পরিবেশ ধ্বংস ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন-কক্সবাজার সৈকতও গ্রাস হবে?

গ্রিক পৌরাণিক রাজা মিডাস দেবতার আশীর্বাদে অলৌকিক ক্ষমতা পেয়েছিলেন। তিনি যা-ই ছুঁতেন, তা-ই সোনা হয়ে যেত। বাংলাদেশে এখন এ রকম ক্ষমতার মালিক হয়ে গেছে একটি গোষ্ঠী। তারা যা-ই স্পর্শ করে, তা-ই তাদের সম্পত্তি হয়ে যায়। জাতীয় গর্ব কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দখল করে হোটেল-মোটেল,


সুপার মার্কেট, অ্যাপার্টমেন্ট বানানোর ধুম লেগে গেছে। এরই অংশ হিসেবে চলছে সৈকতের বালু তুলে নিচু জায়গা ভরাট, রাস্তা ও অবকাঠামো নির্মাণ। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে মামলা করেছে স্থানীয় একটি পরিবেশবাদী সংগঠন। আদালতের কাছ থেকে ন্যায্য প্রতিকারই এখন প্রার্থিত।
বাণিজ্য আর দখলের কবলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও পরিবেশের ঐতিহ্য, সৌন্দর্য, প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন হতে চলেছে। এসবের দাপটে সৈকতের মনমোহন ঝাউবন বিলুপ্ত হচ্ছে, ভবনের ভিড়ে সমুদ্র চোখের আড়াল হচ্ছে; কক্সবাজার হারাচ্ছে মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। হোটেল সি ক্রাউনসহ যেসব নামীদামি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তারা সৈকতে মৃত্যুফাঁদ তৈরির জন্যও দায়ী। সম্প্রতি সি ক্রাউনের সামনের গুপ্তখালে আটকা পড়ে যে তিন শিল্পী ও বিজ্ঞাপনকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন, সেসব গুপ্তখাল তৈরির জন্য বালু উত্তোলনকে দায়ী করেছে সৈকতের একমাত্র লাইফগার্ড স্টেশন। লুণ্ঠন ও প্রাণঘাতী আয়োজন, তাই দুজনে দুজনার। সরকার কি এসব দেখে না?
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন ঘোষিত এলাকা। সরকার অবৈধ দখল, উচ্ছেদ ও ইজারা বাতিলের নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর করেনি। উচ্চ আদালতের নির্দেশও পালন করেনি সরকারের নির্বাহী বিভাগ। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের দায়ের করা মামলাটি তাই আমলে নেওয়া হোক।
একশ্রেণীর ভূমিদস্যু ও ডেভেলপার সংস্থা স্থানীয় প্রশাসনকে হাত করে, উচ্চপর্যায়ে কলকাঠি নেড়ে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রতীর অজস্র অবৈধ স্থাপনায় ভরে ফেলেছে। তারা গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েও সৈকতের প্লট এবং হোটেল-মোটেলের কক্ষ ও অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে চলেছে। কক্সবাজারের ভূমি প্রশাসনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কি জবাবদিহির ঊর্ধ্বে? আমাদের বন, নদী, পাহাড়, সমুদ্র—সবকিছু মিডাসদের হাতে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না।

No comments

Powered by Blogger.