সময়ের প্রতিবিম্ব-আইনি বিধানের অপকৌশলী প্রয়োগ কাম্য নয় by এবিএম মূসা

একটি দেশে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম হয়েছে কি না, তা পরিলক্ষিত হয় দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি শাসকের মনোভাবের প্রতিফলনের মাধ্যমে। সেই মনোভাবের একটি হচ্ছে, গণমাধ্যমের তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতায়, অন্যটি হস্তক্ষেপমুক্ত বিচারব্যবস্থায় প্রতিফলিত হয়।


এ দুটি ব্যবস্থাই আজ বিপর্যস্ত, যা বর্তমান সরকারের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছে। চিন্তাশীল মহল ভাবছে, আলোচনা করছে, দুর্ভাবনায় রয়েছে, কেন ও কোন পরিস্থিতির উদ্ভবের কারণে এমনটি হয়েছে। এসব কিসের আলামত? সরকারের কোন ধরনের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ? চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য? সরকারের সরাসরি না হলেও দুটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সম্প্রতি কতিপয় প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা করার সময়ই এসব আলোচনা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আমার বর্তমান একটুখানি বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার মূল বিষয়বস্তু এমনটি কী হচ্ছে, কেন অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘ পঞ্চাশ দশকের অধিককালের নানা অভিজ্ঞতা, রাজনীতি, পর্যবেক্ষণ ও সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনের আলোকে সমগ্র পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি। বহুকাল পেরিয়ে দেশ যখন একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শাসনের আশায় উদ্বেলিত, তখন হঠাৎ করে জনগণের আস্থা ও ভরসাস্থল, একটির ওপর কেন নানা আকৃতি ও প্রকৃতির দুর্বিপাক নেমে এল। অন্যটি কেন দুর্নাম রটেছে, আস্থা হারিয়েছে?
পঞ্চাশের স্বেচ্ছাচারী মুসলিম লীগ আমল থেকে বর্তমানের জনপ্রতিনিধিত্বের আওয়ামী লীগের তৃতীয় সরকারের দীর্ঘ ৬০ বছরের শাসনকালে আমি নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তন দেখলাম। বিভিন্ন চরিত্রের শাসনের স্বরূপ শুধু দেখিনি, সাংবাদিক পেশা সূত্রে যথাসম্ভব সত্য উদ্ঘাটন করেছি। বৈচিত্র্যময় সেসব শাসন, নানা লেবাসধারী এসব সরকারের শাসনব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপরীতধর্মী। স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি সব শাসনকালের বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্যের মধ্যেও কয়েকটি বিষয়ে মিল দেখতে পেয়েছি ও পাচ্ছি। প্রথমত, সরকার যখন সত্যিকারভাবে সহজ-সরল পথে শাসন পরিচালনায় ব্যর্থ হয় অথবা জনগণের মধ্যে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে ওঠে, গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তখনই সমালোচনার ক্ষেত্রে অসহিষ্ণু হয়ে যায়। তখন সমালোচনা বন্ধ করতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হতে চায়। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার নানা কৌশলী অথবা নগ্ন, অপকৌশলী প্রক্রিয়া খোঁজে, অপপ্রয়োগ করার অজুহাত খুঁজে পায়। দ্বিতীয়ত, জনগণের প্রতি অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী প্রতিষ্ঠান আয়ত্তে আনতে তাদের বৃহদাংশকে বশ ও বশংবদ করার জন্য কতিপয় ব্যবস্থা নেয়। সেই ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে দমন ও পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শাসনব্যবস্থায় স্বেচ্ছাচারিতার উলঙ্গ প্রকাশ ঘটে।
বর্তমান সরকারের দেড় বছর পার হওয়ার পর ক্ষমতাসীনদের মধ্যে বর্ণিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহারের আলামত আমাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করেছে। কারণ যেকোনো ধরনের সরকারের একটি বিশেষ রূপ পরিলক্ষিত হয়, একটি বিশেষ পারিপার্শ্বিকতায়। এক. সরকার যখন নিজেদের শাসনব্যবস্থার যথার্থতা সম্পর্কে নিজেরাই সংশয়ী ও আস্থাহীন হয়ে পড়ে। দুই. যখন নিজেদের ভবিষ্যৎ শাসনকালের স্থায়িত্ব সম্পর্কে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়। (৩) যখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসন পরিচালনার পথ থেকে সরে আসে। (৪) শাসকগোষ্ঠী নার্ভাস হয়ে যায়, তাদের মানসিক বৈকল্য ঘটে। তাত্ত্বিক আলোচনার পটভূমিতে এসব বক্তব্য বিশ্লেষণ করছি। গণমাধ্যম সম্পর্কিত বর্তমান সরকারের দেড় বছরের শাসনামলকেই প্রাথমিক গুরুত্ব দিচ্ছি। বেশ কিছুদিন আগে চ্যানেল ওয়ান টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। আসলে বোধগম্য আইনি প্রক্রিয়ার অজুহাতে বন্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে আমি লিখেছিলাম, ‘গণমাধ্যমের আকাশে ঈশান কোণে কালো মেঘ দেখতে পাচ্ছি।’ চিকিৎসা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রায় দুসপ্তাহ বিদেশ অবস্থানের পর দেশে ফিরে অনেকগুলো দুঃসংবাদ পেলাম। জানতে ও বুঝতে পারলাম, ঈশান কোণের মেঘ আকাশে অনেকখানি বিস্তৃতি লাভ করেছে। যমুনা টিভির সম্প্রচার স্থগিত হয়েছে, আমার দেশ-এর দরজায় তালা লেগেছে। এসব আইনজ্ঞদের মতে জটিল আইনি প্রক্রিয়ায় গৃহীত ব্যবস্থা। সাংবাদিকের দৃষ্টিতে ঘটনা মনে হয়েছে, এসব হয়েছে সরকারের আইনি ব্যবস্থার আবরণে পরোক্ষ ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে।
সাংবাদিকতার স্বাধীনতার প্রতি বর্ণিত প্রচ্ছন্ন হুমকি আজকের আলোচনায় অতীতের আলোকেই বর্তমান নিয়ে আলোচনা করব।
ভাবতে অবাক লাগছে গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে স্বেচ্ছাচারী শাসনামলে মত প্রকাশের দাবিতে যে আওয়াজগুলো নিজেদের কণ্ঠে প্রকাশ করেছি, ষাট বছর পরে কেন অতীতের প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। অতীতের বিতর্কিত প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কেন? যেসব অধিকার আদায়ের জন্য সামরিক শাসনামলে নির্যাতিত হয়েছি, সেই স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিয়ে কেন এখনো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত? এখনো কেন বলছি, আইনের শাসন চাই। চাই স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা। কেন দাবি করছি, ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা চলবে না। এখন অবশ্য সংবাদপত্রকে ব্যাপক অর্থ গণমাধ্যমের স্বাধীন মত প্রকাশের বাহন বলা হয় না। ইলেকট্রনিক মিডিয়া তথা টেলিভিশন মিডিয়া জগতে অধিকতর প্রাধান্য পাচ্ছে। বস্তুত পঞ্চাশ দশকের প্রথমার্ধে দৈনিক পত্রিকা ছিল হাতেগোনা দু-চারটি। অনেকগুলো সাপ্তাহিক তখন জনমত তৈরি করেছে, তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। পরবর্তী সময়ে কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা রাষ্ট্রভাষা, বাঙালির স্বাধিকার আদায়ে বাঙালির বঞ্চনার প্রতিবাদে ক্ষীণ আওয়াজ দেশের মানুষকে প্রতিবাদমুখর করেছে, সংগ্রামী রাজনীতিবিদদের প্রতিবাদী বানিয়েছে, বুদ্ধিজীবী শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্তকে আন্দোলনমুখী করেছে। জনগণের অনেক হতাশার দীর্ঘ ছয় দশক একের পর এক সব বঞ্চনা ও লাঞ্ছনার অবসানের পর আশার সঞ্চার করেছে সংবাদপত্র। জনগণের সেই বিশ্বাস বা আস্থায় আচম্বিতে কেন ফাটল ধরেছে? এই প্রশ্নের ব্যাপক উত্তর হচ্ছে, জনগণের অভিযোগ বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে সন্ত্রস্ত হলেই, প্রতিকারের পথ দেখাতে না পারলেই, সরকার প্রকাশনা মাধ্যমের মুখ চেপে ধরে। শেষ ভরসাস্থল বিচার বিভাগকে নিষ্ক্রিয় করার পথ খোঁজে। সে সবে অতীতের স্বেচ্ছাচারী সরকার স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে সরাসরি নির্বাহী আদেশে অথবা কালাকানুন প্রয়োগ করেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে অথবা সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিমূলক, জনগণের অধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আদায়ে যে দলটির সংগ্রামী ঐতিহ্য রয়েছে, তারা কেন এই পন্থাটি অনুসরণ করবে?
