পবিত্র কোরআনের আলো-ওহুদ যুদ্ধ ও মুসলমানদের কঠিন পরিস্থিতির বিবরণ
১২০. ইন তামছাছকুম হাছানাতুন তাছূহুম ওয়া ইন তুসিবকুম ছায়্যিআতুন ইয়াফরাহূ বিহী- ওয়া ইন তাসবিরূ ওয়া তাত্তাক্বূ লা-ইয়াদ্বুর্রুকুম কাইদুহুম শাইআন; ইন্নাল্লাহা বিমা- ইয়া'মালূনা মুহীত্ব। ১২১. ওয়া ইয গাদাওতা মিন আহ্লিকা তুবাওয়্যিউল মু'মিনীনা মাক্বা-ই'দা লিলকি্বতালি; ওয়াল্লাহু ছামীউন আ'লীম।
১২২. ইয্ হাম্মাত্ ত্বায়িফাতা-নি মিনকুম আন তাফশালা ওয়াল্লাহু ওয়ালিয়্যুহুমা- ওয়া আ'লাল্লাহি ফালইয়াতাওয়াক্কালিল মু'মিনূন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১২০-১২২]
অনুবাদ
১২০. তোমাদের কোনো কল্যাণ হলে তাদের খারাপ লাগে, আবার তোমাদের কোনো অকল্যাণ দেখলে তারা আনন্দে উল্লসিত হয়। যদি তোমরা ধৈর্য ও দায়িত্বনিষ্ঠতার সঙ্গে চলতে পারো, তাহলে এদের চক্রান্ত তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এরা যা করে তার ওপর আল্লাহ তার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন। অর্থাৎ তাদের কর্মকাণ্ড ও আল্লাহর ক্ষমতার পরিমণ্ডলের ভেতরেই।
১২১. (হে নবী!) স্মরণ করে দেখুন, যখন আপনি ভোরবেলায় আপনার পরিবার-পরিজন থেকে বিদায় নিয়ে মুমিনদের যুদ্ধের ঘাঁটিগুলোতে মোতায়েন করছিলেন। মনে রাখবেন, আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও জানেন।
১২২. যখন মনোবল হারিয়ে ফেললে আপনাদের মধ্য থেকে দুটো দল এবং তারা বিভক্ত হলো, আল্লাহ তায়ালা উভয় দলেরই অভিভাবক ছিলেন তাদের বিভক্তি ও ভগ্ন মনোবল থেকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে। মুমিনদের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা।
ব্যাখ্যা
১২০ নম্বর আয়াতটি আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় পূর্বের প্রসঙ্গ ধরেই এসেছে। পূর্বোলি্লখিত আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টানরা মুসলমানদের প্রতি কী ধরনের বিদ্বেষ পোষণ করে, তা এই আয়াতে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। বিদ্বেষবশত এরা মুসলমানদের ভালো দেখলে মর্মাহত হয় আর মুসলমানদের ক্ষতি দেখলে উল্লসিত হয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে আশ্বাস দিচ্ছেন, মুসলমানরা যদি ধৈর্য ও দায়িত্বনিষ্ঠতার সঙ্গে চলেন, তবে আহলে কিতাবদের চক্রান্ত তাদের কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না।
১২১ ও ১২২ নম্বর আয়াতে নতুন প্রসঙ্গ এসেছে। সেটা হলো ওহুদ যুদ্ধের প্রসঙ্গে। আয়াত দুটির শানেনুজুল এ রকম_বদরের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মক্কার কোরাইশরা এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। তৃতীয় হিজরি সনে তারা তিন হাজারেরও বেশি অশ্বারোহী ও পদাতিক যোদ্ধার এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মদিনা আক্রমণের জন্য যাত্রা করল। মহানবী (সা.) এই সংবাদ শুনে সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে মদিনার বাইরে নেমে এসে তাদের আগেভাগে বাধা প্রদান করে যুদ্ধ করাই স্থির করলেন। তিনি মুহাজির ও আনসারদের এক হাজার যোদ্ধার এক বাহিনী নিয়ে ওহুদ প্রান্তরের দিকে রওনা হলেন। এই বাহিনীতে মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইও যোগ দিয়েছিল। পথিমধ্যে রণকৌশল সংক্রান্ত বিতর্ক সৃষ্টি করে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মুসলমানদের মধ্যে দুটি দলে বিভক্তি সৃষ্টি করে। এভাবে বিভক্তি ও ভগ্ন মনোবল সৃষ্টি হওয়ার পর ৩০০ লোকের একটি দল নিয়ে সে যুদ্ধের ময়দান থেকে সরে পড়ে। ১২২ নম্বর আয়াতে এই বিভক্তি ও মনোবল হারানোর কথাই বলা হয়েছে। আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী বোঝা যায় যারা বিভক্ত হয়েছিল এবং মনোবল হারিয়েছিল, এরা সবাই মুনাফিক নয়, বরং রাসুল (সা.)-এর অনেক সাহাবিও তখন বিভ্রান্তিতে পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। রাসুল (সা.) এই বিভক্তি ঠেকাতে না পেরে অবশিষ্ট ৭০০ সাহাবি যোদ্ধা নিয়ে ওহুদ পাহাড় পেছনে রেখে রণক্ষেত্রে দাঁড়ালেন। এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে এ আয়াতে বলা হয়েছে, মুমিনদের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা করে কর্তব্য নির্ধারণ করা এবং কর্তব্য পালনে ঝাঁপিয়ে পড়া।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ
