রাজধানীর দক্ষিণখানে জোড়া খুন!-বিছানায় মেয়ের লাশ আড়ায় ঝুলন্ত বাবা
টিনশেড ঘরে দুটি লাশ। নিষ্পাপ শিশু বর্ণালীর নিথর দেহ পড়ে আছে বিছানায়। অদূরে আড়ার সঙ্গে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় বাবা বজলুর রশিদের (৫০) মৃতদেহ। স্বজনরা বিলাপ করে বলছিলেন, আট বছরের বর্ণালী খুন হতে পারে না।
বজলুর রশিদও আত্মজার রক্তে হাত ভিজিয়ে নিজে আত্মঘাতী হতে পারেন না। আর্তচিৎকার আর বিলাপের মধ্যে পুলিশ আসে। ঘটনার জটিলতায় তারাও হয়ে পড়ে হতভম্ব। মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে দুটি প্রশ্ন- তাহলে কি মেয়েকে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যা করেছেন? নাকি দুজনকেই খুন করেছে অন্য কেউ? রাজধানীর দক্ষিণখান থানার আশকোনা এলাকার একটি টিনশেড ঘরে গতকাল শুক্রবার দুপুরে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। মনে করা হচ্ছে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে এ অস্বাভাবিক দুই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
শিশু বর্ণালীর গলায় ছুরির সামান্য কাটা এবং রক্তের দাগ দেখা গেছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে কোনো ছুরি পাওয়া যায়নি বলে কালের কণ্ঠকে জানায় পুলিশ। তা ছাড়া ঘরটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। ঘটনার সময় পাশের তিনটি ভাড়া বাসার বাসিন্দারাও তাদের ঘরে ছিলেন না। ফলে রহস্য হয়ে ওঠে আরো ঘনীভূত।
জানা যায়, ফাতেমা রশিদ বর্ণালী (৮) স্থানীয় সিভিল এভিয়েশন স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ত। আর বজলুর রশিদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কম্পানিতে চাকরি করতেন। তিনি বরিশালের উজিরপুর থানার চাঙ্গুরিয়া গ্রামের মৃত আফসার উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি আশকোনার ৬৯৫ নম্বর বাড়িতে বসবাস করছেন।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিআইডির ফরেনসিক দল আলামত সংগ্রহ করছে। তৈরি হচ্ছে সুরতহাল প্রতিবেদন। বাইরে কয়েক শ মানুষের ভিড়। কিন্তু কেউ বুঝে উঠতে পারছিল না, মর্মান্তিক দুটি মৃত্যুর রহস্য কী? কেউ বলছে- মেয়েকে হত্যা করে শেষ পর্যন্ত নিজেই ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন বাবা। কিন্তু বেশির ভাগের দাবি, দুটি মৃত্যুই রহস্যজনক। এ দাবির পক্ষে তাদের যুক্তি হচ্ছে- ঘরটি বাইরে থেকে ছিল তালাবদ্ধ।
নিহত বজলুরের স্ত্রী নাদিরা আক্তার রিনা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। পাশে গুমরে কাঁদছিল বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী আমেনা রশিদ বনিয়া। কান্না থামিয়ে নাদিরা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সকাল সোয়া ১১টার দিকে বড় মেয়েকে কোচিং থেকে আনতে বাইরে যাই। দুপুর ১টার দিকে ফিরে এসে দেখতে পাই ঘর বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। আমার ব্যাগে থাকা বিকল্প চাবি দিয়ে ঘর খুলতেই...' বলেই ফের আর্তনাদ চলতে থাকে।
দুই কক্ষের ভাড়া বাসা। প্রথম কক্ষে স্বজনরা আহাজারি করছিলেন। পাশের যে কক্ষে ঘটে গেছে পরিবারটির সবচেয়ে বেদনার ঘটনা, সেই কক্ষের দরজা বন্ধ করে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। একটু পর দরজা খুলতেই দেখা গেল, ঘরের আড়ার সঙ্গে মোটা আকৃতির রশি গলায় পেঁচিয়ে ঝুলছেন বজলুর রশিদ। আর পাশেই খাটের ওপর শিশু বর্ণালীর নিথর দেহ। দৃশ্যটি আরো একবার দেখে স্বজনদের আহাজারি ও বিলাপ আরো বেড়ে যায়। উচ্চ স্বরে কেঁদে ওঠে আরো অনেকে।
