প্রতিক্রিয়া-প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ ও রাজধানী ঢাকা by মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর
৫ জুন প্রথম আলোয় আবুল মোমেন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের (এক-নগরের দেশ হয়ে বাঁচবে বাংলাদেশ?) অবতারণা করেছেন। বিষয়টি যে খুব নতুন তা নয়। ঢাকার অতিরিক্ত কেন্দ্রিকতা ও প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ প্রসঙ্গটা বিভিন্ন সময় আলোচনায় উঠেছে। কিন্তু কোনো সরকার বা নীতিনির্ধারকেরা এ ব্যাপারে মনোযোগ দেয়নি।
ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ ও চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশনের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে ‘সিটি গভর্নমেন্টের’ কথা বলেছেন। কিন্তু এসব দাবি বা প্রস্তাব সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেনি। অতি সম্প্রতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের প্রশাসনকে সাতটি প্রদেশে বিভক্ত করার একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। তা নিয়েও তেমন আলোচনা হয়নি। বড় দুই দলের (তারাই পালা করে সরকার গঠন করে) নেতারা মনে হয় বড্ড বেশি স্ট্যাটাসকোতে (যেমন আছে তেমন থাকুক) বিশ্বাস করেন। এতে হয়তো দুর্নীতি, ভাগবাটোয়ারা, দলীয়করণ ও দখলবাজিতে সুবিধা হয়। কোনো বড় রকমের পরিবর্তন করতে তাঁরা আগ্রহী নন। দেশের কোনো কোনো ‘শক্তিকে’ অসন্তুষ্ট বা ক্ষুব্ধ করার ঝুঁকি নিতেও বড় দুই দল একইভাবে অনাগ্রহী। যেমন: ছাত্রসমাজ, আমলা, সামরিক বাহিনী ও ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী। এই চার শক্তির গায়ে আঁচড় লাগতে পারে এমন কোনো বড় মাপের সিদ্ধান্ত দুই দলের কোনো সরকারই নিতে চায় না। অথচ বড় কোনো পরিবর্তন করতে হলে কেউ না কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারে। ঢাকার অতিকেন্দ্রিকতা বজায় রাখা ও বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ার এটাই প্রধান কারণ। বড় দুই দলের ধারণা, এই চার শক্তির কেউ ‘ক্ষুব্ধ’ হলে সরকারের গদি রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। কাজেই গদি রক্ষা করার স্বার্থে কোনো সরকারই কতগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তারা তাদের ‘পাঁচ বছর’ নিয়ে সব সময় চিন্তিত। এই পাঁচ বছর কার্পেটের নিচে ধুলোগুলো লুকিয়ে রেখে তারা শাসনকাজ পরিচালনা করে। দু-চারটি বড় মাপের উন্নয়ন প্রকল্প করে তারা সাফল্যের ঢেঁকুর তোলে। বড় মাপের উন্নয়ন প্রকল্পও সব সময় করা সম্ভব হয় না। মন্ত্রী বা নানা ‘ভবনের’ কমিশনের বখরা ঠিকমতো না হলে অনেক বড় মাপের উন্নয়ন প্রকল্পও ভেস্তে যায়। যদি বখরা নিয়ে সমস্যা না হতো তাহলে গত ১৫ বছরে ঢাকায় আরও ১০টা ফ্লাইওভার হয়ে যেত, ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা চার লেইনের রাস্তা হতো, ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা দ্রুতগামী ইলেকট্রিক ট্রেন হতো ও দেশের বিভিন্ন নদীর ওপর সেতুও হয়ে যেত।
