ধান-চালের মূল্য নির্ধারণ-কৃষক বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ
অবশেষে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান ও চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি বোরো মৌসুমে ধান ওঠার পর সরকারের এই সিদ্ধান্ত কৃষককে কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করবে। অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমবে বলে ধারণা করা যেতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় মৌসুমের শুরুতে কৃষককে ফসল নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়তে হয়। সরকারি সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হওয়ার প্রভাব পড়ে সারা দেশের ধান-চালের বাজারে। শুরু থেকেই পড়তে থাকে ধানের দাম। ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলে আনাটা কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের বাজার সব সময় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বাজার। ব্যবসায়ীচক্র এবারও বোরো মৌসুমে ফসল ওঠার সময় বাজারে ধানের ক্রয়মূল্য কমিয়ে দেয়। ফলে ধানচাষে কৃষকের উৎসাহ হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো সার-সেচের ব্যবস্থা হওয়ায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সার-কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধি, পাশাপাশি সেচ দিতে গিয়েও কৃষককে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। সরকারি হিসাবেই এ বছর প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ ১৫ টাকা ৭৬ পয়সা। কিন্তু শুরুতে বাজারে যে অবস্থা ছিল, তাতে ধানচাষের প্রতি উৎসাহ হারানো অস্বাভাবিক ছিল না। বেশির ভাগ কৃষককেই ফসল ঘরে ওঠার পরপরই বিক্রি করতে হয়। এটাই আমাদের দেশের সাধারণ চিত্র। সবার ধান সংরক্ষণের ব্যবস্থা কিংবা সুবিধা নেই। অনেকে বাকিতে বাজার থেকে সার-বীজ সংগ্রহ করে থাকেন, সেচ ব্যবস্থাও অনেককে বাকিতে নিতে হয়। ফলে বাজারের অসাধু ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা কৃষকের ত্বরিৎ ধান বিক্রির সুযোগটিই নিয়ে থাকে। এ সময় কৃষকের টাকার প্রয়োজন থাকে। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কিনে গুদামজাত করে। পরে এই ধান বা চাল বেশি দামে বিক্রি করে। কিন্তু এই বাড়তি দামের সুফল কৃষকের হাতে যায় না। এই চিত্রটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারেই নতুন নয়। সরকারকে এ বিষয়ে আগে থেকেই সজাগ থাকতে হবে, বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ফসল কেনার বিষয়টি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করতে হবে সবার আগে। সার, বীজ ও সেচ সুবিধার পাশাপাশি কৃষকের উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণ নিয়ে ভাবতে হবে। এই দিকটি একেবারেই অবহেলিত রয়ে গেছে। কৃষকের জন্য একটি বাজার গড়ে ওঠেনি। বাজারে এখনো ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য। ফলে প্রয়োজনের সময় কৃষককে অল্প দামে ফসল বিক্রি করতে হয়। বেশির ভাগ সময় লোকসান গুনতে হয়।
এবার কৃষককে অনেক কষ্ট স্বীকার করেই বোরোর আবাদ করতে হয়েছে; কিন্তু বাজারে ক্রমশ ধানের দরপতন অনেককেই এর আবাদে নিরুৎসাহ করতে পারে। তেমনটি ঘটলে তা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। এমনিতেই আলুসহ অনেক কৃষিপণ্য সংরক্ষণে সমস্যা রয়েছে। অনেক সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না। কিন্তু ধান ও চালের দাম থেকে যদি উৎপাদন খরচ উঠে না আসে, সেটা হবে কৃষকের জন্য সবচেয়ে দুঃখজনক। সরকার মূল্য নির্ধারণ করায় এখন কৃষকের ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকটা কমে যাবে। তবে এই মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি আরো আগে করা গেলে কৃষকরা আরো লাভবান হতো। কৃষকের স্বার্থ নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। কৃষকের স্বার্থরক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এবার কৃষককে অনেক কষ্ট স্বীকার করেই বোরোর আবাদ করতে হয়েছে; কিন্তু বাজারে ক্রমশ ধানের দরপতন অনেককেই এর আবাদে নিরুৎসাহ করতে পারে। তেমনটি ঘটলে তা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। এমনিতেই আলুসহ অনেক কৃষিপণ্য সংরক্ষণে সমস্যা রয়েছে। অনেক সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না। কিন্তু ধান ও চালের দাম থেকে যদি উৎপাদন খরচ উঠে না আসে, সেটা হবে কৃষকের জন্য সবচেয়ে দুঃখজনক। সরকার মূল্য নির্ধারণ করায় এখন কৃষকের ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকটা কমে যাবে। তবে এই মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি আরো আগে করা গেলে কৃষকরা আরো লাভবান হতো। কৃষকের স্বার্থ নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। কৃষকের স্বার্থরক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে।
No comments