যুক্তি তর্ক গল্প-হাটহাজারী: শুভবুদ্ধির জয় হোক by আবুল মোমেন
৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নন্দীরহাট ও হাটহাজারী সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যেসব আক্রমণ হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ বেশির ভাগ পত্রপত্রিকায় আসেনি। সম্ভবত এসব পত্রিকা বিষয়টির নাজুক বাস্তবতা এবং অনিশ্চিত প্রতিক্রিয়া ও পরিণতির কথা ভেবে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার অংশ হিসেবে খবরটি ফলাও করে প্রচার
করতে চায়নি। সরকারের দিক থেকেও একই রকম ভাবনা ও অনুরোধ ছিল। তবে এই অতিসংযত ভূমিকার ভালোমন্দ নিয়ে তর্ক হতে পারে।
চট্টগ্রাম ও ঢাকার অনেক বন্ধুর উৎকণ্ঠিত প্রশ্ন, অনুযোগ এবং হতাশার কথা শুনে নিজেই সরেজমিনে এলাকাটা দেখে আসার সিদ্ধান্ত নিই। বরাবরই আমার ভেতরে একটা গভীর বেদনা ও অপরাধবোধ কাজ করে, ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর থেকে এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কীভাবে ধারাবাহিক রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছে তা সংখ্যাগুরু মুসলিম সমাজ সঠিকভাবে কখনো উপলব্ধি করেনি বা করতে ততটা আগ্রহী নয় বলে। তাদের এই ঔদাসীন্যের ফলে ক্রমেই সমাজের ভূমি ও স্থাবর সম্পত্তিলোভী ক্ষমতাবান মানুষের আগ্রাসনেরও শিকার হয়ে চলেছে সমাজের দুর্বল অংশ, যার সিংহভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ। পরিসংখ্যান দিয়েই এটা প্রমাণ করা যায়।
এ দেশে সত্যিকার অর্থে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় না। দাঙ্গা অর্থে খুনোখুনি ধরলে ১৯৬৪-এর পরে আর হয়নি, কিন্তু সে-ও ছিল একতরফা—সংখ্যালঘুই আক্রান্ত হয়েছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত এবং এরপর ১৯৭৫-এর পর থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক নীতির ভিত্তিতে বিভাজন ও বৈষম্যের ধারা অব্যাহত ছিল। ১৯৯০-৯২ সালের বাবরি-মসজিদ-পরবর্তী উত্তেজনায় একশ্রেণীর মুসলমানের প্রতিক্রিয়ার চোট পোহাতে হয় এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে।
এবারের ঘটনাটা আলোচনার আগে জানিয়ে রাখি, হাটহাজারী বেশ প্রাচীন আলোকিত জনপদ। নন্দীরহাট, চৌধুরীহাট ও হাটহাজারী সদরে সম্পন্ন ও আলোকিত হিন্দু-মুসলিম পরিবার বহুকাল পাশাপাশি বাস করে আসছে। স্বনামধন্য সুরকার প্রয়াত সত্য সাহার বাড়ি নন্দীরহাটে, পঞ্চাশের দশকে বাংলার পল রোবসন নামে খ্যাত গণসংগীতশিল্পী হরিপাল পাশেই ফতেয়াবাদের মানুষ ছিলেন, আঞ্চলিক গানের বিখ্যাত জুটি শ্যাম-শেফালীর শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের বাড়িও এখানে, লোকসংগীতের অমর শিল্পী মলয় ঘোষ দস্তিদারও এ অঞ্চলের মানুষ। ষাটের দশকে কলকাতার রঙ্গমঞ্চের খ্যাতনামা অভিনেত্রী বাসবী নন্দীও এই নন্দীরহাটের মেয়ে। অন্যদিকে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক মাহবুব-উল আলম, নজরুলবান্ধব অকালপ্রয়াত কবি দিদারুল আলম, সাংবাদিক মঈনুল আলম, পাকিস্তানের প্রথম দৈনিক পূর্ব পাকিস্তানের সম্পাদক কবি আবদুস সালাম, শিল্পী সবিহ উল আলম প্রমুখ এই এলাকার মানুষ। নন্দীরহাটের কাছেই ফতেয়াবাদ আমাদের মামার বাড়ি হওয়ার সুবাদে শৈশব থেকেই এলাকাটি আমার চেনা। শৈশবেই দেখেছি মামাদের সঙ্গে সত্য সাহা, মলয় ঘোষ, হরিপালদের ভাব, বাড়িতে যাতায়াত, নিয়মিত আড্ডা এবং বাৎসরিক নাটকের আয়োজনে এলাকার হিন্দু-মুসলমান তরুণদের যৌথভাবে মেতে উঠতে। সুরকার সত্য সাহার বাড়ি আক্রান্ত হওয়া এবং বিশেষত তাঁর স্মৃতিমন্দির ভাঙচুর হওয়ার ঘটনায় আমার মনে পড়ে গেল গুজরাট দাঙ্গার পরে আনন্দবাজার পত্রিকায় সংগীতজ্ঞ কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের চিঠিটি। সেবার গুজরাটে দাঙ্গাকারীদের তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই পায়নি ভারতবিখ্যাত সংগীতসাধক আফতাব-এ মৌসিকি ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁর কবর। সেই ঘটনায় ক্ষুব্ধ কুমারপ্রসাদ চিঠিতে লেখেন, এই ঘটনায় ভারতের মহান ঐতিহ্য ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় আমরাও কি দেশের মহান মানবতার উত্তরাধিকার ক্ষুণ্ন করি না?
