ইন্টার্নি ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে রমেক হাসপাতালে রোগীদের বিড়ম্বনা by সরকার মাজহারুল মান্নান

ছাত্রলীগের এক গ্রুপের সভাপতি রেজওয়ানুর রহমান মিরাজের ওপর অপর গ্রুপের হামলাকারী সন্ত্রাসী ইন্টার্নি চিকিৎসকসহ অন্যদের গ্রেফতার এবং স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছে ইন্টার্নি চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশন।
এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। তবে রোগীদের ভোগান্তিতে ফেলে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নীরবতার অভিযোগ উঠেছে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা: সোহেল রানা নয়া দিগন্তকে জানান, কর্তৃপক্ষকে দেয়া দুই দফায় আলটিমেটামের পরেও ব্যবস্থা না নেয়ায় গতকাল সকাল ১০টা থেকে অনির্দিষ্টকালের এই কর্মবিরতি শুরু করেছি আমরা। তিনি জানান, ছাত্রলীগ নেতা মেরাজের ওপর হামলাকারী ইন্টার্নি চিকিৎসক ৩৬তম ব্যাচের ডা: পুলকের ইন্টার্নিশিপ বাতিল ও গ্রেফতার এবং ৩৬তম ব্যাচের সঞ্জীব কুমার সিংহ, সোহাগ হোসেন, শাফি, ইমরান হোসেন, ৩৮তম ব্যাচের রাহাত আল রাজীব, মেজবাউর রহমান মেজবাহ, রাইসুল ইসলাম নবীনকে কলেজ থেকে বহিষ্কার এবং ক্যাম্পাসে স্থায়ীভাবে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করার দাবিতে এই কর্মবিরতি চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে।

উল্লেখ্য অভিযুক্ত ইন্টার্নি চিকিৎসকদের মধ্যে রাজীব ও মেজবাহ ছাড়া অন্যরা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা। এর মধ্যে পুলক ও সঞ্জীব ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে নগরীর সবার কাছে এক নামে পরিচিতি লাভ করেছেন। এ ছাড়া বর্তমানে রাজীব কলেজের জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি ও মেজবাহ সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সুমন নয়া দিগন্তকে জানান, এসব সন্ত্রাসী মেরাজকে তার কক্ষে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। এতে মেরাজের বাম হাতের কবজির নিচে ও অনামিকাসহ কোমরের ওপরে বাঁ দিকে গভীর গর্ত হয়। তিনি জানান, তারা সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে তারা কলেজ হোস্টেলে আজীবন বহিষ্কৃত ও কলেজ থেকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার কিংবা চার্জশিট দিচ্ছে না। তিনি পুলিশের কড়া সমালোচনা করে বলেন, আজ শনিবার থেকে কলেজেও লাগাতার ধর্মঘট শুরু হবে।

অন্য দিকে জাসদ ছাত্রলীগের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ শাখা সভাপতি রাহাত-আল রাজীব নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, মিরাজ মুখোশধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হলেও ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সুমন, মুরাদ, অভি, রিফাতসহ আরো অনেকে জাসদ ছাত্রলীগের মেডিক্যাল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক মেজবাহুর রহমানের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করেছে। আবার তার নামেই মামলা দিয়েছে। তার ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা না হলে রংপুর অচল করে দেয়া হবে।

এ দিকে কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে রোগীরা চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন। গতকাল দিনভর হাসপাতালে অবস্থান করে দেখা গেছে, সেখানে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বড় ডাক্তাররা আসেন রাইতে। ছোট ডাক্তাররা দিনে আসেন। কিন্তু তারা এখনো আসতেছেন না। আমার শরীরটা আরো খারাপ হচ্ছে।’ বিশেষ করে মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে ইন্টার্নি চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা বেশি অসুবিধায় পড়েছেন। অনেকেই নিরুপায় হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি কিনিকে ভর্তি হচ্ছেন।
       

No comments

Powered by Blogger.