১২০. তোমাদের কোনো কল্যাণ হলে তাদের খারাপ লাগে, আবার তোমাদের কোনো অকল্যাণ দেখলে তারা আনন্দে উল্লসিত হয়। যদি তোমরা ধৈর্য ও দায়িত্বনিষ্ঠতার সঙ্গে চলতে পারো, তাহলে এদের চক্রান্ত তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এরা যা করে তার ওপর আল্লাহ তার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন। অর্থাৎ তাদের কর্মকাণ্ড ও আল্লাহর ক্ষমতার পরিমণ্ডলের ভেতরেই।
১২১. (হে নবী!) স্মরণ করে দেখুন, যখন আপনি ভোরবেলায় আপনার পরিবার-পরিজন থেকে বিদায় নিয়ে মুমিনদের যুদ্ধের ঘাঁটিগুলোতে মোতায়েন করছিলেন। মনে রাখবেন, আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও জানেন।
১২২. যখন মনোবল হারিয়ে ফেললে আপনাদের মধ্য থেকে দুটো দল এবং তারা বিভক্ত হলো, আল্লাহ তায়ালা উভয় দলেরই অভিভাবক ছিলেন তাদের বিভক্তি ও ভগ্ন মনোবল থেকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে। মুমিনদের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা।
ব্যাখ্যা
১২০ নম্বর আয়াতটি আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় পূর্বের প্রসঙ্গ ধরেই এসেছে। পূর্বোলি্লখিত আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টানরা মুসলমানদের প্রতি কী ধরনের বিদ্বেষ পোষণ করে, তা এই আয়াতে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। বিদ্বেষবশত এরা মুসলমানদের ভালো দেখলে মর্মাহত হয় আর মুসলমানদের ক্ষতি দেখলে উল্লসিত হয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে আশ্বাস দিচ্ছেন, মুসলমানরা যদি ধৈর্য ও দায়িত্বনিষ্ঠতার সঙ্গে চলেন, তবে আহলে কিতাবদের চক্রান্ত তাদের কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না।
১২১ ও ১২২ নম্বর আয়াতে নতুন প্রসঙ্গ এসেছে। সেটা হলো ওহুদ যুদ্ধের প্রসঙ্গে। আয়াত দুটির শানেনুজুল এ রকম_বদরের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মক্কার কোরাইশরা এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। তৃতীয় হিজরি সনে তারা তিন হাজারেরও বেশি অশ্বারোহী ও পদাতিক যোদ্ধার এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মদিনা আক্রমণের জন্য যাত্রা করল। মহানবী (সা.) এই সংবাদ শুনে সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে মদিনার বাইরে নেমে এসে তাদের আগেভাগে বাধা প্রদান করে যুদ্ধ করাই স্থির করলেন। তিনি মুহাজির ও আনসারদের এক হাজার যোদ্ধার এক বাহিনী নিয়ে ওহুদ প্রান্তরের দিকে রওনা হলেন। এই বাহিনীতে মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইও যোগ দিয়েছিল। পথিমধ্যে রণকৌশল সংক্রান্ত বিতর্ক সৃষ্টি করে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মুসলমানদের মধ্যে দুটি দলে বিভক্তি সৃষ্টি করে। এভাবে বিভক্তি ও ভগ্ন মনোবল সৃষ্টি হওয়ার পর ৩০০ লোকের একটি দল নিয়ে সে যুদ্ধের ময়দান থেকে সরে পড়ে। ১২২ নম্বর আয়াতে এই বিভক্তি ও মনোবল হারানোর কথাই বলা হয়েছে। আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী বোঝা যায় যারা বিভক্ত হয়েছিল এবং মনোবল হারিয়েছিল, এরা সবাই মুনাফিক নয়, বরং রাসুল (সা.)-এর অনেক সাহাবিও তখন বিভ্রান্তিতে পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। রাসুল (সা.) এই বিভক্তি ঠেকাতে না পেরে অবশিষ্ট ৭০০ সাহাবি যোদ্ধা নিয়ে ওহুদ পাহাড় পেছনে রেখে রণক্ষেত্রে দাঁড়ালেন। এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে এ আয়াতে বলা হয়েছে, মুমিনদের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা করে কর্তব্য নির্ধারণ করা এবং কর্তব্য পালনে ঝাঁপিয়ে পড়া।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments