বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রয়োজন কি? by বদরুদ্দীন উমর
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো অবস্থা দেশে এখন তৈরি হয়েছে। যে অর্থে ও যে কাজের জন্য একটি দেশে জাতীয় সংসদ বা পার্লামেন্ট থাকে সে অর্থে কোনো কাজ এ জাতীয় সংসদের দ্বারা হচ্ছে না এবং পরিস্থিতির মধ্যে আমূল পরিবর্তন না ঘটলে এটা পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এই পরিবর্তনের দিনক্ষণ এখন দৃষ্টিসীমার বাইরে। হিসাব নিলে দেখা যায় যে, পার্লামেন্টের সদস্যদের প্রায় আশি শতাংশ ব্যবসায়ী এবং অন্যদের মধ্যে সামান্য ব্যতিক্রমসহ সবাই কোনো না কোনোভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, লাইসেন্স পারমিটের সঙ্গে জড়িত। এটাই প্রধান কারণ, যে জন্য পার্লামেন্ট বয়কট করে যখন যে দল বিরোধী পক্ষে থাকে তখন তাদের পক্ষে বসে থাকা সম্ভব হয়। আগের দিনের মতো পার্লামেন্ট যদি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত হতো তাহলে তারা নিজেদের পেশাগত কারণেই পার্লামেন্টের অধিবেশনের সময় তাতে উপস্থিত থাকতেন। পার্লামেন্ট বা জাতীয় সংসদের সদস্যদের মূল নেশা এখন ব্যবসা হওয়ায় তাদের কোনো পেশাগত তাগিদ সংসদে উপস্থিত থাকার জন্য নেই। এ কারণেই শুধু যে বিরোধীদলই সংসদ বর্জন করে বসে থাকে তাই নয়, সরকারি দলের সদস্যরাও সংসদ অধিবেশন চলাকালে সংসদে অনুপস্থিত থাকেন অর্থাত্ তারাও সম্ভবত সংসদ বর্জন করেই নিজেদের ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে প্রায়ই সংসদ অধিবেশনের সময় কোরাম হয় না, কোরাম কোনো রকমে হলেও অধিবেশন শুরু হয় দেরিতে।
এ তো গেল জাতীয় সংসদের অবস্থার একটা দিক। এর অন্যদিক হলো, এই সংসদের অধিবেশনে কোনো সময়েই এমন কোনো বিষয়ে আলোচনা বা বিতর্ক হয় না যার কোনো প্রকৃত গুরুত্ব থাকে। দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক এমন অগুনতি বিষয় আছে যা জাতীয় সংসদে আলোচিত হওয়া দরকার। কিন্তু দেখা যায় যে, সে রকম কোনো বিষয়ই জাতীয় সংসদে কোনো সময়ে উপস্থিত করা ও তার ওপর আলোচনা হয় না। এদিক দিয়ে বিচার করলে বোঝার অসুবিধে হবে না যে, জাতীয় সংসদ আমাদের জাতীয় জীবনে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক নয়।
নতুন সাধারণ নির্বাচন হওয়ার পর এর কাজ দাঁড়ায় একজন নেতা নির্বাচন ও তার নেতৃত্বে এক নতুন সরকার গঠন। নির্বাচনে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন তারাই এভাবে গঠন করেন সরকার। অবস্থা দেখে মনে হয়, এভাবে সরকার গঠন ছাড়া পাঁচ বছরমেয়াদি জাতীয় সংসদের আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই।
