ট্রানজিট থেকে আয়ের কল্পিত পরিমাণ এবং অন্ধের হাতি দর্শন by এম. এ. কামাল এফসিএ
চট্টগ্রাম বন্দর অন্য দেশকে ব্যবহার করতে দেয়া হলে বছরে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সার্ভিস চার্জ অর্জিত হবে বলে পরিকল্পনা কমিশনের উপদেষ্টা ড. এএম রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন (আমাদের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১০)। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশের বন্দর এবং রেল ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা হলে বছরে ট্রানজিটের মাধ্যমে ৭০ হাজার কোটি টাকা অর্জন করা সম্ভব। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ট্রানজিট থেকে বাংলাদেশ বছরে ৭ হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারবে (দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। এসব উক্তি কি অন্ধ লোকের হাতীর বর্ণনার সমতুল্য নয়? বর্ণিত অভিমতগুলো সরকার কর্তৃক নিয়োজিত একটি জাপানি প্রতিষ্ঠান গভীর (?) সমুদ্রবন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়ে যে প্রতিবেদন পেশ করেছে তা থেকে ভিন্ন।
কাল্পনিক অংকের ডলার আয়ের আশায় বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরকে ভারত কর্তৃক ব্যবহারের জন্য প্রদান করায় তোলপাড় চলছে। রটারডম বন্দর ও সিঙ্গাপুর বন্দর একাধিক দেশ ব্যবহার করে থাকে—একথা বলে চট্টগ্রাম বন্দরকেও অনুরূপ ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হোক মর্মে একশ্রেণীর লোক মত প্রকাশ করছেন। ইউরোপের সার্বজনীন স্বার্থ দেখার জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আছে। ওই ইউনিয়নের দেশগুলো নদীমাতৃক দেশ নয়। ওই স্থানে স্থলপথে যাতায়াত অনেক সহজ, যা বাংলাদেশে নয়। রটারডম বন্দরকে ভৌগোলিক কারণে ইউরোপের দেশগুলো তাদের প্রবেশদ্বার করেছে। আর সিঙ্গাপুর ব্রিটিশ শাসকের সৃষ্টি। সমুদ্র পরিবহনের সুবিধাই সিঙ্গাপুরের একমাত্র অর্থনৈতিক সম্পদ। এদের বাংলাদেশের মতো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে পনেরো কোটি লোকের পদভার বহন করতে হয় না এবং এরা বাংলাদেশের মতো বছরে এক কোটি চল্লিশ লাখ টন খাদ্য উত্পাদন করে না। তবে বাংলাদেশ এমন সব আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে যা সিঙ্গাপুর করে না। অতএব জনসাধারণকে বোকা বানানোর জন্য এই দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করা হয়। আরেকটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য, যা হচ্ছে আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। প্রায় তিরিশ বছর আগে মারা যাওয়া এক শহীদ রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে দেশের সংসদে যেসব অশোভনীয় কথাবার্তা বলা হচ্ছে—শুধু পূর্বোক্ত দেশ নয়, কোনো সভ্য দেশে এর নজির নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন বিশ্বের কোথাও নেই, কিন্তু বাংলাদেশে তা প্রবর্তিত হয়েছে। অতএব সিঙ্গাপুর ও রটারডমের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের তুলনা হয় না।