এবার হাটহাজারীর ঘটনাটির দিকে মনোযোগ দিই। আমাদের দলে ছিলেন রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বিএমএর সাবেক সভাপতি রশিদ-ই-মাহবুব, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার, এনজিওকর্মী কমল সেনগুপ্ত এবং চট্টগ্রামের কয়েকজন বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী। তা ছাড়া আমরা সঙ্গী করে নিই এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী শিল্পী অলক রায়কে। আমরা প্রথমে আলোচিত লোকনাথ মন্দিরের ধ্বংসকাণ্ড দেখি এবং সেখানকার মহিলা-পুরুষদের সঙ্গে কথাবার্তা বলি। তারপর আলোচনার কেন্দ্রে থাকা মসজিদটি দেখতে যাই। তখন আসরের নামাজ শেষ হওয়ায় সেখানে মসজিদের ইমাম ও প্রবীণ কয়েকজন মুসল্লিকে পেয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলি।
মুসলমানদের দিক থেকেই অভিযোগ ওঠে প্রথম। অভিযোগ ছিল, লোকনাথবাবার মন্দির থেকে (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে যে শোভাযাত্রা এলাকা প্রদক্ষিণ করেছিল সেটি থেকে নামাজের সময় (জোহর) মসজিদের সামনে ঢোলবাদ্য বাজানো হয়েছিল এবং মিছিলের শেষভাগ থেকে মসজিদের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। হিন্দুদের অভিযোগ ছিল, পাথর মারার কোনো ঘটনা না ঘটলেও বেশ কজন হিন্দু বালককে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করা হয়। তবে উভয় পক্ষই বলেছে যে এরপর উপস্থিত উভয় পক্ষের মুরব্বিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে একতরফাভাবে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছিলেন।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ঘটনা সেখানে থামেনি। মুসলিম সমাজে কারও কারও মধ্যে উত্তেজনা তখনো কাটেনি এবং তাতে এলাকায় আইনভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ইতিমধ্যে পুলিশও খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে, পাহারা বসে, আলাপ-আলোচনা চলতে থাকে। স্বভাবতই পুলিশ ও প্রশাসন উত্তেজিত মুসলিম সম্প্রদায়কে শান্ত করার দিকেই মনোযোগ বেশি দিয়েছে। যদিও ঘটনাটা নিয়ে হিন্দু তরুণদের মধ্যেও উত্তেজনার পারদ ছিল চড়া। বয়স্ক হিন্দু নেতারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ের মধ্যেও আশা নিয়ে বসে ছিলেন, হয়তো শান্তি আলোচনায় শরিক হওয়ার জন্য যেকোনো মুহূর্তে ডাক পাবেন এবং পরিস্থিতি আগের মতোই শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানে ফিরে যাবে। ঠিক এই অবস্থায় সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ৪০-৫০ জন দুুর্বৃত্ত মন্দিরে আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করে। এই আক্রমণ ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আঘাতের লক্ষ্য ছিল মন্দিরের দেবদেবী, ভাঙচুর হয়েছে জিনিসপত্র, আসবাব ইত্যাদি। লুটপাটও হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উপাচার্য মহোদয়ের গাড়িসহ চারটি গাড়ি ভেঙেছে মন্দিরের চত্বরে।
এর পরও কিন্তু এসপি-ডিসির উপস্থিতিতে মুসলিমদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। অথচ তার পরও সে রাতে মসজিদ আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে, ফজরের নামাজের সময় মসজিদ থেকে মাইকে প্ররোচনামূলক ঘোষণার অভিযোগ উঠেছে, সকালে রাস্তায় ব্যারিকেডও বসেছে, স্থানীয় এমপি আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সমঝোতা প্রয়াসে মুসলিম নেতারা কান দেননি। অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের ঘটনার সূত্রপাতেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো বড় দলের নেতারা ছুটে গেলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে না। এবার আওয়ামী লীগের তেমন নেতারা মাঠে নেমেছেন দেরিতে। ফলে জুমা নাগাদ উত্তেজনা বেড়েছে, সাম্প্রদায়িক স্লোগান উঠেছে, মারমুখী জনসমাগম মারাত্মক পর্যায়ে বেড়েছে এবং শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও প্রশাসনিক বাধাকে তুচ্ছ করে ব্যাপকভাবে আক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল। এই হামলায় ১০টি মন্দির, ১৫টি দোকান এবং চার-পাঁচটি বসতঘর পুড়েছে, ভাঙচুর হয়েছে, লুণ্ঠিত হয়েছে।
