আইন-শৃঙ্খলা-পুলিশের ভুলের মাশুল দেয় রাষ্ট্র by মযহারুল ইসলাম বাবলা
বস্তুত আমাদের পুলিশ জনগণের সেবক নয়। সেবক কেবল ক্ষমতাসীন শাসকদের। জনগণের দাবি আদায়ের সংগ্রামে, গণতান্ত্রিক অধিকার পালনে পুলিশ লেলিয়ে দমনাভিযান পরিচালিত করে আসছে দেশের প্রতিটি সরকার। কোনো সরকারের আমলে পুলিশ নিরপেক্ষতার নজির স্থাপন করতে পারেনি
কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছিলেন_ 'রাস্তায় করিনি কাণ্ড পুলিশে মেরেছে।' অর্থাৎ বিনা অপরাধে রাস্তায় পুলিশের মার খেতে হয়েছে। বাস্তবেও এর ব্যত্যয় আমরা দেখি না। যাকে-তাকে ধরে পেটানোর অধিকার পুলিশ রাখে। তা সে প্রকৃত অপরাধী হোক বা না হোক। পুলিশের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই নাগরিকদের ভাগ্য যেন নির্ধারিত। পুলিশের অনাচারের বিরুদ্ধে মামলা করে দায়ী পুলিশের শাস্তি নিশ্চিত হলে এমন ঘটনা ধারাবাহিকভাবে চলতে পারত না। দেশ যে ক্রমেই পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত, এতে দ্বিমতের অবকাশ নেই। নিরপরাধ জনগণের ওপর পুলিশি বর্বরতায় ক্ষমতাসীন সরকার বিব্রত হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পুলিশের পক্ষেই সাফাই গেয়ে থাকে এবং আক্রান্ত নিরপরাধীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সামান্য দ্বিধা-সংকোচ করে না। বিগত জোট সরকারের শাসনামলে এবং বর্তমান মহাজোট সরকারের শাসনামলে পুলিশ প্রশ্নে তাদের উভয়ের অবস্থান এক এবং অভিন্ন। নির্বাচিত উভয়ের শাসনামলে এ ক্ষেত্রে সামান্য পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেশের সংবিধান অনুযায়ী জনগণের ভোটে মাত্র পাঁচ বছরের মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারগুলো ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নিজেদের দেশের শেষ সরকার মনে করে। জনগণের সেই ক্ষমতা প্রয়োগে যে তাদের অবস্থান কোথা থেকে কোথায় গিয়ে পেঁৗছবে, ক্ষমতায় থাকাবস্থায় সে বিবেচনা পর্যন্ত করে না। যার মাশুল তাদেরই দিতে হয় পরবর্তী নির্বাচনে।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ কার্যত জনগণের সেবক। জনগণের জানমালের হেফাজতকারী। মানুষের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদেরই। জনগণের অর্থেই লালিত-পালিত পুলিশ এবং পুলিশের সমস্ত ব্যয় জনগণের অর্থেই মেটানো হয়ে থাকে। অথচ রাষ্ট্রের পুলিশ জনগণের পক্ষে নয়। বিপক্ষে। কেবল ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর পক্ষে এবং তাদেরই পেটোয়া মাস্তানরূপে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করে আসছে।
