এই দিনে-এক হয়ে বাঁচাতে হবে এই পৃথিবীর সন্তানদের by শিখ্তী সানী
ধরিত্রীমাতার বিস্তীর্ণ ভূমি, নীল আকাশ, নদী-সমুদ্র, পাহাড়-পর্বত—কিছুই কারও একার সম্পদ নয়। সবার অধিকার এখানে সমান। সীমিত এই ‘সাধারণ’ প্রাকৃতিক সম্পদগুলো যখন একক কোনো গোষ্ঠী বা দলের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়, তখন হয়তো সাময়িকভাবে আকর্ষণীয় একটি লভ্যাংশ গিয়ে হাজির হয় তাদের কাছে।
কিন্তু সুবিধাভোগী দলটির যথেচ্ছ অনধিকার চর্চায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে সম্পদগুলো। ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হতে থাকে তাদের প্রাণশক্তি। এ বিপর্যয়ের দায় এসে পড়ে সবার ঘাড়ে; যারা এই অন্যায় চর্চায় সঙ্গও দেয়নি, লাভও পায়নি তাদের ওপরও। এটাই ‘ট্র্যাজেডি অব দ্য কমন্স’, পরিবেশবাদীদের কাছে আলোচিত একটি শব্দ। ১৯৬৮ সালে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি জার্নালে গ্যারেট হার্ডিন তুলে ধরেন এই ধারণা। হার্ডিন দেখিয়েছিলেন, মধ্যযুগে ইউরোপের বহু বিস্তীর্ণ চারণভূমি উন্মুক্ত পড়ে থাকত। স্বার্থান্বেষী মানুষ তাদের সুবিধার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত মাত্রাতিরিক্তভাবে ব্যবহার করত, যতক্ষণ চারণভূমিটি তার উর্বরতাশক্তি হারিয়ে রুক্ষ হয়ে না যেত। তারপর তারা চলে যেত অন্য কোথাও। রুক্ষ ভূমির দায় এসে পড়ত নির্দোষ মনুষ্যজাতির ঘাড়ে। হার্ডিনের এই সুরটিই এই শতাব্দীতে করুণভাবে বাজছে আমাদের কানে, বাংলাদেশসহ ক্ষুদ্র দ্বীপ ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কাছে, যারা জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ ক্ষতির শিকার। উন্নত দেশগুলোর উন্নয়ন আর অর্থনৈতিক আকাশছোঁয়া সমৃদ্ধির বলি আমাদের এই ‘সাধারণ’ সম্পদগুলো। এর দায় নিতে হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলোকে, তাদের মানুষগুলোকে। তারা জানে না জলবায়ু পরিবর্তনের কথা, কিন্তু প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলছে তার প্রভাবের সঙ্গে। উন্নত রাষ্ট্রের উচ্চাভিলাষী অর্থনীতির কঠিন মূল্য দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে, এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অসংখ্য মানুষকে। হতদরিদ্র্র ও দুস্থ মানুষগুলো কি জানে, কোন মূল্য দিচ্ছে তারা?