অতীতের এসব আলোচিত বিষয় পাঠকের কাছে একঘেয়েমি মনে হচ্ছে। তাই অতীত থেকে বর্তমানে এসে সম্প্রতি ‘গণতান্ত্রিক বিপুল জনসমর্থিত, নির্বাচিত সরকারের আমলে গণমাধ্যমের সম্পর্কিয় মনোভাব যতদূর সম্ভব সংক্ষেপে আলোচনা করব।’ সরাসরি বলছি, আসলে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটলেও অনেক প্রক্রিয়া অতীতের ট্র্যাডিশনে চলছে। নতুনত্ব হচ্ছে, একেকটা সরকারের এক ধরনের কৌশলী পদ্ধতি। দ্বিতীয় ব্যতিক্রম হচ্ছে, স্বেচ্ছাচারী অথবা গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্বর আগের মতো তীব্র নয়। বর্তমানের হাতেগোনা প্রতিবাদীদের কণ্ঠস্বর অনেকখানি ক্ষীণ। বক্তব্যটি চর্বিতচর্বন হলেও বলছি, পঞ্চাশের পরবর্তী ছয় দশকে সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, সাংবাদিক হয়রানি, সাংবাদিক গ্রেপ্তার, মুদ্রণশালায় তথা প্রেস বাজেয়াপ্ত করা, সংবাদপত্র অফিসের দরজায় তালা দেওয়াসহ আরও ব্যবস্থা সরাসরি নেওয়া হত। কালো আইন তৈরি হতো। সেসব নিন্দিত ও সমালোচিত আইনের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে বলা যথেষ্ট নয়। এখন নানা ফাঁকফোকর গলিয়ে সেসব আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। চ্যানেল বন্ধ, সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিল, সাংবাদিক নির্যাতন এসবই এখন ‘জনগণের সরকার’ করছে না। সরকার বিভিন্ন নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান নানা বিধি-বিধানের দোহাই দিয়ে করছে। কারও নেপথ্য নির্দেশ থাকলেও তা প্রমাণ করা দুরূহ। বর্তমান সরকারের সফল কুট-কৌশলের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। তবে যেটুকু বললাম, তা পড়ে কী আজকের প্রজন্ম, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের সত্য প্রকাশের অধিকারে যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁরা অবাক হতে পারেন। তাদের-ই বলছি, পঞ্চাশের দশক অথবা বর্তমান শতকের প্রথম দশকের মধ্যে বুড়িগঙ্গার অনেক পানি প্রবাহিত হয়েছে। তেমনি জন্মেছে অনেক বর্জ্য পদার্থ। আমরা যাঁরা পুরোনো আমলের সাংবাদিক, তাঁরা একইভাবে গণমাধ্যমের স্রোতধারায়ও জমে যাওয়া বর্জ্য নিয়ে অনেকখানি উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ব্যতিক্রম হচ্ছে অতীতে গণমাধ্যমের আকাশে দেখা দেওয়া দুর্যোগের ঘনঘটার মোকাবিলার সাহসিকতা, একতা ও লড়াকু ভূমিকায় আমরা একাট্টা হয়েছি, আন্দোলন, প্রতিবাদ, নির্যাতন, সহ্য করে সেই কালো মেঘ অপসারিত করেছি। গণমাধ্যমে অবাধ তথ্যপ্রবাহে বাধা দূর করতে নবপ্রজন্মের সাংবাদিক আজ অদ্ভুতভাবে নিষ্ক্রিয়। বিভক্তির দেয়াল তুলে, অনুগ্রহ বিতরণ করে, রাজনৈতিক বিভাজনের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠকে নীরব করে দেওয়া হয়েছে। অথবা বশংবদ করা হয়েছে। বিদেশি ‘এমবেডেড জার্নালিজমের’ তথা অনুগত সাংবাদিকতায় অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তাই গণমাধ্যমের ওপর বর্তমান সরকারের নতুন কৌশলী আঘাতের কোনো প্রত্যাঘাত হয়নি।