নিয়ম অনুযায়ী কিছুদিন অন্তর সংসদ আহ্বান করা হয়। এভাবে আহূত সংসদে যে ক’জন উপস্থিত থাকেন তাদের দিয়ে সরকার কতকগুলো আইন পাস করিয়ে নেয়। প্রায় ক্ষেত্রেই এ নিয়ে কোনো আলোচনাও সংসদে হয় না। দেখা যায়, অনেক সময় মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এভাবে কোনো আলোচনা ছাড়াই একগুচ্ছ আইন প্রস্তাব ও পাস করিয়ে নেয়া হয়। অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে দেশ শাসন করলে যে অবস্থা দাঁড়ায় একইভাবে আইন প্রণয়ন হওয়ার সঙ্গে তার কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই। কাজেই এসব আইন কোনো নির্বাচিত সরকার, অনির্বাচিত সরকার বা সামরিক সরকারের দ্বারা প্রণীত হওয়ার মধ্যে গুণগত কোনো পার্থক্য নির্দেশ করাও চলে না।
দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সংসদে আলোচনা না হলেও সংসদ অধিবেশন চলাকালে যে সেখানে মৌনতা বিরাজ করে এমন নয়। সেখানে দেখা যায়, অনেক জোর কথাবার্তা এবং ওই জোর কথাবার্তার জন্য ‘ফ্লোর’ পাওয়ার প্রতিযোগিতা। বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সরকার পক্ষের লোকেরা যেসব বিষয়ে আলোচনা করেন, বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন, ভাঁড়ামি ও খিস্তিখেউড় করেন, সে কথা চিন্তা করলে অবাক হতে হয়। বিরোধী পক্ষের লোকেরা, সে যে দলেরই যখন হোক, অধিবেশনে উপস্থিত থাকলে তাদের এই জিহ্বা চর্চার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। উপরন্তু সরকার ও বিরোধী পক্ষ উভয়ে সংসদে উপস্থিত থাকলে খিস্তিখেউড় বেশ প্রাণবন্ত হয়!
এদিক দিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ: দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। এবারকার জাতীয় সংসদ যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং যেভাবে এই সংসদের সদস্যরা, বিশেষত সরকার দলীয় সদস্যরা আচরণ করছেন সেটা ভাঁড়ামি, খিস্তিখেউড়, অশ্লীলতা ইত্যাদি দিক দিয়ে পূর্ববর্তী যে কোনো সংসদের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। শেখ হাসিনার এক আত্মীয়, সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে নিয়ে গণ্যমান্য সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা নিজেদের শিক্ষা সংস্কৃতির ভাণ্ডার উজাড় করে দিয়ে যেসব কথাবার্তা বলছেন তা শুনলে কানে আঙুল দিতে হয়। বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে তারা ‘অমানুষ’, ‘কুটনি বুড়ি’ ইত্যাদি অশ্লীল আখ্যা দান করে তার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত জাতীয় সংসদে কোনো প্রকৃত নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় স্পিকার দেখা যায়নি। কাজেই আওয়ামী লীগের স্পিকার সাহেব এসব মন্তব্য মিনিট্স্ থেকে এক্সপাঞ্জ বা বাতিল না করে তা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেকর্ড করে রেখেছেন! এসব দেখে পরবর্তী প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে কী ধারণা করবে এ নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই! তাদের ধারণা, এই অশ্লীল গালাগালি রেকর্ড করে রাখলেই বাজিমাত্ করা যায়। কাজেই এসব কাজ করে তারা বাজিমাতের আনন্দে বস্ফািরিত!