একটি বিশেষ বিষয়ে ডক্টরেটধারী কেউ কেউ দেশের অর্থনীতি বুঝে ফেলার ঘুড়ি শূন্যে উড়িয়ে থাকেন। তাদের সৌভাগ্য যে তাদের বক্তব্যের জন্য কারও কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। কাজ করে ফলাফল প্রদর্শনের জন্য তাদের কোনো কর্মক্ষেত্র এবং দায়িত্ব নেই। সভায় এবং মিডিয়ায় তারা যা বলেন তা বাস্তবে পাওয়া না গেলে তার জন্য তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। চট্টগ্রাম বন্দরে এর প্রধান হিসেবে কাজ করার সময় ঢাকাতে অনুষ্ঠিতব্য সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত নিয়মটির এক সভায় যোগদানের জন্য নির্ধারিত দিনের একদিন পর ঢাকায় গমনের কারণ ব্যাখ্যা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দিতে হয়েছিল আমাকে। ব্যবস্থা ছিল যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে আমি ঢাকায় গেলে সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ড. রহমত উল্লার পঠিত শাস্ত্রে আমার ডক্টরেট ডিগ্রি নেই। কিন্তু এতে আমি পাঁচ বছর লেখাপড়া করেছি। আগে বর্ণিত কোটি কোটি টাকা কবে অর্জিত হবে তা বক্তারা বলেননি। অন্তহীন শূন্যে ছুড়ে দেয়া হয়েছে অনুমান করার জন্য। চট্টগ্রাম বন্দর ২০০৮-০৯ সালে ৩.৩৬ লাখ টিইউ কনটেইনার এবং ১১.০৮ লাখ মেট্রিক টন ব্রেক বাল্ক কার্গো হ্যান্ডলিং করে ১১২৭ কোটি টাকা আয় করেছে।
চট্টগাম বন্দরের ২০০৮-০৯ সালের ১,১২৭ কোটি টাকা আয়কে আগে বর্ণিত ৩,৫০০, ৭,০০০ এবং ৭০,০০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে যথাক্রমে ২,৩৭৩, ৫,৮৭৩ ও ৬৮,৮৭৩ কোটি টাকার আয় সংযোজন করতে হবে। বার্ষিক ৮ ভাগ চক্রবৃদ্ধি হারে (৬ ভাগ জিডিপি + ২ ভাগ বন্দরের সেবার মূল্য হার) উপরোক্ত সংযোজনী অর্জন করতে লাগবে যথাক্রমে ১২, ২০ এবং ৫০ বছর। বন্দরের ফটক খুলে দিলে বাঁধভাঙা পানির মতো ওই অর্থ হু হু করে ঢুকে পড়বে না। এটা জানা দরকার, ওই বন্দরকে বর্তমান অবস্থায় আসতে সময় লেগেছে ১২০ বছর। ১৯৯০ সালে বন্দরটি এর শতবার্ষিকী উদযাপন করেছিল।
চট্টগ্রাম বন্দরে এ পর্যন্ত যত উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদিত হয়েছে, তা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য হয়েছে। বাইরের ব্যবহারকারীকে পাওয়া যাবে এ আশায় হয়নি। যদি বাইরের ব্যবহারকারীদের ব্যবহার পরিকল্পনায় থাকত, তাহলে বন্দরের স্থাপনাদির এবং যন্ত্রপাতিগুলোর পরিমাণ ও ধরন অন্যভাবে নির্ধারিত হতো। সবচেয়ে বেশি নির্ধারিত হতো বন্দরের বিনিয়োগে অংশীদার এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। কিন্তু তা হয়নি। হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
ভারতকে বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার সুযোগদান প্রস্তাবিত গভীর (?) সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। ৮টি জাহাজের পণ্য একযোগে খালাস ও ভর্তি করার জন্য ২০১৫ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জেটি স্থাপনের একটি পরিকল্পনা সমুদ্রবন্দরটির প্রকল্পে রয়েছে। এর জন্য ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে যত কনটেইনারজাত এবং সাধারণ পণ্য ওঠানো-নামানো হচ্ছে তার পরিমাণ এক নেত্রীর মতে ক্ষমতার ৩০ ভাগ, অন্য নেত্রীর মতে ক্ষমতার ৬০ ভাগ। জাপানি প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক পেশকৃত গভীর (?) সমুদ্রবন্দরের ওপর সমীক্ষা প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, ২০০৮-০৯ সালে যত পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডলিং করা হয়েছে, তা ওই বন্দরের ক্ষমতার ৬৫ ভাগ। কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর প্রধান বলেছেন, ওই বন্দরে অব্যবহৃত