সবজি চাষ- সংকট নয়, চরাঞ্চল হোক সম্ভাবনার
নদী ভাঙন নিয়ে যত বেশি, এর ভূমি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে যেন ততই কম কথাবার্তা হয়। নদীর বুকে জেগে ওঠা চর নিয়ে আলোচনা আরও কম। যতটুকু আলোচনা হয় এর অনেকখানি আসলে নেতিবাচক_ চর দখল নিয়ে রক্তারক্তি, উৎপাদনহীনতা, শিক্ষার অভাব, দারিদ্র্য।
সোমবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমই বিবেচিত হবে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার নীলকুঠি গ্রামের দেড় শতাধিক নারী ব্রহ্মপুত্র নদের গজারিয়ার চরে ১০০ বিঘা পতিত জমিকে কুমড়া চাষের আওতায় এনেছেন। উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন ওই নারীদের আমরা অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে চরাঞ্চল নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনারও আহ্বান জানাই নীতিনির্ধারকদের। বিপুল জনগোষ্ঠীর আবাস হওয়া সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে চরাঞ্চল আমাদের মনোযোগের বাইরে থেকে গেছে। সংবিধান অনুসারে দেশের সব নাগরিকের অধিকার সমান হলেও চরাঞ্চলের মানুষ যেন দ্বিতীয় শ্রেণীর। সেখানকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি বরাবরই অবহেলিত থেকে গেছে। অবহেলিত থেকে গেছে চরাঞ্চলের কৃষি উৎপাদন সম্ভাবনাও। চরাঞ্চলে ঐতিহ্যগতভাবেই বাদাম, তরমুজ, ফুটি, চীনা এবং কোনো কোনো অংশে ধান-গমের চাষ হয়। মিষ্টি কুমড়ার চাষও নতুন নয়। কিন্তু এসব চাষ হয় হেলাফেলা করে। তাতে কিছু ফসল হয় বটে, গোলা ভরে না। অর্থকরী হওয়া তো হনুজ দূর অস্ত। নীলকুঠির নারীরা দেখিয়েছেন, উন্নত জাতের বীজ, উপযুক্ত সার ও পরিচর্যা পেলে চরেও বাম্পার ফলন সম্ভব। কেবল কুমড়া নয়, চরাঞ্চলের উপযোগী অন্যান্য ফসলও একইভাবে চাষ করা যেতে পারে। আমরা চাই, দেশের অন্যান্য চরাঞ্চলেও গজারিয়ার দৃষ্টান্ত অনুসৃত হোক। এ ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ জরুরি। চরগজারিয়ার চিত্র পাল্টে দিতে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার তৎপরতার কথা সমকালের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। দেশের অন্যান্য অংশে কর্মরত এনজিওগুলোও এমন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। চরাঞ্চলগুলোতে যদি যথেষ্ট কৃষি উৎপাদন সম্ভব হয়, তাতে করে নদী ভাঙনের শিকার হাজার হাজার মানুষের পুনর্বাসন সহজ হবে। নানা সংকটে জর্জরিত চরগুলো হয়ে উঠবে সম্ভাবনার সংকেত।
No comments