বর্তমান জাতীয় সংসদের করুণ অবস্থা ভালোভাবে বোঝা যাবে অন্য একটি বিষয়ের দিকে তাকালে। এই অধিবেশনে হঠাত্ করে শেখ হাসিনা ও তার এক আত্মীয় (যাকে সভ্য আচরণের জন্য কেউ দোষারোপ করতে পারবে না) জাতীয় সংসদে জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে এমন কথাবার্তা বললেন, যা শুনে যে কোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষেরই থ হওয়ার কথা। তারা বললেন, জিয়ার কবর বলে যা পরিচিত সেখানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লাশ ছিল না। শুধু একটা বাক্সকেই সেখানে খবর দেয়া হয়েছিল। তাদের এই বক্তব্যের কারণ, কেউই জিয়াউর রহমানের লাশ দেখেনি, তার কোনো ছবিও নেই। জিয়াউর রহমানের লাশ সম্পর্কিত এই কথাবার্তার বিষয় এখানে অবতারণার প্রয়োজন হতো না। যদি জাতীয় সংসদের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে বিষয়টির অবতারণা না হতো। জিয়াউর রহমানের লাশের ছবি তোলা হয়নি এটা ঠিক। এর একটা কারণ হতে পারে যে, চট্টগ্রামে তাকে সমাধিস্থ করার কয়েকদিন পর তার লাশ ঢাকায় এনে দ্বিতীয়বার সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এই সময়ে লাশের যে অবস্থা হয়েছিল সেটা ছবি তুলে রাখার মতো নয়। কোথায় তাকে প্রথম সমাধিস্থ করা হয়েছিল সে বিষয়ে তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তার সমাধি চিহ্নিত করে সেখান থেকে লাশ উঠিয়ে ঢাকায় নিয়ে আশা হয়েছিল। কাজেই এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে কথাবার্তা বলা পায়ে পা দিয়ে গ্রাম্য মেয়েলি কায়দায় ঝগড়া ছাড়া আর কি? দ্বিতীয়ত, এ প্রসঙ্গে যেভাবে হাসিনা ও তার আত্মীয় খালি বাক্স কবর দেয়ার কথা বলেছেন, তাতে মনে হয় বাক্সটি কবর দেয়ার সময় কাদেরকে বাক্সটি খালি অবস্থায় দেখানো হয়েছিল এবং সেই চাক্ষুস অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তারা লাশ সমাধিস্থ করার পরিবর্তে শূন্য বাক্স মাটিচাপা দেয়ার কথা বলছেন! মজার ব্যাপার ওই যে, খালি বাক্স কবর দেয়ার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে হাসিনার আত্মীয় আবার এ কথাও বলছেন যে, ওই বাক্সতে যে লাশ ছিল তার ডিএনএ করা দরকার!
কেন এসব দরকার? দেশের জনগণের যে এর কোনো দরকার নেই এটা নিঃসংশয়ে বলা যায়। এ দরকার হলো, আওয়ামী লীগের নিজের। কাজেই জাতীয় সংসদে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে অক্ষম এই ভোট পাওয়া লোকরা প্রকৃত জনপ্রতিনিধি না হওয়ার কারণে নানা ধরনের আবোল-তাবোল কথাবার্তা বলে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনেই এসব বিষয়ের অবতারণা নতুনভাবে করছে। তা না হলে তাদের পূর্ববর্তী সরকারের আমলে পাঁচ বছর তারা তো এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। এ হলো তাদের এক ‘নবআবিষ্কার’! এই আবিষ্কারই বা কীভাবে হলো? এর বৃত্তান্ত ও প্রমাণ জনগণ নিশ্চয়ই দাবি করতে পারেন, কারণ জনগণের পয়সায় সংসদে দাঁড়িয়ে এসব অশ্লীল আবোল-তাবোল কথা বলে সময় নষ্ট করা হচ্ছে। এর ক্ষতি বর্তাচ্ছে জনগণের ওপর।
শেখ হাসিনার উপরোক্ত আত্মীয়ের আচরণের মধ্যে আদব-কায়দার এমনই অভাব যে, বিরোধী দল অনেকদিন পর সংসদে আশার পরমুহূর্তেই তিনি আবার জিয়ার লাশের কথা তুলে সংসদে এমন অবস্থা তৈরি করেছেন যাতে বিরোধী দল ওয়াক আউট করতে বাধ্য হয়। একদিকে বিরোধী দলকে সংসদে আসতে বলা এবং অন্যদিকে তারা আশামাত্র তাদের সংসদ অধিবেশন ত্যাগ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা কোনো স্বাভাবিক রাজনৈতিক আচরণ নয়। এদের এই আচরণ যে, স্পিকারের চরম দলীয় আচরণের কারণেই সম্ভব হচ্ছে এটাও বলা প্রয়োজন।
