বহে কাল নিরবধি-ইরানকে ঘিরে প্রেসিডেন্ট ওবামার বিপজ্জনক খেলা by এম আবদুল হাফিজ
অতি অল্প সময় হাতে নিয়ে চারটি লক্ষ্য সামনে রেখে এগোচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। লক্ষ্যগুলো হলো পারমাণবিক বোমা ইরানের হাতে পৌঁছতে না দেওয়া, বৈশ্বিক অর্থনীতিকে আকস্মিক পতন থেকে বাঁচিয়ে রাখা, পোষ মানানো যায় না এমন এক ইসরায়েলকে সামলানো এবং নিজে পুনর্নির্বাচিত হওয়া।
লক্ষ্যগুলো এমন যে এর একটিও অনর্জিত থাকলে অন্য কোনোটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের আগেই ওবামা ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মতবিনিময় শুরু করেছিলেন। নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগেই তিনিসহ ইসরায়েলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল এবং তা হয়েছিল মূলত পারমাণবিক অস্ত্র প্রাপ্তি থেকে ইরানকে ঠেকাবার কৌশল নিয়ে। কোনো এক সূত্র অনুযায়ী ওবামার বক্তব্যে নেতানিয়াহু সন্তুষ্ট থাকলেও ওমাবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো বক্তব্য না থাকায় নেতানিয়াহু শতভাগ আশ্বস্ত হতে পারেননি।
ইসরায়েলি নেতৃত্বের সঙ্গে ওবামার আলোচনায় যা ছিল তা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ইরানের পরমাণু প্রতিরোধের (NPT) প্রতি অঙ্গীকার সংক্রান্ত। তবে ওবামাকে এই ইস্যুতে অত্যন্ত ওয়াকিবহাল মনে হয়েছিল, যদিও আলোচনাটি হয়েছিল তাঁর নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাস আগে। নেতানিয়াহু সূত্র থেকে আরো জানা যায়, ওবামা যখন ইরানের পারমাণবিকীকরণ প্রসঙ্গে কথা বলেন, তখন ইসরায়েলের নিরাপত্তা বা অন্য কোনো বিষয় তাঁর আলোচনায় স্থান পায়নি।
কিন্তু যখন উভয়েই ক্ষমতাসীন হন, তখন থেকেই অনেক ধারাবাহিক বৈঠক ও সংলাপের মধ্য দিয়ে পুরনো অস্বাচ্ছন্দ্য অব্যাহত থাকে। বিগত ১২ জানুয়ারিতে ওবামা নেতানিয়াহুকে ডেকে নেন একথা পরিষ্কার করতে যে ইরান প্রশ্নে আমেরিকার জাতীয় স্বার্থ কী এবং এ প্রসঙ্গে তাঁর গৃহীত নীতিই বা কী। বিভিন্নভাবে ওবামা প্রশাসন বারবার ইসরায়েলকে এই বার্তাই দিয়েছে যে আমেরিকার জন্য ইতিমধ্যেই আরোপিত অবরোধগুলোর একটি ফলাফল দেখার জন্য সময়ের প্রয়োজন। প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার উক্তি অনুযায়ী ইরানের ওপর আরোপিত এবারের অবরোধ খুবই শক্তিশালী। তাই হোয়াইট হাউস ইসরায়েলের এই মাত্রই যুদ্ধ শুরু করার পক্ষে নয়।
ওবামার জন্য তাঁর ইরান নীতি নিয়ে আঁকড়ে থাকা অনেকটা উচ্চ বাজিতে দাবা খেলার মতো, যার অনেক জটিল ডাইমেনশন আছে। এই খেলায় প্রেসিডেন্ট ওবামাকে একাধিক লক্ষ্য অর্জন করতে হবে, যা নিবন্ধের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। ওবামার উপদেষ্টারা যাঁরা অর্থনীতির বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন, তাঁদের ইতিমধ্যেই কংগ্রেসে মিত্র-সহকর্মীদের সঙ্গে মতান্তর ঘটেছে। অর্থনীতিতে যা-ই ঘটুক না কেন, এই মিত্ররা আবার সবচেয়ে আগ্রহী ইরানের পারমাণবিকীকরণ ঠেকাতে। এদিকে ইসরায়েলের জাতীয় স্বার্থ আবার সব সময়েই ওয়াশিংটনের অনুরূপ নয়। এ ছাড়াও ইরানের কল্পিত দুর্বলতা ভুল প্রমাণিত হলে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিশৃঙ্খলায় নিপতিত হতে পারে। এর ফলে আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকানরাই লাভবান হবে।