চ্যানেল ওয়ান নাকি নিয়ম-কানুনের বরখেলাপ করেছে। এক. এই নিয়ম-কানুনের লোম বাছাই করলে আমার জানা মতে, আরও অনেক বেসরকারি সম্প্রচার বিপাকে পড়বে। তাহলে ‘ওয়ান’ কেন বেছে নেয়া হলো? অতীতেই এর জবাব রয়েছে।
মুসলিম লীগ সরকার পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তান অবজারভার বন্ধ করে, সকালে গ্রেপ্তার করে, ভাষা আন্দোলনে বাধাগ্রস্ত করেছিল, ধর্মীয় অনুশাসনের বিরুদ্ধে মন্তব্য প্রকাশের অজুহাতে আইয়ুব ইত্তেফাক বন্ধ করে সম্পাদককে জেলে পাঠিয়ে বাঙালির স্বাধিকারের দাবি স্তব্ধ করতে সংবাদপত্র প্রকাশনা সম্পর্কিত কালাকানুন প্রয়োগ করে। ২০০১-এর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের কথিত দুষ্কর্মের বিবরণ সংবলিত একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছিলেন বিএনপি। একুশে টেলিভিশন তা প্রচারে অস্বীকৃতি জানায়, অতঃপর ‘হারি জাস্টিসে’ ত্বরিত ‘আইনি’ পন্থা রাতারাতি একুশের যন্ত্রপাতি জব্দ করা হলো।
আমার ধারণা, চ্যানেল ওয়ানের জন্য কাল হলো ভোলা উপনির্বাচন নিয়ে, কথিত অনিয়ম সম্প্রচারে বাড়াবাড়ি। আমার দেশ প্রকাশনা বিধি ভঙ্গ করেছে, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই, সরকার সেই অনিয়মের সুযোগ নিয়েছে, যার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন করা যাচ্ছে না। ‘যমুনা’ নাকি সময়মতো সম্প্রচার করেনি। এভাবে দুটি চ্যালেল বন্ধ করে ইতিমধ্যে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাঠে ১২টি এঁড়ে গরু ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো কোন আইনি পন্থায় বা কোন নিয়ম মেনে মাঠে ছেড়ে দেওয়া হলো, আর অন্য আবেদনকারীরা কোন বিশেষ আইনি বিধান পালন করেনি বলে অনুমোদন পায়নি, সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজলে ওয়ান আর যমুনা নিয়ে সরকারকে বেকায়দার পড়তে হবে। অবশ্য এ নিয়ে আদালতে আইনের আশ্রয় নিলে অনেক থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
সর্বশেষ আমার দেশ নিয়ে পত্রিকাটির মালিকের পক্ষাবলম্বনে আমি একটুখানি বিব্রত বোধ করছি, সে কথাটি না বললেই নয়। একজন অসাংবাদিক মর্যাদাকর সম্পাদকের পদে বেআইনিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, এই ব্যবস্থাটি আমি নীতিগতভাবে সমর্থন করি না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য সংবাদপত্রের মালিকানা অর্জন করে নিয়মানুগ পদ্ধতিতে না গিয়ে কেউ আইন ভঙ্গ করবেন, এমন অনৈতিক কাজও আমি সমর্থন করি না। এ জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক, আপত্তি নেই। তবে সরকারকে আমার সুপারিশ, পত্রিকাটিকে সঠিকভাবে ‘প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অর্ডিন্যান্স’ অনুযায়ী সম্পাদক নিয়োগ করে, প্রকাশনা গলদ দূর করে নিয়মসিদ্ধ হতে নির্দেশ দিয়ে প্রকাশনার অস্থায়ী আদেশ দেওয়া হোক। তাহলে শত শত সাংবাদিক-কর্মচারী তাঁদের জীবিকার অধিকার ফিরে পাবেন। চ্যানেল ওয়ান ও যমুনা টিভিকেও তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের সুযোগ দিয়েও সরকার গণমাধ্যমের ওপর হামলার কারণ, চ্যানেল নিয়ে পক্ষপাতিত্ব ও অন্যান্য অভিযোগের অপবাদ দূর করতে পারবেন।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.