ক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের যেসব প্রদেশ বাংলাদেশের বন্দরকে ব্যবহার করবে বলে আশা করা হচ্ছে, তাদের এত পরিমাণ সমুদ্রজাত পণ্য নেই এবং অদূর ভবিষ্যতেও হবে না; যার ফলে অব্যবহৃত ক্ষমতার বাকি ৩৫ ভাগ ব্যবহৃত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ গত ৩৫ বছরে তার বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১৫০ থেকে ৬৫০ ডলারে উন্নীত করতে সমর্থ হয়েছে । অতএব বন্দরের বাকি ৩৫ ভাগ ক্ষমতা কবে ব্যবহার করা যাবে তা অনুমান করা যায়। নিশ্চয়ই আগামী ২০ বছরের মধ্যে নয়। এসব কারণে আনুষঙ্গিক বিষয় হিসেবে বলা যায়, ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হলে ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরের এক অংশ নির্মাণ অলাভজনক হবে। ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনাটি টিকিয়ে রাখতে হলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে অন্য কিছু চিন্তা করতে হবে।
বন্দরে এবং বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে বড় সমস্যা বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় রেল এবং গাড়ি চলাচল পথের সীমাবদ্ধতা। চট্টগ্রাম বন্দর চট্টগ্রাম শহরের অংশবিশেষ বিধায় এর প্রয়োজনীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি সম্ভব নয়। ড. রহমতউল্লাহ কর্তৃক কথিত বন্দর এবং রেল পদ্ধতির সংস্কার সাধনের বিষয়টি গভীর (?) সমুদ্রবন্দর স্থাপন পরিকল্পনার সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা দেখতে হবে।
গত ২০-২৫ বছরব্যাপী চট্টগ্রাম বন্দরে যে সুযোগ-সুবিধা এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি সাধন করা হয়েছে তা অনেক চিন্তা-ভাবনা করে করা হয়েছে। হঠাত্ করে কিছু করা হয়নি। অব্যবহৃত অংশটুকু ভবিষ্যতে ব্যবহৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য পরিবাহিত পণ্য দিয়ে। একটি লক্ষণীয় বিষয় এই যে, একটি বিষয়ে দুজন ডক্টরেটধারী, যারা বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত হয়ে বন্দরের উন্নতি সাধনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যস্ত আছেন, তাদের ধ্যান-ধারণা এবং বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। একজন ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে গভীর (?) সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিচ্ছেন। অন্যজন বলছেন, এখন যা আছে এতে কিছু পরিবর্ধন ও পরিবর্তন করে অতিরিক্ত ৩,৫০০ কোটি টাকা অর্জন করা সম্ভব। ওই পরিমাণ আয় বর্তমান আয়ের তিনগুণ। দ্বিতীয়জনের কথা সঠিক হলে প্রথমজনের সুপারিশটি বাতিল করার প্রশ্ন আসে।
এখন জানার প্রয়োজন, ভারত যে পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশের বন্দর দিয়ে পরিবাহিত করতে চায় তা বর্তমানে কত এবং আগামী ২০ বছরে কত হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে কোনো তথ্য নেই। তথ্য থাকলে অর্থমন্ত্রী এবং উপদেষ্টার কথা এক হতো।
আমাদের দেশের মাটির নম্রতা, শুষ্ক মাটির অপ্রতুলতা, ভালো রাস্তা দিয়ে চলাচলের জন্য মানুষের তীব্র প্রয়োজনীয়তা, দেশব্যাপী নদী-নালার আধিক্য ইত্যাদির কারণে নতুন নতুন রাস্তা ও রেলপথ নির্মাণে প্রবল সীমাবদ্ধতা আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাজনীতিকে সম্পৃক্ত করা ঠিক নয়, যারা দেশবাসীকে নসিহত করেন তারা আসলে রাজনীতিই করেন। কোনো উত্পাদনমুখী কর্মকাণ্ডে তারা সম্পৃক্ত নন। তারা হয় বুদ্ধিজীবী, না হয় রাজনৈতিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে যারা ডক্টরেটধারী তাদের জ্ঞান চর্চা এবং বক্তব্য প্রদান সেমিনার-টকশোতে সীমাবদ্ধ থাকে। সমস্যাজড়িত কর্মক্ষেত্রে তারা নেই।
