ধর্ম-পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
মানবজাতির সুবিধা বা সুখ-শান্তির জন্য আল্লাহ তাআলা জগতের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। পার্থিব সব সৃষ্টিই মানুষের সেবা করবে, এটাই স্বাভাবিক। মানুষ আল্লাহর ইবাদত করবে আর সেই মানুষের সেবা করবে অন্য সৃষ্টি; যেমন-গাছপালা, পশুপাখি ইত্যাদি।
কোন পরিবেশে বসবাস করলে মানুষের সুবিধা হবে বা মানুষ বেঁচে থাকতে পারবে, ইসলাম তা নিশ্চিত করেছে। তাই ইসলামে পরিবেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ও দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে বৃক্ষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্যই নয়, ধর্মীয় কারণেও মানুষকে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। ইসলামে বৃক্ষরোপণ এবং বৃক্ষের পরিচর্যার ওপর অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান যুগে বৃক্ষরোপণের ওপর যে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে, এর দিকনির্দেশনা ও পথপ্রদর্শন করেছে ইসলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) ১৪০০ বছর আগেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
পরিবেশের গুরুত্ব ইসলামে সুদীর্ঘকালের। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হতে দেখা যায় না। অথচ বৃক্ষরোপণের ধর্মীয় তাৎপর্য জনগণের সামনে তুলে ধরা হলে তা বনায়নের ক্ষেত্রে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বৃক্ষরাজি দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখে। বৃষ্টিপাত ঘটাতে, ভূমিক্ষয়, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস রোধ করতে এবং মাটিকে সরস ও উর্বর করতে বৃক্ষ প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। গাছপালা আছে বলেই পৃথিবীতে মানুষ ও প্রাণীরা বেঁচে আছে। অন্যথায় এদের অস্তিত্ব রক্ষা কখনোই সম্ভব হতো না। বৃক্ষরাজি মানুষ এবং পশুপাখির কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক! আমি প্রচুর বারি বর্ষণ করি। অতঃপর আমি ভূমিকে প্রকৃষ্টরূপে বিদীর্ণ করি এবং এতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, জলপাই, খেজুর, বহু বৃক্ষবিশিষ্ট উদ্যান, ফল এবং গবাদিপশুর খাদ্য। তা তোমাদের ও তোমাদের গবাদিপশুর ভোগের জন্য।’ (সূরা আবাসা, আয়াত: ২৪-৩২)
আল্লাহর নিয়ামতরাজির মধ্যে গাছপালা, বৃক্ষরাজি ও এদের ফলমূল ও অন্যান্য অংশ অন্যতম নিয়ামত বা বিশেষ একটি অবদান। যার মধ্যে নিহিত রয়েছে মানুষের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার উপকরণ অক্সিজেন। মানুষ গাছ থেকে অক্সিজেন পায় এবং গাছ মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, পৃথিবীতে দূষণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ পৃথিবীতে জীবনধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করে এবং নিরাপদে বেঁচে থাকে। গাছগাছালি মানবজাতির এক পরম হিতৈষী বন্ধু। ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের যেমন বিশেষ গুরুত্ব আছে, তেমনি এগুলো পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখে এবং আর্থিক সচ্ছলতা আনয়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। গাছের ফলমূল মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকুলের প্রিয় খাদ্য, যা শরীরের পুষ্টি সাধন করে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া গাছের মধ্যে রয়েছে মানুষ ও পশুপাখির জীবন রক্ষাকারী ওষুধের বিশেষ উপাদান। বৃক্ষমালা ও লতাগুল্মের সাহায্যে পৃথিবীর উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও তাপমাত্রা কমানোর জন্য গাছপালা অতীব প্রয়োজনীয়, যা মানুষ নির্বিচারে ধ্বংসে মেতেছে। মানবজাতির জীবনধারণের জন্য সর্বাবস্থায়ই গাছপালার বিশেষ প্রয়োজন। এসব গাছপালা বনায়ন ও রোপণ না করে কেবল কেটে কেটে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে, ফলে পৃথিবীতে বৃষ্টির অভাব হচ্ছে। মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করার