‘এই পৃথিবী মুনাফার জন্য নয়। বাসযোগ্য আর কোনো পৃথিবীও নেই’—এই ছিল কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে অসংখ্য পরিবেশবাদীর স্লোগান। উন্নত দেশগুলোর অনাগ্রহের কারণে ক্ষোভে উত্তাল ছিল কোপেনহেগেন। আইনি বাধ্যবাধকতার কোনো চুক্তিতে পৌঁছা যায়নি, প্রাপ্তি বলতে শুধু অঙ্গীকারনামা। আমাদের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা কমেনি। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে তাই চরম শঙ্কিত হই আমরা। উৎকণ্ঠিত হই অনাগত প্রজন্মের কথা ভেবে। আজ ৫ জুন। বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে মানুষের পরিবেশের ওপর জাতিসংঘের একটি সম্মেলন থেকে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে পরিবেশ বাঁচানোর ডাক আসে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে পরের বছর থেকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের আয়োজন করা হয়। এবারের স্লোগান—বহু প্রজাতি, এক গ্রহ, এক ভবিষ্যৎ। ২০১০ সালকে ঘোষণা করা হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য বছর’।
আজ থেকে প্রায় সোয়া শ বছর আগেই মনুষ্যজাতিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, শিল্পায়নের ক্রমাগত আদিখ্যেতার মারাত্মক প্রভাব পড়বে জলবায়ুর ওপর। এটা আজ সারা পৃথিবীর দলিল। বদলে গেছে পৃথিবী, বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। বায়ুমণ্ডলে বাড়ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড আর গ্রিনহাউস গ্যাস। ফলে বিপর্যয়ের শিকার মানুষ ও পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় জীবজগৎ। বিলীন হয়ে গেছে অনেকের অস্তিত্ব, বাকিরা বিলুপ্তির পথে।
বাংলাদেশের প্রাচুর্যময় জীববৈচিত্র্যও আজ হুমকির মুখে পড়েছে। ধুঁকতে থাকা নদী ও মিঠা পানিতে অবশিষ্ট আছে ২০০ প্রজাতির মাছ ও ১৫০ প্রজাতির পাখি। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যাবে ৪৪২ প্রজাতির মাছ ও ৩২ প্রজাতির চিংড়ি, কাঁকড়া ও কচ্ছপ প্রজাতির প্রাণী। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে অবশিষ্ট আছে ৩০০ প্রজাতির গাছ, ৪০০ প্রজাতির মাছ ও ২০০ প্রজাতির পাখি। বিগত দশকগুলোতে ১৮ প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ পাখি ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির খাতায় আছে বাকিদের নাম। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা, বনাঞ্চল উজাড়, মরুকরণ, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানুষের ক্রমাগত চাহিদা পূরণ এবং ধ্বংসাত্মক লিপ্সা বাস্তুসংস্থানের চক্রে এনেছে মারাত্মক ক্ষয়। প্রতিবছর বাংলাদেশে ছয়-সাতটি বড় ও মাঝারি আকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। বড় ধরনের দুর্যোগের আঘাত সহ্য করতে না-করতেই আরেকটি আছড়ে পড়ে এখানে। ২০০৭-এর সিডরের ক্ষত থেকে আজও আমরা উঠে দাঁড়াতে পারিনি। সিডরের আঘাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে গিয়ে সুন্দরবন হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। সেই সঙ্গে নুয়ে পড়েছে বনের প্রাকৃতিক সম্পদ আর জীববৈচিত্র্যও। কে বইবে এই আর্তনাদ?
বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় তিন হাজার ২০০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার কাতরভাবে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে লড়ছে। আমাদের সুন্দরবনে অবশিষ্ট আছে মাত্র ৪০০-৪৫০টি বাঘ। তাই যখন মানুষের হাতে একটি বাঘের মৃত্যুর খবর আমরা পাই, তখন শঙ্কা এসে ভর করে আমাদের ওপর। হিসাবে কমতে থাকে বাঘের সংখ্যা... ৩৯৯, ৩৯৮...। এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অন্য সব জীববৈচিত্র্য। প্রকৃতিকে আটকে রাখার উপায় আমাদের নেই, কিন্তু আমরা পারি নিজেদের দোষগুলো সংশোধনের, লোভ আর স্বার্থের বাণিজ্য বন্ধ করতে। আমাদের এক হয়ে বাঁচাতে হবে এই পৃথিবীকে, এর সন্তানদের। আমাদের এক হওয়ার শক্তিই উন্নত দেশগুলোকে বাধ্য করবে তার অন্যায় চর্চার ভার নিতে। একটাই ভবিষ্যৎ, একটাই পৃথিবী। আসুন, একে বাঁচাই।
