মামলার আসামি দুই সাংবাদিকও-আপত্তিকর ছবি তুলে ইন্টারনেটে দেওয়ায় ছাত্রীর আত্মহত্যা
কয়েকজন সহপাঠী মুঠোফোনে মেয়েটির আপত্তিকর ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। চরম এক পরিস্থিতিতে পড়ে মেয়েটি। বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ওই পরিস্থিতিতে দুই সাংবাদিক যখন বাড়িতে গিয়ে বাবার কাছে তার আপত্তিকর ছবিসহ সংবাদ টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে প্রকাশের হুমকি দেন, তখন আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারেনি মেয়েটি। গত বৃহস্পতিবার সে স্যাভলন পান করে আত্মহত্যা করে।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে মেয়েটির বাবা বাগেরহাট মডেল থানায় তার চার সহপাঠী ও দুই সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
মেয়েটির নাম সাবিয়া সুলতানা (১৫)। বাগেরহাট আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ২০১৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাবা শেখ আলমগীর। বাড়ি বাগেরহাট শহরেই।
শেখ আলমগীরের করা মামলার আসামিরা হলো: শহরের পুরাতন বাজার এলাকার এম এ ওয়াদুদের ছেলে আল মুজাহিদ ওরফে পিয়াল (১৫), সৈয়দ জাহিদ হোসেনের ছেলে সৈয়দ সীমিন হাসান ওরফে সীমান্ত (১৫), শহরের কে বি বাজার সড়কের দেলোয়ার হেসেনের ছেলে মানজুল ইসলাম (১৫), দড়াটানা সড়কের জাকির হোসেন মোল্লার ছেলে মোল্লা আবদুল হান্নান (১৫), খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার বাগেরহাট ব্যুরো প্রধান মোল্লা আবদুর রব (৪৮) ও মাই টিভির বাগেরহাট প্রতিনিধি রিফাত আল মাহমুদ (৩২)।
শেখ আলমগীর গতকাল শনিবার প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, মেয়ের আপত্তিকর ছবি নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। সে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে সব সময় বই নিয়ে থাকত। ১৫-২০ দিন আগে বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আবদুর রব ও রিফাত আল মাহমুদ বলেন, ‘আপনার মেয়ের আপত্তিকর কিছু ছবি আমাদের কাছে আছে। আমরা এ বিষয়ে তার সাক্ষাৎকার নিতে চাই।’ তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি না হলে তাঁরা কয়েকটি সংবাদপত্রে ও টেলিভিশনে মেয়ের এ ঘটনা প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে চলে যান। মেয়েটি ঘরের ভেতর থেকে সাংবাদিকদের সব কথা শুনেছিল। এর পর থেকে সে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়। গত বৃহস্পতিবার স্যাভলন পান করে আত্মহত্যা করে। তিনি তাঁর মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য দায়ী সাংবাদিক ও মেয়ের সহপাঠীদের বিচার দাবি করেন।
ঘটনার শুরু: সাবিয়ার কয়েকজন সহপাঠী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, চার আসামি আর সাবিয়াসহ আরও কয়েকজন বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল। সাবিয়া ও অন্য এক মেয়ের সঙ্গে মুজাহিদের এবং আরেক মেয়ের সঙ্গে সীমিন হাসানের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৬ মার্চ সাবিয়া, মুজাহিদ, সীমিনসহ ছয়জন বাগেরহাট স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে না গিয়ে বিদ্যালয়ে যায়। একটি শ্রেণীকক্ষে বসে তারা মুঠোফোনে সাবিয়া ও অপর মেয়েটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কিছু ভিডিওচিত্র পৃথকভাবে ধারণ করে। পরে এই ছবি ইন্টারনেট এবং ব্লুটুথের মাধ্যমে মুঠোফোনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: বাগেরহাট আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুখার্জি রবীন্দ্রনাথ জানান, ৪ এপ্রিল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ওই ছয়জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ডাকা হয়। পাঁচজন অভিভাবকের উপস্থিতিতে ওই ছয় শিক্ষার্থীকে প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষা ও নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিতে অভিভাবকদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে আসতে বলা হয়। এ ছাড়া তাদের স্কুলে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়ে এই সিদ্ধান্ত মেনে চলে যান। বৃহস্পতিবার সাবিয়া একাই বাড়িতে ছিল। বাবা-মা কর্মক্ষেত্রে, একমাত্র ভাই কলেজে গিয়েছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাবিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আসে তার ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবী। ওই বান্ধবী জানায়, সাবিয়া তাকে বলে, ‘ঘটনার জন্য দায়ী ছেলেদের বাড়ি সাংবাদিক যায় না, আমার বাড়িতে সাংবাদিক আসে। আমি কোথাও বের হতে পারি না। বাড়ির মধ্যেও অনেক কথা শুনতে হয়। আমি আর পারছি না। আমার মনে হয় মরে যাওয়াই ভালো।’ ওই বান্ধবী সাবিয়াকে অনেক বুঝিয়ে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই স্যাভলন পানে আত্মহত্যা করে সাবিয়া।
পুলিশের বক্তব্য: বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, মামলা করার রাতেই মোল্লা আবদুর রব, রিফাত আল মাহমুদসহ কয়েকজন আসামির বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