ফলে বিশ্বে উষ্ণায়ন ঘটছে, যে জন্য পৃথিবীর তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে এবং পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এ গাছ পারিবারিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিকভাবে দৈনন্দিন কাজে এবং আসবাবের জন্য ব্যবহূত হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা এসব গাছপালার মাধ্যমে বায়ু সঞ্চালন করেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর জন্য ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন এবং জীবজগৎকে বাঁচিয়ে রাখেন। পৃথিবীর মানুষকে গাছপালা ও পাহাড়-পর্বত ধ্বংস না করার জন্য সতর্কবাণী দিয়ে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হয়েছে, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালা) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য হতে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি (আল্লাহ) তার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সূরা আর-রূম, আয়াত-৩৮)
ইসলাম অকারণে বা বিনা প্রয়োজনে কাউকে গাছ কাটার অনুমতি দেয় না। কারণ, যে ব্যক্তির জমিতেই গাছ জন্মাক না কেন, তাতে অন্য মানুষ, জীবজন্তু ও পশুপাখির হক আছে। মানুষ ইচ্ছেমতো গাছের ফল ভোগ করতে পারে। এমনকি কাঠ কেটে এনে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। কিন্তু অকারণে বনে আগুন দিয়ে বন পুড়িয়ে দেওয়ার অনুমতি ইসলাম কাউকে দেয় না। নবী করিম (সা.) নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করেছেন। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তেও কারও হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, সে যেন তা রোপণ করে নেয়।’ এজন্য তাকে কিয়ামতের দিন অনেক সওয়াব দেওয়া হবে। বৃক্ষরাজি সর্বদা আল্লাহকে সিজদারত অবস্থায় তাসবিহ পাঠ করে থাকে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তুমি কি দেখ না যে আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু মহাকাশ ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত: ১৮)
যেকোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার সঙ্গে সঙ্গে তার আমলনামা বন্ধ হয়ে যাবে; শুধু সাদকায়ে জারিয়ার সওয়াব অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ মানুষ মৃত্যুর পরও সাদকায়ে জারিয়ার সওয়াব অব্যাহতভাবে পেতে থাকবে। তিনটি বিষয়কে সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে নেককার সন্তান, উপকারী জ্ঞান, সৎভাবে উপার্জিত অর্থ দ্বারা তৈরি মসজিদ ও বৃক্ষরোপণ। কোনো ব্যক্তি যদি একটি গাছ রোপণ করেন, তাহলে ওই গাছটি যত দিন বেঁচে থাকবে এবং মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু যত দিন তার ফল বা উপকার ভোগ করতে থাকবে, তত দিন বৃক্ষরোপণকারীর আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে। এমনকি রোপণকারী যদি মারা যান, তাহলেও তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে যত দিন গাছটি বেঁচে থাকবে। কোনো মানুষ যদি ওই বৃক্ষ থেকে কোনো উপকার বা ফল ভোগ নাও করে, তাহলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে। ইসলামে বৃক্ষরোপণের ওপর কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা অনুধাবন করার জন্য এ হাদিসটিই যথেষ্ট। তাই পরিবেশ সংরক্ষণে অধিক হারে বৃক্ষরোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও যথাযথ পরিচর্যায় ব্রতী হয়ে জনগণকে এর তাৎপর্য সম্পর্কে অবহিত করা বাঞ্ছনীয়।