ডক্টরেটধারী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পাকিস্তান আমলে সাবেক ইপিআইডিসি’তে প্রকল্প প্রণয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার সময় ১৯৬০ দশকের দ্বিতীয়ার্ধে চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানার উত্পাদন ক্ষমতা দেড় লাখ টন থেকে আড়াই লাখ টনে উন্নীত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা মতে, বাড়তি এক লাখ টন হতে ষাট হাজার টন ইস্পাতের হেভি প্লেট তৈরি করা হবে । ওই ষাট হাজার টন প্লেট বিক্রির সম্ভাব্যতা সম্পর্কে বলা হলো, ইপিআইডিসি’র প্রতিষ্ঠান ড্রাইডক কিছু প্লেট কিনে জাহাজ তৈরি করবে। বাকিটুকু রফতানি হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই মিলে একুনে পাঁচ হাজার টন হেভি প্লেট তৈরি হয়নি। তার প্রণীত পরিকল্পনায় স্থাপিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি অনুরূপ আরেকটি অচল প্রতিষ্ঠান ছিল।
পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব অনভিজ্ঞ এবং থিওরিটিসিয়ানদের হাতে পড়ে আমাদের দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা থেকে ঈপ্সিত ফল পাওয়া যায়নি।
ভারতকে ট্রানজিট দিলে তার পণ্য কোন পথে পরিবাহিত হয়ে ভারত-বাংলাদেশ-ভারতের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব এলাকার প্রদেশগুলোর ভৌগোলিক কারণে দু’দেশের মধ্যে পরিবহন পথে পণ্যের ওঠা-নামা একাধিকবার সংঘটিত হবে। সুবিধা ও অসুবিধা দু’পক্ষের জন্য আছে। এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলতে চাই যা হলো, নদ-নদী অধ্যুষিত কোনো একটি দেশে একই পরিবহন যান দিয়ে ডোর-টু-ডোর ডেলিভারি করা যায় না। যাত্রার পথে একাধিকবার জার্নি ব্রেক করতে হয়। সিঙ্গাপুর এর সুবিধা নিচ্ছে। একই পরিবহন যান বন্দর থেকে মাল তুলে আমদানিকারকের গুদামে অথবা রফতানিকারকের গুদাম থেকে মাল তুলে বন্দরের ভেতরে পৌঁছে দেবে—এটা আশা করা আকাশ-কুসুম কল্পনার সমান।
চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর থেকে নদীপথে সরাসরি পণ্য পরিবহন করে ভারতে নেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এটা করা হলে, উজানে ভারতে বাঁধ দিয়ে নদ-নদী থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানি সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে তা নিরসনের জন্য ভারত নিজেই এগিয়ে আসবে।
সোনাকান্দায় একটি আধুনিক বন্দর নির্মাণে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে যার জন্য বাংলাদেশকে বিনিয়োগকারী খুঁজে বের করতে হবে। ভারত বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করতে চাইলে এর বিনিয়োগে অংশগ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশের বর্তমান বন্দর ভারতকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হলে এবং সোনাকান্দায় বন্দর স্থাপিত হলে নতুন বন্দরটি আগামী কয়েক যুগব্যাপী অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকবে। যারা ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার কথা