কেমন আছেন ভাষাসৈনিকরা-ওয়াজেদ মাস্টার এখন বাকরুদ্ধ by সাব্বিরুল ইসলাম সাবু
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে মিছিল-মিটিং করায় ১৯৪৯ সালে নবম শ্রেণীর ছাত্র ওয়াজ উদ্দিনকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছিল। এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি না পেলেও এলাকার লোকজন তাঁকে ভাষাসৈনিক ওয়াজেদ মাস্টার হিসেবেই চেনে।
সেই ওয়াজেদ মাস্টার এখন বাকরুদ্ধ। চলাফেরা করার শক্তিও নেই তাঁর। এক বছর আগেও তিনি স্মৃতিচারণা করেছেন এই প্রতিবেদকের কাছে। নিজের কোনো চাওয়া না থাকলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় একুশে পদক দেওয়ার সমালোচনাও করেছিলেন। কিন্তু এ বছর কিছুই বলতে পারলেন না, কেবল তাকিয়ে থাকলেন ফ্যালফ্যাল করে।
পাকিস্তান সরকার ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে সূত্রপাত হয় রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন। ১৯৪৯ সালে মানিকগঞ্জের তেরশ্রী কে এন ইনস্টিটিউটের ছাত্ররা মিছিল-মিটিং করে। ওয়াজ উদ্দিন তখন এই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। সরকারি ঘোষণার প্রতিবাদে মিছিল-মিটিং করায় ওয়াজ উদ্দীন, তাঁর সহপাঠী নিরঞ্জন বসু, দশম শ্রেণীর ছাত্র রেহাজ উদ্দিন এবং ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থী যতীন দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতা আবদুল গণি ও ইসমাইল হোসেন ওই চার ছাত্রকে ছাড়িয়ে আনার লক্ষ্যে একটি শর্ত দেন। শর্ত অনুযায়ী তাঁদের বলতে হবে বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা প্রমথ নন্দীর নির্দেশে তাঁরা মিছিল-মিটিং করেছেন। কিন্তু চারজনই ওই প্রস্তাব ঘৃণাভরে ফিরিয়ে দেন। পরে মুসলীম লীগ নেতাদের পরামর্শে ঘিওর থানার পুলিশ ওই চার ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে মানিকগঞ্জ মহকুমা কোর্র্টে চালান দেয়। ঘিওর থেকে কোর্টে পাঠানোর সময় পুলিশ চার ছাত্রকে হাতকড়া পরানোর চেষ্টা করলে তাঁরা প্রতিবাদ করেন। বাধ্য হয়ে পুলিশ তাঁদের হাতকড়া না পরিয়েই কোর্টে পাঠিয়ে দেয়।
হাজতবাসের সময়ও ওই ছাত্ররা জেলখানার নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। জেলখানায় নিম্নমানের চালের ভাত খাওয়ানো নিয়ে পরিদর্শনে যাওয়া এসডিওর কাছে অভিযোগ করেন তাঁরা। বাধ্য হয়ে কারাগার কর্তৃপক্ষ ভালোমানের চাল সরবরাহ শুরু করে। তবে তাঁদের দিয়ে বড় বালতিতে করে কুয়া থেকে পানি তুলে জেলখানার দোতলায় ওঠানোর মাধ্যমে নির্যাতন শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। পরে তাঁদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় এক মাস হাজতবাসের পর তৎকালীন এমসিএ কংগ্রেস নেতা অ্যাডভোকেট ভবেশ চন্দ্র নন্দীর চেষ্টায় তাঁরা জামিনে মুক্ত হন। মুক্ত হয়েও তাঁরা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
ওয়াজ উদ্দিন পরে নিজ গ্রাম তেরশ্রীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯০ সালের দিকে তিনি অবসরে যান। প্রায় ৩৫ বছর শিক্ষকতা করায় আশপাশের দশ গ্রামে তিনি ওয়াজেদ মাস্টার হিসেবেই পরিচিত। তবে তাঁর নামের আগে অনেকেই যোগ করে বলেন, 'ভাষাসৈনিক ওয়াজেদ মাস্টার'। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবদুস সালামও ওয়াজেদ আলীকে শ্রদ্ধাভরে ভাষাসৈনিক ওয়াজেদ মাস্টার বলেই সম্বোধন করলেন। আবদুস সালাম বলেন, অজপাড়া গ্রামের এই চার স্কুলছাত্র সে দিন যে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন, তা অনুকরণীয়। এঁদের স্বীকৃতি না দিলে এই প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে না। অথচ রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেককেই একুশে পদক দেওয়া হয়।