ইসলামি মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যায় মনোযোগী হতে হবে। বিশ্ববাসীর জন্য বনায়ন, বৃক্ষরোপণ এবং পরিবেশ বিশুদ্ধ রাখার জন্য এদের সংরক্ষণ অপরিহার্য কর্তব্য। আমরা যদি বৃক্ষরোপণের বিষয়ে ইসলামের দিকনির্দেশনাকে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে অচিরেই আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি সবুজ শ্যামল বৃক্ষসম্পদে ভরে উঠবে। আসুন, আমরা সবাই মিলেমিশে বেশি করে গাছ লাগাই। দেশের মধ্যে পরিমিত বনায়ন সৃষ্টি করতে বা বৃক্ষরোপণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে সবার এগিয়ে আসা দরকার। সরকারের দায়িত্ব হলো দেশে অধিক পরিমাণে বনায়ন করা এবং প্রত্যেক সুনাগরিকের দায়িত্ব হলো নিজ নিজ বাড়ির আঙিনায় বৃক্ষরোপণ করে, দেশের পরিবেশকে দূষণমুক্ত করা। চলুন, আমরা গাছের যত্ন নিই, বৃক্ষনিধন থেকে বিরত থাকি এবং বৃক্ষরোপণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশকে সুন্দর করি।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
dr.munimkhan@yahoo.com
পরিবেশের গুরুত্ব ইসলামে সুদীর্ঘকালের। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হতে দেখা যায় না। অথচ বৃক্ষরোপণের ধর্মীয় তাৎপর্য জনগণের সামনে তুলে ধরা হলে তা বনায়নের ক্ষেত্রে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বৃক্ষরাজি দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখে। বৃষ্টিপাত ঘটাতে, ভূমিক্ষয়, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস রোধ করতে এবং মাটিকে সরস ও উর্বর করতে বৃক্ষ প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। গাছপালা আছে বলেই পৃথিবীতে মানুষ ও প্রাণীরা বেঁচে আছে। অন্যথায় এদের অস্তিত্ব রক্ষা কখনোই সম্ভব হতো না। বৃক্ষরাজি মানুষ এবং পশুপাখির কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক! আমি প্রচুর বারি বর্ষণ করি। অতঃপর আমি ভূমিকে প্রকৃষ্টরূপে বিদীর্ণ করি এবং এতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, জলপাই, খেজুর, বহু বৃক্ষবিশিষ্ট উদ্যান, ফল এবং গবাদিপশুর খাদ্য। তা তোমাদের ও তোমাদের গবাদিপশুর ভোগের জন্য।’ (সূরা আবাসা, আয়াত: ২৪-৩২)
আল্লাহর নিয়ামতরাজির মধ্যে গাছপালা, বৃক্ষরাজি ও এদের ফলমূল ও অন্যান্য অংশ অন্যতম নিয়ামত বা বিশেষ একটি অবদান। যার মধ্যে নিহিত রয়েছে মানুষের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার উপকরণ অক্সিজেন। মানুষ গাছ থেকে অক্সিজেন পায় এবং গাছ মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, পৃথিবীতে দূষণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ পৃথিবীতে জীবনধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করে এবং নিরাপদে বেঁচে থাকে। গাছগাছালি মানবজাতির এক পরম হিতৈষী বন্ধু। ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের যেমন বিশেষ গুরুত্ব আছে, তেমনি এগুলো পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখে এবং আর্থিক সচ্ছলতা আনয়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। গাছের ফলমূল মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকুলের প্রিয় খাদ্য, যা শরীরের পুষ্টি সাধন করে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া গাছের মধ্যে রয়েছে মানুষ ও পশুপাখির জীবন রক্ষাকারী ওষুধের বিশেষ উপাদান। বৃক্ষমালা ও লতাগুল্মের সাহায্যে পৃথিবীর উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও তাপমাত্রা কমানোর জন্য গাছপালা অতীব প্রয়োজনীয়, যা মানুষ নির্বিচারে ধ্বংসে মেতেছে। মানবজাতির জীবনধারণের জন্য সর্বাবস্থায়ই গাছপালার বিশেষ প্রয়োজন। এসব গাছপালা বনায়ন ও রোপণ না করে কেবল কেটে কেটে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে, ফলে পৃথিবীতে বৃষ্টির অভাব হচ্ছে। মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করার ফলে বিশ্বে উষ্ণায়ন ঘটছে, যে জন্য পৃথিবীর তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে এবং পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এ গাছ পারিবারিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিকভাবে দৈনন্দিন কাজে এবং আসবাবের জন্য ব্যবহূত হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা এসব গাছপালার মাধ্যমে বায়ু সঞ্চালন করেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর জন্য ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন এবং জীবজগৎকে বাঁচিয়ে রাখেন। পৃথিবীর মানুষকে গাছপালা ও পাহাড়-পর্বত ধ্বংস না করার জন্য সতর্কবাণী দিয়ে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হয়েছে, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালা) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য হতে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি (আল্লাহ) তার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সূরা আর-রূম, আয়াত-৩৮)
