চট্টগ্রাম বন্দর-ডিজিটাল যুগে অ্যানালগ বন্দর by মশিউল আলম
চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষ। দুজন যুবক কাজে ভীষণ ব্যস্ত: ক্রমাগত বেতারে কথা বলতে হচ্ছে তাঁদের। তাঁরা বন্দরের রেডিও অবজারভার (আরও) বা বেতার পর্যবেক্ষক। বিদেশ থেকে আসা কোনো জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার ভেতরে প্রবেশের এবং বহির্নোঙরে ভেড়ার আগে যোগাযোগ করে এই বেতার পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে।
বেতার পর্যবেক্ষকেরা জাহাজটি সম্পর্কে অনেক রকমের তথ্য নথিভুক্ত করেন, বিশেষত, কয়টার সময় ভিড়ল, জাহাজটির সর্বশেষ ছেড়ে আসা বন্দরটি ছিল কোন দেশের কোন বন্দর, জাহাজটিতে কী মালামাল রয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য সেগুলো ইত্যাদি। এসব তথ্যের ভিত্তিতে জাহাজটিকে বহির্নোঙর থেকে জেটিতে ভেড়ার সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হয়। এই পুরোটা সময় বন্দরের বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জাহাজটির সঙ্গে যে বেতারযন্ত্রের সাহায্যে যোগাযোগ রক্ষা করেন বেতার পর্যবেক্ষকেরা, সেটিকে বলে ভিএইচএফ বা ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি বেতারযন্ত্র। কেন্দ্রীয় বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষটিতে এমন যন্ত্র রয়েছে মোট তিনটি। ছয়জন বেতার পর্যবেক্ষক সপ্তাহে সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা তিন শিফটে এগুলো নিয়ে কাজ করেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষটি দেখতে গিয়ে প্রথমেই খটকা লাগল দেখে যে পুরো কক্ষটি জুড়ে একটিও কম্পিউটার নেই। ভিএইচএফ বা অতি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির বেতারযন্ত্রগুলোর চেহারা দেখে মনে হলো যেন উনিশ শতকের প্রযুক্তি। একজন বেতার পর্যবেক্ষক অবশ্য আমার ভুল ভাঙিয়ে দিলেন এই তথ্য জানিয়ে যে এগুলো বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের প্রযুক্তি। বিশ্বের অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর আজ থেকে অন্তত কুড়ি-পঁচিশ বছর আগেই এ প্রযুক্তি পরিত্যাগ করেছে। এ ধরনের অ্যানালগ বেতারযন্ত্র আর ব্যবহূত হয় না।
বেতার পর্যবেক্ষকদের একজন বললেন, এখন অনেক আধুনিক ডিজিটাল-প্রযুক্তি সহজলভ্য; সেগুলো অডিও-ভিজুয়াল, সেগুলোর সাহায্যে বহির্নোঙরে ও জেটিতে জাহাজগুলোর গতিবিধি লক্ষ করা যায় বন্দরের নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসেই। ফলে কোনো জাহাজ জেটিতে ভেড়ার সিরিয়াল পাওয়ার মতলবে বহির্নোঙরে আসার দুই ঘণ্টা আগেই যদি বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষকে মিথ্যা করে বলে, ‘আমরা এই বিকেল চারটার সময় ভিড়লাম’, তাহলে ধরা পড়ে যাবে, কারণ, কম্পিউটার মনিটরে সেটা যাচাই করা যাবে। কিন্তু বেতারের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণকক্ষকে এ রকম ফাঁকি দেয় অনেক জাহাজ। কারণ, বেতারে শুধু তাদের কথা শোনা যায়, জাহাজটির অবস্থান দেখা যায় না। সে জন্য দরকার ভিটিএস বা ভেসেল ট্রাভেল সিস্টেম ও এ ধরনের আরও কিছু অত্যাধুনিক ডিজিটাল-প্রযুক্তি প্রয়োজন।