কাজেই অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও প্রায় শিক্ষিত ভোটপ্রাপ্ত লোকদের দ্বারা গঠিত এই জাতীয় সংসদের কোনো প্রয়োজন বাংলাদেশের জনগণের নেই। নির্বাচনের ঠিক পর একবার জাতীয় সংসদের অধিবেশন ডেকে সরকার গঠনের পর এর কোনো প্রয়োজন আর নেই। সংসদ চালিয়ে সদস্যদের পকেট ভর্তি ছাড়া এর দ্বারা অন্য কোনো কাজ হয় না। কাজেই সরকার গঠিত হওয়ার পর জাতীয় সংসদের কোনো অধিবেশন না ডেকে অন্য অনেক সিদ্ধান্ত যেভাবে মন্ত্রিসভা কর্তৃক গৃহীত হয়, সেভাবে মন্ত্রিসভা কর্তৃক অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমেই দেশ শাসন করা যায়। দেশ জাতীয় সংসদের দ্বারা প্রণীত আইনের মাধ্যমে এখন যেভাবে শাসিত হচ্ছে তার থেকে এ ধরনের অর্ডিন্যান্স দ্বারা শাসিত হলে অবস্থার কোনো পার্থক্য হবে না।
এবার আশা যেতে পারে অন্য প্রসঙ্গে। শেখ হাসিনা খুবই পিতৃভক্ত। এতে দোষ তো কিছুই নেই, উপরন্তু এটা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু কোনো বিষয়েই মাত্রাহীনতা ঠিক নয়। বলা হয়, জলের অপর নাম জীবন। কিন্তু সেই জল যদি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করা যায় তাহলে ধয়ঁধ ঢ়ড়রংড়হরহম হয়ে মৃত্যু ঘটতে পারে। একথা বলা হচ্ছে বিশেষ একটি কারণে। দেশের বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে রাস্তাঘাট, নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির নামকরণ করা হয়ে থাকে। সেভাবে বাংলাদেশে শেখ মুজিবের নামে আনেক কিছুই নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে যা করছেন তার মধ্যে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্যতা ও শালীনতার অভাব খুব স্পষ্ট। এবার ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি নামকরণের ক্ষেত্রে এ ধরনের অনেক কিছু করলেও কয়েকটি রীতিমত রুচি বিরুদ্ধ, যার মধ্যে স্বল্প বুদ্ধি ও প্রতিহিংসাপরায়ণতা ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি ঢাকায় ভাসানীর নামে নভো থিয়েটার বা প্লানেটেরিয়ামের নাম পাল্টে রেখেছেন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নভো থিয়েটার’। এটা রুচিবিরুদ্ধ কাজ। তিনি ‘বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী কেন্দ্রে’র নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সম্মেলন কেন্দ্র’। এর মধ্যে রাজনৈতিক বোধবুদ্ধির কোনো পরিচয় নেই। কারণ, এই বিশাল ও ব্যয়বহুল ইমারতটি চীন সরকার নিজের পয়সায় তৈরি করে দুই দেশের বন্ধুত্বের স্বাক্ষর হিসেবে বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিল। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে নিজের পিতার নামে নামকরণ করা শুধু কুরুচির পরিচায়কই নয়, এর মধ্যে রাজনৈতিক অবিমৃষ্যকারিতার পরিচয়ও আছে। এতে চীনা সরকার স্বাভাবিকভাবেই বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এর ফলে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক। তৃতীয় যে কাজটি হাসিনা করেছেন তার ফলে তার সম্পর্কে মানুষের ধারণা মন্দ হতে বাধ্য। এটা হলো ‘জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের’ নাম পরিবর্তন করে ‘শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর’ করা। একজন পীর ও সাধু ব্যক্তির নামে এর নতুন নামকরণ করলেও জনগণের বোঝার অসুবিধে হয় না যে, এর মূল উদ্দেশ্য প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে জিয়াউর রহমানের নাম বাদ দেয়া। একমাত্র আওয়ামী লীগের দলীয় চামচা এবং তাদের ঘরানার কিছু বুদ্ধিজীবী ছাড়া এই অপকর্মের কোনো সমর্থক দেশে পাওয়া যাবে না। এর জন্য বিএনপির লোক হওয়ার প্রয়োজন কারও নেই।
