর এক মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মৌসুমের বাকি সময়টুকু যে মিলগুলো চলবে এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফলে এবারও উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫২৫ টন। গত বছর উত্পাদন হয়েছিল ৮০ হাজার টন, যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে। আমাদের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১২ লাখ টন। এই বিশাল পরিমাণ চিনি আমদানি করতে হবে বিদেশের বাজার থেকে। আখের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে, দেশে যে ১৭টি চিনি কল রয়েছে সেগুলো থেকে যথেষ্ট পরিমাণে চিনি পাওয়ার সুযোগ ছিল। ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ যুগে ৪টি, ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান জমানায় ১০টি ও বাংলাদেশ আমলে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩টি চিনি কল সরকারি উদ্যোগে স্থাপন করা হয়। প্রধানত আখের অভাবে লোকসানের তিলক নিয়ে দুটি চিনি কল প্রায় স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বরাবরই অদৃশ্য কারসাজিতে আখচাষীদের উত্সাহজনক মূল্য প্রদান থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এক্ষনে বিশাল পরিমাণ চিনি আমদানি করে এর মাশুল গুনতে হবে। বিশ্ব বাজারে চিনির ঘাটতি থাকায় আমদানিও সহজ হবে না। যদিও দেশে আখ গবেষণা জোরালো ও সফলভাবে চলছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে আখ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) ছাড়াও গবেষণায় রয়েছে গোটা দশেক আঞ্চলিক কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র। দেশের আখ গবেষণায় আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের যথেষ্ট সফলতা রয়েছে। এরই মধ্যে সফলতার জন্য বিএসআরআই কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় পদকও পেয়েছে। এর পরও আখ চাষ বাড়ছে না শুধু মিলগুলোর আখ সংগ্রহের নিম্নমূল্যের কারণে। এই অদূরদর্শী সংগ্রহ নীতি অব্যাহত থাকলে কেবল চিনির আমদানির পরিমাণই বাড়বে। আর আমদানির উত্সও সীমিত।
চিনির দাম ২৮ বছরে সর্বোচ্চ
বিশ্ববাজারে চিনির পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানায়, বিশ্ববাজারে চিনির দাম এখন গত ২৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরপর দুই বছর উত্পাদন আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় সরবরাহ ও চাহিদায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে ব্যাপক। প্রাকৃতিক কারণে বিশ্বের শীর্ষ উত্পাদনকারী দেশ ব্রাজিল ও ভারতের উত্পাদন ব্যাহত হয়েছে। ব্রাজিলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ গুণ অতিবৃষ্টি হয়েছে। ভারত পড়ে অনাবৃষ্টির কবলে। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২০০৯-২০১০ সালে চীনে প্রায় ৩ ভাগ উত্পাদন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে রাষ্ট্রীয় মজুদ থেকে চীন ৫ লাখ টন চিনি তাদের বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। চিনি উত্পাদনকারী দেশ রাশিয়ার অবস্থাও ভালো নেই। তাদের বিপুল পরিমাণ চিনি আমদানি করতে হবে। ২০০৯-১০ সালে বিশ্বে চিনির চাহিদা হচ্ছে ১৬ কোটি ৭১ লাখ টন। উত্পাদন হচ্ছে ১৫ কোটি ৯৯ লাখ টন। ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৭২ লাখ টন। বিশ্ববাজারে চিনির ঘাটতিকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমদানির ওপর নির্ভরতা কাটাতে ইন্দোনেশিয়া ৩ লাখ হেক্টরে আখ চাষ বাড়াতে পরিকল্পনা নিচ্ছে। এটা সম্পন্ন করবে আগামী ৫ বছরের মধ্যে। থাইল্যান্ড চিনি উত্পাদন ক্ষমতা (মিলের ক্ষমতা) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
লেখক : সাংবাদিক
E-mail : dailyprobhakar@yahoo.com
সুযোগ হারাচ্ছি হঠকারিতায়
চিনি কিংবা কোনো কৃষি পণ্যের জন্য আমাদের হা-হুতাশের কোনো কারণ ছিল না। আমরা অনায়াসে চিনি উত্পাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারতাম। দূরদৃষ্টির অভাব ও হঠকারি নীতির ফলে আমাদের চিনি শিল্প বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। বিদেশ থেকে চড়া মূল্যে চিনি সংগ্রহ করে দাম নাগালের মধ্যে রাখতে ভর্তুকি দিতে আপত্তি নেই, আপত্তি কেবল আখ চাষীদের বর্ধিত মূল্য দিতে। আখচাষীরা যদি তাদের আখের ন্যায্য মূল্য পেতেন, তাহলে দেশের চিনি শিল্পের ভিন্ন চিত্র দেখা যেত। চিনি মিলগুলো প্রতি মণ ৬৬ টাকা মূল্যে চাষীদের কাছ থেকে আখ সংগ্রহ করে। আখ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত উন্নতজাতের আখ চাষ করা হলেও প্রতি একরে ৫ থেকে ৬০০ মনের বেশি আখ উত্পন্ন হয় না। আখের ফলন সারা বছরে একটাই। কৃষকরা আখের পরিবর্তে জমিভেদে ধান, আলু ও অন্যান্য যেকোনো রবিশস্য আবাদ করলে তাদের দ্বিগুণ, তিনগুণ লাভ হয়। অন্য ফসল বছরে ২-৩টি ফলাতে পারেন। ফলে আখ চাষে তাদের উত্সাহ নেই। আখ চাষের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে অন্য ফসল লাগানো হলেও