বন্দরের এই বেতার পর্যবেক্ষকদের আরও কষ্টের কথা হলো, মান্ধাতা আমলের বেতারযন্ত্র এক হাতে ধরে বহির্নোঙরে ভিড়ছে, এমন জাহাজের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সেসব তথ্য লিখে নিতে হয় অন্য হাতে কলম ধরে, লম্বা রুল টানা খাতায় (লগ বুক)। একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার পর্যন্ত নেই।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়ার পর ১৭ মাস চলে গেছে, খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে গ্রামগঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ডিজিটাল-প্রযুক্তি, অথচ দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের কেন্দ্রীয় রেডিও কন্ট্রোল রুমের এই অ্যানালগ অবস্থা।
দায়িত্বপালনরত দুই বেতার পর্যবেক্ষকের কাছে জানতে চাইলাম, এখানে একটা কম্পিউটার পর্যন্ত নেই কেন? দুজনেই নীরব, তাঁদের চোখেমুখে দেখা গেল, শুধু একধরনের হতাশার হাসি। এই যুবকদের একজন ইলেকট্রনিকসে ডিপ্লোমা, অন্যজন মেজর ইমপোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্টে এমবিএ করেছেন। তাঁদের পদটি অবশ্য এমন যোগ্যতা দাবি করে না, এ চাকরির জন্য আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রি। কিন্তু কার্যত একজন এইচএসসি ডিগ্রিধারীর পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়, বললেন একজন। বিশেষত, বিদেশি মার্চেন্ট ভেসেলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে হয় ইংরেজি ভাষায়। তাঁরা মনে করেন, এই পদটির মর্যাদা বাড়ানো উচিত।
তাঁদের জিগ্যেস করলাম, সমুদ্রবন্দরে নিয়ন্ত্রণকক্ষের জন্য যেসব আধুনিক ডিজিটাল-প্রযুক্তি এখন পাওয়া যায়, সেগুলো কি খুব ব্যয়বহুল? বন্দর কর্তৃপক্ষের কি তা কেনার আর্থিক সামর্থ্য নেই? উত্তরে একজন বললেন, সামর্থ্য থাকবে না কেন? বন্দর কর্তৃপক্ষের তো কোটি কোটি টাকা।
আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প করেছি, তারপর তো প্রায় দেড় বছর পার হতে চলল। চট্টগ্রাম বন্দরের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষের অ্যানালগ ব্যবস্থা থেকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটানো উচিত ছিল নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মাস তিনেকের মধ্যেই।
অথবা কোনো একটি সরকারের ডিজিটাল-প্রযুক্তির প্রতি বেশি আগ্রহ না থাকলে কি সেই দেশ এগোবে না? এর আগের সরকারগুলো ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দেয়নি বলে কি নতুন নতুন ডিজিটাল-প্রযুক্তির আবির্ভাব ও ব্যবহার থেমে থেকেছে? বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির যে উন্নয়ন ঘটে চলেছে, তার ব্যবহার কি সরকার-নির্বিশেষে সব দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে না? বাংলাদেশও কি পিছিয়ে থাকছে বা থাকতে পারবে? তাহলে তার প্রধান সমুদ্রবন্দরটিতে কেন এই অ্যানালগ দশা এখনো রয়ে গেছে? এ বিষয়ে কি কর্তৃপক্ষ কিছু ভাবেনি? টেলিফোনে যোগাযোগ করলাম চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মেম্বার অপারেশন্স (হারবার অ্যান্ড মেরিন) এবং বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষের প্রধান ক্যাপ্টেন আরিফ মাহমুদকে। ‘চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের আওতাধীন পুরো জলসীমায় সার্বক্ষণিকভাবে বিদেশি মার্চেন্ট ভেসেলগুলোর মুভমেন্ট পর্যবেক্ষণ করা হয় যে বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে, সেখানে একটিও কম্পিউটার নেই কেন? অন্যান্য দেশে যেসব প্রযুক্তি বিশ-পঁচিশ বছর আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে, আপনাদের বন্দর কেন এখনো সেগুলো দিয়েই চলছে? আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি কেনার সামর্থ্য কি বন্দর কর্তৃপক্ষের নেই?’
