বাংলার নতুন মুখ by সুভাষ সাহা
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মেতেছে বাঙালি। যারা বাংলাদেশের মানুষ, তাদের হৃদয়তন্ত্রী একইভাবে কখনও নাচছে, কখনও উত্তেজনায় থরোথরো কাঁপছে, আবার কখনও বিষাদের বেহাগে কাতর হচ্ছে।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রামে যখন বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের খেলা চলছিল তখন প্রেস ক্লাব থেকে তেজগাঁও সমকাল অফিসে আসার পথে দেখা ফাঁকা রাস্তাই বলে দিচ্ছিল আজ আর কারও কোনো কাজ নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সবার হৃদয়ে একই সুর বাঁধতে পারে তেমন উপলক্ষ আমাদের স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪০ বছরের জীবনে খুব কমই এসেছে। এর মধ্য দিয়ে একটি চমৎকার জাতীয় ঐক্যের দ্যোতনা কি দেখা যাচ্ছে না? আমাদের এক মফস্বল সাংবাদিককে গতকাল সোমবারের খেলা নিয়ে জেলার জনগণের মনোভাব জানতে চাইলে তিনি যে উত্তর দেন তা আরও হৃদয়গ্রাহী। গ্রামে-গঞ্জে বিটিভির কল্যাণে টেলিভিশন সেটের সামনে বসে সবাই মিলে খেলা দেখার ধুম পড়েছে। মনে হচ্ছে ১৬ কোটি বাংলাদেশের মানুষ খেলা দেখছে। যারা রোগে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছেন তারাও কি অন্যদের কাছ থেকে খেলার খবর নিচ্ছেন না!
আসলে আমাদের জাতীয়ভাবে অনেক অর্জনকে আমরা সবাই একভাবে দেখি না বলেই অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অর্জনেও সবার হৃদয় একসঙ্গে ঝঙ্কৃত হয় না। স্বাধীনতা যুদ্ধে কার কতটুকু অবদান তা নিয়েও আমাদের জাতীয় মানসিকতা খণ্ডিত। ঈদে মুসলমানরা এক শাশ্বত আনন্দ ও ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হন আবার দুর্গাপূজায় হিন্দুরা মনের আকাশে নানা রঙের তারা সাজান। বৈশাখে বাঙালি যতটা প্রকৃতির নতুন সাজে নিজের সমাজ-সংসারকেও সাজান, তেমনিভাবে আদিবাসী বা অন্য জাতিগুলো আনন্দসাগরে সমানভাবে ভাসে না। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশের সব মানুষের আনন্দ-বেদনাকে বুকে নিয়ে এখন থর থর করে কাঁপছে। যে যেখানে আছে সেখান থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের মঙ্গল কামনায়, জয়ের পথে আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার জন্য মানত করছেন, কেউ কেউ রোজা-ব্রতও পালন করছেন। এমন পাগলপারা বাংলাদেশিদের আপনারা আর কবে কবে দেখেছেন হিসাব করে বলুন তো?
খেলা শুরুর সময় অনেকেই নাকি হিসাব করে বলাবলি করছিল, নেদারল্যান্ডস কত রান করতে পারে। কেউ দেড়শ'র মধ্যে আবার কেউ একটু বেশি পৌনে দুশ' আবার কেউ তাদের দুশ'র ঘর পার করিয়ে দিচ্ছিল। তবে খেলা যতই এগিয়ে চলছিল ততই এর পরিণতি স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। নেদারল্যান্ডস শেষ পর্যন্ত একশ' ষাট করায় বাংলাদেশের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল যেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে গিয়ে শুরুতেই তামিম ইকবাল আউট হয়ে গেলে মানুষের মনে শঙ্কা জাগে_ কি জানি কী হয়। কিন্তু অনেকগুলো ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশের বিজয়ে মানুষ আবার আনন্দে ভাসার উপসর্গ খুঁজে পেল। হোক না নেদারল্যান্ডসের মতো একটি দুর্বল টিমের সঙ্গে_ এই বিজয়ও গৌরবের। বাংলাদেশের সব মানুষ এবং বিশ্বের সব বাঙালির মন একসঙ্গে নেচে ওঠার উপলক্ষ হয়েছে এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট। আসলে একটা তীব্র সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে থাকতে থাকতে আমরা হাঁফিয়ে উঠেছি। আমরা আনন্দ চাই, উৎসব চাই_ এমন উৎসব যেটাতে সবাই একসঙ্গে মাতোয়ারা হতে পারি। বাঙালির মনোজগতে আমরাও পারি এমন একটা অদম্য আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে অলক্ষ্যে। জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এবং বিশ্বে সবার সঙ্গে সবার সংলাপের নতুন জগত আমাদের সব মানুষকেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু বন্ধ্যা রাজনীতি, অবক্ষয়িত সমাজ মানুষের সে আশাকে ফলবতী করতে অপারগ। তাই বিশ্বকাপ ক্রিকেট এই সন্ধিক্ষণে বাঙালির ও বাংলাদেশের সব নাগরিকের একসঙ্গে জেগে ওঠার, আনন্দে ভাসার অমূল্য সুযোগ। আমাদের ক্রিকেটাররা কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত মানুষের মনের এই স্বপ্নমাখা ভোরকে রবির আলোয় ভরে রাখুন না!
