রাজনীতি-অন্ধকারের বাসিন্দাও দূরের আলো দেখে by নুরুল ইসলাম বিএসসি

এখন যারা মনে করছেন শেখ হাসিনা মানুষের সমর্থন হারিয়েছেন, এরা বোকার স্বর্গেই বাস করছেন। এ দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনও বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা আছে বলেই দেশে এখনও প্রগতিবাদী মানুষগুলো বসবাস করতে পারছে। তিনি নিজেই বলেছেন, চোখ বুজলে কী হয় আল্লাহই জানেন ভাবস্রষ্টা লিখিয়েরাও কথা বানানোয় ওস্তাদ।


আমি ভাবস্রষ্টাও নই, লিখিয়েও নই। সাদামাটা চোখে যা দেখি, তাই ব্যক্ত করার চেষ্টা করি।
প্রতিদিন মির্জা ফখরুল হতাশা ছড়াচ্ছেন। এম কে আনোয়ারকে দেখলাম, মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ঘোষণার ওপর কথা বলছেন। তিনি কি লক্ষ্য করেছিলেন তার পাশে বসা ব্যক্তিটি কে? এককালের ৭ ছাত্রের হত্যার আসামি শফিউল আলম প্রধানই তার পাশে থেকে বক্তৃতা উপভোগ করছিলেন। শফিউল আলম প্রধানকে জেনারেল জিয়াই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। হাতি নিজের দেহ সম্পূর্ণ দেখে না, দেহের তুলনায় চোখ ছোট বলে। কিন্তু এম কে আনোয়ার তো বিরাট নেতা। তিনি কেন আশপাশে দেখবেন না বা নিজেদের কৃৎকর্মের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবেন না?
জেনারেল জিয়া বা বিএনপিদলীয় রাষ্ট্রপতি মার্জনা করলে সঠিক হয় আর রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মার্জনা করলে ভয়ঙ্কর হয়, এ কেমন কথা?
কাজটি ভালো কি মন্দ_ এ কথা উত্থাপন না করেও বলা যায়, একজন রাষ্ট্রপতি একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা যদি বিএনপির মূল উদ্দেশ্য হয়, তবে প্রতিবাদ করে কোনো ফল লাভ হওয়ার কথা নয়। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ইনিয়ে-বিনিয়ে যেভাবে কথাগুলো উপস্থাপন করেন, মনে হয় যেন তিনিই সব সঠিক কথা বলছেন। বাকি সবাই চালাকি করছেন, দেশের অমঙ্গল করছেন।
ঝন্টুও ফাঁসির আসামি ছিল। এই ঝন্টু ছিল ডাবল মার্ডারের আসামি। ঝন্টু কোনোদিন আদালতে আত্মসমর্পণ পর্যন্ত করেনি। ওই ঝন্টুকে ২২ বছর পর দেশে ডেকে এনে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রদর্শন করতে পারলে বিপ্লবকে কেন ক্ষমা প্রদর্শন করা যাবে না? বিপ্লব কোর্টে আত্মসমর্পণ করেছে। এখনও জেলখানাতেই আছে।
ঝন্টুর বিষয়ে মওদুদ আহমদ বলেছেন, সামরিক কোর্টে (তার ভাষায় ক্যাঙ্গারু কোর্ট) ফাঁসির আদেশ হয়েছিল, ওখানে সঠিক বিচার হয়নি বলে তিনি বলতে চেয়েছেন। অথচ ওই সামরিক সরকারপ্রধানের মন্ত্রিসভায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন। কই, ক্যাঙ্গারু কোর্ট চালানোর বিদ্বেষ পোষণকারী মওদুদ তো ওই দিন মন্ত্রিত্ব গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেননি? ড. আহমদ শরীফ ভাব বুদ্বুদ বইয়ের ৩৪ পৃষ্ঠায় ডিগবাজিপ্রিয় রাজনীতিক শিরোনামে মওদুদ আহমদ সম্পর্কে যে বিশ্লেষণ দিয়েছেন, এরপর আর কোনো শব্দের প্রয়োজন হয় না।
আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, মওদুদ আহমদ যখন আইনমন্ত্রী ছিলেন তার নির্দেশই তাহেরের ছেলেদের হত্যার আসামি করা হয়। বিচারই ছিল ফরমায়েশি। ফরমায়েশি বিচারে একজনের ফাঁসি হয়ে যাবে_ এ সভ্য সমাজে কেউ চিন্তাও করতে পারে না। কামরুল ইসলামের কথার সূত্র ধরে বলা যায়, রাষ্ট্রপতি একজন নিরীহ লোককে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন। সাংবিধানিকভাবে তিনি তা পারেন এবং এ বিষয়ের ওপর প্রতিবাদ করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা অবশ্যই বিফলে যাবে।
বিএনপির নেতৃত্ব মনে হয় অন্ধকারে বসে আছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে যে আলোর প্রদীপ জ্বলছে, অন্ধকারে বসেই তো দেখা যাওয়ার কথা। সব কিছুতেই ভ্রান্তি, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে যারা রাজনীতি করছেন, এরা জনগণের জন্য কোন সুখের নহর নিয়ে আসছেন জানি না। তবে তারাও তো এ দেশটা বহুদিন শাসন করেছেন। কই, চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন দেশে দেখা যায়নি। হ্যাঁ, এদের নেতাদের, এদের আত্মীয়স্বজনের এমনকি খালেদা জিয়ার ছেলেদের উন্নয়ন মানুষ প্রাণভরে দেখেছে। এ জন্যই গত নির্বাচনে এ দেশের মানুষ তাদের পরিত্যাগ করেছে।
এখন যারা মনে করছেন শেখ হাসিনা মানুষের সমর্থন হারিয়েছেন, এরা বোকার স্বর্গেই বাস করছেন। এ দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনও বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা আছে বলেই দেশে এখনও প্রগতিবাদী মানুষগুলো বসবাস করতে পারছে। তিনি নিজেই বলেছেন, চোখ বুজলে কী হয় আল্লাহই জানেন।
'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বেঁচে থাকুন যুগ যুগ ধরে। এ দেশের দুঃখী মানুষগুলো যাদের ধর্মের নামে দীর্ঘদিন শোষণ করেছে, তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। দেশটাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে টেনে আনুন। দেখবেন যারা অন্ধকারে বসে নানা জটিলতার সৃষ্টি করছে তারাও একদিন আলোতে বেরিয়ে আসবেন।'
পানে যে চুন ব্যবহার করা হয়, ওই চুন তার পাত্রসুদ্ধ ধ্বংস করে। কিন্তু ঘিয়ের পাত্র ঠিক থাকে। হিংসা চুনের মতো মনটাকে কলুষিত করে, পশুর পর্যায়ে নিয়ে যায়। রাজনীতিতে হিংসা পরিহার করে আলোর জগতে ফিরতেই হবে, তখনই দেশে শান্তি, সমৃদ্ধি, প্রগতির স্রোত বইবে। মানুষ ছাড়া সব প্রজাতির জ্ঞাতি চেতনা প্রবল। হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ, লোভ, লালসা না থাকলে প্রাণী হিসেবে মানুষেরও জ্ঞাতি চেতনা প্রবল থাকত। কালো, ধলো, আফ্রিকান, তামিল সবাই একাকার হতো। স্বার্থের প্রতিযোগিতায় মানুষ এখন বিভক্ত। এই প্রতিযোগিতা কৃষক, শ্রমিক, মজদুর থেকে উদ্ভব হয়নি, হয়েছে শিক্ষিত লোকের মাধ্যমে। রাজনীতি দেশের মঙ্গলের জন্য, ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য নয়। মির্জা ফখরুলরা যেভাবে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন, আগামীতে কী ভালো ফল বয়ে আসবে স্রষ্টাই জানেন।

নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য
 

No comments

Powered by Blogger.