উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অপরিহার্য-দুদকের আইন সংশোধন
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইন সংশোধনের চলমান প্রক্রিয়াটি অনেকাংশে অপরিচ্ছন্ন, অস্পষ্ট ও প্রশ্নসাপেক্ষ। জরুরি অবস্থায় রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ দুদকের দায়ের করা মামলার মধ্য দিয়ে একটা জবাবদিহির মুখোমুখি হয়েছিল। সে কারণে তাঁদের অনেকেই দুদকের বর্তমান কার্যক্রম সুনজরে দেখতে অপারগ থাকছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অনেকেই আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ।
সরকারি প্রতিষ্ঠানসংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নিজেই দুদকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির মামলার আসামি। এই কমিটিই দুদক আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। সংসদীয় কার্যপ্রণালী বিধির ২৩৮ ধারায় সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির যে চারটি কার্যাবলি চিহ্নিত করে দেওয়া আছে, তাতে প্রতীয়মান হয়, আইন সংশোধনসংক্রান্ত এখতিয়ার তাদের নেই। দুদকের প্রতি সংসদীয় কমিটির বীতরাগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন তারা মন্তব্য করে যে ‘সাম্প্রতিক অতীতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনপ্রতিনিধি দুদকের কর্মকাণ্ডে নাজেহাল ও দুর্ভোগের শিকার’ হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান হলো, দুদককে প্রতিষ্ঠান হিসেবে আক্রমণ করা যাবে না।
দুদকের পক্ষে যে কারও জবাবদিহি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু কমিটি যেভাবে বিষয়টিকে ‘জনপ্রতিনিধি বনাম দুদক’ হিসেবে দেখছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। সে কারণে দুদক আইন সংশোধনের বিষয়টি এই সংসদীয় কমিটির হাতে নিরাপদ নয়; বিশেষ করে, দুদকের ওপর সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির এখতিয়ারের বিষয়টিও প্রশ্নসাপেক্ষ। এই সংসদীয় কমিটি যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান তদারক করবে, কার্যপ্রণালী বিধির তফসিলে তার নামের একটি তালিকা রয়েছে। সেখানে দুদকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা যায় না। বিতর্ক সত্ত্বেও কমিটি এ ধরনের আইনি প্রশ্ন সুরাহা না করে দুদক দমানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই মনোভাব একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। দুদক সরকারি অর্থে চলে বলেই তার ওপর সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির তদারকির বিষয়টি সংসদে নিষ্পত্তির দাবি রাখে। কিন্তু পরিহাস হলো, বিরোধী দলের অনেক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি দুদকের কার্যক্রমে নিজেদের বিপন্ন মনে করেছিলেন এবং এখনো করছেন। সুতরাং দুদককে শক্তিশালী করার যেকোনো প্রশ্নের বিষয়ে তাঁরাও যে উদাসীন থাকবেন, তাতে আর বিচিত্র কী! এ রকম প্রেক্ষাপটে দুদকের আইন সংশোধনের নামে দুদককে আরও দুর্বল করার একটা প্রচেষ্টা ক্রমশ প্রবলতর হচ্ছে।
১৪ জানুয়ারি প্রথম আলোতে ‘আইন সংশোধনে সরকারের বেশির ভাগ নির্দেশনার সঙ্গে একমত নয় দুদক’ শীর্ষক প্রতিবেদন আমাদের আরও কিছুটা অবাক করেছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের সারকথা হলো, নির্বাহী বিভাগকে তদারক করবে সংসদ। সংসদীয় কমিটির কোনো বিষয়ের ভালো-মন্দ আমলারা নয়, দরকার হলে সংসদেই আলাপ-আলোচনা করতে হবে। অথচ সংসদীয় কমিটির ১৯টি নির্দেশনার আলোকে মতামত দিতে একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে সরকার। এই কমিটি সংসদীয় কমিটির সুরেই দুদককে কবজা করতে চাইছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়েরে সরকারের অনুমোদন নেওয়া, প্রধান নির্বাহী হিসেবে দুদক চেয়ারম্যানের ক্ষমতা খর্ব ও দুদককে স্বশাসন না দেওয়ার মতো প্রস্তাব আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করি। সত্যি বলতে কি, সরকারের উচ্চপর্যায়ের সদিচ্ছা ও অনুকূল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপরই দুদকের আইন সংশোধন বা শক্তিশালীকরণ প্রশ্নের ভবিষ্যত্ নির্ভর করছে।
দুদকের পক্ষে যে কারও জবাবদিহি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু কমিটি যেভাবে বিষয়টিকে ‘জনপ্রতিনিধি বনাম দুদক’ হিসেবে দেখছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। সে কারণে দুদক আইন সংশোধনের বিষয়টি এই সংসদীয় কমিটির হাতে নিরাপদ নয়; বিশেষ করে, দুদকের ওপর সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির এখতিয়ারের বিষয়টিও প্রশ্নসাপেক্ষ। এই সংসদীয় কমিটি যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান তদারক করবে, কার্যপ্রণালী বিধির তফসিলে তার নামের একটি তালিকা রয়েছে। সেখানে দুদকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা যায় না। বিতর্ক সত্ত্বেও কমিটি এ ধরনের আইনি প্রশ্ন সুরাহা না করে দুদক দমানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই মনোভাব একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। দুদক সরকারি অর্থে চলে বলেই তার ওপর সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির তদারকির বিষয়টি সংসদে নিষ্পত্তির দাবি রাখে। কিন্তু পরিহাস হলো, বিরোধী দলের অনেক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি দুদকের কার্যক্রমে নিজেদের বিপন্ন মনে করেছিলেন এবং এখনো করছেন। সুতরাং দুদককে শক্তিশালী করার যেকোনো প্রশ্নের বিষয়ে তাঁরাও যে উদাসীন থাকবেন, তাতে আর বিচিত্র কী! এ রকম প্রেক্ষাপটে দুদকের আইন সংশোধনের নামে দুদককে আরও দুর্বল করার একটা প্রচেষ্টা ক্রমশ প্রবলতর হচ্ছে।
১৪ জানুয়ারি প্রথম আলোতে ‘আইন সংশোধনে সরকারের বেশির ভাগ নির্দেশনার সঙ্গে একমত নয় দুদক’ শীর্ষক প্রতিবেদন আমাদের আরও কিছুটা অবাক করেছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের সারকথা হলো, নির্বাহী বিভাগকে তদারক করবে সংসদ। সংসদীয় কমিটির কোনো বিষয়ের ভালো-মন্দ আমলারা নয়, দরকার হলে সংসদেই আলাপ-আলোচনা করতে হবে। অথচ সংসদীয় কমিটির ১৯টি নির্দেশনার আলোকে মতামত দিতে একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে সরকার। এই কমিটি সংসদীয় কমিটির সুরেই দুদককে কবজা করতে চাইছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়েরে সরকারের অনুমোদন নেওয়া, প্রধান নির্বাহী হিসেবে দুদক চেয়ারম্যানের ক্ষমতা খর্ব ও দুদককে স্বশাসন না দেওয়ার মতো প্রস্তাব আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করি। সত্যি বলতে কি, সরকারের উচ্চপর্যায়ের সদিচ্ছা ও অনুকূল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপরই দুদকের আইন সংশোধন বা শক্তিশালীকরণ প্রশ্নের ভবিষ্যত্ নির্ভর করছে।
No comments