উত্তরে তিনি বললেন, খুব শিগগির নিয়ন্ত্রণক্ষটির চেহারাই পাল্টে যাবে, কারণ, আধুনিক ডিজিটাল-প্রযুক্তি আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, অচিরেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর আর ইউ আহমদ জানালেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক জাহাজ চলাচল ব্যবস্থাপনার জন্য ভিটিএমআইএস (ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) প্রযুক্তি ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে; এর ফলে বন্দরের বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষের কিছুটা প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আসবে। আর আগামী অর্থবছরে তাঁরা আরও কিছু ডিজিটাল-প্রযুক্তি কেনার উদ্যোগ নেবেন, যা বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষটিকে পুরোপুরি ডিজিটাল-প্রযুক্তিসমৃদ্ধ করবে।
তাই যেন হয় এবং যথাশিগগির। কারণ, এই ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় অঙ্গীকারবদ্ধ সরকারের আমলে অ্যানালগ পদ্ধতিতে চলতে পারে না দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর। ডিজিটাল-প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বন্দরের দক্ষতা ও ফলপ্রসূতা বাড়ানোর উদ্যোগ অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া উচিত।
চট্টগ্রাম, ৩ জুন ২০১০
মশিউল আলম: সাংবাদিক।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষটি দেখতে গিয়ে প্রথমেই খটকা লাগল দেখে যে পুরো কক্ষটি জুড়ে একটিও কম্পিউটার নেই। ভিএইচএফ বা অতি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির বেতারযন্ত্রগুলোর চেহারা দেখে মনে হলো যেন উনিশ শতকের প্রযুক্তি। একজন বেতার পর্যবেক্ষক অবশ্য আমার ভুল ভাঙিয়ে দিলেন এই তথ্য জানিয়ে যে এগুলো বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের প্রযুক্তি। বিশ্বের অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর আজ থেকে অন্তত কুড়ি-পঁচিশ বছর আগেই এ প্রযুক্তি পরিত্যাগ করেছে। এ ধরনের অ্যানালগ বেতারযন্ত্র আর ব্যবহূত হয় না।
বেতার পর্যবেক্ষকদের একজন বললেন, এখন অনেক আধুনিক ডিজিটাল-প্রযুক্তি সহজলভ্য; সেগুলো অডিও-ভিজুয়াল, সেগুলোর সাহায্যে বহির্নোঙরে ও জেটিতে জাহাজগুলোর গতিবিধি লক্ষ করা যায় বন্দরের নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসেই। ফলে কোনো জাহাজ জেটিতে ভেড়ার সিরিয়াল পাওয়ার মতলবে বহির্নোঙরে আসার দুই ঘণ্টা আগেই যদি বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষকে মিথ্যা করে বলে, ‘আমরা এই বিকেল চারটার সময় ভিড়লাম’, তাহলে ধরা পড়ে যাবে, কারণ, কম্পিউটার মনিটরে সেটা যাচাই করা যাবে। কিন্তু বেতারের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণকক্ষকে এ রকম ফাঁকি দেয় অনেক জাহাজ। কারণ, বেতারে শুধু তাদের কথা শোনা যায়, জাহাজটির অবস্থান দেখা যায় না। সে জন্য দরকার ভিটিএস বা ভেসেল ট্রাভেল সিস্টেম ও এ ধরনের আরও কিছু অত্যাধুনিক ডিজিটাল-প্রযুক্তি প্রয়োজন।
বন্দরের এই বেতার পর্যবেক্ষকদের আরও কষ্টের কথা হলো, মান্ধাতা আমলের বেতারযন্ত্র এক হাতে ধরে বহির্নোঙরে ভিড়ছে, এমন জাহাজের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সেসব তথ্য লিখে নিতে হয় অন্য হাতে কলম ধরে, লম্বা রুল টানা খাতায় (লগ বুক)। একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার পর্যন্ত নেই।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়ার পর ১৭ মাস চলে গেছে, খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে গ্রামগঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ডিজিটাল-প্রযুক্তি, অথচ দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের কেন্দ্রীয় রেডিও কন্ট্রোল রুমের এই অ্যানালগ অবস্থা।