আবুল মোমেন বিকেন্দ্রীকরণ প্রসঙ্গে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন যা নিয়ে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। আমি কয়েকটি প্রস্তাব যোগ করব। যেমন: প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি প্রধান দপ্তর ঢাকার বাইরে কোনো জেলায় স্থাপন করা, নানা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান পালা করে নানা জেলায় আয়োজন করা, বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি অফিসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার সীমা অনেক গুণে বাড়িয়ে দেওয়া, অবিলম্বে জেলা পরিষদের নির্বাচন দিয়ে জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন সমন্বয়কারী হিসেবে জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করা (যেখানে এমপির কোনো ভূমিকা থাকবে না), কয়েকটি বড় মাপের সরকারি বিভাগের প্রধান কার্যালয় পর্যায়ক্রমে আট বিভাগে স্থানান্তর করা (যেমন: রেলওয়ে ও নৌবাহিনীর সদর দপ্তর চট্টগ্রামে) ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে আরও নানা পরামর্শ দিতে পারে। তার আগে দরকার সরকারের রাজনৈতিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত। সরকারকে (ও দলকে) আগে ঠিক করতে হবে—‘তারা বাংলাদেশকে এক-নগরের দেশ করে রাখবেন না।’ তারা দেশের প্রশাসন, শিল্প ও ব্যবসাকে বিকেন্দ্রীকরণ করবে। এই অঙ্গীকার বা নীতি গ্রহণ না করলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিস্তারিত কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হবে না। কিছু লোকদেখানো কাজ হয়তো হতে পারে।
রাজধানীকে বিকেন্দ্রীকরণ করা অনেক বড় কাজ। বহু লোক এতে অসন্তুষ্ট হবেন। কাজেই সরকারের পক্ষে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এতবড় কাজ সরকার করবে কি না আমার সন্দেহ আছে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সে রকম দূরদর্শী দল নয়। এই দল দুটি ‘পাঁচ বছরে’ বিশ্বাসী। স্ট্যাটাসকোতে বিশ্বাসী। তাদের পক্ষে এত বড় কাজে হাত দেওয়া বেশ কঠিন। সরকারি দপ্তর বিকেন্দ্রীকরণ করলে ও কেন্দ্রীয় অফিসের ক্ষমতার সিংহভাগ আট বিভাগে বণ্টন করে দিলে মন্ত্রী, সচিব ও কেন্দ্রীয় অফিসের বড় কর্মকর্তারা খুবই ক্ষুব্ধ হবেন। তারা সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও অসহযোগিতা করতে পারেন। এই ঝুঁকি এই দুই দলের কোনো সরকার নিতে চাইবে, তা আমার বিশ্বাস হয় না।
বিকেন্দ্রীকরণে আরও একটা ঝুঁকি আছে। তা হলো: এই নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান বিরোধী দলের অসহযোগিতা বা ক্ষেত্রবিশেষে বিরোধিতা। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সরকার ও সংসদে প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা করে কোনো বড় মাপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার নজির নেই বললেই চলে। একটিই ব্যতিক্রম ছিল : ‘সংসদীয় গণতন্ত্রে’ প্রত্যাবর্তন। আমার ধারণা, খালেদা জিয়া খেয়ালের বশে রাজি হয়েছিলেন। অবশ্য তিনি রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির স্টাইলেই (পতাকা, আলাদা সচিবালয়, একনায়কত্ব) প্রধানমন্ত্রিত্ব করে গেছেন। শেখ হাসিনাও তাঁকে অনুসরণ করেছেন। আমার আশঙ্কা, বিকেন্দ্রীকরণ প্রশ্নেও প্রধান বিরোধী দল হয়তো সহযোগিতা করবে না। বরং যারা অসন্তুষ্ট হবে তাদের নিয়ে রাজনীতি করবে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলেও তা-ই করত বলে আমার ধারণা। কাজেই সরকারি দল ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে এই বিষয়ে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আর সমঝোতা না হলে এত বড় কাজে হাত দিতে কি সরকার রাজি হবে? সরকার ভাববে, ‘অহেতুক বিএনপিকে আরও হরতাল করার ইস্যু তুলে দেওয়ার দরকার কী?’ তারচেয়ে যা আছে তা-ই চলুক। (স্ট্যাটাসকো জিন্দাবাদ!)