অভিযুক্ত সাংবাদিকদের বক্তব্য: আবদুর রব ও রিফাত আল মাহমুদ পৃথকভাবে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন, মাস খানেক আগে সাবিয়াদের বাড়ি গিয়েছিলেন। তাঁরা দাবি করেন, ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন, তবে এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি।
মেয়েটির নাম সাবিয়া সুলতানা (১৫)। বাগেরহাট আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ২০১৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাবা শেখ আলমগীর। বাড়ি বাগেরহাট শহরেই।
শেখ আলমগীরের করা মামলার আসামিরা হলো: শহরের পুরাতন বাজার এলাকার এম এ ওয়াদুদের ছেলে আল মুজাহিদ ওরফে পিয়াল (১৫), সৈয়দ জাহিদ হোসেনের ছেলে সৈয়দ সীমিন হাসান ওরফে সীমান্ত (১৫), শহরের কে বি বাজার সড়কের দেলোয়ার হেসেনের ছেলে মানজুল ইসলাম (১৫), দড়াটানা সড়কের জাকির হোসেন মোল্লার ছেলে মোল্লা আবদুল হান্নান (১৫), খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার বাগেরহাট ব্যুরো প্রধান মোল্লা আবদুর রব (৪৮) ও মাই টিভির বাগেরহাট প্রতিনিধি রিফাত আল মাহমুদ (৩২)।
শেখ আলমগীর গতকাল শনিবার প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, মেয়ের আপত্তিকর ছবি নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। সে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে সব সময় বই নিয়ে থাকত। ১৫-২০ দিন আগে বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আবদুর রব ও রিফাত আল মাহমুদ বলেন, ‘আপনার মেয়ের আপত্তিকর কিছু ছবি আমাদের কাছে আছে। আমরা এ বিষয়ে তার সাক্ষাৎকার নিতে চাই।’ তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি না হলে তাঁরা কয়েকটি সংবাদপত্রে ও টেলিভিশনে মেয়ের এ ঘটনা প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে চলে যান। মেয়েটি ঘরের ভেতর থেকে সাংবাদিকদের সব কথা শুনেছিল। এর পর থেকে সে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়। গত বৃহস্পতিবার স্যাভলন পান করে আত্মহত্যা করে। তিনি তাঁর মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য দায়ী সাংবাদিক ও মেয়ের সহপাঠীদের বিচার দাবি করেন।
ঘটনার শুরু: সাবিয়ার কয়েকজন সহপাঠী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, চার আসামি আর সাবিয়াসহ আরও কয়েকজন বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল। সাবিয়া ও অন্য এক মেয়ের সঙ্গে মুজাহিদের এবং আরেক মেয়ের সঙ্গে সীমিন হাসানের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৬ মার্চ সাবিয়া, মুজাহিদ, সীমিনসহ ছয়জন বাগেরহাট স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে না গিয়ে বিদ্যালয়ে যায়। একটি শ্রেণীকক্ষে বসে তারা মুঠোফোনে সাবিয়া ও অপর মেয়েটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কিছু ভিডিওচিত্র পৃথকভাবে ধারণ করে। পরে এই ছবি ইন্টারনেট এবং ব্লুটুথের মাধ্যমে মুঠোফোনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: বাগেরহাট আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুখার্জি রবীন্দ্রনাথ জানান, ৪ এপ্রিল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ওই ছয়জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ডাকা হয়। পাঁচজন অভিভাবকের উপস্থিতিতে ওই ছয় শিক্ষার্থীকে প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষা ও নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিতে অভিভাবকদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে আসতে বলা হয়। এ ছাড়া তাদের স্কুলে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়ে এই সিদ্ধান্ত মেনে চলে যান। বৃহস্পতিবার সাবিয়া একাই বাড়িতে ছিল। বাবা-মা কর্মক্ষেত্রে, একমাত্র ভাই কলেজে গিয়েছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাবিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আসে তার ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবী। ওই বান্ধবী জানায়, সাবিয়া তাকে বলে, ‘ঘটনার জন্য দায়ী ছেলেদের বাড়ি সাংবাদিক যায় না, আমার বাড়িতে সাংবাদিক আসে। আমি কোথাও বের হতে পারি না। বাড়ির মধ্যেও অনেক কথা শুনতে হয়। আমি আর পারছি না। আমার মনে হয় মরে যাওয়াই ভালো।’ ওই বান্ধবী সাবিয়াকে অনেক বুঝিয়ে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই স্যাভলন পানে আত্মহত্যা করে সাবিয়া।
পুলিশের বক্তব্য: বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, মামলা করার রাতেই মোল্লা আবদুর রব, রিফাত আল মাহমুদসহ কয়েকজন আসামির বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
অভিযুক্ত সাংবাদিকদের বক্তব্য: আবদুর রব ও রিফাত আল মাহমুদ পৃথকভাবে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন, মাস খানেক আগে সাবিয়াদের বাড়ি গিয়েছিলেন। তাঁরা দাবি করেন, ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন, তবে এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি।
No comments