পুলিশের প্রশিক্ষণ ও আন্তরিকতা প্রয়োজন-দুর্ঘটনার তথ্য-পরিসংখ্যান
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটে গত মঙ্গলবার পুলিশের সদস্যদের জন্য আয়োজিত এক কর্মশালায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পর্যবেক্ষণ বেরিয়ে এসেছে। সারা দেশে প্রতিদিন যেসব দুর্ঘটনা ঘটে, সেগুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য সঠিকভাবে নথিভুক্ত হয় না। এর কারণ মূলত পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের অভাব।
এর ফলে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানগুলো সরকারি নথিপত্রেই দেখা যায় বিভিন্ন রকম। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শুধু দুর্ঘটনার তথ্য-পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেই নয়, আরও অনেক ক্ষেত্রে।
কর্মশালাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৭ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল এক হিসাবে তিন হাজার, অন্য একটি হিসাবে চার হাজার ৬৯৬। সে বছর দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা মামলার এজাহারের ভিত্তিতে ছিল তিন হাজার ৮৬৯, অন্য নথিতে তিন হাজার ৯২০। এসব অসংগতি ঘটে দুর্ঘটনার তথ্য নথিভুক্ত করার সময়। কর্মশালায় বলা হয়েছে, পুলিশের সদস্যরা এ সংক্রান্ত ফরম সঠিকভাবে পূরণ করেন না বা করতে পারেন না। এ বিষয়ে তাঁদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এ কথাও বলা হয়েছে যে পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন রকমের দায়িত্ব পালন করতে হয় বলে দুর্ঘটনার তথ্য তাঁরা সঠিকভাবে নথিভুক্ত করতে পারেন না।
পুলিশের লোকবলের অভাব বহুল আলোচিত বিষয়। তাদের ওপর রকমারি দায়িত্বের চাপ নিয়েও অনেক কথা হয়। প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিয়ে যত কথা বলা হয়, কাজ ততটা হয় না। সড়ক দুর্ঘটনা শুধু নয়, সব ধরনের অপরাধ ও সে সংক্রান্ত মামলার তথ্য সঠিকভাবে নথিভুক্ত করার বিষয়টি মৌলিক গুরুত্ব বহন করে। কারণ, পুলিশের তৈরি এসব নথিই এ সংক্রান্ত তথ্য-পরিসংখ্যানের মূল উৎস।
সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়া প্রতিদিন মানুষ আরও নানা রকম দুর্ঘটনার শিকার হয়। সেসব সম্পর্কেও সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের ব্যবস্থাকে দক্ষ ও নির্ভুল করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। পুলিশ সদস্যদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আন্তরিকতাও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও যদি দায়িত্বে অবহেলাবশত কোনো দুর্ঘটনার তথ্য আন্তরিকভাবে নথিভুক্ত না করেন, তবে সামগ্রিক পরিসংখ্যান অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আমরা আশা করি, পুলিশ কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
No comments