যা হোক, খেলা যতই এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে ঝুঁকির পরিমাণ। এদিকে নতুন করে আরোপিত অবরোধে ইরানই বা কতটুকু বিপর্যস্ত হচ্ছে বা হবে, তাও সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। তবে অবরোধের ঘোষণায়ই ইরানের রিয়াল ডুবতে শুরু করেছে। এর ওপর আবার ওবামা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ইরানি সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রিটেনও ইরানি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন স্থগিত রেখেছে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নও ইরান থেকে তেল আমদানির সব চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে ইরান তার জ্বালানি থেকে উপার্জিত রাজস্বের অন্তত এক-চতুর্থাংশ হারাবে।
ইতিমধ্যে রহস্যজনক ঘাতকের হাতে নিহত হয়েছেন ইরানের আরো এক পরমাণু বিজ্ঞানী। ওয়াশিংটনের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যে ইরান ইতিমধ্যেই আক্রান্ত- এমন একটি উপলব্ধির বশবর্তী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস সৃষ্টিতে প্রবৃত্ত হতে পারে। কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হত্যার একটি ইরানি ষড়যন্ত্র ফাঁস করতে সক্ষম হয়েছে। আশ্চর্য নয় যে ইসরায়েলের মোসাদ গোয়েন্দা এজেন্সি সম্প্রতি ওয়াশিংটনে গিয়েছিল ইরানকে নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের আলোচনা সভায় যোগদানের জন্য।
ওই সভার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্মকর্তা থামির পার্দো ওবামা প্রশাসনের অনুভূতি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হতে চেয়েছিলেন এবং পরিণতি বুঝতে চেষ্টা করেছিলেন যে মার্কিনিদের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে ইরানের নিউক্লিয়ার সাইটে বোমা হামলা করলে কী হবে? পার্দো এতদুদ্দেশ্যে অনেক প্রশ্ন রেখেছিলেন: ইরানকে নিয়ে আমাদের (মার্কিনিদের) দৃষ্টিভঙ্গি কী? আমরা কি দেশটিতে বোমা হামলায় প্রস্তুত? এবং কখন তা সম্ভব হবে? ইত্যাদি। বরাবরের মতো এই প্রশ্নমালার উত্তরে ইসরায়েল কোনো কার্যকর তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকে। ইসরায়েল তার নিজের সামরিক প্রস্তুতির কথা গোপনই রাখে। তবে ব্রিংকম্যানশিপ তাদের একটি ফর্মুলা হতে পারে, যার মাধ্যমে তারাই ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আপস-মীমাংসায় বাধ্য করতে পারে।
গত জানুয়ারিতে যখন ইরান অবরোধের চাপ উপলব্ধি করতে শুরু করে, সে সময়ে কিন্তু ইরান প্রথমবারের মতো আলবিক পরিদর্শকদের ইরানে আসতে দিতে সম্মত হয়েছিল। যদিও ইরানিদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া চলে পবিত্র নগরী কুমের (Qum) ভূগর্ভস্থ স্থাপনায়। ইরানকে পরিদর্শকরা অধিক চাপ দিলে ইরানিরা আরো অস্পষ্ট আচরণ এবং তথ্য প্রদানে প্রবৃত্ত হতে পারে। এ অবস্থায় ইসরায়েল যদি হামলা চালায়, এটি সার্বজনীন সত্য যে মার্কিনিরা এতে জড়িয়ে পড়বে। সে অবস্থায় সারা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে দাবানল জ্বলে উঠবে এবং বিশ্ববাজারকে একটি অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনার মধ্যে ঠেলে দেবে।
এখন প্রশ্ন হলো যে এ অবস্থা থেকে বাঁচতে সংযম প্রয়োগে ওবামার কতটুকু প্রভাব আছে ইসরায়েলের ওপর! এবং কিভাবেই বা ওবামা একটি নিউক্লিয়ার ইরানকে ঠেকাবেন। গ্রহণযোগ্য তথ্যানুযায়ী ইরানের 'নিউক্লিয়ার' ইরানে পরিণত হওয়ার পথে এখন মাত্র এক-দশমাংশ কাজই বাকি রয়েছে। সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত ইরানের ব্যাপারে ওবামা রুজভেল্টের আপ্তবাক্য: Speak softly and carry a big stick অনুসরণ করতে চেয়েছেন। কখনো বা ওবামা ইরানের সঙ্গে New era of American-Iranian relations-এর পথ খুঁজছেন। ইরানের সঙ্গে শর্তহীন সংলাপের জন্য তাঁরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিস ক্লিনটন ওবামাকে 'আনাড়ি' বলেছেন।