ইসলাম অকারণে বা বিনা প্রয়োজনে কাউকে গাছ কাটার অনুমতি দেয় না। কারণ, যে ব্যক্তির জমিতেই গাছ জন্মাক না কেন, তাতে অন্য মানুষ, জীবজন্তু ও পশুপাখির হক আছে। মানুষ ইচ্ছেমতো গাছের ফল ভোগ করতে পারে। এমনকি কাঠ কেটে এনে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। কিন্তু অকারণে বনে আগুন দিয়ে বন পুড়িয়ে দেওয়ার অনুমতি ইসলাম কাউকে দেয় না। নবী করিম (সা.) নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করেছেন। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তেও কারও হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, সে যেন তা রোপণ করে নেয়।’ এজন্য তাকে কিয়ামতের দিন অনেক সওয়াব দেওয়া হবে। বৃক্ষরাজি সর্বদা আল্লাহকে সিজদারত অবস্থায় তাসবিহ পাঠ করে থাকে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তুমি কি দেখ না যে আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু মহাকাশ ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত: ১৮)
যেকোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার সঙ্গে সঙ্গে তার আমলনামা বন্ধ হয়ে যাবে; শুধু সাদকায়ে জারিয়ার সওয়াব অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ মানুষ মৃত্যুর পরও সাদকায়ে জারিয়ার সওয়াব অব্যাহতভাবে পেতে থাকবে। তিনটি বিষয়কে সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে নেককার সন্তান, উপকারী জ্ঞান, সৎভাবে উপার্জিত অর্থ দ্বারা তৈরি মসজিদ ও বৃক্ষরোপণ। কোনো ব্যক্তি যদি একটি গাছ রোপণ করেন, তাহলে ওই গাছটি যত দিন বেঁচে থাকবে এবং মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু যত দিন তার ফল বা উপকার ভোগ করতে থাকবে, তত দিন বৃক্ষরোপণকারীর আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে। এমনকি রোপণকারী যদি মারা যান, তাহলেও তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে যত দিন গাছটি বেঁচে থাকবে। কোনো মানুষ যদি ওই বৃক্ষ থেকে কোনো উপকার বা ফল ভোগ নাও করে, তাহলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে। ইসলামে বৃক্ষরোপণের ওপর কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা অনুধাবন করার জন্য এ হাদিসটিই যথেষ্ট। তাই পরিবেশ সংরক্ষণে অধিক হারে বৃক্ষরোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও যথাযথ পরিচর্যায় ব্রতী হয়ে জনগণকে এর তাৎপর্য সম্পর্কে অবহিত করা বাঞ্ছনীয়।
ইসলামি মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যায় মনোযোগী হতে হবে। বিশ্ববাসীর জন্য বনায়ন, বৃক্ষরোপণ এবং পরিবেশ বিশুদ্ধ রাখার জন্য এদের সংরক্ষণ অপরিহার্য কর্তব্য। আমরা যদি বৃক্ষরোপণের বিষয়ে ইসলামের দিকনির্দেশনাকে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে অচিরেই আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি সবুজ শ্যামল বৃক্ষসম্পদে ভরে উঠবে। আসুন, আমরা সবাই মিলেমিশে বেশি করে গাছ লাগাই। দেশের মধ্যে পরিমিত বনায়ন সৃষ্টি করতে বা বৃক্ষরোপণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে সবার এগিয়ে আসা দরকার। সরকারের দায়িত্ব হলো দেশে অধিক পরিমাণে বনায়ন করা এবং প্রত্যেক সুনাগরিকের দায়িত্ব হলো নিজ নিজ বাড়ির আঙিনায় বৃক্ষরোপণ করে, দেশের পরিবেশকে দূষণমুক্ত করা। চলুন, আমরা গাছের যত্ন নিই, বৃক্ষনিধন থেকে বিরত থাকি এবং বৃক্ষরোপণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশকে সুন্দর করি।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments