কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের পরাজয় হলো

যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অথরিটিতে নির্বাচনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের কাছে আমাদের প্রগতিশীল দলের হলুদ প্যানেলের প্রার্থীদের বিরাট ব্যবধানে পরাজয় ঘটেছে। এ পরাজয় উপাচার্যের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রের ফল, যদিও উপাচার্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের।


মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে সরিয়ে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম নূরুল্লাহকে দায়িত্ব দেয়। জামায়াত-বিএনপি নিয়ন্ত্রিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের এই নিয়োগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থী উল্লসিত হন এবং সর্বান্তকরণে স্বাগত জানান। সবাই তাঁদের প্রশাসন পরিচালনায় সহযোগিতার জন্য সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসেন। শিবিরের সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী মুহুর্মুহু আক্রমণ এবং ছাত্রলীগকর্মীর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হয় কয়েকবার। এ ধরনের চরম বৈরী পরিস্থিতিতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে এ থেকে উত্তরণে এগিয়ে আসি। সরকার এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আমাদের পাশে দাঁড়ান। এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমান উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য তাঁদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। আমাদের মধ্য থেকে রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, হল প্রাধ্যক্ষ, ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ লাভ করেন। আমরা সম্মিলিতভাবে জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাভাবিক বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমে ফিরে আসতে সক্ষম হই। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনে সর্বাত্মকভাবে জয়ী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এরপর থেকেই শুরু হয় ষড়যন্ত্র। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং প্রশাসনে নিয়োজিত শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি চক্র সৃষ্টি হতে থাকে। শিক্ষক নিয়োগ, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এই প্রশাসনকেন্দ্রিক চক্রের একচেটিয়া বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এতে অবশ্য দলীয়ভাবে আমাদের কোনো আপত্তি থাকত না, যদি সব কর্মকাণ্ড আদর্শ ও নিয়ম-নীতি অনুযায়ী হতো। ক্রমান্বয়ে লক্ষ্য করা গেল, বর্তমান প্রশাসনচক্র দলীয় আদর্শ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বেপরোয়াভাবে বেশির ভাগ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই দলের পরীক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকরা এসব বিষয়ে নিজেদের ভেতরেই প্রশ্ন তুলতে চাইলেন। প্রশাসনকেন্দ্রিক চক্রটি ক্ষমতার দম্ভে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষককে প্রশ্ন উত্থাপনকারী শিক্ষকদের বিপক্ষে লেলিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে সরাসরি মদদ দান করেন বর্তমান উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য। দলীয় শৃঙ্খলা এবং বিএনপি-জামায়াত যাতে কোনো সুবিধা না পায়, সে স্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকরা বর্তমান প্রশাসনচক্রের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করেই এতদিন চলে আসছিলেন। তাঁরা বিশেষ কোনো পদের প্রতি মোহ প্রদর্শন করেননি। তবে তাঁদের চেষ্টা ছিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সাধারণ শিক্ষকদের সমর্থন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং নিয়ম-নীতি প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনকে সাহায্য করা। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনচক্র কোনোভাবেই তা হতে দিতে রাজি ছিল না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আজ একটি বিশেষ চক্রের হাতে বন্দি। উপাচার্য পরিবৃত দলের ভেতরে থাকা ষড়যন্ত্রকারীরা জামায়াত-বিএনপি জোটের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ায় নিবেদিতপ্রাণ ও আদর্শবাদী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষকদের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের দলের ৫৮৫ জন রেজিস্টার্ড শিক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শতাধিক শিক্ষক। এর পরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক সমাজের পরাজয় কেন, এ প্রশ্ন আজ সবার।
আমরা বলতে চাই, সম্প্রতি নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষকদের পরাজয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনই সম্পূর্ণ দায়ী। উপাচার্য সমর্থিত গ্রুপটি জামায়াত-বিএনপি গ্রুপের প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচনের আগে বৈঠক করেছে। আমরা শুনেছি এবং স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জেনেছি, ওই বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে হারানোর। মুজিবনগর সরকারের মধ্যে খন্দকার মোশতাক আহমদ ছিলেন। আমাদের দলের ভেতরেও আছেন। কখনো তাঁরা অতিমাত্রায় প্রগতিশীল। তাঁরাই উপাচার্যের চারপাশে থেকে আমাদের প্রার্থীদের পরাজিত করেছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগের রাতে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সব দল ও মতে বিশ্বাসী শিক্ষক সমাজ রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করে রেখে নির্বাচন দিতে বাধ্য করে। কিন্তু নির্বাচনের ফল আগেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। উপাচার্যের ষড়যন্ত্রের ফলে প্রশাসনিকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবির চক্রের উত্থানের পথ সুগম হলো।

লেখকগণ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্য

No comments

Powered by Blogger.