এ পর্যন্ত ওবামার প্রচেষ্টা 'সকলি গরল ভেল'। তবু তাঁর প্রচেষ্টার সমাপ্তি নেই। যদিও পর্যবেক্ষকদের মতে নেতানিয়াহুর মতো একজন অনৈতিক শাসকের অধীনস্থ ইসরায়েলকে পাশে রেখে তিনি একটি বিপজ্জনক খেলাই খেলে যাচ্ছেন।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস ও কলামিস্ট
তবে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের আগেই ওবামা ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মতবিনিময় শুরু করেছিলেন। নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগেই তিনিসহ ইসরায়েলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল এবং তা হয়েছিল মূলত পারমাণবিক অস্ত্র প্রাপ্তি থেকে ইরানকে ঠেকাবার কৌশল নিয়ে। কোনো এক সূত্র অনুযায়ী ওবামার বক্তব্যে নেতানিয়াহু সন্তুষ্ট থাকলেও ওমাবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো বক্তব্য না থাকায় নেতানিয়াহু শতভাগ আশ্বস্ত হতে পারেননি।
ইসরায়েলি নেতৃত্বের সঙ্গে ওবামার আলোচনায় যা ছিল তা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ইরানের পরমাণু প্রতিরোধের (NPT) প্রতি অঙ্গীকার সংক্রান্ত। তবে ওবামাকে এই ইস্যুতে অত্যন্ত ওয়াকিবহাল মনে হয়েছিল, যদিও আলোচনাটি হয়েছিল তাঁর নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাস আগে। নেতানিয়াহু সূত্র থেকে আরো জানা যায়, ওবামা যখন ইরানের পারমাণবিকীকরণ প্রসঙ্গে কথা বলেন, তখন ইসরায়েলের নিরাপত্তা বা অন্য কোনো বিষয় তাঁর আলোচনায় স্থান পায়নি।
কিন্তু যখন উভয়েই ক্ষমতাসীন হন, তখন থেকেই অনেক ধারাবাহিক বৈঠক ও সংলাপের মধ্য দিয়ে পুরনো অস্বাচ্ছন্দ্য অব্যাহত থাকে। বিগত ১২ জানুয়ারিতে ওবামা নেতানিয়াহুকে ডেকে নেন একথা পরিষ্কার করতে যে ইরান প্রশ্নে আমেরিকার জাতীয় স্বার্থ কী এবং এ প্রসঙ্গে তাঁর গৃহীত নীতিই বা কী। বিভিন্নভাবে ওবামা প্রশাসন বারবার ইসরায়েলকে এই বার্তাই দিয়েছে যে আমেরিকার জন্য ইতিমধ্যেই আরোপিত অবরোধগুলোর একটি ফলাফল দেখার জন্য সময়ের প্রয়োজন। প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার উক্তি অনুযায়ী ইরানের ওপর আরোপিত এবারের অবরোধ খুবই শক্তিশালী। তাই হোয়াইট হাউস ইসরায়েলের এই মাত্রই যুদ্ধ শুরু করার পক্ষে নয়।
ওবামার জন্য তাঁর ইরান নীতি নিয়ে আঁকড়ে থাকা অনেকটা উচ্চ বাজিতে দাবা খেলার মতো, যার অনেক জটিল ডাইমেনশন আছে। এই খেলায় প্রেসিডেন্ট ওবামাকে একাধিক লক্ষ্য অর্জন করতে হবে, যা নিবন্ধের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। ওবামার উপদেষ্টারা যাঁরা অর্থনীতির বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন, তাঁদের ইতিমধ্যেই কংগ্রেসে মিত্র-সহকর্মীদের সঙ্গে মতান্তর ঘটেছে। অর্থনীতিতে যা-ই ঘটুক না কেন, এই মিত্ররা আবার সবচেয়ে আগ্রহী ইরানের পারমাণবিকীকরণ ঠেকাতে। এদিকে ইসরায়েলের জাতীয় স্বার্থ আবার সব সময়েই ওয়াশিংটনের অনুরূপ নয়। এ ছাড়াও ইরানের কল্পিত দুর্বলতা ভুল প্রমাণিত হলে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিশৃঙ্খলায় নিপতিত হতে পারে। এর ফলে আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকানরাই লাভবান হবে।
যা হোক, খেলা যতই এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে ঝুঁকির পরিমাণ। এদিকে নতুন করে আরোপিত অবরোধে ইরানই বা কতটুকু বিপর্যস্ত হচ্ছে বা হবে, তাও সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। তবে অবরোধের ঘোষণায়ই ইরানের রিয়াল ডুবতে শুরু করেছে। এর ওপর আবার ওবামা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ইরানি সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রিটেনও ইরানি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন স্থগিত রেখেছে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নও ইরান থেকে তেল আমদানির সব চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে ইরান তার জ্বালানি থেকে উপার্জিত রাজস্বের অন্তত এক-চতুর্থাংশ হারাবে।
