বইমেলা আছে হুমায়ূন নেই by সুহৃদ আকবর

প্রাণের বইমেলা আবার এসেছে। তবে এবার বইমেলা আছে হুুমায়ূন আহমেদ নেই, যার বই পড়ার জন্য মানুষ আগ্রহভরে অপেক্ষা করতে থাকে সারা বছর। আর এই প্রতীক্ষার চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় প্রতি বছর একুশের বইমেলায়। দেখা যায়, মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে হুমায়ূন আহমেদের বই কিনছেন।
এ এক অভূতপূর্ব, অবিশ্বাস্য দৃশ্য! হুমায়ূন আহমেদ তার সাহিত্যিক জীবনের শুরুতে ১০-১৫ দিন পর্যন্ত মেলায় এসেছেন। শেষ বয়সে ৫-৬ দিন তিনি মেলায় এসে তার পাঠকদের সঙ্গে সময় কাটাতেন, ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতেন। কথা বলতেন, হাসতেন। এভাবে প্রতি বছর হুমায়ূন আহমেদের পদধ্বনি-পদযাত্রা-পদধূলি মেলার সৌন্দর্যকে বহু গুণে বৃদ্ধি করত।
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা সহজ-সরল গদ্যের নির্মাতা। বলা হয়ে থাকে শরৎচন্দ্রের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক। হুমায়ূন আহমেদ মেধা আর দক্ষতা দিয়ে বাংলা সহিত্য জগতে এক নতুন ধারা চালু করেন। কালবৈশাখী ঝড় তুলতে সক্ষম হন। বইবিমুখ তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে অশীতিপর বৃদ্ধ মানুষের হাতে তিনিই বই তুলে দেন। তিনি গল্পের জাদুকর। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তিনি বাংলা সাহিত্যভুবনে এক মায়ামোহ পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হন। তার লেখায় বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কথা খুবই সরলভাবে উঠে এসেছে।
হুমায়ূন আর মেলা অবিচ্ছিন্নভাবেই পরিচিত লাভ করেছিল বাংলাদেশের মানুষের কাছে। মেলা আর হুমায়ূন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা একে অপরের পরিপূরক। অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে ছাড়া মেলার কথা কল্পনাই করতে পারেন না। অথচ এটাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে, হুমায়ূন ছাড়াই হবে এবারের একুশের বইমেলা। হুমায়ূন আর আসবেন না একুশের মেলায়_ এ যেন এক বাস্তব নির্মম সত্য! সময় নিয়ন্ত্রকের বিধাতা সময়কে আদেশ করে হুমায়ূনকে আমাদের কাছ থেকে চিরতরে নিয়ে গেলেন। তিনি নেই_ এ কথা যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য যে, হুমায়ূনের অনন্যসাধারণ সৃষ্টিকর্ম আর পাঠকের নির্মল ভালোবাসাকে কিছুতেই নিতে পারেনি। হুমায়ূন বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। পাঠকের ভালোবাসা আর হুমায়ূন আহমেদ যেন পরস্পর হাত ধরাধরি চলছে, চলবে। একজন লেখকের জন্য এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কীবা হতে পারে?
প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, আপনি জেনে খুশি হবেন কি-না জানি না, এ বছর বাংলা একাডেমী অমর একুশে বইমেলাকে আপনার নামে উৎসর্গ করেছে। আপনি যদিওবা না আসেন তাহলে একবার অন্তত আপনার আত্মাকে পাঠাবেন পাঠকের ভালোবাসা গ্রহণ করার জন্য।
য়শিক্ষার্থী
ঢাকা কলেজ
akbarwriter@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.