উন্নত বিশ্বে পুলিশ জনগণের সবচেয়ে আস্থাভাজন সেবক এবং নিকট বন্ধু। বিপদগ্রস্তদের নিরাপদ আশ্রয়। অথচ আমাদের দেশে সম্পূর্ণ বিপরীত। পুলিশের নাম শুনলেই মানুষ আঁতকে ওঠে। অজানা আতঙ্কে নিরপরাধ মানুষও শঙ্কিত হয়। পুলিশকে ভয় করে। মানুষ হয়েও আমাদের পুলিশ মানবিক ইমেজ গড়তে পারেনি। ভয়ঙ্কর অমানবিক নিপীড়ক হিসেবেই খ্যাতি অর্জন করেছে। শাসকদের আদেশ-নির্দেশ পালনেই অধিক তৎপর তারা। এতে সামান্য বাছ-বিচারের তোয়াক্কা পর্যন্ত করে না। পাকিস্তানি আমলে লাঠিধারী বাঙালি পুলিশদের আমরা ঠোলা বলতাম। করতাম ব্যঙ্গ-রসিকতাও। ঊনসত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে আন্দোলনকারীদের প্রতি বাঙালি পুলিশ সদস্যদের পক্ষপাত দেখেছি। অবাঙালি কর্তাদের অনেক আদেশ-নির্দেশ নানা অজুহাতে উপেক্ষা করতেও দেখেছি। চাকরির স্বার্থে যতটুকু না করা নয় ততটুকুই করত। আজকের পুলিশের মতো ভয়ঙ্কর ছিল না। ছিল যথেষ্ট সহনশীল। স্বাধীন দেশে স্বজাতি পুলিশ নিপীড়ন-নিষ্ঠুরতায় অতীতের বিজাতীয় পুলিশকে পর্যন্ত হার মানিয়েছে।
স্বাধীন দেশের রাষ্ট্র বদলায়নি। হয়নি গণমুখীও। রয়ে গেছে সাবেকি আমলের ধারাবাহিকতায়। এ দেশের বেসামরিক আমলাতন্ত্র সব আমলেই সুবিধা ভোগ করেছে। সামরিক শাসনামলে যেমন, তেমনি নির্বাচিত সরকারের শাসনামলেও। পুলিশও তদ্রূপ। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি-টিয়ার শেল ছুড়েছে। নির্বাচিত সরকারের শাসনামলেও একই কায়দায় দমন-পীড়ন জারি রেখেছে। নিষ্ঠুরতার সব রেকর্ড একে একে ভেঙেছে পুলিশ। নিজেদের কেবলই ক্ষমতাসীন সরকারের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে প্রমাণ দিয়েছে। পুলিশের প্রতি ক্ষমতাসীন সরকারগুলো মাত্রাতিরিক্ত তুষ্ট।
বস্তুত আমাদের পুলিশ জনগণের সেবক নয়। সেবক কেবল ক্ষমতাসীন শাসকদের। জনগণের দাবি আদায়ের সংগ্রামে, গণতান্ত্রিক অধিকার পালনে পুলিশ লেলিয়ে দমনাভিযান পরিচালিত করে আসছে দেশের প্রতিটি সরকার। কোনো সরকারের আমলে পুলিশ নিরপেক্ষতার নজির স্থাপন করতে পারেনি। আমাদের শাসক দুই প্রধান দলের যে দল ক্ষমতার বাইরে থাকে তারাও রেহাই পায় না পুলিশের বর্বরতা থেকে। বিগত জোট সরকারের শাসনামলে যেমন পুলিশের নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগ করতে হয়েছিল আওয়ামী লীগসহ বিরোধীদের। বর্তমান মহাজোট সরকারের শাসনামলে বিএনপি জোটকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। পুলিশের অপকীর্তি-অনাচারের মাশুল দিতে হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক জনগণকে। বর্তমান ব্যবস্থায় এর থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা-উপায় কোনোটিই নেই। গণতান্ত্রিক-মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পরিত্রাণ নেই।
মযহারুল ইসলাম বাবলা : সংস্কৃতিকর্মী
দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ কার্যত জনগণের সেবক। জনগণের জানমালের হেফাজতকারী। মানুষের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদেরই। জনগণের অর্থেই লালিত-পালিত পুলিশ এবং পুলিশের সমস্ত ব্যয় জনগণের অর্থেই মেটানো হয়ে থাকে। অথচ রাষ্ট্রের পুলিশ জনগণের পক্ষে নয়। বিপক্ষে। কেবল ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর পক্ষে এবং তাদেরই পেটোয়া মাস্তানরূপে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করে আসছে।