ইতিমধ্যে রহস্যজনক ঘাতকের হাতে নিহত হয়েছেন ইরানের আরো এক পরমাণু বিজ্ঞানী। ওয়াশিংটনের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যে ইরান ইতিমধ্যেই আক্রান্ত- এমন একটি উপলব্ধির বশবর্তী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস সৃষ্টিতে প্রবৃত্ত হতে পারে। কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হত্যার একটি ইরানি ষড়যন্ত্র ফাঁস করতে সক্ষম হয়েছে। আশ্চর্য নয় যে ইসরায়েলের মোসাদ গোয়েন্দা এজেন্সি সম্প্রতি ওয়াশিংটনে গিয়েছিল ইরানকে নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের আলোচনা সভায় যোগদানের জন্য।
ওই সভার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্মকর্তা থামির পার্দো ওবামা প্রশাসনের অনুভূতি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হতে চেয়েছিলেন এবং পরিণতি বুঝতে চেষ্টা করেছিলেন যে মার্কিনিদের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে ইরানের নিউক্লিয়ার সাইটে বোমা হামলা করলে কী হবে? পার্দো এতদুদ্দেশ্যে অনেক প্রশ্ন রেখেছিলেন: ইরানকে নিয়ে আমাদের (মার্কিনিদের) দৃষ্টিভঙ্গি কী? আমরা কি দেশটিতে বোমা হামলায় প্রস্তুত? এবং কখন তা সম্ভব হবে? ইত্যাদি। বরাবরের মতো এই প্রশ্নমালার উত্তরে ইসরায়েল কোনো কার্যকর তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকে। ইসরায়েল তার নিজের সামরিক প্রস্তুতির কথা গোপনই রাখে। তবে ব্রিংকম্যানশিপ তাদের একটি ফর্মুলা হতে পারে, যার মাধ্যমে তারাই ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আপস-মীমাংসায় বাধ্য করতে পারে।
গত জানুয়ারিতে যখন ইরান অবরোধের চাপ উপলব্ধি করতে শুরু করে, সে সময়ে কিন্তু ইরান প্রথমবারের মতো আলবিক পরিদর্শকদের ইরানে আসতে দিতে সম্মত হয়েছিল। যদিও ইরানিদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া চলে পবিত্র নগরী কুমের (Qum) ভূগর্ভস্থ স্থাপনায়। ইরানকে পরিদর্শকরা অধিক চাপ দিলে ইরানিরা আরো অস্পষ্ট আচরণ এবং তথ্য প্রদানে প্রবৃত্ত হতে পারে। এ অবস্থায় ইসরায়েল যদি হামলা চালায়, এটি সার্বজনীন সত্য যে মার্কিনিরা এতে জড়িয়ে পড়বে। সে অবস্থায় সারা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে দাবানল জ্বলে উঠবে এবং বিশ্ববাজারকে একটি অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনার মধ্যে ঠেলে দেবে।
এখন প্রশ্ন হলো যে এ অবস্থা থেকে বাঁচতে সংযম প্রয়োগে ওবামার কতটুকু প্রভাব আছে ইসরায়েলের ওপর! এবং কিভাবেই বা ওবামা একটি নিউক্লিয়ার ইরানকে ঠেকাবেন। গ্রহণযোগ্য তথ্যানুযায়ী ইরানের 'নিউক্লিয়ার' ইরানে পরিণত হওয়ার পথে এখন মাত্র এক-দশমাংশ কাজই বাকি রয়েছে। সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত ইরানের ব্যাপারে ওবামা রুজভেল্টের আপ্তবাক্য: Speak softly and carry a big stick অনুসরণ করতে চেয়েছেন। কখনো বা ওবামা ইরানের সঙ্গে New era of American-Iranian relations-এর পথ খুঁজছেন। ইরানের সঙ্গে শর্তহীন সংলাপের জন্য তাঁরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিস ক্লিনটন ওবামাকে 'আনাড়ি' বলেছেন।
এ পর্যন্ত ওবামার প্রচেষ্টা 'সকলি গরল ভেল'। তবু তাঁর প্রচেষ্টার সমাপ্তি নেই। যদিও পর্যবেক্ষকদের মতে নেতানিয়াহুর মতো একজন অনৈতিক শাসকের অধীনস্থ ইসরায়েলকে পাশে রেখে তিনি একটি বিপজ্জনক খেলাই খেলে যাচ্ছেন।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস ও কলামিস্ট
No comments