বলেন, তারা কি চান না ৮টি জাহাজ ভেড়ানো যায় সোনাকান্দায় এমন একটি বন্দর স্থাপিত হোক? বর্তমানের চট্টগ্রাম বন্দরকে সম্পূর্ণ স্থলপথে অন্য দেশকে ব্যবহার করতে দেয়া হলে অসুবিধা আছে। ওই বন্দর চট্টগ্রাম শহরের একটি অংশ। এর পশ্চিম তীরে আছে কিছু শিল্প-প্রতিষ্ঠান, নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় স্থাপনা এবং আছে একটি বড় জনবসতিপূর্ণ এলাকা। রেল বা সড়কপথে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহার এসব স্থাপনার ওপর প্রবল চাপ প্রয়োগ করবে। ফলে ওইসব স্থাপনার অনেকগুলোকে কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
ভারতে পণ্য পরিবহনের নিমিত্তে বন্দর ও রেলকে উপযুক্ত করে তোলার জন্য বিনিয়োগ করার পর সারা দিনে শুধু একটি মালবাহী ট্রেনপথে যাতায়াত করতে পারলে ওই বিনিয়োগ লাভবান হবে না। বর্তমানে চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথ দিয়ে দৈনিক গড়ে দুটি কনটেইনারবাহী ট্রেন যাতায়াত করে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেলপথ সংস্কার করা হলে ওই পথ দিয়ে ভারতের জন্য দৈনিক বর্তমান পরিমাণের দশ ভাগের এক ভাগ কনটেইনার পরিবাহিত হবে কিনা সন্দেহ আছে।
ভারতের চাহিদার সমাধান সোনাকান্দায় খোঁজা দরকার। প্রতিবেশীর সুখ-সমৃদ্ধি অবশ্যই আমরা চাই, কিন্তু নিজের জীবন দুর্বিষহ করে নয়।
লেখক : চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সদস্য (অর্থ) ও চেয়ারম্যান এবং সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক
একটি বিশেষ বিষয়ে ডক্টরেটধারী কেউ কেউ দেশের অর্থনীতি বুঝে ফেলার ঘুড়ি শূন্যে উড়িয়ে থাকেন। তাদের সৌভাগ্য যে তাদের বক্তব্যের জন্য কারও কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। কাজ করে ফলাফল প্রদর্শনের জন্য তাদের কোনো কর্মক্ষেত্র এবং দায়িত্ব নেই। সভায় এবং মিডিয়ায় তারা যা বলেন তা বাস্তবে পাওয়া না গেলে তার জন্য তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। চট্টগ্রাম বন্দরে এর প্রধান হিসেবে কাজ করার সময় ঢাকাতে অনুষ্ঠিতব্য সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত নিয়মটির এক সভায় যোগদানের জন্য নির্ধারিত দিনের একদিন পর ঢাকায় গমনের কারণ ব্যাখ্যা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দিতে হয়েছিল আমাকে। ব্যবস্থা ছিল যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে আমি ঢাকায় গেলে সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ড. রহমত উল্লার পঠিত শাস্ত্রে আমার ডক্টরেট ডিগ্রি নেই। কিন্তু এতে আমি পাঁচ বছর লেখাপড়া করেছি। আগে বর্ণিত কোটি কোটি টাকা কবে অর্জিত হবে তা বক্তারা বলেননি। অন্তহীন শূন্যে ছুড়ে দেয়া হয়েছে অনুমান করার জন্য। চট্টগ্রাম বন্দর ২০০৮-০৯ সালে ৩.৩৬ লাখ টিইউ কনটেইনার এবং ১১.০৮ লাখ মেট্রিক টন ব্রেক বাল্ক কার্গো হ্যান্ডলিং করে ১১২৭ কোটি টাকা আয় করেছে।
চট্টগাম বন্দরের ২০০৮-০৯ সালের ১,১২৭ কোটি টাকা আয়কে আগে বর্ণিত ৩,৫০০, ৭,০০০ এবং ৭০,০০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে যথাক্রমে ২,৩৭৩, ৫,৮৭৩ ও ৬৮,৮৭৩ কোটি টাকার আয় সংযোজন করতে হবে। বার্ষিক ৮ ভাগ চক্রবৃদ্ধি হারে (৬ ভাগ জিডিপি + ২ ভাগ বন্দরের সেবার মূল্য হার) উপরোক্ত সংযোজনী অর্জন করতে লাগবে যথাক্রমে ১২, ২০ এবং ৫০ বছর। বন্দরের ফটক খুলে দিলে বাঁধভাঙা পানির মতো ওই অর্থ হু হু করে ঢুকে পড়বে না। এটা জানা দরকার, ওই বন্দরকে বর্তমান অবস্থায় আসতে সময় লেগেছে ১২০ বছর। ১৯৯০ সালে বন্দরটি এর শতবার্ষিকী উদযাপন করেছিল।