সাথী ফসল থেকে কৃষকদের খুব একটা আয় হয় না। ফলে দামের দিক থেকে উত্সাহ কিংবা আকর্ষণ না থাকায় আখ চাষের পরিমাণ দিন দিন কমছে। এ ছাড়া গুড় ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে অধিক মূল্যে আখ ক্রয় করছে। ফলে আমাদের সুগার মিল কর্পোরেশনের মিলগুলো গুড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এতে চিনি উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা যাই থাক না কেন, তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। বাংলাদেশ আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আমাদের দেশে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন আখ উত্পাদন হয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩৭ লাখ টন চলে যায় গুড় ব্যবসায়ীদের হাতে। প্রায় ২৩ লাখ টন চিনি উত্পাদনে ব্যবহৃত হয়। সরকার আখের সংগ্রহ মূল্য আকর্ষণীয় করে নির্ধারণ করলে আখচাষী ও ব্যবসায়ীরা উভয় মিলেই আখ নিয়ে যেতেন চিনি মিলে। কিন্তু কার্যত তা হচ্ছে না। এখন আখ মাড়াইয়ের ভরা মৌসুম (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) চলছে। অথচ আখের অভাবে একের পর এক মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মৌসুমের বাকি সময়টুকু যে মিলগুলো চলবে এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফলে এবারও উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫২৫ টন। গত বছর উত্পাদন হয়েছিল ৮০ হাজার টন, যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে। আমাদের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১২ লাখ টন। এই বিশাল পরিমাণ চিনি আমদানি করতে হবে বিদেশের বাজার থেকে। আখের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে, দেশে যে ১৭টি চিনি কল রয়েছে সেগুলো থেকে যথেষ্ট পরিমাণে চিনি পাওয়ার সুযোগ ছিল। ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ যুগে ৪টি, ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান জমানায় ১০টি ও বাংলাদেশ আমলে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩টি চিনি কল সরকারি উদ্যোগে স্থাপন করা হয়। প্রধানত আখের অভাবে লোকসানের তিলক নিয়ে দুটি চিনি কল প্রায় স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বরাবরই অদৃশ্য কারসাজিতে আখচাষীদের উত্সাহজনক মূল্য প্রদান থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এক্ষনে বিশাল পরিমাণ চিনি আমদানি করে এর মাশুল গুনতে হবে। বিশ্ব বাজারে চিনির ঘাটতি থাকায় আমদানিও সহজ হবে না। যদিও দেশে আখ গবেষণা জোরালো ও সফলভাবে চলছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে আখ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) ছাড়াও গবেষণায় রয়েছে গোটা দশেক আঞ্চলিক কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র। দেশের আখ গবেষণায় আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের যথেষ্ট সফলতা রয়েছে। এরই মধ্যে সফলতার জন্য বিএসআরআই কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় পদকও পেয়েছে। এর পরও আখ চাষ বাড়ছে না শুধু মিলগুলোর আখ সংগ্রহের নিম্নমূল্যের কারণে। এই অদূরদর্শী সংগ্রহ নীতি অব্যাহত থাকলে কেবল চিনির আমদানির পরিমাণই বাড়বে। আর আমদানির উত্সও সীমিত।
চিনির দাম ২৮ বছরে সর্বোচ্চ
বিশ্ববাজারে চিনির পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানায়, বিশ্ববাজারে চিনির দাম এখন গত ২৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরপর দুই বছর উত্পাদন আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় সরবরাহ ও চাহিদায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে ব্যাপক। প্রাকৃতিক কারণে বিশ্বের শীর্ষ উত্পাদনকারী দেশ ব্রাজিল ও ভারতের উত্পাদন ব্যাহত হয়েছে। ব্রাজিলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ গুণ অতিবৃষ্টি হয়েছে। ভারত পড়ে অনাবৃষ্টির কবলে। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২০০৯-২০১০ সালে চীনে প্রায় ৩ ভাগ উত্পাদন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে রাষ্ট্রীয় মজুদ থেকে চীন ৫ লাখ টন চিনি তাদের বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। চিনি উত্পাদনকারী দেশ রাশিয়ার অবস্থাও ভালো নেই। তাদের বিপুল পরিমাণ চিনি আমদানি করতে হবে। ২০০৯-১০ সালে বিশ্বে চিনির চাহিদা হচ্ছে ১৬ কোটি ৭১ লাখ টন। উত্পাদন হচ্ছে ১৫ কোটি ৯৯ লাখ টন। ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৭২ লাখ টন। বিশ্ববাজারে চিনির ঘাটতিকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমদানির ওপর নির্ভরতা কাটাতে ইন্দোনেশিয়া ৩ লাখ হেক্টরে আখ চাষ বাড়াতে পরিকল্পনা নিচ্ছে। এটা সম্পন্ন করবে আগামী ৫ বছরের মধ্যে। থাইল্যান্ড চিনি উত্পাদন ক্ষমতা (মিলের ক্ষমতা) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
লেখক : সাংবাদিক
E-mail : dailyprobhakar@yahoo.com
No comments