খবর নিয়ে জানা যায়, বাড়িটি স্থানীয় তফাজ্জল হোসেন তালুকদারের। টিনশেড বাড়িতে চারটি পরিবার ভাড়া থাকে। ঘটনার সময় অন্য তিন ঘরে কেউই ছিল না বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে। দুপুরে লাশ উদ্ধারের সময়ও ঘরগুলো ছিল তালাবদ্ধ। পরে সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদক আবারও গিয়ে দেখেন ঘর তিনটির কেউ ফেরেনি। সেই পরিবারগুলোর বাসিন্দারা কয়েক দিন ধরে এখানে নেই বলে তথ্য দেয় কেউ কেউ।
নিহত বজলুরের ছোট ভাই তরিকুল ইসলাম ও ভাগিনা (বোনের ছেলে) মামুন হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে শেষবারের মতো কথা হয় দুই ভাইয়ের মধ্যে। বজলুর তখনো হাশিখুশিই ছিলেন। কোনো ধরনের হতাশায় ছিলেন বলেও মনে হয়নি। বজলুর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, প্রায় সকালে কোরআন তেলাওয়াত করেন। তাঁদের দাবি, এমন পরহেজগার মানুষ আত্মহত্যা করতে পারেন না। আসল ঘটনাটি বের হওয়া উচিত। এজন্য তদন্তকারী কর্মকর্তারা যেন আন্তরিক হয়ে কাজ করেন।
স্ত্রী নাদিরা বলেন, 'আমাদের মধ্যে কখনোই ঝগড়া-বিবাদ হয়নি। আজ (শুক্রবার) সকালে বাইরে যাওয়ার সময় অনেক খোশমেজাজেই কথা হয়েছে। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল, আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকারও কথা না।'
তবে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকা প্রসঙ্গে স্থানীয়রা বলেছে, ভেতরে দুই কক্ষের মধ্যে একটি দরজা আছে। আবার বাইরে থেকেও দুটি দরজা আছে। সেক্ষেত্রে একটি দরজা তালাবদ্ধ করে অন্য দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সেটি ভেতর থেকে বন্ধ করে দেওয়াও সম্ভব। কিন্তু এ দুটি মৃত্যুর ক্ষেত্রে কী হয়েছে সেটি ধারণাও করা যাচ্ছে না।
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘটনার সূক্ষ্ম তদন্ত হওয়া দরকার। নইলে এর রহস্য বের করা কঠিন হবে। পুলিশ সবদিক চিন্তা করেই তদন্ত করবে। নিহতের স্বজন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
তবে উত্তরা বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার নিশারুল আরিফ ধারণা করে বলেন, বর্ণালীকে প্রথমে ছুরিকাঘাতে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। কারণ, তার গলায় সামান্য কাটা এবং রক্তের দাগ রয়েছে। তবে তাকে শেষ পর্যন্ত শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে কোনো ছুরি পাওয়া যায়নি।
রাত সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন তৈরির সময় বাবা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল।
শিশু বর্ণালীর গলায় ছুরির সামান্য কাটা এবং রক্তের দাগ দেখা গেছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে কোনো ছুরি পাওয়া যায়নি বলে কালের কণ্ঠকে জানায় পুলিশ। তা ছাড়া ঘরটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। ঘটনার সময় পাশের তিনটি ভাড়া বাসার বাসিন্দারাও তাদের ঘরে ছিলেন না। ফলে রহস্য হয়ে ওঠে আরো ঘনীভূত।
জানা যায়, ফাতেমা রশিদ বর্ণালী (৮) স্থানীয় সিভিল এভিয়েশন স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ত। আর বজলুর রশিদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কম্পানিতে চাকরি করতেন। তিনি বরিশালের উজিরপুর থানার চাঙ্গুরিয়া গ্রামের মৃত আফসার উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি আশকোনার ৬৯৫ নম্বর বাড়িতে বসবাস করছেন।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিআইডির ফরেনসিক দল আলামত সংগ্রহ করছে। তৈরি হচ্ছে সুরতহাল প্রতিবেদন। বাইরে কয়েক শ মানুষের ভিড়। কিন্তু কেউ বুঝে উঠতে পারছিল না, মর্মান্তিক দুটি মৃত্যুর রহস্য কী? কেউ বলছে- মেয়েকে হত্যা করে শেষ পর্যন্ত নিজেই ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন বাবা। কিন্তু বেশির ভাগের দাবি, দুটি মৃত্যুই রহস্যজনক। এ দাবির পক্ষে তাদের যুক্তি হচ্ছে- ঘরটি বাইরে থেকে ছিল তালাবদ্ধ।
