আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে কৃষির বিকল্প নেই by ডা. মো. ফজলুল হক
ঘন জনবসতিপূর্ণ কৃষিনির্ভর বাংলাদেশ। মোট আয়তন এক লাখ ৪৮ হাজার ৩৯৩ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে এক হাজার লোক বাস করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও যথেষ্ট বেশি। কৃষিশুমারির প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী মোট কৃষিজমির পরিমাণ এক কোটি ৯০ লাখ ৯৮ হাজার একর এবং কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত প্রায় তিন কোটি মানুষ।
অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমি ভরাট করে মিল, রাস্তা ও বাড়ি করার কারণে প্রতিবছর আবাদি জমি হ্রাস পাচ্ছে ১.২৬ শতাংশ অর্থাৎ বছরে ৮০ হাজার হেক্টর। অন্যদিকে নদীভাঙন, জমির নবায়নযোগ্যতা হ্রাস এবং অধিক কৃত্রিম সার ব্যবহারে ক্রমান্বয়ে কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাসকে খাদ্যঘাটতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
এ হারে কৃষিজমি হ্রাস পেলে ৬০ থেকে ৭০ বছর পর বাংলাদেশের কৃষিজমি শূন্যের কোটায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে লোকসংখ্যা অর্ধশত কোটির কাছাকাছি চলে যেতে পারে। তখনকার পরিস্থিতি কি একবার কল্পনা করা যেতে পারে! এ ছাড়া নদীভাঙন ও জমির ক্ষয় ক্রমাগত ঘটেই চলেছে। বর্তমানে ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে এবং ৭ শতাংশকে আংশিক অনাহারে থাকতে হয়। উল্লেখ্য, প্রতিবছর লোকসংখ্যা ১.৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ নিয়মেই ২ শতাংশ খাদ্যের ঘাটতি পড়ে। ২০ শতাংশ মানুষ শহরে এবং ৮০ শতাংশ গ্রামে বাস করছে। ৭০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে জিডিপিতে ২৩.৫ শতাংশ জোগান দিয়ে থাকে কৃষি খাত অর্থাৎ শস্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও বনজসম্পদ। কৃষি খাতে মোট আয়ের ৭২ শতাংশ কৃষি (শস্য, ফলমূল ও শাকসবজি) থেকে এবং ২৮ শতাংশের মধ্যে প্রাণিসম্পদ ১০.১১, মৎস্য ১০.৩৩ ও বনজসম্পদ ৭.৩৩ শতাংশ জোগান দিয়ে থাকে। ২০০৬ সালে প্রাণিসম্পদ খাত থেকে জিডিপিতে ছিল ২.৯৫ শতাংশ, যা মোট কৃষি খাতের ১৭.৫০ শতাংশ। অন্যদিকে গোবর সার, বায়োগ্যাসে জমি চাষের বিবেচনায় জিডিপিতে অবদান প্রায় ৬ শতাংশ, যা মোট কৃষির ৩৫ শতাংশ। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী মাংস ৪৯ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, দুধ এক কোটি তিন লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন এবং ৮৬৫ কোটি ডিমের ঘাটতি রয়েছে। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে মাংস উৎপাদিত হয়েছে মাত্র ১০ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, যা চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ এবং দুধ ২৩ লাখ মেট্রিক টন, যা প্রয়োজনের ১৭ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। বর্তমানে বছরে ২০ হাজার মেট্রিক টন গুঁড়ো দুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে, যার মূল্য ৫০০ কোটি টাকা।
এ অবস্থা থেকে বের হতে প্রয়োজন বায়োটেকনোলজির সঠিক বাস্তবায়ন। আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের পাশাপাশি উদ্ভিদ ও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে বর্তমানে কৃষি, মৎস্য, প্রাণী ও বনজসম্পদের উন্নয়ন অপরিহার্য।
এ লক্ষ্যে আমাদের বায়োটেকনোলজির সফল প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। অন্যদিকে সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে ২৩ জানুয়ারি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আড়ম্বরঘন পরিবেশে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদে 'Biotechnology in Bangladesh : participation of public and private enterprises' শীর্ষক এক সেমিনার হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম আফজাল হোসেন। মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের উন্নত প্রযুক্তির অনুসরণে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন। সেমিনারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার বলেন, বর্তমানে ছাগল উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃত্রিম প্রজনন বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ইতিমধ্যে এ পদ্ধতিতে অনেক ছাগল জন্ম নিয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড. মো. সাইদুল ইসলাম জৈব প্রযুক্তির আলোকে গবেষণার বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাকে যৌথভাবে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রায় সবাই একমত পোষণ করেন, বায়োটেকনোলজির সঠিক বাস্তবায়ন ছাড়া দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণর্তা অর্জন সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়াও হাবিপ্রবিতে বায়োটেকনোলজির বিভাগ খোলা হলে গবেষণার দ্বার আরো উন্মোচিত হবে। শুধু উত্তর জনপদই নয়, বাংলাদেশের সব অঞ্চলই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে। তাঁর এ প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা সাধুবাদ জানান।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান, মেডিসিন, সার্জারি অ্যান্ড অবস্টেট্রিঙ্ বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর
এ হারে কৃষিজমি হ্রাস পেলে ৬০ থেকে ৭০ বছর পর বাংলাদেশের কৃষিজমি শূন্যের কোটায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে লোকসংখ্যা অর্ধশত কোটির কাছাকাছি চলে যেতে পারে। তখনকার পরিস্থিতি কি একবার কল্পনা করা যেতে পারে! এ ছাড়া নদীভাঙন ও জমির ক্ষয় ক্রমাগত ঘটেই চলেছে। বর্তমানে ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে এবং ৭ শতাংশকে আংশিক অনাহারে থাকতে হয়। উল্লেখ্য, প্রতিবছর লোকসংখ্যা ১.৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ নিয়মেই ২ শতাংশ খাদ্যের ঘাটতি পড়ে। ২০ শতাংশ মানুষ শহরে এবং ৮০ শতাংশ গ্রামে বাস করছে। ৭০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে জিডিপিতে ২৩.৫ শতাংশ জোগান দিয়ে থাকে কৃষি খাত অর্থাৎ শস্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও বনজসম্পদ। কৃষি খাতে মোট আয়ের ৭২ শতাংশ কৃষি (শস্য, ফলমূল ও শাকসবজি) থেকে এবং ২৮ শতাংশের মধ্যে প্রাণিসম্পদ ১০.১১, মৎস্য ১০.৩৩ ও বনজসম্পদ ৭.৩৩ শতাংশ জোগান দিয়ে থাকে। ২০০৬ সালে প্রাণিসম্পদ খাত থেকে জিডিপিতে ছিল ২.৯৫ শতাংশ, যা মোট কৃষি খাতের ১৭.৫০ শতাংশ। অন্যদিকে গোবর সার, বায়োগ্যাসে জমি চাষের বিবেচনায় জিডিপিতে অবদান প্রায় ৬ শতাংশ, যা মোট কৃষির ৩৫ শতাংশ। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী মাংস ৪৯ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, দুধ এক কোটি তিন লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন এবং ৮৬৫ কোটি ডিমের ঘাটতি রয়েছে। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে মাংস উৎপাদিত হয়েছে মাত্র ১০ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, যা চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ এবং দুধ ২৩ লাখ মেট্রিক টন, যা প্রয়োজনের ১৭ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। বর্তমানে বছরে ২০ হাজার মেট্রিক টন গুঁড়ো দুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে, যার মূল্য ৫০০ কোটি টাকা।
এ অবস্থা থেকে বের হতে প্রয়োজন বায়োটেকনোলজির সঠিক বাস্তবায়ন। আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের পাশাপাশি উদ্ভিদ ও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে বর্তমানে কৃষি, মৎস্য, প্রাণী ও বনজসম্পদের উন্নয়ন অপরিহার্য।
এ লক্ষ্যে আমাদের বায়োটেকনোলজির সফল প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। অন্যদিকে সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে ২৩ জানুয়ারি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আড়ম্বরঘন পরিবেশে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদে 'Biotechnology in Bangladesh : participation of public and private enterprises' শীর্ষক এক সেমিনার হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম আফজাল হোসেন। মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের উন্নত প্রযুক্তির অনুসরণে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন। সেমিনারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার বলেন, বর্তমানে ছাগল উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃত্রিম প্রজনন বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ইতিমধ্যে এ পদ্ধতিতে অনেক ছাগল জন্ম নিয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড. মো. সাইদুল ইসলাম জৈব প্রযুক্তির আলোকে গবেষণার বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাকে যৌথভাবে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রায় সবাই একমত পোষণ করেন, বায়োটেকনোলজির সঠিক বাস্তবায়ন ছাড়া দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণর্তা অর্জন সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়াও হাবিপ্রবিতে বায়োটেকনোলজির বিভাগ খোলা হলে গবেষণার দ্বার আরো উন্মোচিত হবে। শুধু উত্তর জনপদই নয়, বাংলাদেশের সব অঞ্চলই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে। তাঁর এ প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা সাধুবাদ জানান।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান, মেডিসিন, সার্জারি অ্যান্ড অবস্টেট্রিঙ্ বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর
No comments