অর্থনীতি ও রাজনীতি-অস্থিরতা এড়াতে হলে...
অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শনিবার শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সংঘাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
তার সঙ্গে দ্বিমত করেননি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিসহ সভায় উপস্থিত অন্যরাও। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উদ্যোক্তারা তার সঙ্গে আরও যোগ করেছেন নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধা সম্প্রসারণের ইস্যুটি। তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা সংকোচন নীতির সমালোচনা করে বলেছেন, বাজারে খাদ্যদ্রব্যের বর্ধিত মূল্যই এ হার (মূল্যস্ফীতি) বাড়ার জন্য দায়ী এবং এর সঙ্গে ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধি বা হ্রাস তেমন সম্পর্কিত নয়। খাদ্যের দাম বাড়ার কারণও তারা সুনির্দিষ্ট করেছেন_ আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং দেশের বাজারে সরবরাহ ও বিতরণের ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে অবশ্য সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও দায় এড়াতে পারেন না। চিনি ভোক্তাদের কাছে রীতিমতো তেতো হয়ে ওঠার জন্য বাজারে ব্যবসায়ীদের কারসাজি সৃষ্টিকে দায়ী করা হয় এবং তাকে অযৌক্তিক বলা যাবে না। রাজনৈতিক সংকট নিরসনেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উদ্যোগী ভূমিকা প্রত্যাশিত। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোতে ব্যবসায়ীদের প্রভাব ও কদর যথেষ্ট। জাতীয় সংসদেও তাদের প্রাধান্য সুস্পষ্ট। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করায় সচেষ্ট হতে তারা ভূমিকা রাখতে পারেন। অর্থমন্ত্রী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভারসাম্যহীন বৈদেশিক লেনদেন এবং বিনিয়োগ তুলনামূলক কম হওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে সুস্থিতি চেয়েছেন। এর সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ থাকার কথা নয়। কিন্তু আমাদের দেশের 'মানি না, মানব না' রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারা এমনই যে, রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াতে পারলেই বরং সরকারকে বেশি বিপদে ফেলা যাবে বলে বিরোধীরা মনে করে থাকে। এ অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব থাকে বেশি। প্রথমত, বিরোধীদের জন্য রাজপথ উত্তপ্ত করার সুযোগ যতটা সম্ভব সীমিত রাখা। জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে_ এমন কাজ করা থেকে সরকারকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। বিরোধীদের সাংগঠনিক শক্তি যতই থাকুক, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ত, বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার পথ সর্বদা শুধু খোলা রাখা নয়, এ জন্য কার্যকর উদ্যোগও গ্রহণ করা চাই। মতবিনিময় সভায় অর্থমন্ত্রী সহনশীল রাজনীতির অনুপস্থিতির জন্য খেদোক্তি করেছেন। এক্ষেত্রে সরকার এবং শাসক দলের দায়দায়িত্ব কতটা_ তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। সুশাসনের পাল্লা ক্রমেই ভারী করে চলা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফলে বিরোধীদের ওপর জাতীয় সংসদে ফিরে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি হবে। অর্থমন্ত্রী সরকারের প্রতি পাঁচ বছরের ম্যান্ডেটের কথা উল্লেখ করেছেন। বিরোধীদের এর প্রতি অবশ্যই মূল্য দিতে হবে। কিন্তু এটিও মনে রাখতে হবে, প্রকৃত ভাগ্যনিয়ন্তা হচ্ছে জনগণ। তাদের রোষে পতিত হওয়া নয়, বরং সরকারকে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যেতে হবে জনগণের কল্যাণে এবং এটি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির কাজ দুরূহ হয়ে উঠবে বৈকি।
No comments