শেখ হাসিনা এ কাজ করতে গিয়ে একজন বিখ্যাত পীরের নামের সঙ্গে জড়িত না করে সোজাসুজি জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন করে নিজের পিতা শেখ মুজিবের নাম অনুসারে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর’ রাখলেই ভালো করতেন। এটা না করা তার এক মস্ত ভুল। এই ভুল সংশোধনের জন্য তাকে সম্ভবত আরও বড় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চিন্তা করতে হচ্ছে।
এবার শেষ করতে হবে। তার আগে বলা দরকার যে, যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমি এই আলোচনা করলাম, সেটা অনুধাবন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং অক্ষম হয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও গণ্যমান্য কোনো কোনো বুদ্ধিজীবী, লেখক, সংস্কৃতি কর্মী যদি মনে করেন যে, আমি বিএনপির লোক তাতে বলার কিছু নেই। এজন্য তাদের করুণা করা ছাড়া আর করারই বা কি আছে? কারণ, এটা সাংস্কৃতিক সভ্যতার ব্যাপার। রাতারাতি টাকা-পয়সা লুটপাট করে ধনসম্পদের মালিক হওয়া যায়, কিন্তু সংস্কৃতি এমন জিনিস যা লুটপাট করে দ্রুত অর্জন করা যায় না। দীর্ঘ সময় সুশিক্ষা ও সুসংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়েই মানুষকে তা অর্জন করতে হয়।
এ তো গেল জাতীয় সংসদের অবস্থার একটা দিক। এর অন্যদিক হলো, এই সংসদের অধিবেশনে কোনো সময়েই এমন কোনো বিষয়ে আলোচনা বা বিতর্ক হয় না যার কোনো প্রকৃত গুরুত্ব থাকে। দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক এমন অগুনতি বিষয় আছে যা জাতীয় সংসদে আলোচিত হওয়া দরকার। কিন্তু দেখা যায় যে, সে রকম কোনো বিষয়ই জাতীয় সংসদে কোনো সময়ে উপস্থিত করা ও তার ওপর আলোচনা হয় না। এদিক দিয়ে বিচার করলে বোঝার অসুবিধে হবে না যে, জাতীয় সংসদ আমাদের জাতীয় জীবনে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক নয়।
নতুন সাধারণ নির্বাচন হওয়ার পর এর কাজ দাঁড়ায় একজন নেতা নির্বাচন ও তার নেতৃত্বে এক নতুন সরকার গঠন। নির্বাচনে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন তারাই এভাবে গঠন করেন সরকার। অবস্থা দেখে মনে হয়, এভাবে সরকার গঠন ছাড়া পাঁচ বছরমেয়াদি জাতীয় সংসদের আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই।
নিয়ম অনুযায়ী কিছুদিন অন্তর সংসদ আহ্বান করা হয়। এভাবে আহূত সংসদে যে ক’জন উপস্থিত থাকেন তাদের দিয়ে সরকার কতকগুলো আইন পাস করিয়ে নেয়। প্রায় ক্ষেত্রেই এ নিয়ে কোনো আলোচনাও সংসদে হয় না। দেখা যায়, অনেক সময় মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এভাবে কোনো আলোচনা ছাড়াই একগুচ্ছ আইন প্রস্তাব ও পাস করিয়ে নেয়া হয়। অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে দেশ শাসন করলে যে অবস্থা দাঁড়ায় একইভাবে আইন প্রণয়ন হওয়ার সঙ্গে তার কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই। কাজেই এসব আইন কোনো নির্বাচিত সরকার, অনির্বাচিত সরকার বা সামরিক সরকারের দ্বারা প্রণীত হওয়ার মধ্যে গুণগত কোনো পার্থক্য নির্দেশ করাও চলে না।
দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সংসদে আলোচনা না হলেও সংসদ অধিবেশন চলাকালে যে সেখানে মৌনতা বিরাজ করে এমন নয়। সেখানে দেখা যায়, অনেক জোর কথাবার্তা এবং ওই জোর কথাবার্তার জন্য ‘ফ্লোর’ পাওয়ার প্রতিযোগিতা। বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সরকার পক্ষের লোকেরা যেসব বিষয়ে আলোচনা করেন, বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন, ভাঁড়ামি ও খিস্তিখেউড় করেন, সে কথা চিন্তা করলে অবাক হতে হয়। বিরোধী পক্ষের লোকেরা, সে যে দলেরই যখন হোক, অধিবেশনে উপস্থিত থাকলে তাদের এই জিহ্বা চর্চার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। উপরন্তু সরকার ও বিরোধী পক্ষ উভয়ে সংসদে উপস্থিত থাকলে খিস্তিখেউড় বেশ প্রাণবন্ত হয়!