চট্টগ্রাম বন্দরে এ পর্যন্ত যত উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদিত হয়েছে, তা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য হয়েছে। বাইরের ব্যবহারকারীকে পাওয়া যাবে এ আশায় হয়নি। যদি বাইরের ব্যবহারকারীদের ব্যবহার পরিকল্পনায় থাকত, তাহলে বন্দরের স্থাপনাদির এবং যন্ত্রপাতিগুলোর পরিমাণ ও ধরন অন্যভাবে নির্ধারিত হতো। সবচেয়ে বেশি নির্ধারিত হতো বন্দরের বিনিয়োগে অংশীদার এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। কিন্তু তা হয়নি। হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
ভারতকে বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার সুযোগদান প্রস্তাবিত গভীর (?) সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। ৮টি জাহাজের পণ্য একযোগে খালাস ও ভর্তি করার জন্য ২০১৫ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জেটি স্থাপনের একটি পরিকল্পনা সমুদ্রবন্দরটির প্রকল্পে রয়েছে। এর জন্য ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে যত কনটেইনারজাত এবং সাধারণ পণ্য ওঠানো-নামানো হচ্ছে তার পরিমাণ এক নেত্রীর মতে ক্ষমতার ৩০ ভাগ, অন্য নেত্রীর মতে ক্ষমতার ৬০ ভাগ। জাপানি প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক পেশকৃত গভীর (?) সমুদ্রবন্দরের ওপর সমীক্ষা প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, ২০০৮-০৯ সালে যত পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডলিং করা হয়েছে, তা ওই বন্দরের ক্ষমতার ৬৫ ভাগ। কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর প্রধান বলেছেন, ওই বন্দরে অব্যবহৃত ক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের যেসব প্রদেশ বাংলাদেশের বন্দরকে ব্যবহার করবে বলে আশা করা হচ্ছে, তাদের এত পরিমাণ সমুদ্রজাত পণ্য নেই এবং অদূর ভবিষ্যতেও হবে না; যার ফলে অব্যবহৃত ক্ষমতার বাকি ৩৫ ভাগ ব্যবহৃত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ গত ৩৫ বছরে তার বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১৫০ থেকে ৬৫০ ডলারে উন্নীত করতে সমর্থ হয়েছে । অতএব বন্দরের বাকি ৩৫ ভাগ ক্ষমতা কবে ব্যবহার করা যাবে তা অনুমান করা যায়। নিশ্চয়ই আগামী ২০ বছরের মধ্যে নয়। এসব কারণে আনুষঙ্গিক বিষয় হিসেবে বলা যায়, ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হলে ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরের এক অংশ নির্মাণ অলাভজনক হবে। ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনাটি টিকিয়ে রাখতে হলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে অন্য কিছু চিন্তা করতে হবে।
বন্দরে এবং বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে বড় সমস্যা বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় রেল এবং গাড়ি চলাচল পথের সীমাবদ্ধতা। চট্টগ্রাম বন্দর চট্টগ্রাম শহরের অংশবিশেষ বিধায় এর প্রয়োজনীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি সম্ভব নয়। ড. রহমতউল্লাহ কর্তৃক কথিত বন্দর এবং রেল পদ্ধতির সংস্কার সাধনের বিষয়টি গভীর (?) সমুদ্রবন্দর স্থাপন পরিকল্পনার সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা দেখতে হবে।