রাজধানী ঢাকাও ক্রমশ একটি ব্যর্থ নগরে পরিণত হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, নেতা, এমপি, সচিব, বড় ব্যবসায়ী, দাতা সংস্থা, বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, সংবাদপত্র, টিভির কর্মকর্তারা সবাই ঢাকাতেই থাকেন। সবার চোখের সামনে রাজধানী ঢাকা ক্রমশ বসবাসের অযোগ্য একটি শহরে পরিণত হতে চলেছে। ঢাকার উন্নয়নে ও সমস্যার সমাধানে কোনো একক সমন্বয়কারী সংস্থা নেই। ঢাকার উন্নয়নের জন্য রয়েছে ৪০টি সংস্থা। কেউ কারও অধীনে নয়। বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন। সবাই যার যার মতো উন্নয়ন করছে বা করার কথা বলে যাচ্ছে। সংবাদপত্র, টিভি ও গোলটেবিলে এসব সমস্যার কথা হাজারবার বলা হয়েছে। গত ২০ বছরে কয়েক শ সুপারিশ সরকারকে দেওয়া হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। কোনো বড় মাপের মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়নি এখনো। যা হচ্ছে সবই বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা। কেন? কারণ, নীতিনির্ধারকেরা ঢাকার দিকে তাকাবার সময় পাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর হাতে অনেক কাজ। যে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা (সাক্ষীগোপাল, আসলে প্রধানমন্ত্রীই সব) ও নীতিনির্ধারকেরা রাজধানী ঢাকাকে একটি বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না, তাঁরা বিকেন্দ্রীকরণ ও অন্যান্য জেলা শহরকে সমৃদ্ধ করার জন্য চিন্তা করবেন, তা অলীক কল্পনামাত্র। কারণ, তাদের সামনে রয়েছে ‘পাঁচ বছর’। তারা বহু দূরের বাংলাদেশকে দেখতে পায় না। আগামী ভোটের বৈতরণী পার হওয়ার চিন্তাই তাদের প্রধান চিন্তা। এ ধরনের নেতৃত্ব আমরাই ভোট দিয়ে নির্বাচন করেছি। কাজেই এই ভবিতব্য আমাদের মেনে নিতে হবে। তবু অনেক সময় ক্ষীণ আশায় আমরা লিখি, যদি সরকারের চৈতন্যোদয় হয়। যদি সরকার কিছু করে।
আবুল মোমেনকে আবার ধন্যবাদ। তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যদিও মনে হয়, সবই অরণ্যে রোদন।
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।
আবুল মোমেন বিকেন্দ্রীকরণ প্রসঙ্গে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন যা নিয়ে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। আমি কয়েকটি প্রস্তাব যোগ করব। যেমন: প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি প্রধান দপ্তর ঢাকার বাইরে কোনো জেলায় স্থাপন করা, নানা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান পালা করে নানা জেলায় আয়োজন করা, বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি অফিসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার সীমা অনেক গুণে বাড়িয়ে দেওয়া, অবিলম্বে জেলা পরিষদের নির্বাচন দিয়ে জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন সমন্বয়কারী হিসেবে জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করা (যেখানে এমপির কোনো ভূমিকা থাকবে না), কয়েকটি বড় মাপের সরকারি বিভাগের প্রধান কার্যালয় পর্যায়ক্রমে আট বিভাগে স্থানান্তর করা (যেমন: রেলওয়ে ও নৌবাহিনীর সদর দপ্তর চট্টগ্রামে) ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে আরও নানা পরামর্শ দিতে পারে। তার আগে দরকার সরকারের রাজনৈতিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত। সরকারকে (ও দলকে) আগে ঠিক করতে হবে—‘তারা বাংলাদেশকে এক-নগরের দেশ করে রাখবেন না।’ তারা দেশের প্রশাসন, শিল্প ও ব্যবসাকে বিকেন্দ্রীকরণ করবে। এই অঙ্গীকার বা নীতি গ্রহণ না করলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিস্তারিত কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হবে না। কিছু লোকদেখানো কাজ হয়তো হতে পারে।