এদিক দিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ: দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। এবারকার জাতীয় সংসদ যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং যেভাবে এই সংসদের সদস্যরা, বিশেষত সরকার দলীয় সদস্যরা আচরণ করছেন সেটা ভাঁড়ামি, খিস্তিখেউড়, অশ্লীলতা ইত্যাদি দিক দিয়ে পূর্ববর্তী যে কোনো সংসদের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। শেখ হাসিনার এক আত্মীয়, সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে নিয়ে গণ্যমান্য সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা নিজেদের শিক্ষা সংস্কৃতির ভাণ্ডার উজাড় করে দিয়ে যেসব কথাবার্তা বলছেন তা শুনলে কানে আঙুল দিতে হয়। বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে তারা ‘অমানুষ’, ‘কুটনি বুড়ি’ ইত্যাদি অশ্লীল আখ্যা দান করে তার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত জাতীয় সংসদে কোনো প্রকৃত নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় স্পিকার দেখা যায়নি। কাজেই আওয়ামী লীগের স্পিকার সাহেব এসব মন্তব্য মিনিট্স্ থেকে এক্সপাঞ্জ বা বাতিল না করে তা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেকর্ড করে রেখেছেন! এসব দেখে পরবর্তী প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে কী ধারণা করবে এ নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই! তাদের ধারণা, এই অশ্লীল গালাগালি রেকর্ড করে রাখলেই বাজিমাত্ করা যায়। কাজেই এসব কাজ করে তারা বাজিমাতের আনন্দে বস্ফািরিত!
বর্তমান জাতীয় সংসদের করুণ অবস্থা ভালোভাবে বোঝা যাবে অন্য একটি বিষয়ের দিকে তাকালে। এই অধিবেশনে হঠাত্ করে শেখ হাসিনা ও তার এক আত্মীয় (যাকে সভ্য আচরণের জন্য কেউ দোষারোপ করতে পারবে না) জাতীয় সংসদে জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে এমন কথাবার্তা বললেন, যা শুনে যে কোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষেরই থ হওয়ার কথা। তারা বললেন, জিয়ার কবর বলে যা পরিচিত সেখানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লাশ ছিল না। শুধু একটা বাক্সকেই সেখানে খবর দেয়া হয়েছিল। তাদের এই বক্তব্যের কারণ, কেউই জিয়াউর রহমানের লাশ দেখেনি, তার কোনো ছবিও নেই। জিয়াউর রহমানের লাশ সম্পর্কিত এই কথাবার্তার বিষয় এখানে অবতারণার প্রয়োজন হতো না। যদি জাতীয় সংসদের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে বিষয়টির অবতারণা না হতো। জিয়াউর রহমানের লাশের ছবি তোলা হয়নি এটা ঠিক। এর একটা কারণ হতে পারে যে, চট্টগ্রামে তাকে সমাধিস্থ করার কয়েকদিন পর তার লাশ ঢাকায় এনে দ্বিতীয়বার সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এই সময়ে লাশের যে অবস্থা হয়েছিল সেটা ছবি তুলে রাখার মতো নয়। কোথায় তাকে প্রথম সমাধিস্থ করা হয়েছিল সে বিষয়ে তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তার সমাধি চিহ্নিত করে সেখান থেকে লাশ উঠিয়ে ঢাকায় নিয়ে আশা হয়েছিল। কাজেই এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে কথাবার্তা বলা পায়ে পা দিয়ে গ্রাম্য মেয়েলি কায়দায় ঝগড়া ছাড়া আর কি? দ্বিতীয়ত, এ প্রসঙ্গে যেভাবে হাসিনা ও তার আত্মীয় খালি বাক্স কবর দেয়ার কথা বলেছেন, তাতে মনে হয় বাক্সটি কবর দেয়ার সময় কাদেরকে বাক্সটি খালি অবস্থায় দেখানো হয়েছিল এবং সেই চাক্ষুস অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তারা লাশ সমাধিস্থ করার পরিবর্তে শূন্য বাক্স মাটিচাপা দেয়ার কথা বলছেন! মজার ব্যাপার ওই যে, খালি বাক্স কবর দেয়ার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে হাসিনার আত্মীয় আবার এ কথাও বলছেন যে, ওই বাক্সতে যে লাশ ছিল তার ডিএনএ করা দরকার!
