বিশ্ব মানবতার সামনে হাইতিকে রক্ষার দায়িত্ব-ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হাইতির হাহাকার

অসহায় মানবতার করুণ কান্নায় নিমজ্জিত ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র হাইতি। রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞে নিহত হয়েছে এক লাখেরও বেশি মানুষ। এর সঙ্গে কেবল প্রলয়েরই তুলনা চলে। দারিদ্র্য, জনসংখ্যার ভারে নিমজ্জিত, প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার চরমে থাকা দেশটি আজ তীব্র মানবিক সংকটে।


উপর্যুপরি ভূমিকম্পে খোদ রাজধানী বিধ্বস্ত হওয়ায়, নিজে থেকে উদ্ধার ও পুনর্গঠনের কাজ করা দেশটির জন্য কঠিন। হাইতির জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সমগ্র বিশ্বের সহযোগিতার হাত, এবং তা করতে হবে সম্ভবপর সবচেয়ে দ্রুত সময়ে।
২০০৪ সালের ইন্দোনেশিয়ার উপকূলের সুনামি জলোচ্ছ্বাসের পর হাইতির এ ভূমিকম্পই বৃহত্তম প্রাকৃতিক বিপর্যয়। সুনামির পর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সুনামি-দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল। আজ হাইতিরও তেমন সহযোগিতা প্রয়োজন। এরই মধ্যে চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশও পারে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়াতে, বিশেষত দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনর্বাসনকাজে বাংলাদেশের ভূমিকা পালনের বিরাট সুযোগ রয়েছে। তবে সময়ের জ্বলন্ত প্রয়োজন হলো খাদ্য, চিকিত্সা, আশ্রয় ও পুনর্গঠনের তহবিল। ধনী দেশগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় এই দায়িত্ব নিতে পারে জাতিসংঘ। বিশ্ব সম্পদ ও প্রযুক্তিতে যতটা এগিয়েছে, তার সুফল দিয়ে বিপন্ন হাইতিবাসীকে রক্ষা করার দায়িত্ব আজ বিশ্বমানবতার সামনে।
হাইতি এক দুর্ভাগা দেশ। স্পেনীয় অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাসের হাইতিতে আগমনের পর থেকেই একের পর এক ইউরোপীয় উপনিবেশকারী দেশটিতে হত্যা-লুণ্ঠন চালায় এবং দ্বীপবাসীকে দাস করে। আবার হাইতিই একমাত্র দেশ, যেখানে দাস-বিদ্রোহের বিজয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা আসে। হাইতি লাতিন আমেরিকার প্রথম স্বাধীন দেশ হলেও বারবার সেখানে সামরিক অভ্যুত্থান ও বিদেশি আগ্রাসন চলে। এ সবকিছুর সম্মিলিত ফল হিসেবেই হাইতির দারিদ্র্য ও দুর্বলতা তাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে অসহায় করে রেখেছে।
বাংলাদেশও জনসংখ্যার ভারে নিমজ্জিত এক দরিদ্র দেশ। রাজধানী ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের বাস। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও উঁচু ভবন নির্মাণের কারণে ঢাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে থাকা এক নগর। ৬ মাত্রার ভূমিকম্পেই ঢাকা ধূলিসাত্ হয়ে যেতে পারে। হাইতির ঘটনা থেকে তাই হুঁশিয়ার হওয়ার আছে।

No comments

Powered by Blogger.