এখন দুটি দিক থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসন যে মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল তার গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে কেন তারা সংখ্যালঘুদের মন্দির ও ঘরবাড়ি রক্ষা করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিল না? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ হওয়ার পর রাতে মসজিদের দেয়াল ভাঙার মতো ঘটনা কীভাবে ঘটল? এ দুটো বিষয়ের উত্তর প্রশাসনকেই দিতে হবে। তৃতীয় একটি প্রশ্নও ওঠে। সকালে মুসলিম সমাজে উত্তেজনা বাড়া সত্ত্বেও প্রশাসন কেন সময়মতো ১৪৪ ধারা জারি করেনি?
আমরা যখন আসরের পর আক্রান্ত মসজিদে যাই তখন মসজিদের ইমাম ও কয়েকজন প্রবীণ মুসল্লির সঙ্গে কথা বলি। মসজিদটি মুসলিম পাড়ায় অবস্থিত, ইমাম সাহেবের বাসাও মসজিদের কাছেই, তা ছাড়া মসজিদের জন্য পুলিশ পাহারার ব্যবস্থাও ছিল। বাংলাদেশের যে বাস্তবতার সঙ্গে আমরা পরিচিত তাতে আক্রান্ত হওয়ার পর আরও আক্রমণের আশঙ্কায় থাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষে মুসলিম পাড়ার ভেতরে একটি মসজিদের দেয়াল হাতুড়ি পিটিয়ে ভাঙার মতো সাহস দেখানো স্বাভাবিক নয়। ইমাম ও মুসল্লিরা জানালেন, মসজিদ কারা ভেঙেছে তাঁরা জানেন না, ভাঙার কোনো শব্দও তাঁরা শোনেননি। বিষয়টা রহস্যজনক। শেষ পর্যন্ত গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের গ্রেপ্তার ও রাজমিস্ত্রি জসিমের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জানা যাচ্ছে কারা এই ষড়যন্ত্রটি ও অপকর্মটি করেছে। তারা কেবল মসজিদের দেয়াল ভাঙেনি, সকালে মসজিদের মাইক থেকে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক প্রচারণাও চালায়। এর ফলেই শুক্রবার সকাল থেকে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়।
এবার আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে এ রকম একটি ঘটনা ঘটলে তার প্রতিফল কী হয় সে বিষয়টিকে। ধর্মীয় স্থান আক্রান্ত হলে একটি পুরো সম্প্রদায়ের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার বোধ ছড়িয়ে পড়ে, আর সরাসরি বাসাবাড়ি বা দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যক্তিমানুষ তার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। আর এ ধরনের ভীতি ও শঙ্কা খুবই সংক্রামক, বিশেষত যখন দেখা যায় প্রশাসন সময়োচিত যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি, সংখ্যাগুরু সমাজের চাপের কাছে তারা দুর্বল। তদুপরি যখন দেখা যায় দেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি ও দল, এমনকি সামাজিক শক্তিও এ ধরনের আক্রমণ ঠেকাতে পারে না তখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মনের আস্থা নড়ে যায়, তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়ানক শঙ্কিত হয়ে পড়ে। আর ভূসম্পত্তির দিকে নজর যাদের তারা এই দুর্বলতার সুযোগ নিতে দেরি করে না। এই অভিজ্ঞতা বহুকালের।
সব ধরনের ঘটনাই আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা দেয়, সব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কিছু শিক্ষা পাই। হাটহাজারীর নন্দীরহাটের ঘটনা থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?