কেন এসব দরকার? দেশের জনগণের যে এর কোনো দরকার নেই এটা নিঃসংশয়ে বলা যায়। এ দরকার হলো, আওয়ামী লীগের নিজের। কাজেই জাতীয় সংসদে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে অক্ষম এই ভোট পাওয়া লোকরা প্রকৃত জনপ্রতিনিধি না হওয়ার কারণে নানা ধরনের আবোল-তাবোল কথাবার্তা বলে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনেই এসব বিষয়ের অবতারণা নতুনভাবে করছে। তা না হলে তাদের পূর্ববর্তী সরকারের আমলে পাঁচ বছর তারা তো এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। এ হলো তাদের এক ‘নবআবিষ্কার’! এই আবিষ্কারই বা কীভাবে হলো? এর বৃত্তান্ত ও প্রমাণ জনগণ নিশ্চয়ই দাবি করতে পারেন, কারণ জনগণের পয়সায় সংসদে দাঁড়িয়ে এসব অশ্লীল আবোল-তাবোল কথা বলে সময় নষ্ট করা হচ্ছে। এর ক্ষতি বর্তাচ্ছে জনগণের ওপর।
শেখ হাসিনার উপরোক্ত আত্মীয়ের আচরণের মধ্যে আদব-কায়দার এমনই অভাব যে, বিরোধী দল অনেকদিন পর সংসদে আশার পরমুহূর্তেই তিনি আবার জিয়ার লাশের কথা তুলে সংসদে এমন অবস্থা তৈরি করেছেন যাতে বিরোধী দল ওয়াক আউট করতে বাধ্য হয়। একদিকে বিরোধী দলকে সংসদে আসতে বলা এবং অন্যদিকে তারা আশামাত্র তাদের সংসদ অধিবেশন ত্যাগ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা কোনো স্বাভাবিক রাজনৈতিক আচরণ নয়। এদের এই আচরণ যে, স্পিকারের চরম দলীয় আচরণের কারণেই সম্ভব হচ্ছে এটাও বলা প্রয়োজন।
কাজেই অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও প্রায় শিক্ষিত ভোটপ্রাপ্ত লোকদের দ্বারা গঠিত এই জাতীয় সংসদের কোনো প্রয়োজন বাংলাদেশের জনগণের নেই। নির্বাচনের ঠিক পর একবার জাতীয় সংসদের অধিবেশন ডেকে সরকার গঠনের পর এর কোনো প্রয়োজন আর নেই। সংসদ চালিয়ে সদস্যদের পকেট ভর্তি ছাড়া এর দ্বারা অন্য কোনো কাজ হয় না। কাজেই সরকার গঠিত হওয়ার পর জাতীয় সংসদের কোনো অধিবেশন না ডেকে অন্য অনেক সিদ্ধান্ত যেভাবে মন্ত্রিসভা কর্তৃক গৃহীত হয়, সেভাবে মন্ত্রিসভা কর্তৃক অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমেই দেশ শাসন করা যায়। দেশ জাতীয় সংসদের দ্বারা প্রণীত আইনের মাধ্যমে এখন যেভাবে শাসিত হচ্ছে তার থেকে এ ধরনের অর্ডিন্যান্স দ্বারা শাসিত হলে অবস্থার কোনো পার্থক্য হবে না।
এবার আশা যেতে পারে অন্য প্রসঙ্গে। শেখ হাসিনা খুবই পিতৃভক্ত। এতে দোষ তো কিছুই নেই, উপরন্তু এটা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু কোনো বিষয়েই মাত্রাহীনতা ঠিক নয়। বলা হয়, জলের অপর নাম জীবন। কিন্তু সেই জল যদি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করা যায় তাহলে ধয়ঁধ ঢ়ড়রংড়হরহম হয়ে মৃত্যু ঘটতে পারে। একথা বলা হচ্ছে বিশেষ একটি কারণে। দেশের বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে রাস্তাঘাট, নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির নামকরণ করা হয়ে থাকে। সেভাবে বাংলাদেশে শেখ মুজিবের নামে আনেক কিছুই নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে যা করছেন তার মধ্যে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্যতা ও শালীনতার অভাব খুব স্পষ্ট। এবার ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি নামকরণের ক্ষেত্রে এ ধরনের অনেক কিছু করলেও কয়েকটি রীতিমত রুচি বিরুদ্ধ, যার মধ্যে স্বল্প বুদ্ধি ও প্রতিহিংসাপরায়ণতা ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি ঢাকায় ভাসানীর নামে নভো থিয়েটার বা প্লানেটেরিয়ামের নাম পাল্টে রেখেছেন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নভো থিয়েটার’। এটা রুচিবিরুদ্ধ কাজ। তিনি ‘বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী কেন্দ্রে’র নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সম্মেলন কেন্দ্র’। এর মধ্যে রাজনৈতিক বোধবুদ্ধির কোনো পরিচয় নেই। কারণ, এই বিশাল ও ব্যয়বহুল ইমারতটি চীন সরকার নিজের পয়সায় তৈরি করে দুই দেশের বন্ধুত্বের স্বাক্ষর হিসেবে বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিল। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে নিজের পিতার নামে নামকরণ করা শুধু কুরুচির পরিচায়কই নয়, এর মধ্যে রাজনৈতিক অবিমৃষ্যকারিতার পরিচয়ও আছে। এতে চীনা সরকার স্বাভাবিকভাবেই বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এর ফলে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক। তৃতীয় যে কাজটি হাসিনা করেছেন তার ফলে তার সম্পর্কে মানুষের ধারণা মন্দ হতে বাধ্য। এটা হলো ‘জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের’ নাম পরিবর্তন করে ‘শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর’ করা। একজন পীর ও সাধু ব্যক্তির নামে এর নতুন নামকরণ করলেও জনগণের বোঝার অসুবিধে হয় না যে, এর মূল উদ্দেশ্য প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে জিয়াউর রহমানের নাম বাদ দেয়া। একমাত্র আওয়ামী লীগের দলীয় চামচা এবং তাদের ঘরানার কিছু বুদ্ধিজীবী ছাড়া এই অপকর্মের কোনো সমর্থক দেশে পাওয়া যাবে না। এর জন্য বিএনপির লোক হওয়ার প্রয়োজন কারও নেই।
শেখ হাসিনা এ কাজ করতে গিয়ে একজন বিখ্যাত পীরের নামের সঙ্গে জড়িত না করে সোজাসুজি জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন করে নিজের পিতা শেখ মুজিবের নাম অনুসারে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর’ রাখলেই ভালো করতেন। এটা না করা তার এক মস্ত ভুল। এই ভুল সংশোধনের জন্য তাকে সম্ভবত আরও বড় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চিন্তা করতে হচ্ছে।
এবার শেষ করতে হবে। তার আগে বলা দরকার যে, যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমি এই আলোচনা করলাম, সেটা অনুধাবন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং অক্ষম হয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও গণ্যমান্য কোনো কোনো বুদ্ধিজীবী, লেখক, সংস্কৃতি কর্মী যদি মনে করেন যে, আমি বিএনপির লোক তাতে বলার কিছু নেই। এজন্য তাদের করুণা করা ছাড়া আর করারই বা কি আছে? কারণ, এটা সাংস্কৃতিক সভ্যতার ব্যাপার। রাতারাতি টাকা-পয়সা লুটপাট করে ধনসম্পদের মালিক হওয়া যায়, কিন্তু সংস্কৃতি এমন জিনিস যা লুটপাট করে দ্রুত অর্জন করা যায় না। দীর্ঘ সময় সুশিক্ষা ও সুসংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়েই মানুষকে তা অর্জন করতে হয়।
No comments