প্রতিক্রিয়া-পারিবারিক আইন সংস্কারের চিন্তাভাবনা

আইন কমিশনের আয়োজনে পারিবারিক আইন সংস্কার বিষয়ে জাতীয় কর্মশালা নিয়ে গত ২২ এপ্রিল আইন অধিকার পাতায় বিশেষ আয়োজন করা হয়। এ নিয়ে ফেসবুক, ই-মেইল ও চিঠিতে পাঠকেরা প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছেন। এর কয়েকটি ছাপা হলো।


০১. মুসলিম পারিবারিক উত্তরাধিকার আইনে এমন আইন রয়েছে, কোনো মা-বাবার যদি ছেলেসন্তান না থাকে, শুধু মেয়েসন্তান থাকে, তবে ওই মেয়েসন্তানেরা মা-বাবার সম্পত্তিতে পুরো অধিকার পাবে না। সে ক্ষেত্রে কিয়দাংশ চলে যাবে ওই মা-বাবার ভাইবোনদের কাছে। এই আইনের বোধ হয় সংস্কার হওয়া দরকার। কারণ, বর্তমান যুগে ঘরে-বাইরে পেশাদারির ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে সমানভাবে অংশীদার। মা-বাবা কর্মহীন, অসুস্থ কিংবা অসহায় হয়ে পড়লে মেয়ে অথবা ছেলে সমানভাবে (কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেয়েরা বেশি) মা-বাবার যত্নআত্তি বা আর্থিক সহায়তা করে থাকে। তখন চাচা, ফুফু কিংবা মামা-খালারা যার যার কাজে ব্যস্ত থাকেন। বর্তমানে একজন মেয়ে ঘরে-বাইরে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে নিজেই চালাতে পারে—চাচা, ফুফু কিংবা মামা-খালার প্রয়োজন হয় না। শুধু মেয়ে বলে মা-বাবার সম্পত্তিতে তার বা তাদের পুরো অধিকার থাকবে না, এটা এ যুগে অত্যন্ত বেমানান।
আমার প্রস্তাব হচ্ছে, সন্তান সন্তানই, সে ছেলে কিংবা মেয়ে যা-ই হোক। নিজের মা-বাবাই যদি তাঁর সন্তানদের বৈষম্য করেন, তবে সামাজের অন্য কেউ কী করে সমান মর্যাদা দেবে ছেলে ও মেয়েকে? সুতরাং, সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়ের একই রকম অংশগ্রহণ থাকবে।
ঊর্মিলা খাতুন
প্রভাষক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
শেখ ফজিলাতুন্নেসা ইসলামিক মহিলা কলেজ

০২.
হিন্দু পারিবারিক আইনের বিষয়বস্তুর সঙ্গে আমিও একমত। তবে পৈতৃক সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর উত্তরাধিকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তবে অভিন্ন পারিবারিক আইনের স্বার্থে সম্পত্তিতে মুসলিম নারীর অনুরূপ হিন্দু নারীর উত্তরাধিকারের বিধান করা যেতে পারে।
শুভকান্তি পণ্ডিত
ময়মনসিংহ।

০৩.
মুসলিম পারিবারিক আইনে ‘দত্তক’সংক্রান্ত কোনো বিধান না থাকায় নিঃসন্তান মুসলিম দম্পতি বৈধভাবে সন্তান দত্তক নিতে পারেন না। কিন্তু অনেক নিঃসন্তান দম্পতি সন্তান দত্তক নিয়ে স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা দিয়ে প্রতিপালন করে আসছেন। দত্তক সন্তানও গ্রহণকারী মা-বাবার পরিচয়ে সমাজে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং, এটি মুসলিম সমাজের বাস্তব বিষয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, মুসলিম পারিবারিক আইনে দত্তক গ্রহণ বিষয়ে কোনো আইন নেই, যা বর্তমান আধুনিক মুসলিম সমাজে সংগতিপূর্ণ নয়। এ ছাড়া অনেক নিঃসন্তান মুসলিম দম্পতি দত্তক গ্রহণ করে থাকেন, কিন্তু মা-বাবার (গ্রহণকারীর) সম্পত্তিতে কোনো অধিকার না থাকায় এবং মা-বাবা তাঁদের সম্পত্তিতে দত্তক সন্তানদের অধিকার দিতে চাইলেও বিধান না থাকার কারণে দত্তক সন্তানেরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, যা সম্পূর্ণ অমানবিক বিষয় এবং দত্তক সন্তানদেরও একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব—
ক. মুসলিম পারিবারিক আইনে সন্তান দত্তকের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
খ. দত্তক সন্তানদের তাদের মা-বাবার (গ্রহণ করার) সম্পত্তিতে (মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ‘বৈধ’ সন্তানসন্ততির মতো) অধিকার দেওয়া হোক।
শাওলি হাসান

০৪.
ক. হিন্দু পারিবারিক আইনে অসুস্থ-কর্মশক্তিহীন মা-বাবা এবং বৃদ্ধ মা-বাবাকে প্রতিটি সন্তান দৈনিক মাসিক বা বার্ষিক আয়ের এক-চতুর্থাংশ অংশ ভরণপোষণের জন্য দিতে হবে, এ ধরনের বিধান থাকতে হবে।
খ. বাবার সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ পরিহার করে সুন্দর পরিবার গড়ার লক্ষ্যে বিবাহের সময় মেয়েদের অলংকার, টাকাপয়সা দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে হিন্দু রীতিতে। পর্যালোচনা করে দেখলে বোঝা যাবে যে হিন্দুপ্রথা অন্য যেকোনো প্রথার চেয়ে মঙ্গলদায়ক, নিরপেক্ষ ও আদর্শ পরিবার গঠনের সহায়ক। এসব বিষয়ে কর্মশালা বা সেমিনার করে সুধীদের মতামত গ্রহণ ছাড়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার অনুরোধ রইল।
এইচ কে নাথ
খুলশী, চট্টগ্রাম।

No comments

Powered by Blogger.