তিনটি বড় শিক্ষা পাই। সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে প্রশাসনের দিক থেকে কোনো রকম শৈথিল্য চলবে না। এতে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং সাংস্কৃতিক বহুত্বকে বোঝা, ধারণ ও এর প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করার বিষয়টি শিক্ষায় ও সংস্কৃতিচর্চায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত, যদি রাজনীতি বা সামাজিক প্রতিপত্তি বাড়ানোর কাজে ধর্মকে ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়ে তবে কেবল যে সামাজিক স্থিতি নষ্ট হয় তা নয়, আরও ব্যাপক ও মৌলিক ক্ষতি হয়।
অনেকে ইসলাম ও মুসলমানের সেবা করতে চাইছেন ইসলামের শিক্ষা ও নীতিকেই লঙ্ঘন করে। আজকের ক্ষমতান্ধ রাজনীতি ও মানুষের লোভ-লালসার দাপটে ধর্মের নামে অধর্ম হচ্ছে, এ আমরা সবাই জানি। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসা কীভাবে বাড়ছে এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হচ্ছে তা আমরা ভালোভাবেই জানি।
মানবসমাজ স্থিতি ও সম্প্রীতির মধ্যেই বিকশিত হয়, সফল হয়। আমাদের নবী ইসলামের প্রথম যুগে অন্য ধর্মের প্রতি—খ্রিষ্টান, ইহুদি ও প্রকৃতি পূজারী—কী ধরনের সংবেদনশীলতা, উদারতা প্রদর্শন করেছেন সেসব সবারই মনে রাখা উচিত।
আসুন, বিভেদ নয়, সম্প্রীতিচর্চার দিকে মনোযোগী হই। এই বাংলার সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক চর্চার মূল প্রতিপাদ্য হলো মানবতা। শাস্ত্র নয়, জাতি নয়, মানবতা—সবার ওপরে মানুষ সত্য, এটিই বাংলার শাশ্বত বাণী, এটিই বাঙালি মনীষার মর্মকথা। এ পথেই আমরা মানুষ থাকব, সফল হব।
আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।
চট্টগ্রাম ও ঢাকার অনেক বন্ধুর উৎকণ্ঠিত প্রশ্ন, অনুযোগ এবং হতাশার কথা শুনে নিজেই সরেজমিনে এলাকাটা দেখে আসার সিদ্ধান্ত নিই। বরাবরই আমার ভেতরে একটা গভীর বেদনা ও অপরাধবোধ কাজ করে, ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর থেকে এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কীভাবে ধারাবাহিক রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছে তা সংখ্যাগুরু মুসলিম সমাজ সঠিকভাবে কখনো উপলব্ধি করেনি বা করতে ততটা আগ্রহী নয় বলে। তাদের এই ঔদাসীন্যের ফলে ক্রমেই সমাজের ভূমি ও স্থাবর সম্পত্তিলোভী ক্ষমতাবান মানুষের আগ্রাসনেরও শিকার হয়ে চলেছে সমাজের দুর্বল অংশ, যার সিংহভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ। পরিসংখ্যান দিয়েই এটা প্রমাণ করা যায়।
এ দেশে সত্যিকার অর্থে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় না। দাঙ্গা অর্থে খুনোখুনি ধরলে ১৯৬৪-এর পরে আর হয়নি, কিন্তু সে-ও ছিল একতরফা—সংখ্যালঘুই আক্রান্ত হয়েছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত এবং এরপর ১৯৭৫-এর পর থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক নীতির ভিত্তিতে বিভাজন ও বৈষম্যের ধারা অব্যাহত ছিল। ১৯৯০-৯২ সালের বাবরি-মসজিদ-পরবর্তী উত্তেজনায় একশ্রেণীর মুসলমানের প্রতিক্রিয়ার চোট পোহাতে হয় এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে।
এবারের ঘটনাটা আলোচনার আগে জানিয়ে রাখি, হাটহাজারী বেশ প্রাচীন আলোকিত জনপদ। নন্দীরহাট, চৌধুরীহাট ও হাটহাজারী সদরে সম্পন্ন ও আলোকিত হিন্দু-মুসলিম পরিবার বহুকাল পাশাপাশি বাস করে আসছে। স্বনামধন্য সুরকার প্রয়াত সত্য সাহার বাড়ি নন্দীরহাটে, পঞ্চাশের দশকে বাংলার পল রোবসন নামে খ্যাত গণসংগীতশিল্পী হরিপাল পাশেই ফতেয়াবাদের মানুষ ছিলেন, আঞ্চলিক গানের বিখ্যাত জুটি শ্যাম-শেফালীর শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের বাড়িও এখানে, লোকসংগীতের অমর শিল্পী মলয় ঘোষ দস্তিদারও এ অঞ্চলের মানুষ। ষাটের দশকে কলকাতার রঙ্গমঞ্চের খ্যাতনামা অভিনেত্রী বাসবী নন্দীও এই নন্দীরহাটের মেয়ে। অন্যদিকে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক মাহবুব-উল আলম, নজরুলবান্ধব অকালপ্রয়াত কবি দিদারুল আলম, সাংবাদিক মঈনুল আলম, পাকিস্তানের প্রথম দৈনিক পূর্ব পাকিস্তানের সম্পাদক কবি আবদুস সালাম, শিল্পী সবিহ উল আলম প্রমুখ এই এলাকার মানুষ। নন্দীরহাটের কাছেই ফতেয়াবাদ আমাদের মামার বাড়ি হওয়ার সুবাদে শৈশব থেকেই এলাকাটি আমার চেনা। শৈশবেই দেখেছি মামাদের সঙ্গে সত্য সাহা, মলয় ঘোষ, হরিপালদের ভাব, বাড়িতে যাতায়াত, নিয়মিত আড্ডা এবং বাৎসরিক নাটকের আয়োজনে এলাকার হিন্দু-মুসলমান তরুণদের যৌথভাবে মেতে উঠতে। সুরকার সত্য সাহার বাড়ি আক্রান্ত হওয়া এবং বিশেষত তাঁর স্মৃতিমন্দির ভাঙচুর হওয়ার ঘটনায় আমার মনে পড়ে গেল গুজরাট দাঙ্গার পরে আনন্দবাজার পত্রিকায় সংগীতজ্ঞ কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের চিঠিটি। সেবার গুজরাটে দাঙ্গাকারীদের তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই পায়নি ভারতবিখ্যাত সংগীতসাধক আফতাব-এ মৌসিকি ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁর কবর। সেই ঘটনায় ক্ষুব্ধ কুমারপ্রসাদ চিঠিতে লেখেন, এই ঘটনায় ভারতের মহান ঐতিহ্য ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় আমরাও কি দেশের মহান মানবতার উত্তরাধিকার ক্ষুণ্ন করি না?
এবার হাটহাজারীর ঘটনাটির দিকে মনোযোগ দিই। আমাদের দলে ছিলেন রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বিএমএর সাবেক সভাপতি রশিদ-ই-মাহবুব, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার, এনজিওকর্মী কমল সেনগুপ্ত এবং চট্টগ্রামের কয়েকজন বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী। তা ছাড়া আমরা সঙ্গী করে নিই এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী শিল্পী অলক রায়কে। আমরা প্রথমে আলোচিত লোকনাথ মন্দিরের ধ্বংসকাণ্ড দেখি এবং সেখানকার মহিলা-পুরুষদের সঙ্গে কথাবার্তা বলি। তারপর আলোচনার কেন্দ্রে থাকা মসজিদটি দেখতে যাই। তখন আসরের নামাজ শেষ হওয়ায় সেখানে মসজিদের ইমাম ও প্রবীণ কয়েকজন মুসল্লিকে পেয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলি।
মুসলমানদের দিক থেকেই অভিযোগ ওঠে প্রথম। অভিযোগ ছিল, লোকনাথবাবার মন্দির থেকে (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে যে শোভাযাত্রা এলাকা প্রদক্ষিণ করেছিল সেটি থেকে নামাজের সময় (জোহর) মসজিদের সামনে ঢোলবাদ্য বাজানো হয়েছিল এবং মিছিলের শেষভাগ থেকে মসজিদের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। হিন্দুদের অভিযোগ ছিল, পাথর মারার কোনো ঘটনা না ঘটলেও বেশ কজন হিন্দু বালককে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করা হয়। তবে উভয় পক্ষই বলেছে যে এরপর উপস্থিত উভয় পক্ষের মুরব্বিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে একতরফাভাবে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছিলেন।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ঘটনা সেখানে থামেনি। মুসলিম সমাজে কারও কারও মধ্যে উত্তেজনা তখনো কাটেনি এবং তাতে এলাকায় আইনভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ইতিমধ্যে পুলিশও খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে, পাহারা বসে, আলাপ-আলোচনা চলতে থাকে। স্বভাবতই পুলিশ ও প্রশাসন উত্তেজিত মুসলিম সম্প্রদায়কে শান্ত করার দিকেই মনোযোগ বেশি দিয়েছে। যদিও ঘটনাটা নিয়ে হিন্দু তরুণদের মধ্যেও উত্তেজনার পারদ ছিল চড়া। বয়স্ক হিন্দু নেতারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ের মধ্যেও আশা নিয়ে বসে ছিলেন, হয়তো শান্তি আলোচনায় শরিক হওয়ার জন্য যেকোনো মুহূর্তে ডাক পাবেন এবং পরিস্থিতি আগের মতোই শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানে ফিরে যাবে। ঠিক এই অবস্থায় সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ৪০-৫০ জন দুুর্বৃত্ত মন্দিরে আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করে। এই আক্রমণ ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আঘাতের লক্ষ্য ছিল মন্দিরের দেবদেবী, ভাঙচুর হয়েছে জিনিসপত্র, আসবাব ইত্যাদি। লুটপাটও হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উপাচার্য মহোদয়ের গাড়িসহ চারটি গাড়ি ভেঙেছে মন্দিরের চত্বরে।
এর পরও কিন্তু এসপি-ডিসির উপস্থিতিতে মুসলিমদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। অথচ তার পরও সে রাতে মসজিদ আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে, ফজরের নামাজের সময় মসজিদ থেকে মাইকে প্ররোচনামূলক ঘোষণার অভিযোগ উঠেছে, সকালে রাস্তায় ব্যারিকেডও বসেছে, স্থানীয় এমপি আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সমঝোতা প্রয়াসে মুসলিম নেতারা কান দেননি। অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের ঘটনার সূত্রপাতেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো বড় দলের নেতারা ছুটে গেলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে না। এবার আওয়ামী লীগের তেমন নেতারা মাঠে নেমেছেন দেরিতে। ফলে জুমা নাগাদ উত্তেজনা বেড়েছে, সাম্প্রদায়িক স্লোগান উঠেছে, মারমুখী জনসমাগম মারাত্মক পর্যায়ে বেড়েছে এবং শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও প্রশাসনিক বাধাকে তুচ্ছ করে ব্যাপকভাবে আক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল। এই হামলায় ১০টি মন্দির, ১৫টি দোকান এবং চার-পাঁচটি বসতঘর পুড়েছে, ভাঙচুর হয়েছে, লুণ্ঠিত হয়েছে।
এখন দুটি দিক থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসন যে মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল তার গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে কেন তারা সংখ্যালঘুদের মন্দির ও ঘরবাড়ি রক্ষা করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিল না? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ হওয়ার পর রাতে মসজিদের দেয়াল ভাঙার মতো ঘটনা কীভাবে ঘটল? এ দুটো বিষয়ের উত্তর প্রশাসনকেই দিতে হবে। তৃতীয় একটি প্রশ্নও ওঠে। সকালে মুসলিম সমাজে উত্তেজনা বাড়া সত্ত্বেও প্রশাসন কেন সময়মতো ১৪৪ ধারা জারি করেনি?