রাজধানীকে বিকেন্দ্রীকরণ করা অনেক বড় কাজ। বহু লোক এতে অসন্তুষ্ট হবেন। কাজেই সরকারের পক্ষে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এতবড় কাজ সরকার করবে কি না আমার সন্দেহ আছে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সে রকম দূরদর্শী দল নয়। এই দল দুটি ‘পাঁচ বছরে’ বিশ্বাসী। স্ট্যাটাসকোতে বিশ্বাসী। তাদের পক্ষে এত বড় কাজে হাত দেওয়া বেশ কঠিন। সরকারি দপ্তর বিকেন্দ্রীকরণ করলে ও কেন্দ্রীয় অফিসের ক্ষমতার সিংহভাগ আট বিভাগে বণ্টন করে দিলে মন্ত্রী, সচিব ও কেন্দ্রীয় অফিসের বড় কর্মকর্তারা খুবই ক্ষুব্ধ হবেন। তারা সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও অসহযোগিতা করতে পারেন। এই ঝুঁকি এই দুই দলের কোনো সরকার নিতে চাইবে, তা আমার বিশ্বাস হয় না।
বিকেন্দ্রীকরণে আরও একটা ঝুঁকি আছে। তা হলো: এই নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান বিরোধী দলের অসহযোগিতা বা ক্ষেত্রবিশেষে বিরোধিতা। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সরকার ও সংসদে প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা করে কোনো বড় মাপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার নজির নেই বললেই চলে। একটিই ব্যতিক্রম ছিল : ‘সংসদীয় গণতন্ত্রে’ প্রত্যাবর্তন। আমার ধারণা, খালেদা জিয়া খেয়ালের বশে রাজি হয়েছিলেন। অবশ্য তিনি রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির স্টাইলেই (পতাকা, আলাদা সচিবালয়, একনায়কত্ব) প্রধানমন্ত্রিত্ব করে গেছেন। শেখ হাসিনাও তাঁকে অনুসরণ করেছেন। আমার আশঙ্কা, বিকেন্দ্রীকরণ প্রশ্নেও প্রধান বিরোধী দল হয়তো সহযোগিতা করবে না। বরং যারা অসন্তুষ্ট হবে তাদের নিয়ে রাজনীতি করবে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলেও তা-ই করত বলে আমার ধারণা। কাজেই সরকারি দল ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে এই বিষয়ে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আর সমঝোতা না হলে এত বড় কাজে হাত দিতে কি সরকার রাজি হবে? সরকার ভাববে, ‘অহেতুক বিএনপিকে আরও হরতাল করার ইস্যু তুলে দেওয়ার দরকার কী?’ তারচেয়ে যা আছে তা-ই চলুক। (স্ট্যাটাসকো জিন্দাবাদ!)
রাজধানী ঢাকাও ক্রমশ একটি ব্যর্থ নগরে পরিণত হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, নেতা, এমপি, সচিব, বড় ব্যবসায়ী, দাতা সংস্থা, বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, সংবাদপত্র, টিভির কর্মকর্তারা সবাই ঢাকাতেই থাকেন। সবার চোখের সামনে রাজধানী ঢাকা ক্রমশ বসবাসের অযোগ্য একটি শহরে পরিণত হতে চলেছে। ঢাকার উন্নয়নে ও সমস্যার সমাধানে কোনো একক সমন্বয়কারী সংস্থা নেই। ঢাকার উন্নয়নের জন্য রয়েছে ৪০টি সংস্থা। কেউ কারও অধীনে নয়। বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন। সবাই যার যার মতো উন্নয়ন করছে বা করার কথা বলে যাচ্ছে। সংবাদপত্র, টিভি ও গোলটেবিলে এসব সমস্যার কথা হাজারবার বলা হয়েছে। গত ২০ বছরে কয়েক শ সুপারিশ সরকারকে দেওয়া হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। কোনো বড় মাপের মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়নি এখনো। যা হচ্ছে সবই বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা। কেন? কারণ, নীতিনির্ধারকেরা ঢাকার দিকে তাকাবার সময় পাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর হাতে অনেক কাজ। যে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা (সাক্ষীগোপাল, আসলে প্রধানমন্ত্রীই সব) ও নীতিনির্ধারকেরা রাজধানী ঢাকাকে একটি বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না, তাঁরা বিকেন্দ্রীকরণ ও অন্যান্য জেলা শহরকে সমৃদ্ধ করার জন্য চিন্তা করবেন, তা অলীক কল্পনামাত্র। কারণ, তাদের সামনে রয়েছে ‘পাঁচ বছর’। তারা বহু দূরের বাংলাদেশকে দেখতে পায় না। আগামী ভোটের বৈতরণী পার হওয়ার চিন্তাই তাদের প্রধান চিন্তা। এ ধরনের নেতৃত্ব আমরাই ভোট দিয়ে নির্বাচন করেছি। কাজেই এই ভবিতব্য আমাদের মেনে নিতে হবে। তবু অনেক সময় ক্ষীণ আশায় আমরা লিখি, যদি সরকারের চৈতন্যোদয় হয়। যদি সরকার কিছু করে।
আবুল মোমেনকে আবার ধন্যবাদ। তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যদিও মনে হয়, সবই অরণ্যে রোদন।
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।
No comments