পাঠকের প্রশ্ন, আইনি পরামর্শ

যেকোনো আইনি সমস্যা ও প্রশ্ন থাকলে লিখুন। বিজ্ঞ আইনজীবীরা পরামর্শ দেবেন। ঠিকানা: আইন অধিকার, প্রথম আলো, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। ই-মেইল ain@prothom-alo.info
হেবা দলিল কার্যকর কীভাবে?


আমার বাবার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আমরা তিন ভাই ও চার বোন। আমার দ্বিতীয় মায়ের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। চার বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বোনদের বিয়ের সময় জমি বিক্রি করে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। বড় ভাইয়ের স্ত্রীর চাকরির সময় কিছু জমি বিক্রি করে চাকরি নিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে বাবার সম্পত্তির ১৩২ শতাংশের মধ্য থেকে বাবা মৃত্যুর প্রায় নয় মাস আগে ৩০-১০-২০০৮ তারিখে ১২০ শতাংশ জমি আমাদের দুই ভাইয়ের ওপর খুশি হয়ে হেবা ঘোষণা করে রেজিস্ট্রি করে দেন। সেখানে লেখা আছে, উল্লিখিত জমি নিজ নিজ নামে খারিজ করে ভোগ-দখল করিতে থাকিব এবং এই হেবা ঘোষণা দলিল অপরিবর্তনীয়, যা আমাদের দখলে আছে এবং বাকি ১২ শতাংশ জমি আমার বড় ভাইয়ের দখলে আছে। উল্লেখ্য, ওই জমি নতুন মাঠ জরিপের কাগজ, অর্থাৎ মাঠ পর্চা দিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়। যেখানে পুরোনো ও নতুন হাল দাগ—উভয়ই উল্লেখ করা আছে, যা আমরা খারিজ করে নিইনি। কিন্তু আমার বড় ভাই অন্য মায়ের সন্তান, আমাদের জমি হেবা ঘোষণা দলিল করার কথা জানা সত্ত্বেও ওই জমিসহ সম্পূর্ণ জমি বাবার মৃত্যু দেখিয়ে সবার নামে খারিজ করে নেয়। সে আমাদের জমির ওপর আসার হুমকি দিচ্ছে এবং বলছে, ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী এই হেবা দলিল টিকবে না। আবার কোনো কোনো সময় বলছে, তিন ভাগের এক ভাগ টিকবে। উপরিউক্ত বিষয় নিয়ে আমরা পারিবারিকভাবে একজন উকিলকে সঙ্গে নিয়ে বসেছিলাম। উকিল বলেছিলেন, হেবা দলিল অপরিবর্তনীয়। এই জমি যাদের নামে আছে তারাই পাবে, অন্য কেউ অংশীদার হতে পারবে না। কিন্তু আমার ভাই তা মানতে রাজি নয়। সে বিভিন্নজনের বুদ্ধি ধরে আমাদের মারধর, জমি দখল করাসহ নানা হুমকি দিয়ে আসছে। এ অবস্থায় এই হেবা ঘোষণা দলিল কার্যকর হবে কি না, হলে কতটুকু হবে এবং কার্যকর হলে সেই জমি আমরা কীভাবে তার খারিজ বাতিল করে আমাদের নামে খারিজ করব?
আসাদ, দিনাজপুর।
পরামর্শ: হেবা দলিলের মাধ্যমে জমি দান করে দিয়ে থাকলে তা অবশ্যই হস্তান্তর করতে হবে এবং রেজিস্ট্রি করতে হবে। যেহেতু এই হেবাকৃত সম্পত্তি আপনার দখলেই আছে বেশির ভাগ অংশ, তাই এই হেবা দলিল কার্যকর হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। আপনারা হেবানামা অনুযায়ী আপনাদের অংশের নামজারি করিয়ে নিতে পারেন।

অগ্রক্রয়ের দাবি কীভাবে করব?
সমস্যা: আমরা দুই ভাই। ১৯৫২ সালে আমার বাবা ৪২ শতাংশ জমিসহ একটি বাড়ি ক্রয় করেন এবং আমাদের দুই ভাইয়ের নামে তা কবলা দলিল করেন। বাড়িটি একটি খতিয়ানভুক্ত। আমার ভাই তাঁর অংশ ১৪-১১-১১ তারিখে সাব-কবলা করে বিক্রি করেন। বাড়িটি আমাদের দুই ভাইয়ের নামে রেকর্ড হয় এবং দলিল-পর্চায় বাড়ি-বাগান হিসেবে এখনো রেকর্ড হয়েছে এবং বর্তমানে আছে। ১৯৫২ সালের আগেও বাড়ি-বাগান বলেই রেকর্ড। আমি ‘প্রিয়েমশন’ বা অগ্রক্রয় মামলা করতে চাই। আমার জানতে ইচ্ছে করে, আমি প্রিয়েমশন করে ওই বাড়িটি পাব কি না? দয়া করে জানাবেন, কী করে আমি বাড়িটি পাব এবং প্রিয়েমশনের মামলা করে ফল পাব কি না? বাড়িটির পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর দিকে আমার বাগানবাড়ি। উল্লেখ করা যায় যে যখন বাবা বাড়িটি কেনেন, তখন আমার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর।
মুহম্মদ হানিফ, ফরিদপুর।
পরামর্শ: ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী প্রিয়েমশন বা অগ্রক্রয়ের মামলা করতে হলে যেদিন বিষয়টি আপনার অবগত হবে, সে সময় থেকে দুই মাসের মধ্যে করতে হবে। আপনার এ সুযোগ না থাকলে মুসলিম আইন অনুযায়ী হক শুফা বা অগ্রক্রয়ের মোকদ্দমা দায়ের করার সুযোগ আছে।
কাজী জাহেদ ইকবাল
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

No comments

Powered by Blogger.