আসলে আমাদের জাতীয়ভাবে অনেক অর্জনকে আমরা সবাই একভাবে দেখি না বলেই অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অর্জনেও সবার হৃদয় একসঙ্গে ঝঙ্কৃত হয় না। স্বাধীনতা যুদ্ধে কার কতটুকু অবদান তা নিয়েও আমাদের জাতীয় মানসিকতা খণ্ডিত। ঈদে মুসলমানরা এক শাশ্বত আনন্দ ও ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হন আবার দুর্গাপূজায় হিন্দুরা মনের আকাশে নানা রঙের তারা সাজান। বৈশাখে বাঙালি যতটা প্রকৃতির নতুন সাজে নিজের সমাজ-সংসারকেও সাজান, তেমনিভাবে আদিবাসী বা অন্য জাতিগুলো আনন্দসাগরে সমানভাবে ভাসে না। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশের সব মানুষের আনন্দ-বেদনাকে বুকে নিয়ে এখন থর থর করে কাঁপছে। যে যেখানে আছে সেখান থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের মঙ্গল কামনায়, জয়ের পথে আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার জন্য মানত করছেন, কেউ কেউ রোজা-ব্রতও পালন করছেন। এমন পাগলপারা বাংলাদেশিদের আপনারা আর কবে কবে দেখেছেন হিসাব করে বলুন তো?
খেলা শুরুর সময় অনেকেই নাকি হিসাব করে বলাবলি করছিল, নেদারল্যান্ডস কত রান করতে পারে। কেউ দেড়শ'র মধ্যে আবার কেউ একটু বেশি পৌনে দুশ' আবার কেউ তাদের দুশ'র ঘর পার করিয়ে দিচ্ছিল। তবে খেলা যতই এগিয়ে চলছিল ততই এর পরিণতি স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। নেদারল্যান্ডস শেষ পর্যন্ত একশ' ষাট করায় বাংলাদেশের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল যেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে গিয়ে শুরুতেই তামিম ইকবাল আউট হয়ে গেলে মানুষের মনে শঙ্কা জাগে_ কি জানি কী হয়। কিন্তু অনেকগুলো ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশের বিজয়ে মানুষ আবার আনন্দে ভাসার উপসর্গ খুঁজে পেল। হোক না নেদারল্যান্ডসের মতো একটি দুর্বল টিমের সঙ্গে_ এই বিজয়ও গৌরবের। বাংলাদেশের সব মানুষ এবং বিশ্বের সব বাঙালির মন একসঙ্গে নেচে ওঠার উপলক্ষ হয়েছে এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট। আসলে একটা তীব্র সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে থাকতে থাকতে আমরা হাঁফিয়ে উঠেছি। আমরা আনন্দ চাই, উৎসব চাই_ এমন উৎসব যেটাতে সবাই একসঙ্গে মাতোয়ারা হতে পারি। বাঙালির মনোজগতে আমরাও পারি এমন একটা অদম্য আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে অলক্ষ্যে। জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এবং বিশ্বে সবার সঙ্গে সবার সংলাপের নতুন জগত আমাদের সব মানুষকেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু বন্ধ্যা রাজনীতি, অবক্ষয়িত সমাজ মানুষের সে আশাকে ফলবতী করতে অপারগ। তাই বিশ্বকাপ ক্রিকেট এই সন্ধিক্ষণে বাঙালির ও বাংলাদেশের সব নাগরিকের একসঙ্গে জেগে ওঠার, আনন্দে ভাসার অমূল্য সুযোগ। আমাদের ক্রিকেটাররা কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত মানুষের মনের এই স্বপ্নমাখা ভোরকে রবির আলোয় ভরে রাখুন না!
No comments