দায়িত্বপালনরত দুই বেতার পর্যবেক্ষকের কাছে জানতে চাইলাম, এখানে একটা কম্পিউটার পর্যন্ত নেই কেন? দুজনেই নীরব, তাঁদের চোখেমুখে দেখা গেল, শুধু একধরনের হতাশার হাসি। এই যুবকদের একজন ইলেকট্রনিকসে ডিপ্লোমা, অন্যজন মেজর ইমপোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্টে এমবিএ করেছেন। তাঁদের পদটি অবশ্য এমন যোগ্যতা দাবি করে না, এ চাকরির জন্য আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রি। কিন্তু কার্যত একজন এইচএসসি ডিগ্রিধারীর পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়, বললেন একজন। বিশেষত, বিদেশি মার্চেন্ট ভেসেলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে হয় ইংরেজি ভাষায়। তাঁরা মনে করেন, এই পদটির মর্যাদা বাড়ানো উচিত।
তাঁদের জিগ্যেস করলাম, সমুদ্রবন্দরে নিয়ন্ত্রণকক্ষের জন্য যেসব আধুনিক ডিজিটাল-প্রযুক্তি এখন পাওয়া যায়, সেগুলো কি খুব ব্যয়বহুল? বন্দর কর্তৃপক্ষের কি তা কেনার আর্থিক সামর্থ্য নেই? উত্তরে একজন বললেন, সামর্থ্য থাকবে না কেন? বন্দর কর্তৃপক্ষের তো কোটি কোটি টাকা।
আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প করেছি, তারপর তো প্রায় দেড় বছর পার হতে চলল। চট্টগ্রাম বন্দরের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষের অ্যানালগ ব্যবস্থা থেকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটানো উচিত ছিল নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মাস তিনেকের মধ্যেই।
অথবা কোনো একটি সরকারের ডিজিটাল-প্রযুক্তির প্রতি বেশি আগ্রহ না থাকলে কি সেই দেশ এগোবে না? এর আগের সরকারগুলো ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দেয়নি বলে কি নতুন নতুন ডিজিটাল-প্রযুক্তির আবির্ভাব ও ব্যবহার থেমে থেকেছে? বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির যে উন্নয়ন ঘটে চলেছে, তার ব্যবহার কি সরকার-নির্বিশেষে সব দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে না? বাংলাদেশও কি পিছিয়ে থাকছে বা থাকতে পারবে? তাহলে তার প্রধান সমুদ্রবন্দরটিতে কেন এই অ্যানালগ দশা এখনো রয়ে গেছে? এ বিষয়ে কি কর্তৃপক্ষ কিছু ভাবেনি? টেলিফোনে যোগাযোগ করলাম চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মেম্বার অপারেশন্স (হারবার অ্যান্ড মেরিন) এবং বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষের প্রধান ক্যাপ্টেন আরিফ মাহমুদকে। ‘চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের আওতাধীন পুরো জলসীমায় সার্বক্ষণিকভাবে বিদেশি মার্চেন্ট ভেসেলগুলোর মুভমেন্ট পর্যবেক্ষণ করা হয় যে বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে, সেখানে একটিও কম্পিউটার নেই কেন? অন্যান্য দেশে যেসব প্রযুক্তি বিশ-পঁচিশ বছর আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে, আপনাদের বন্দর কেন এখনো সেগুলো দিয়েই চলছে? আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি কেনার সামর্থ্য কি বন্দর কর্তৃপক্ষের নেই?’
উত্তরে তিনি বললেন, খুব শিগগির নিয়ন্ত্রণক্ষটির চেহারাই পাল্টে যাবে, কারণ, আধুনিক ডিজিটাল-প্রযুক্তি আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, অচিরেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর আর ইউ আহমদ জানালেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক জাহাজ চলাচল ব্যবস্থাপনার জন্য ভিটিএমআইএস (ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) প্রযুক্তি ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে; এর ফলে বন্দরের বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষের কিছুটা প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আসবে। আর আগামী অর্থবছরে তাঁরা আরও কিছু ডিজিটাল-প্রযুক্তি কেনার উদ্যোগ নেবেন, যা বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষটিকে পুরোপুরি ডিজিটাল-প্রযুক্তিসমৃদ্ধ করবে।
তাই যেন হয় এবং যথাশিগগির। কারণ, এই ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় অঙ্গীকারবদ্ধ সরকারের আমলে অ্যানালগ পদ্ধতিতে চলতে পারে না দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর। ডিজিটাল-প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বন্দরের দক্ষতা ও ফলপ্রসূতা বাড়ানোর উদ্যোগ অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া উচিত।
চট্টগ্রাম, ৩ জুন ২০১০
মশিউল আলম: সাংবাদিক।
No comments