‘এই পৃথিবী মুনাফার জন্য নয়। বাসযোগ্য আর কোনো পৃথিবীও নেই’—এই ছিল কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে অসংখ্য পরিবেশবাদীর স্লোগান। উন্নত দেশগুলোর অনাগ্রহের কারণে ক্ষোভে উত্তাল ছিল কোপেনহেগেন। আইনি বাধ্যবাধকতার কোনো চুক্তিতে পৌঁছা যায়নি, প্রাপ্তি বলতে শুধু অঙ্গীকারনামা। আমাদের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা কমেনি। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে তাই চরম শঙ্কিত হই আমরা। উৎকণ্ঠিত হই অনাগত প্রজন্মের কথা ভেবে। আজ ৫ জুন। বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে মানুষের পরিবেশের ওপর জাতিসংঘের একটি সম্মেলন থেকে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে পরিবেশ বাঁচানোর ডাক আসে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে পরের বছর থেকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের আয়োজন করা হয়। এবারের স্লোগান—বহু প্রজাতি, এক গ্রহ, এক ভবিষ্যৎ। ২০১০ সালকে ঘোষণা করা হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য বছর’।
আজ থেকে প্রায় সোয়া শ বছর আগেই মনুষ্যজাতিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, শিল্পায়নের ক্রমাগত আদিখ্যেতার মারাত্মক প্রভাব পড়বে জলবায়ুর ওপর। এটা আজ সারা পৃথিবীর দলিল। বদলে গেছে পৃথিবী, বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। বায়ুমণ্ডলে বাড়ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড আর গ্রিনহাউস গ্যাস। ফলে বিপর্যয়ের শিকার মানুষ ও পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় জীবজগৎ। বিলীন হয়ে গেছে অনেকের অস্তিত্ব, বাকিরা বিলুপ্তির পথে।
বাংলাদেশের প্রাচুর্যময় জীববৈচিত্র্যও আজ হুমকির মুখে পড়েছে। ধুঁকতে থাকা নদী ও মিঠা পানিতে অবশিষ্ট আছে ২০০ প্রজাতির মাছ ও ১৫০ প্রজাতির পাখি। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যাবে ৪৪২ প্রজাতির মাছ ও ৩২ প্রজাতির চিংড়ি, কাঁকড়া ও কচ্ছপ প্রজাতির প্রাণী। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে অবশিষ্ট আছে ৩০০ প্রজাতির গাছ, ৪০০ প্রজাতির মাছ ও ২০০ প্রজাতির পাখি। বিগত দশকগুলোতে ১৮ প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ পাখি ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির খাতায় আছে বাকিদের নাম। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা, বনাঞ্চল উজাড়, মরুকরণ, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানুষের ক্রমাগত চাহিদা পূরণ এবং ধ্বংসাত্মক লিপ্সা বাস্তুসংস্থানের চক্রে এনেছে মারাত্মক ক্ষয়। প্রতিবছর বাংলাদেশে ছয়-সাতটি বড় ও মাঝারি আকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। বড় ধরনের দুর্যোগের আঘাত সহ্য করতে না-করতেই আরেকটি আছড়ে পড়ে এখানে। ২০০৭-এর সিডরের ক্ষত থেকে আজও আমরা উঠে দাঁড়াতে পারিনি। সিডরের আঘাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে গিয়ে সুন্দরবন হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। সেই সঙ্গে নুয়ে পড়েছে বনের প্রাকৃতিক সম্পদ আর জীববৈচিত্র্যও। কে বইবে এই আর্তনাদ?
বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় তিন হাজার ২০০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার কাতরভাবে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে লড়ছে। আমাদের সুন্দরবনে অবশিষ্ট আছে মাত্র ৪০০-৪৫০টি বাঘ। তাই যখন মানুষের হাতে একটি বাঘের মৃত্যুর খবর আমরা পাই, তখন শঙ্কা এসে ভর করে আমাদের ওপর। হিসাবে কমতে থাকে বাঘের সংখ্যা... ৩৯৯, ৩৯৮...। এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অন্য সব জীববৈচিত্র্য। প্রকৃতিকে আটকে রাখার উপায় আমাদের নেই, কিন্তু আমরা পারি নিজেদের দোষগুলো সংশোধনের, লোভ আর স্বার্থের বাণিজ্য বন্ধ করতে। আমাদের এক হয়ে বাঁচাতে হবে এই পৃথিবীকে, এর সন্তানদের। আমাদের এক হওয়ার শক্তিই উন্নত দেশগুলোকে বাধ্য করবে তার অন্যায় চর্চার ভার নিতে। একটাই ভবিষ্যৎ, একটাই পৃথিবী। আসুন, একে বাঁচাই।
No comments