সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস-রাজনৈতিকভাবে আমি কেন হুমকি হতে যাব?
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকার গতকাল বুধবার নিউইয়র্ক টাইমস-এর অনলাইন সংস্করণের ‘ইন্ডিয়া ইনক’-এ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের মুম্বাই সফর করেন। ওই সময় তাঁর এ সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়।
প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে নেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে সামাজিক ব্যবসার পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাঁর জোরপূর্বক প্রস্থান, ক্ষুদ্রঋণকে কেন্দ্র করে ভারতসহ অন্যত্র বিতর্কসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মুম্বাইভিত্তিক সাংবাদিক নেহা থিরানি। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।
প্রশ্ন: কয়েক বছর ধরে ক্ষুদ্রঋণ শিল্পটি অস্তিত্ব-সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কেন এটি আকর্ষণ হারাচ্ছে?
ইউনূস: দেখুন, এর কারণ হচ্ছে, প্রত্যেকেই এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। এটি অত্যন্ত পরিচিত বিষয়। অত্যন্ত সম্মানিত বিষয় এটি। যখনই আপনি ক্ষুদ্রঋণের কথা বলবেন, প্রত্যেকেই আপনাকে সহযোগিতা করতে চাইবেন। সুতরাং, তাঁরা এর সুযোগ নিতে চাইবেন এবং এর মাধ্যমে নিজেরা টাকা আয় করতে চাইবেন। এর ফলেই সব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রশ্ন: গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরে যেতে বাধ্য হওয়ার বিষয়ে আপনার চিন্তাটা কী?
ইউনূস: এটি একটি বেদনাদায়ক বিষয়—এর চেয়ে বেশি আমি কী আর বলতে পারি? এটি একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ছিল। এখানে কাণ্ডজ্ঞানের বিষয় ছিল না। এর কোনো অর্থ হয় না। কিন্তু এর ফলে গ্রামীণ ব্যাংক ঝুঁকিতে পড়েছে এবং এটি আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে।
আমার প্রস্থান কোনো বিষয় নয়। আমি সরকারকে এরই মধ্যে বলেছি, আমি যেতে চাই। আমি বলেছি, আপনারা আমাকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান করতে পারেন। এর ফলে আমার প্রস্থানের বিষয়টি মানুষ সহজভাবে গ্রহণ করতে পারবে। কারণ, আমি একেবারেই চলে যাচ্ছি না। আমি সহজেই একটা নির্বাহী পদ থেকে অনির্বাহী পদে চলে যাব।
তবে সরকারের ছিল অন্য পরিকল্পনা। তারা আমাকে সরিয়েছে এবং ওই পদে প্রতিস্থাপনের জন্য এখনো তারা নতুন কোনো লোক খুঁজে পায়নি। আমরা ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাংকটির মালিক হচ্ছে দরিদ্র মানুষ। ব্যাংকের শেয়ারের ৯৭ ভাগেরই মালিক ঋণগ্রহীতারা এবং সরকার মাত্র তিন ভাগের মালিক।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কীভাবে বর্ণনা করবেন?
ইউনূস: তিনি কখনো এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেননি। ফলে আমি বুঝতে পারি না, আসলে কী ঘটেছে? শুধু বিভিন্ন অনুমানের কথা সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে। এসব অনুমানের একটা হচ্ছে, তিনি ভাবেন, আমি তাঁর জন্য রাজনৈতিক হুমকি। আমি বুঝি না, আমি কেন রাজনৈতিকভাবে হুমকি হতে যাব? এটি অনুমানের বিপরীত। তিনি কখনো বলেননি, আমি তাঁর জন্য রাজনৈতিক হুমকি। খুব সম্ভবত বলতেন, ‘কেন আমি তাঁকে রাজনৈতিক হুমকি মনে করব? তিনি কে? তিনি কিছুই না।’
এটি আপনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। আমাদের কখনো সামনাসামনি আলোচনা হয়নি। যদিও আমি তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে তাঁকে দেখতে পারি; কিন্তু এটি কখনোই ঘটেনি।
প্রশ্ন: ২০০৭ সালে আপনি ‘নাগরিক শক্তি’ নামে নতুন একটি দল গঠনের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। কী কারণে সিদ্ধান্ত পাল্টালেন?
ইউনূস: তখন একটি বিশেষ পরিস্থিতি ছিল। কারণ, ওই সময় দেশ চালাচ্ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা হাসিনাসহ সব শীর্ষপর্যায়ের নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছিল। সুতরাং, তখন একটা রাজনৈতিক শূন্যতা ছিল। উভয় দল—যারা আগে ক্ষমতায় ছিল, তাদের অনেক নেতা কারাগারে থাকায় তারা ছিল অসংহত। এবং নির্বাচন ঘনিয়ে আসছিল।
সুতরাং লোকজন অস্থির হয়ে পড়েছিল, কী ঘটবে! দেশ চালাবে কে! লোকজন আমার কাছে আসতে লাগল—সব নেতৃত্বস্থানীয় লোক। তাঁরা বলছিলেন, আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়া উচিত, যাতে পরবর্তী নির্বাচনে আমি নেতৃত্ব দিতে পারি। আমি বলেছিলাম, আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি জানি না। কিন্তু তাঁরা আমাকে চাপ দিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমি ‘হ্যাঁ’ বলি। আমি রাজনীতিতে যোগ দিই এবং একটা দল গঠনের কথা বলি। এরপর ক্রমে মানুষ কী ধরনের দল হবেসহ নানা ধরনের প্রশ্ন করে। আমিও উত্তর দিতে চেষ্টা করেছি। তবে দুই মাসের মধ্যে আমি জানিয়ে দিই, আমি আর দল করছি না। এই তো, আমি কখনোই দল গঠন করিনি।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মুম্বাইভিত্তিক সাংবাদিক নেহা থিরানি। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।
প্রশ্ন: কয়েক বছর ধরে ক্ষুদ্রঋণ শিল্পটি অস্তিত্ব-সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কেন এটি আকর্ষণ হারাচ্ছে?
