নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে চায় সরকারত by জাহাঙ্গীর আলম
সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে চায়। তবে পুরোনো নকশা অনুযায়ী সেতু হবে না। নতুন নকশায় রেলপথ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে।
সরকারের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই সেতু নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করা হবে। বিশেষ করে অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত থাকলেও প্রয়োজনে মালয়েশিয়া, চীন ও ভারতের আর্থিক সহায়তা নেওয়া হবে। পদ্মা সেতুতে সহায়তার ব্যাপারে এ তিনটি দেশের আগে থেকেই প্রস্তাব ছিল।
জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে মালয়েশিয়া, চীন ও ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এ সেতুর জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত করা হবে। কাজও শুরু হবে এ সরকারের আমলেই। তবে এর পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, বিশ্বব্যাংক ছাড়া বিকল্প উৎস থেকে অর্থ নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ অনেক বেশি ব্যয়বহুল হবে। এটা অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। গতকাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংক শেষ করে দেয়নি। সরকারই তা করেছে। হঠাৎ করে সরকারের এ সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হয়নি। আরও আলোচনার পর তা করা যেত। তাঁর মত, বিকল্প অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে ব্যয়-মুনাফা বিশ্লেষণ করা দরকার ছিল।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, তিনভাবে এখন পদ্মা সেতু হতে পারে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ জোগান দেওয়া, বিদেশি উৎস থেকে অর্থ নেওয়া এবং সরকারি-বেসরকারি অংশদারিতে (পিপিপি)। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পদ্মা সেতু হলে অনেক প্রকল্প বাদ দিতে হবে। আবার টাকা খরচ হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। প্রবাসী-আয় ও রপ্তানি আয় থেকে যে ডলার আসবে, তা ব্যয় করতে হবে। এতে আর্থিক খাতের ভারসাম্যে চাপ সৃষ্টি হবে। আর মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ আমদানি ব্যয় কমাতে হবে, যা প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য নেতিবাচক হবে। আবার বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিলে সুদের হার সাড়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ হবে।
সরকারি সূত্র জানায়, সরকার আগামী অক্টোবরে মূল সেতু নির্মাণকাজ শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তার আগে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ অর্থায়নে ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরা প্রান্তে তীর রক্ষা প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এক মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, এপ্রিল-মে থেকে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হবে। দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়েই এসব কাজ করা হবে। সরকার আশা করছে, অক্টোবরের আগেই মূল সেতু নির্মাণকাজ শুরু করতে পারবে।
সিদ্ধান্ত হয় বুধবার: ওই সূত্রমতে, বিশ্বব্যাংকের কাছে অর্থায়নের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সহযোগী দাতা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপানি সংস্থা জাইকা ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রকল্প থেকে সরে যাবে বলেই সরকার মনে করছে। তবে এসব দাতা সংস্থা নতুন করে চুক্তিতে এলে স্বাগত জানানো হবে।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, গত বুধবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অংশ নেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরও একপর্যায়ে সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ থাকেন। ওই বৈঠকেই পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে নিজস্ব অর্থায়নে নতুন নকশায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করার বিষয়টি ঠিক হয়। বৈঠকে সরকারের নতুন অবস্থান জানিয়ে অর্থমন্ত্রীকে একটি বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
যে কারণে এ সিদ্ধান্ত: সরকার জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়, বিশ্বব্যাংক একের পর এক শর্ত দিয়ে যাবে। কিন্তু অর্থ দেবে না। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বলেন, বিশ্বব্যাংক একসময় অর্থ না দেওয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত দেবে। তাই বিশ্বব্যাংক সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই সরকার অর্থ দেওয়ার অনুরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভালো হবে। বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আলোচনা হয়, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যাঁদের বিষয়ে আপত্তি দিয়েছিল, সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অভিযুক্ত সৈয়দ আবুল হোসেনকে প্রথমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর বিশ্বব্যাংকের চাপে তাঁকে গত ২৩ জুলাই মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। তাঁকে দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
