নদীতে বালু উত্তোলন-ভ্রান্ত নীতির বিপর্যয়
বালু উত্তোলন যে কেবল পরিবেশগত বিপর্যয় নয়, সামাজিক সংঘাতও অনিবার্য করে তুলছে, মুন্সীগঞ্জে বালুদস্যু ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষ তারই প্রমাণ। সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ধলেশ্বরী নদী ও খালে 'অবৈধ' বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে শনিবার সিরাজদিখান উপজেলার রাজানগর এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে।
ওই অঞ্চলে আগেও একই ইস্যুতে এ ধরনের রক্তারক্তি প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। ধলেশ্বরী থেকে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধেও মিছিল-সমাবেশ করেছে। কেবল মুন্সীগঞ্জ নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীর তলদেশ ও তীরবর্তী ভূমি থেকে ড্রেজার ব্যবহার করে কিংবা স্রেফ কোদালে কেটে বালি উত্তোলন বলতে গেলে মহোৎসবের আকার ধারণ করেছে। বালুদস্যু নামে নতুন এক অপরাধী গোষ্ঠীও সমাজে পরিচিতি পেয়েছে। তাদের বেপরোয়া বালু তোলার কারণে অনেক সময় সেতু ও বাঁধসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকেও হুমকির মুখে পড়তে দেখা গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে জনপদ। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি এবং পঞ্চগড় ও সুনামগঞ্জের মতো কোনো কোনো স্থানে বালু উত্তোলনে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সর্বনাশা এ তৎপরতা থেমে নেই। এটা ঠিক যে, এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা অনেকাংশে দায়ী। বালুদস্যুরা রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও স্থানীয় প্রশাসনকে 'ম্যানেজ' করেই নদীতে নামে। কিন্তু বালু উত্তোলন বন্ধে প্রধান বাধা নীতিগত বিভ্রান্তি। কারণ বালু উত্তোলন সবক্ষেত্রে 'অবৈধ' নয়। ২০১০ সালের বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে 'পরিকল্পিতভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন ও বিপণন' উৎসাহিত করা হয়েছে। সেই সুযোগই গ্রহণ করেছে বালুদস্যুরা। ইজারা ব্যবস্থায় তাদের জন্য নির্ধারিত আয়তন ও পরিমাণের অনেক বেশি বালু তুলে থাকে। ওই আইনে যে ধরনের জায়গায় বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা আছে, ইজারাদাতা জেলা প্রশাসনকেও তা কমই মেনে চলতে দেখা যায়। বালু উত্তোলনে সরকার যে রাজস্ব পায়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যগত ক্ষতি তার থেকে অনেক বেশি। বালু উত্তোলনের বিরূপ প্রভাবে নদী ভাঙন ও ভরাটও বাড়ছে। আমরা মনে করি, অবৈধ বালু উত্তোলন কঠোর হস্তে দমন তো বটেই, খোদ আইনটি নিয়েও পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
No comments