ইউনূস: দেখুন, এর কারণ হচ্ছে, প্রত্যেকেই এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। এটি অত্যন্ত পরিচিত বিষয়। অত্যন্ত সম্মানিত বিষয় এটি। যখনই আপনি ক্ষুদ্রঋণের কথা বলবেন, প্রত্যেকেই আপনাকে সহযোগিতা করতে চাইবেন। সুতরাং, তাঁরা এর সুযোগ নিতে চাইবেন এবং এর মাধ্যমে নিজেরা টাকা আয় করতে চাইবেন। এর ফলেই সব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রশ্ন: গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরে যেতে বাধ্য হওয়ার বিষয়ে আপনার চিন্তাটা কী?
ইউনূস: এটি একটি বেদনাদায়ক বিষয়—এর চেয়ে বেশি আমি কী আর বলতে পারি? এটি একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ছিল। এখানে কাণ্ডজ্ঞানের বিষয় ছিল না। এর কোনো অর্থ হয় না। কিন্তু এর ফলে গ্রামীণ ব্যাংক ঝুঁকিতে পড়েছে এবং এটি আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে।
আমার প্রস্থান কোনো বিষয় নয়। আমি সরকারকে এরই মধ্যে বলেছি, আমি যেতে চাই। আমি বলেছি, আপনারা আমাকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান করতে পারেন। এর ফলে আমার প্রস্থানের বিষয়টি মানুষ সহজভাবে গ্রহণ করতে পারবে। কারণ, আমি একেবারেই চলে যাচ্ছি না। আমি সহজেই একটা নির্বাহী পদ থেকে অনির্বাহী পদে চলে যাব।
তবে সরকারের ছিল অন্য পরিকল্পনা। তারা আমাকে সরিয়েছে এবং ওই পদে প্রতিস্থাপনের জন্য এখনো তারা নতুন কোনো লোক খুঁজে পায়নি। আমরা ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাংকটির মালিক হচ্ছে দরিদ্র মানুষ। ব্যাংকের শেয়ারের ৯৭ ভাগেরই মালিক ঋণগ্রহীতারা এবং সরকার মাত্র তিন ভাগের মালিক।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কীভাবে বর্ণনা করবেন?
ইউনূস: তিনি কখনো এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেননি। ফলে আমি বুঝতে পারি না, আসলে কী ঘটেছে? শুধু বিভিন্ন অনুমানের কথা সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে। এসব অনুমানের একটা হচ্ছে, তিনি ভাবেন, আমি তাঁর জন্য রাজনৈতিক হুমকি। আমি বুঝি না, আমি কেন রাজনৈতিকভাবে হুমকি হতে যাব? এটি অনুমানের বিপরীত। তিনি কখনো বলেননি, আমি তাঁর জন্য রাজনৈতিক হুমকি। খুব সম্ভবত বলতেন, ‘কেন আমি তাঁকে রাজনৈতিক হুমকি মনে করব? তিনি কে? তিনি কিছুই না।’
এটি আপনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। আমাদের কখনো সামনাসামনি আলোচনা হয়নি। যদিও আমি তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে তাঁকে দেখতে পারি; কিন্তু এটি কখনোই ঘটেনি।
প্রশ্ন: ২০০৭ সালে আপনি ‘নাগরিক শক্তি’ নামে নতুন একটি দল গঠনের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। কী কারণে সিদ্ধান্ত পাল্টালেন?
ইউনূস: তখন একটি বিশেষ পরিস্থিতি ছিল। কারণ, ওই সময় দেশ চালাচ্ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা হাসিনাসহ সব শীর্ষপর্যায়ের নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছিল। সুতরাং, তখন একটা রাজনৈতিক শূন্যতা ছিল। উভয় দল—যারা আগে ক্ষমতায় ছিল, তাদের অনেক নেতা কারাগারে থাকায় তারা ছিল অসংহত। এবং নির্বাচন ঘনিয়ে আসছিল।
সুতরাং লোকজন অস্থির হয়ে পড়েছিল, কী ঘটবে! দেশ চালাবে কে! লোকজন আমার কাছে আসতে লাগল—সব নেতৃত্বস্থানীয় লোক। তাঁরা বলছিলেন, আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়া উচিত, যাতে পরবর্তী নির্বাচনে আমি নেতৃত্ব দিতে পারি। আমি বলেছিলাম, আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি জানি না। কিন্তু তাঁরা আমাকে চাপ দিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমি ‘হ্যাঁ’ বলি। আমি রাজনীতিতে যোগ দিই এবং একটা দল গঠনের কথা বলি। এরপর ক্রমে মানুষ কী ধরনের দল হবেসহ নানা ধরনের প্রশ্ন করে। আমিও উত্তর দিতে চেষ্টা করেছি। তবে দুই মাসের মধ্যে আমি জানিয়ে দিই, আমি আর দল করছি না। এই তো, আমি কখনোই দল গঠন করিনি।
No comments