তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা-চিকিৎসকদের গ্রামে রাখতেই হবে
গ্রামের জনগোষ্ঠীর জন্য আধুনিক চিকিৎসাসেবার সুযোগ বাড়াতে ২০১০ সালের জুলাইয়ে সাড়ে তিন হাজার চিকিৎসককে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়োগ প্রদান বিবেচিত হয়েছিল যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে। তারা দুই বছর বাধ্যতামূলকভাবে গ্রামে থাকবেন এবং এরপর উপজেলা পর্যায়ে হেলথ কমপ্লেক্স পদায়নের সুযোগ পাবেন।
যে দেশের দুই-তৃতীয়াংশের মতো মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন এবং যাদের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রধানত অর্থনৈতিক কারণেই আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত, তারা সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। কিন্তু শনিবার সমকালে 'গ্রামের ডাক্তার শহরে' শিরোনামের একটি সংবাদ স্পষ্ট করে দেয় যে দিনবদল মোটেই সহজ কাজ নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগকে ভেতর থেকেই নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে। সমকাল প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গ্রামাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ সুবিধা দিয়ে অ্যাডহক ভিত্তিতে ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের গ্রামে রাখা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ উপেক্ষা এবং নিয়োগের শর্ত লঙ্ঘন করে গ্রামে নিয়োগ পাওয়া ডাক্তাররা তদবির করে ফিরে আসছেন শহরে। এসব বদলিতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা পালন করছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্ব্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতারা।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ১২ মার্চ গ্রামে পোস্টিং দেওয়া চিকিৎসকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, 'হয় কর্মস্থলে থাকুন নতুবা চাকরি ছেড়ে দেন।' কিন্তু ক্ষেতের বেড়ায় ফসল খেয়ে ফেললে কৃষকের সর্বনাশের শেষ থাকে না। প্রধানমন্ত্রী গ্রামের মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসক নিয়োগ দিচ্ছেন। কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্তরা সরকারি প্রশাসন ও দলের কিছু লোককে ম্যানেজ করে ফিরে আসছেন শহরে। এ যে বড় অন্যায় সেটা বুঝতে পেরেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ আবু তৈয়ব। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ভঙ্গ করে চট্টগ্রামের যেসব ডাক্তারকে বিভিন্ন শহরের হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করার জন্য তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে পৃথক চারটি চিঠি দিয়েছেন। আমরা আশা করব যে, এসব চিঠি হিমাগারে পড়ে থাকবে না, বরং তা অনতিবিলম্বে বিবেচিত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যারা গ্রাম থেকে চিকিৎসকদের শহরে বদলির প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যদি মন্ত্রণালয় তাদের স্ট্যান্ড রিলিজ করে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে পারে, সেটা হতে পারে সর্বোত্তম শাস্তিমূলক পদক্ষেপ। শাসক দলের চিকিৎসক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে যারা সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ নস্যাৎ করে দিচ্ছে তারা কি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে? কথায় বলে, আপনা ভালো পাগলেও বোঝে। চিকিৎসকদের গ্রামের মানুষের সেবায় নিয়োজিত রাখতে পারলে সরকারের সুনাম হয় এবং তার প্রভাবে দলেরও লাভ_ এই সহজ-সরল সত্য যারা বোঝে না আদপেই তারা দলের নয় বরং নিজেদের স্বার্থ হাসিলেই ব্যস্ত। শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের অন্যান্য এলাকার চিত্রও ভিন্ন কিছু নয়। আমরা আশা করব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। চিকিৎসকদের গ্রামে থাকার ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ সমস্যা থাকলে অবশ্যই তা দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু একটি ভালো উদ্যোগ কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না।
No comments