গত ২০-২৫ বছরব্যাপী চট্টগ্রাম বন্দরে যে সুযোগ-সুবিধা এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি সাধন করা হয়েছে তা অনেক চিন্তা-ভাবনা করে করা হয়েছে। হঠাত্ করে কিছু করা হয়নি। অব্যবহৃত অংশটুকু ভবিষ্যতে ব্যবহৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য পরিবাহিত পণ্য দিয়ে। একটি লক্ষণীয় বিষয় এই যে, একটি বিষয়ে দুজন ডক্টরেটধারী, যারা বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত হয়ে বন্দরের উন্নতি সাধনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যস্ত আছেন, তাদের ধ্যান-ধারণা এবং বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। একজন ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে গভীর (?) সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিচ্ছেন। অন্যজন বলছেন, এখন যা আছে এতে কিছু পরিবর্ধন ও পরিবর্তন করে অতিরিক্ত ৩,৫০০ কোটি টাকা অর্জন করা সম্ভব। ওই পরিমাণ আয় বর্তমান আয়ের তিনগুণ। দ্বিতীয়জনের কথা সঠিক হলে প্রথমজনের সুপারিশটি বাতিল করার প্রশ্ন আসে।
এখন জানার প্রয়োজন, ভারত যে পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশের বন্দর দিয়ে পরিবাহিত করতে চায় তা বর্তমানে কত এবং আগামী ২০ বছরে কত হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে কোনো তথ্য নেই। তথ্য থাকলে অর্থমন্ত্রী এবং উপদেষ্টার কথা এক হতো।
আমাদের দেশের মাটির নম্রতা, শুষ্ক মাটির অপ্রতুলতা, ভালো রাস্তা দিয়ে চলাচলের জন্য মানুষের তীব্র প্রয়োজনীয়তা, দেশব্যাপী নদী-নালার আধিক্য ইত্যাদির কারণে নতুন নতুন রাস্তা ও রেলপথ নির্মাণে প্রবল সীমাবদ্ধতা আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাজনীতিকে সম্পৃক্ত করা ঠিক নয়, যারা দেশবাসীকে নসিহত করেন তারা আসলে রাজনীতিই করেন। কোনো উত্পাদনমুখী কর্মকাণ্ডে তারা সম্পৃক্ত নন। তারা হয় বুদ্ধিজীবী, না হয় রাজনৈতিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে যারা ডক্টরেটধারী তাদের জ্ঞান চর্চা এবং বক্তব্য প্রদান সেমিনার-টকশোতে সীমাবদ্ধ থাকে। সমস্যাজড়িত কর্মক্ষেত্রে তারা নেই।
ডক্টরেটধারী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পাকিস্তান আমলে সাবেক ইপিআইডিসি’তে প্রকল্প প্রণয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার সময় ১৯৬০ দশকের দ্বিতীয়ার্ধে চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানার উত্পাদন ক্ষমতা দেড় লাখ টন থেকে আড়াই লাখ টনে উন্নীত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা মতে, বাড়তি এক লাখ টন হতে ষাট হাজার টন ইস্পাতের হেভি প্লেট তৈরি করা হবে । ওই ষাট হাজার টন প্লেট বিক্রির সম্ভাব্যতা সম্পর্কে বলা হলো, ইপিআইডিসি’র প্রতিষ্ঠান ড্রাইডক কিছু প্লেট কিনে জাহাজ তৈরি করবে। বাকিটুকু রফতানি হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই মিলে একুনে পাঁচ হাজার টন হেভি প্লেট তৈরি হয়নি। তার প্রণীত পরিকল্পনায় স্থাপিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি অনুরূপ আরেকটি অচল প্রতিষ্ঠান ছিল।
পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব অনভিজ্ঞ এবং থিওরিটিসিয়ানদের হাতে পড়ে আমাদের দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা থেকে ঈপ্সিত ফল পাওয়া যায়নি।