আমরা যখন আসরের পর আক্রান্ত মসজিদে যাই তখন মসজিদের ইমাম ও কয়েকজন প্রবীণ মুসল্লির সঙ্গে কথা বলি। মসজিদটি মুসলিম পাড়ায় অবস্থিত, ইমাম সাহেবের বাসাও মসজিদের কাছেই, তা ছাড়া মসজিদের জন্য পুলিশ পাহারার ব্যবস্থাও ছিল। বাংলাদেশের যে বাস্তবতার সঙ্গে আমরা পরিচিত তাতে আক্রান্ত হওয়ার পর আরও আক্রমণের আশঙ্কায় থাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষে মুসলিম পাড়ার ভেতরে একটি মসজিদের দেয়াল হাতুড়ি পিটিয়ে ভাঙার মতো সাহস দেখানো স্বাভাবিক নয়। ইমাম ও মুসল্লিরা জানালেন, মসজিদ কারা ভেঙেছে তাঁরা জানেন না, ভাঙার কোনো শব্দও তাঁরা শোনেননি। বিষয়টা রহস্যজনক। শেষ পর্যন্ত গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের গ্রেপ্তার ও রাজমিস্ত্রি জসিমের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জানা যাচ্ছে কারা এই ষড়যন্ত্রটি ও অপকর্মটি করেছে। তারা কেবল মসজিদের দেয়াল ভাঙেনি, সকালে মসজিদের মাইক থেকে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক প্রচারণাও চালায়। এর ফলেই শুক্রবার সকাল থেকে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়।
এবার আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে এ রকম একটি ঘটনা ঘটলে তার প্রতিফল কী হয় সে বিষয়টিকে। ধর্মীয় স্থান আক্রান্ত হলে একটি পুরো সম্প্রদায়ের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার বোধ ছড়িয়ে পড়ে, আর সরাসরি বাসাবাড়ি বা দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যক্তিমানুষ তার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। আর এ ধরনের ভীতি ও শঙ্কা খুবই সংক্রামক, বিশেষত যখন দেখা যায় প্রশাসন সময়োচিত যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি, সংখ্যাগুরু সমাজের চাপের কাছে তারা দুর্বল। তদুপরি যখন দেখা যায় দেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি ও দল, এমনকি সামাজিক শক্তিও এ ধরনের আক্রমণ ঠেকাতে পারে না তখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মনের আস্থা নড়ে যায়, তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়ানক শঙ্কিত হয়ে পড়ে। আর ভূসম্পত্তির দিকে নজর যাদের তারা এই দুর্বলতার সুযোগ নিতে দেরি করে না। এই অভিজ্ঞতা বহুকালের।
সব ধরনের ঘটনাই আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা দেয়, সব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কিছু শিক্ষা পাই। হাটহাজারীর নন্দীরহাটের ঘটনা থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?
তিনটি বড় শিক্ষা পাই। সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে প্রশাসনের দিক থেকে কোনো রকম শৈথিল্য চলবে না। এতে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং সাংস্কৃতিক বহুত্বকে বোঝা, ধারণ ও এর প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করার বিষয়টি শিক্ষায় ও সংস্কৃতিচর্চায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত, যদি রাজনীতি বা সামাজিক প্রতিপত্তি বাড়ানোর কাজে ধর্মকে ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়ে তবে কেবল যে সামাজিক স্থিতি নষ্ট হয় তা নয়, আরও ব্যাপক ও মৌলিক ক্ষতি হয়।
অনেকে ইসলাম ও মুসলমানের সেবা করতে চাইছেন ইসলামের শিক্ষা ও নীতিকেই লঙ্ঘন করে। আজকের ক্ষমতান্ধ রাজনীতি ও মানুষের লোভ-লালসার দাপটে ধর্মের নামে অধর্ম হচ্ছে, এ আমরা সবাই জানি। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসা কীভাবে বাড়ছে এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হচ্ছে তা আমরা ভালোভাবেই জানি।
মানবসমাজ স্থিতি ও সম্প্রীতির মধ্যেই বিকশিত হয়, সফল হয়। আমাদের নবী ইসলামের প্রথম যুগে অন্য ধর্মের প্রতি—খ্রিষ্টান, ইহুদি ও প্রকৃতি পূজারী—কী ধরনের সংবেদনশীলতা, উদারতা প্রদর্শন করেছেন সেসব সবারই মনে রাখা উচিত।
আসুন, বিভেদ নয়, সম্প্রীতিচর্চার দিকে মনোযোগী হই। এই বাংলার সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক চর্চার মূল প্রতিপাদ্য হলো মানবতা। শাস্ত্র নয়, জাতি নয়, মানবতা—সবার ওপরে মানুষ সত্য, এটিই বাংলার শাশ্বত বাণী, এটিই বাঙালি মনীষার মর্মকথা। এ পথেই আমরা মানুষ থাকব, সফল হব।
আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।
No comments