পশুচিকিৎসক পরিচয়ে ড্রেসারের কাণ্ড

মিরসরাই উপজেলা পশুসম্পদ কার্যালয়ের ড্রেসার (অস্ত্রোপচারের পর ক্ষতস্থান পরিষ্কারক) পদে নিয়োজিত আছেন মো. নূরনবী। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তিনি লোকজনের কাছে পশুচিকিৎসক পরিচয় দিয়ে কাজ চালিয়ে আসছেন। এ রকম চিকিৎসা চালাতে গিয়ে এক দরিদ্র পরিবারের একটি গাভি তিনি মেরে ফেলেছেন যন্ত্রণা দিয়ে।


ঘটনাটি ঘটেছে ২২ মে উপজেলার গরিয়াইশ এলাকায়।
৯ নম্বর সদর ইউনিয়নের গরিয়াইশ গ্রামের দিনমজুর মো. কামাল জানান, উপজেলা পশুসম্পদ কার্যালয়ের মো. নুরনবীকে অন্য অনেকের মতো তিনিও পশুচিকিৎসক হিসেবে জানতেন। ২২ মে সকালে তাঁর গাভি বাচ্চা দেওয়ার সময় তিনি নূরনবীর কাছে খবর পাঠান। ওই দিন দুপুরে নূরনবী কামালের বাড়ি আসেন। গাভি দেখে তিনি বলেন, গাভির পেটেই বাচ্চা মারা গেছে। তিনি বাচ্চাটি বের করার উদ্যোগ নেন এবং স্থানীয় তিন-চারজন লোক নিয়ে বাচ্চাটি বের করতে টানাটানি শুরু করেন। একপর্যায়ে বাচ্চার মাথা বের হয়ে এলে নূরনবী মাথাটি কেটে ফেলেন এবং দেহের বাকি অংশ গাভির পেটের ভেতর ঢুকিয়ে দেন। এসব নিষ্ঠুর কাজ করতে গিয়ে গাভির যে শারীরিক কষ্ট হয়েছে তা দেখে মো. কামাল অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
কামালের স্ত্রী আক্তার বেগম অভিযোগ করেন, কামাল অজ্ঞান হওয়ার পরপরই নূরনবী তাঁর (আক্তার বেগমের) কাছ থেকে ২০০ টাকা ফি নিয়ে মিরসরাই পশুসম্পদ কার্যালয়ে চলে যান। পরে তিনি কার্যালয়ের সহকারী দিলীপ দাশ ও চালক জাফর আলমকে কামালের বাড়িতে পাঠান। তাঁরা গিয়ে বাচ্চার বাকি অংশ টেনে গাভির পেট থেকে বের করে আনেন। এভাবে টানাটানির একপর্যায়ে ২৩ মে বিকেলে গাভিটি মারা যায়।
গরিয়াইশ গ্রামের সিরাজ উদ্দীন জানান, ‘কামাল হতদরিদ্র মানুষ। তার সম্বল গাভিটি হারিয়ে সে এখন পাগলপ্রায়। ডাক্তার নূরনবী ইচ্ছা করলে গাভিটি বাঁচাতে পারত।’ এ প্রতিনিধি নূরনবী ডাক্তার নন বলে জানালে সিরাজ প্রথমে তা বিশ্বাস করতে চাননি। পরে বলেন, ‘সে তো সবাইকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেয়। ডাক্তার না হয়ে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেওয়া প্রতারণার শামিল। তার শাস্তি হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে নূরনবী নিজেকে চিকিৎসক দাবি করেন এবং কামালের স্ত্রীর কাছ থেকে ২০০ টাকা ফি নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে গাভিটির মৃত্যুকে তিনি নিছক দুর্ঘটনা বলে দাবি করেন। এ সময় ড্রেসার হয়ে চিকিৎসক হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিচ্ছেন কেন—প্রশ্ন করলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।
উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘নূরনবী পশুসম্পদ কার্যালয়ে ড্রেসার (ভেটেরিনারি সার্জন অস্ত্রোপচার করার সময় ক্ষতস্থানটি পরিষ্কার করার দায়িত্বপ্রাপ্ত) পদে কর্মরত। কোনো মতেই তাঁর চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া ঠিক হয়নি। গরিয়াইশ গ্রামে তাঁর যাওয়াই উচিত হয়নি।’ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে নূরনবীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.