ভারতকে ট্রানজিট দিলে তার পণ্য কোন পথে পরিবাহিত হয়ে ভারত-বাংলাদেশ-ভারতের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব এলাকার প্রদেশগুলোর ভৌগোলিক কারণে দু’দেশের মধ্যে পরিবহন পথে পণ্যের ওঠা-নামা একাধিকবার সংঘটিত হবে। সুবিধা ও অসুবিধা দু’পক্ষের জন্য আছে। এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলতে চাই যা হলো, নদ-নদী অধ্যুষিত কোনো একটি দেশে একই পরিবহন যান দিয়ে ডোর-টু-ডোর ডেলিভারি করা যায় না। যাত্রার পথে একাধিকবার জার্নি ব্রেক করতে হয়। সিঙ্গাপুর এর সুবিধা নিচ্ছে। একই পরিবহন যান বন্দর থেকে মাল তুলে আমদানিকারকের গুদামে অথবা রফতানিকারকের গুদাম থেকে মাল তুলে বন্দরের ভেতরে পৌঁছে দেবে—এটা আশা করা আকাশ-কুসুম কল্পনার সমান।
চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর থেকে নদীপথে সরাসরি পণ্য পরিবহন করে ভারতে নেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এটা করা হলে, উজানে ভারতে বাঁধ দিয়ে নদ-নদী থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানি সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে তা নিরসনের জন্য ভারত নিজেই এগিয়ে আসবে।
সোনাকান্দায় একটি আধুনিক বন্দর নির্মাণে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে যার জন্য বাংলাদেশকে বিনিয়োগকারী খুঁজে বের করতে হবে। ভারত বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করতে চাইলে এর বিনিয়োগে অংশগ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশের বর্তমান বন্দর ভারতকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হলে এবং সোনাকান্দায় বন্দর স্থাপিত হলে নতুন বন্দরটি আগামী কয়েক যুগব্যাপী অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকবে। যারা ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার কথা বলেন, তারা কি চান না ৮টি জাহাজ ভেড়ানো যায় সোনাকান্দায় এমন একটি বন্দর স্থাপিত হোক? বর্তমানের চট্টগ্রাম বন্দরকে সম্পূর্ণ স্থলপথে অন্য দেশকে ব্যবহার করতে দেয়া হলে অসুবিধা আছে। ওই বন্দর চট্টগ্রাম শহরের একটি অংশ। এর পশ্চিম তীরে আছে কিছু শিল্প-প্রতিষ্ঠান, নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় স্থাপনা এবং আছে একটি বড় জনবসতিপূর্ণ এলাকা। রেল বা সড়কপথে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহার এসব স্থাপনার ওপর প্রবল চাপ প্রয়োগ করবে। ফলে ওইসব স্থাপনার অনেকগুলোকে কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
ভারতে পণ্য পরিবহনের নিমিত্তে বন্দর ও রেলকে উপযুক্ত করে তোলার জন্য বিনিয়োগ করার পর সারা দিনে শুধু একটি মালবাহী ট্রেনপথে যাতায়াত করতে পারলে ওই বিনিয়োগ লাভবান হবে না। বর্তমানে চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথ দিয়ে দৈনিক গড়ে দুটি কনটেইনারবাহী ট্রেন যাতায়াত করে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেলপথ সংস্কার করা হলে ওই পথ দিয়ে ভারতের জন্য দৈনিক বর্তমান পরিমাণের দশ ভাগের এক ভাগ কনটেইনার পরিবাহিত হবে কিনা সন্দেহ আছে।
ভারতের চাহিদার সমাধান সোনাকান্দায় খোঁজা দরকার। প্রতিবেশীর সুখ-সমৃদ্ধি অবশ্যই আমরা চাই, কিন্তু নিজের জীবন দুর্বিষহ করে নয়।
লেখক : চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সদস্য (অর্থ) ও চেয়ারম্যান এবং সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক
No comments