উন্নত বিশ্বে পুলিশ জনগণের সবচেয়ে আস্থাভাজন সেবক এবং নিকট বন্ধু। বিপদগ্রস্তদের নিরাপদ আশ্রয়। অথচ আমাদের দেশে সম্পূর্ণ বিপরীত। পুলিশের নাম শুনলেই মানুষ আঁতকে ওঠে। অজানা আতঙ্কে নিরপরাধ মানুষও শঙ্কিত হয়। পুলিশকে ভয় করে। মানুষ হয়েও আমাদের পুলিশ মানবিক ইমেজ গড়তে পারেনি। ভয়ঙ্কর অমানবিক নিপীড়ক হিসেবেই খ্যাতি অর্জন করেছে। শাসকদের আদেশ-নির্দেশ পালনেই অধিক তৎপর তারা। এতে সামান্য বাছ-বিচারের তোয়াক্কা পর্যন্ত করে না। পাকিস্তানি আমলে লাঠিধারী বাঙালি পুলিশদের আমরা ঠোলা বলতাম। করতাম ব্যঙ্গ-রসিকতাও। ঊনসত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে আন্দোলনকারীদের প্রতি বাঙালি পুলিশ সদস্যদের পক্ষপাত দেখেছি। অবাঙালি কর্তাদের অনেক আদেশ-নির্দেশ নানা অজুহাতে উপেক্ষা করতেও দেখেছি। চাকরির স্বার্থে যতটুকু না করা নয় ততটুকুই করত। আজকের পুলিশের মতো ভয়ঙ্কর ছিল না। ছিল যথেষ্ট সহনশীল। স্বাধীন দেশে স্বজাতি পুলিশ নিপীড়ন-নিষ্ঠুরতায় অতীতের বিজাতীয় পুলিশকে পর্যন্ত হার মানিয়েছে।
স্বাধীন দেশের রাষ্ট্র বদলায়নি। হয়নি গণমুখীও। রয়ে গেছে সাবেকি আমলের ধারাবাহিকতায়। এ দেশের বেসামরিক আমলাতন্ত্র সব আমলেই সুবিধা ভোগ করেছে। সামরিক শাসনামলে যেমন, তেমনি নির্বাচিত সরকারের শাসনামলেও। পুলিশও তদ্রূপ। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি-টিয়ার শেল ছুড়েছে। নির্বাচিত সরকারের শাসনামলেও একই কায়দায় দমন-পীড়ন জারি রেখেছে। নিষ্ঠুরতার সব রেকর্ড একে একে ভেঙেছে পুলিশ। নিজেদের কেবলই ক্ষমতাসীন সরকারের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে প্রমাণ দিয়েছে। পুলিশের প্রতি ক্ষমতাসীন সরকারগুলো মাত্রাতিরিক্ত তুষ্ট।
বস্তুত আমাদের পুলিশ জনগণের সেবক নয়। সেবক কেবল ক্ষমতাসীন শাসকদের। জনগণের দাবি আদায়ের সংগ্রামে, গণতান্ত্রিক অধিকার পালনে পুলিশ লেলিয়ে দমনাভিযান পরিচালিত করে আসছে দেশের প্রতিটি সরকার। কোনো সরকারের আমলে পুলিশ নিরপেক্ষতার নজির স্থাপন করতে পারেনি। আমাদের শাসক দুই প্রধান দলের যে দল ক্ষমতার বাইরে থাকে তারাও রেহাই পায় না পুলিশের বর্বরতা থেকে। বিগত জোট সরকারের শাসনামলে যেমন পুলিশের নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগ করতে হয়েছিল আওয়ামী লীগসহ বিরোধীদের। বর্তমান মহাজোট সরকারের শাসনামলে বিএনপি জোটকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। পুলিশের অপকীর্তি-অনাচারের মাশুল দিতে হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক জনগণকে। বর্তমান ব্যবস্থায় এর থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা-উপায় কোনোটিই নেই। গণতান্ত্রিক-মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পরিত্রাণ নেই।
মযহারুল ইসলাম বাবলা : সংস্কৃতিকর্মী
No comments