ভাষাসৈনিক ওয়াজেদ মাস্টারের ছোট ছেলে এমদাদুল হক জানান, তাঁর বাবা বর্তমানে অনেক কিছুই স্মরণ করতে পারেন না। অন্যের সাহায্য নিয়ে এক-দুই কদম হাঁটতে পারলেও কথা বলা প্রায় বন্ধ। এমদাদুল বলেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা থাকায় বাবা সব সময় গর্ব বোধ করতেন। বাবার কোনো আক্ষেপ না থাকলেও তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় ছেলে হিসেবে আমার আক্ষেপ রয়েই যাবে।' তিনি দাবি করেন, তাঁর বাবার মতো আরো যাঁরা সেদিন ভাষার জন্য সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন, তাঁদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হোক।
পাকিস্তান সরকার ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে সূত্রপাত হয় রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন। ১৯৪৯ সালে মানিকগঞ্জের তেরশ্রী কে এন ইনস্টিটিউটের ছাত্ররা মিছিল-মিটিং করে। ওয়াজ উদ্দিন তখন এই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। সরকারি ঘোষণার প্রতিবাদে মিছিল-মিটিং করায় ওয়াজ উদ্দীন, তাঁর সহপাঠী নিরঞ্জন বসু, দশম শ্রেণীর ছাত্র রেহাজ উদ্দিন এবং ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থী যতীন দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতা আবদুল গণি ও ইসমাইল হোসেন ওই চার ছাত্রকে ছাড়িয়ে আনার লক্ষ্যে একটি শর্ত দেন। শর্ত অনুযায়ী তাঁদের বলতে হবে বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা প্রমথ নন্দীর নির্দেশে তাঁরা মিছিল-মিটিং করেছেন। কিন্তু চারজনই ওই প্রস্তাব ঘৃণাভরে ফিরিয়ে দেন। পরে মুসলীম লীগ নেতাদের পরামর্শে ঘিওর থানার পুলিশ ওই চার ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে মানিকগঞ্জ মহকুমা কোর্র্টে চালান দেয়। ঘিওর থেকে কোর্টে পাঠানোর সময় পুলিশ চার ছাত্রকে হাতকড়া পরানোর চেষ্টা করলে তাঁরা প্রতিবাদ করেন। বাধ্য হয়ে পুলিশ তাঁদের হাতকড়া না পরিয়েই কোর্টে পাঠিয়ে দেয়।
হাজতবাসের সময়ও ওই ছাত্ররা জেলখানার নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। জেলখানায় নিম্নমানের চালের ভাত খাওয়ানো নিয়ে পরিদর্শনে যাওয়া এসডিওর কাছে অভিযোগ করেন তাঁরা। বাধ্য হয়ে কারাগার কর্তৃপক্ষ ভালোমানের চাল সরবরাহ শুরু করে। তবে তাঁদের দিয়ে বড় বালতিতে করে কুয়া থেকে পানি তুলে জেলখানার দোতলায় ওঠানোর মাধ্যমে নির্যাতন শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। পরে তাঁদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় এক মাস হাজতবাসের পর তৎকালীন এমসিএ কংগ্রেস নেতা অ্যাডভোকেট ভবেশ চন্দ্র নন্দীর চেষ্টায় তাঁরা জামিনে মুক্ত হন। মুক্ত হয়েও তাঁরা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
ওয়াজ উদ্দিন পরে নিজ গ্রাম তেরশ্রীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯০ সালের দিকে তিনি অবসরে যান। প্রায় ৩৫ বছর শিক্ষকতা করায় আশপাশের দশ গ্রামে তিনি ওয়াজেদ মাস্টার হিসেবেই পরিচিত। তবে তাঁর নামের আগে অনেকেই যোগ করে বলেন, 'ভাষাসৈনিক ওয়াজেদ মাস্টার'। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবদুস সালামও ওয়াজেদ আলীকে শ্রদ্ধাভরে ভাষাসৈনিক ওয়াজেদ মাস্টার বলেই সম্বোধন করলেন। আবদুস সালাম বলেন, অজপাড়া গ্রামের এই চার স্কুলছাত্র সে দিন যে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন, তা অনুকরণীয়। এঁদের স্বীকৃতি না দিলে এই প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে না। অথচ রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেককেই একুশে পদক দেওয়া হয়।
ভাষাসৈনিক ওয়াজেদ মাস্টারের ছোট ছেলে এমদাদুল হক জানান, তাঁর বাবা বর্তমানে অনেক কিছুই স্মরণ করতে পারেন না। অন্যের সাহায্য নিয়ে এক-দুই কদম হাঁটতে পারলেও কথা বলা প্রায় বন্ধ। এমদাদুল বলেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা থাকায় বাবা সব সময় গর্ব বোধ করতেন। বাবার কোনো আক্ষেপ না থাকলেও তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় ছেলে হিসেবে আমার আক্ষেপ রয়েই যাবে।' তিনি দাবি করেন, তাঁর বাবার মতো আরো যাঁরা সেদিন ভাষার জন্য সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন, তাঁদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হোক।
No comments