ওই বৈঠকে আলোচনা হয়, এত সব ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিশ্বব্যাংক নতুন নতুন শর্ত দিচ্ছে। সরকারের ধারণা, বিশ্বব্যাংক শেষ পর্যন্ত অর্থায়ন করবে না। তাই আগেভাগেই অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিজস্ব অর্থায়নের সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে মালয়েশিয়া, চীন ও ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এ সেতুর জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত করা হবে। কাজও শুরু হবে এ সরকারের আমলেই। তবে এর পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, বিশ্বব্যাংক ছাড়া বিকল্প উৎস থেকে অর্থ নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ অনেক বেশি ব্যয়বহুল হবে। এটা অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। গতকাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংক শেষ করে দেয়নি। সরকারই তা করেছে। হঠাৎ করে সরকারের এ সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হয়নি। আরও আলোচনার পর তা করা যেত। তাঁর মত, বিকল্প অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে ব্যয়-মুনাফা বিশ্লেষণ করা দরকার ছিল।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, তিনভাবে এখন পদ্মা সেতু হতে পারে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ জোগান দেওয়া, বিদেশি উৎস থেকে অর্থ নেওয়া এবং সরকারি-বেসরকারি অংশদারিতে (পিপিপি)। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পদ্মা সেতু হলে অনেক প্রকল্প বাদ দিতে হবে। আবার টাকা খরচ হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। প্রবাসী-আয় ও রপ্তানি আয় থেকে যে ডলার আসবে, তা ব্যয় করতে হবে। এতে আর্থিক খাতের ভারসাম্যে চাপ সৃষ্টি হবে। আর মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ আমদানি ব্যয় কমাতে হবে, যা প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য নেতিবাচক হবে। আবার বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিলে সুদের হার সাড়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ হবে।
সরকারি সূত্র জানায়, সরকার আগামী অক্টোবরে মূল সেতু নির্মাণকাজ শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তার আগে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ অর্থায়নে ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরা প্রান্তে তীর রক্ষা প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এক মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, এপ্রিল-মে থেকে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হবে। দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়েই এসব কাজ করা হবে। সরকার আশা করছে, অক্টোবরের আগেই মূল সেতু নির্মাণকাজ শুরু করতে পারবে।
সিদ্ধান্ত হয় বুধবার: ওই সূত্রমতে, বিশ্বব্যাংকের কাছে অর্থায়নের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সহযোগী দাতা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপানি সংস্থা জাইকা ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রকল্প থেকে সরে যাবে বলেই সরকার মনে করছে। তবে এসব দাতা সংস্থা নতুন করে চুক্তিতে এলে স্বাগত জানানো হবে।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, গত বুধবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অংশ নেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরও একপর্যায়ে সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ থাকেন। ওই বৈঠকেই পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে নিজস্ব অর্থায়নে নতুন নকশায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করার বিষয়টি ঠিক হয়। বৈঠকে সরকারের নতুন অবস্থান জানিয়ে অর্থমন্ত্রীকে একটি বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
যে কারণে এ সিদ্ধান্ত: সরকার জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়, বিশ্বব্যাংক একের পর এক শর্ত দিয়ে যাবে। কিন্তু অর্থ দেবে না। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বলেন, বিশ্বব্যাংক একসময় অর্থ না দেওয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত দেবে। তাই বিশ্বব্যাংক সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই সরকার অর্থ দেওয়ার অনুরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভালো হবে। বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আলোচনা হয়, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যাঁদের বিষয়ে আপত্তি দিয়েছিল, সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অভিযুক্ত সৈয়দ আবুল হোসেনকে প্রথমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর বিশ্বব্যাংকের চাপে তাঁকে গত ২৩ জুলাই মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। তাঁকে দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
ওই বৈঠকে আলোচনা হয়, এত সব ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিশ্বব্যাংক নতুন নতুন শর্ত দিচ্ছে। সরকারের ধারণা, বিশ্বব্যাংক শেষ পর্যন্ত অর্থায়ন করবে না। তাই আগেভাগেই অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিজস্ব অর্থায়নের সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
No comments