উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা-স্বীকৃতি ও স্বীকৃত নিয়ম চাই

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম তার প্রধান উপলক্ষ দারিদ্র্য ও শ্রমজীবী শিশু-কিশোর এবং বয়স্ক নিরক্ষরদের কাছে উপযোগিতা হারাতে বসেছে। শনিবার সমকালে 'উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় ঢিমেতাল' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই শিক্ষার করুণ হাল প্রকাশ পেয়েছে। শিক্ষার কাজে ঢিমেতাল ছাড়াও সুনির্দিষ্ট সিলেবাস ও কারিকুলামের বালাই নেই।


তাছাড়া শিক্ষা সমাপনীর পর কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কোনো স্বীকৃত সনদ দেওয়া হয় না বলে এই পদ্ধতির প্রতি আগ্রহও তেমন পরিলক্ষিত হয় না। যদি শিক্ষা সমাপনীর পর সনদের ব্যবস্থা থাকত এবং ওই সনদ চাকরি ক্ষেত্রে ও পরবর্তী স্তরের শিক্ষা গ্রহণের কাজে লাগত, তাহলে দরিদ্র্র ও শ্রমজীবী শিশু-কিশোর এবং নিরক্ষর বয়স্করা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহী হতেন। এ ব্যাপারে 'উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন' নামে একটি বিধান রয়েছে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে তা এখনও আলোর মুুখ দেখতে পায়নি। বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যেক মানুষকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কিছু সুফলও আমরা প্রত্যক্ষ করছি। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে বিধিবদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে এসে তারা এই শিক্ষাকেও সুনাগরিক গড়ার উপযুক্ত ব্যবস্থায় পরিণত করবেন এ প্রত্যাশা অযৌক্তিক হবে না। তবে আর সব ক্ষেত্রের মতো এ ক্ষেত্রেও যাতে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার জাল বাধা সৃষ্টি না করে সে ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেই নজর রাখা উচিত।
যে কোনো শিক্ষায় সুনির্দিষ্ট সিলেবাস ও কারিকুলাম প্রয়োজন পড়ে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সময় এদিকটি কেন উপেক্ষিত থেকে যেতে পারল তা বিস্ময়ের। এখন সময় এসেছে ভুল সংশোধনের। সম্মানী ভাতা সম্মানজনক অঙ্কের না হলে এখানে আন্তরিকতা নিয়ে কোনো ভালো শিক্ষকের শিক্ষা প্রদানে আগ্রহী না হওয়াই স্বাভাবিক। তদুপরি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানের চেয়েও বেশি শ্রমসাধ্য। এদিক থেকেও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে আগ্রহী শিক্ষকদের মানানসই সম্মানীর ব্যবস্থা করা যুক্তিসঙ্গত। তবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে একটি টেকসই ও স্বীকৃত শিক্ষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাগ্রে 'উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন' গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
 

No comments

Powered by Blogger.