নিহত বজলুরের স্ত্রী নাদিরা আক্তার রিনা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। পাশে গুমরে কাঁদছিল বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী আমেনা রশিদ বনিয়া। কান্না থামিয়ে নাদিরা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সকাল সোয়া ১১টার দিকে বড় মেয়েকে কোচিং থেকে আনতে বাইরে যাই। দুপুর ১টার দিকে ফিরে এসে দেখতে পাই ঘর বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। আমার ব্যাগে থাকা বিকল্প চাবি দিয়ে ঘর খুলতেই...' বলেই ফের আর্তনাদ চলতে থাকে।
দুই কক্ষের ভাড়া বাসা। প্রথম কক্ষে স্বজনরা আহাজারি করছিলেন। পাশের যে কক্ষে ঘটে গেছে পরিবারটির সবচেয়ে বেদনার ঘটনা, সেই কক্ষের দরজা বন্ধ করে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। একটু পর দরজা খুলতেই দেখা গেল, ঘরের আড়ার সঙ্গে মোটা আকৃতির রশি গলায় পেঁচিয়ে ঝুলছেন বজলুর রশিদ। আর পাশেই খাটের ওপর শিশু বর্ণালীর নিথর দেহ। দৃশ্যটি আরো একবার দেখে স্বজনদের আহাজারি ও বিলাপ আরো বেড়ে যায়। উচ্চ স্বরে কেঁদে ওঠে আরো অনেকে।
খবর নিয়ে জানা যায়, বাড়িটি স্থানীয় তফাজ্জল হোসেন তালুকদারের। টিনশেড বাড়িতে চারটি পরিবার ভাড়া থাকে। ঘটনার সময় অন্য তিন ঘরে কেউই ছিল না বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে। দুপুরে লাশ উদ্ধারের সময়ও ঘরগুলো ছিল তালাবদ্ধ। পরে সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদক আবারও গিয়ে দেখেন ঘর তিনটির কেউ ফেরেনি। সেই পরিবারগুলোর বাসিন্দারা কয়েক দিন ধরে এখানে নেই বলে তথ্য দেয় কেউ কেউ।
নিহত বজলুরের ছোট ভাই তরিকুল ইসলাম ও ভাগিনা (বোনের ছেলে) মামুন হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে শেষবারের মতো কথা হয় দুই ভাইয়ের মধ্যে। বজলুর তখনো হাশিখুশিই ছিলেন। কোনো ধরনের হতাশায় ছিলেন বলেও মনে হয়নি। বজলুর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, প্রায় সকালে কোরআন তেলাওয়াত করেন। তাঁদের দাবি, এমন পরহেজগার মানুষ আত্মহত্যা করতে পারেন না। আসল ঘটনাটি বের হওয়া উচিত। এজন্য তদন্তকারী কর্মকর্তারা যেন আন্তরিক হয়ে কাজ করেন।
স্ত্রী নাদিরা বলেন, 'আমাদের মধ্যে কখনোই ঝগড়া-বিবাদ হয়নি। আজ (শুক্রবার) সকালে বাইরে যাওয়ার সময় অনেক খোশমেজাজেই কথা হয়েছে। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল, আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকারও কথা না।'
তবে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকা প্রসঙ্গে স্থানীয়রা বলেছে, ভেতরে দুই কক্ষের মধ্যে একটি দরজা আছে। আবার বাইরে থেকেও দুটি দরজা আছে। সেক্ষেত্রে একটি দরজা তালাবদ্ধ করে অন্য দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সেটি ভেতর থেকে বন্ধ করে দেওয়াও সম্ভব। কিন্তু এ দুটি মৃত্যুর ক্ষেত্রে কী হয়েছে সেটি ধারণাও করা যাচ্ছে না।
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘটনার সূক্ষ্ম তদন্ত হওয়া দরকার। নইলে এর রহস্য বের করা কঠিন হবে। পুলিশ সবদিক চিন্তা করেই তদন্ত করবে। নিহতের স্বজন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
তবে উত্তরা বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার নিশারুল আরিফ ধারণা করে বলেন, বর্ণালীকে প্রথমে ছুরিকাঘাতে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। কারণ, তার গলায় সামান্য কাটা এবং রক্তের দাগ রয়েছে। তবে তাকে শেষ পর্যন্ত শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে কোনো ছুরি পাওয়া যায়নি।
রাত সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন তৈরির সময় বাবা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল।
No comments