চারদিক-চিরতরুণ কবিকে নিয়ে by আবু সাঈদ
৪ জুন, ২১ জ্যৈষ্ঠ, সকাল ১০টা। বর্ষার দেরি নেই। মনে হচ্ছিল বৃষ্টি নামবে। সকালটা মেঘাচ্ছন্ন। হঠাৎ আকাশ হলো মেঘমুক্ত। চারদিক রোদঝলমল। বাঙালি সমগ্র জাদুঘরে তখন মানুষের মেলা। প্রতিষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১১তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান।
ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল মোড়ে এই বাঙালি সমগ্র জাদুঘর। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য-শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারা সমৃদ্ধ করতে যেসব কীর্তিমান বাঙালি অবদান রেখেছেন, তাঁদের সৃষ্টি ও কর্মে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় এর যাত্রা।
বাঙালি সমগ্র জাদুঘরের প্রবেশদ্বারটি গাদা ফুলের মালা দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। হেঁটে হেঁটে চারতলায় উঠতে উঠতে দেখছি নানা রঙের ফুলের পাপড়ি চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তারপর চোখে পড়ে কীর্তিমান বাঙালিদের পোর্ট্রেট। দেখতে পাই ভাষাশিক্ষা সাহিত্য, সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি, সংগীত-নাটক-চলচ্চিত্র, ক্রীড়া ও বিজ্ঞান, স্থাপত্য শিল্পকলার চারটি বিভাগের ৬০টি পোর্ট্রেট। একপাশে কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ধূমকেতু পত্রিকার মূল কপি। সেটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলাম। দেখলাম কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত কবিতার নজরুল সংখ্যাটি। নিউজপ্রিন্ট কাগজের পাতাগুলো ছিঁড়ে যেতে বসেছে। এক পা দুই পা করে চলতে চলতে দেখি শিল্পী আব্দুল লতিফের ব্যবহূত দোতারা, চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের ম্যুভি ক্যামেরা, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর গানের স্বরলিপি, চিত্রকর কাজী আবুল কাসেমের আঁকা তেলচিত্র, পটুয়া কামরুল হাসানের স্কেচসহ নজরুলের সাতটি পাণ্ডুলিপি।
ছোট একটা মিলনায়তন। হারমোনিয়াম ও তবলার শব্দে বেজে ওঠে বুলবুল মহলানবীশের কণ্ঠে ‘অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে’ নজরুলের গান। এভাবেই শুরু হয় নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠানটি।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের শুধু জাতীয় কবি নন, গর্বের কবি। জীবন বিচিত্র। তিনি জন্ম নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে আর মরদেহ রয়েছে বাংলাদেশে। এই দুইয়ের মাটিতে রয়েছে প্রাণের যোগসূত্র। নজরুল মাত্র ২০ বছর বেঁচে ছিলেন সাহিত্যে। প্রায় ৪০টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন।’ তিনি আরও বলেন, নজরুল ছিলেন চিরতরুণ। কবিতা ও গানে সেটা আমরা দেখতে পাই। নজরুল তাঁর কবিতায় লিখেছেন, ‘আমি যুগে যুগে আসি...’। তিনি আমাদের মাঝে যুগে যুগে আসবেন। তাই তো আমরা তাঁকে স্মরণ করি।’
ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নজরুল ইসলাম ছিলেন খাঁটি বাঙালি। তাঁর জন্মের বছরে জীবনানন্দ দাশ জন্মগ্রহণ করেন। দুজনেই ছিলেন বড় মাপের কবি। তাঁরা তাঁদের চিন্তা ও শব্দে ছিলেন দুই ধরনের মানুষ। নজরুল আন্তর্জাতিকতার জায়গায় নিয়ে গেছেন কবিতাকে। সারা জীবন চেয়েছেন অন্যায় দূর হয়ে সুন্দর একটা সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক। নজরুল নিজেই বলেছেন, “আমি ভাঙ্গতে চাই গড়বার জন্য”।’
তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু করেন তাঁর বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালির কবি, বাংলার কবি। মানবচেতনার কবি। তাঁর কবিতা, গান, গল্প ও উপন্যাস আমাদের সাহিত্য অঙ্গনে বেশ সাড়া জাগায়। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর কবিতা ও গান অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাঙালি সমগ্র জাদুঘরের নির্বাহী পরিচালক তারিক রহমান বলেন, ‘অনেকে আমাকে বলেছেন, নজরুলজয়ন্তী তো ১১ জ্যৈষ্ঠ। কিন্তু আপনি অনুষ্ঠান করছেন ২১ জ্যৈষ্ঠ। এই কথা ধরে বলতে চাই, নজরুল আমাদের শুধু ১১ জ্যৈষ্ঠ নয়, নজরুল আমাদের সারা বছরের জন্য।’
অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন নাট্যকার আতিকুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নজরুল ইসলাম প্রেমের কবি, বিরহের কবি, সর্বহারাদের কবি। সব ধরনের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। তিনি এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন, যেখানে কোনো পুঁজিবাদী থাকবে না, কোনো ধনতাত্ত্বিক থাকবে না; সমাজের মানুষ সমান অধিকারে থাকবে।’
বাঙালি সমগ্র জাদুঘরের মতো আমরাও আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করে রাখতে চাই, রাখার চেষ্টা করি, রাখি।
বাঙালি সমগ্র জাদুঘরের প্রবেশদ্বারটি গাদা ফুলের মালা দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। হেঁটে হেঁটে চারতলায় উঠতে উঠতে দেখছি নানা রঙের ফুলের পাপড়ি চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তারপর চোখে পড়ে কীর্তিমান বাঙালিদের পোর্ট্রেট। দেখতে পাই ভাষাশিক্ষা সাহিত্য, সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি, সংগীত-নাটক-চলচ্চিত্র, ক্রীড়া ও বিজ্ঞান, স্থাপত্য শিল্পকলার চারটি বিভাগের ৬০টি পোর্ট্রেট। একপাশে কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ধূমকেতু পত্রিকার মূল কপি। সেটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলাম। দেখলাম কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত কবিতার নজরুল সংখ্যাটি। নিউজপ্রিন্ট কাগজের পাতাগুলো ছিঁড়ে যেতে বসেছে। এক পা দুই পা করে চলতে চলতে দেখি শিল্পী আব্দুল লতিফের ব্যবহূত দোতারা, চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের ম্যুভি ক্যামেরা, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর গানের স্বরলিপি, চিত্রকর কাজী আবুল কাসেমের আঁকা তেলচিত্র, পটুয়া কামরুল হাসানের স্কেচসহ নজরুলের সাতটি পাণ্ডুলিপি।
ছোট একটা মিলনায়তন। হারমোনিয়াম ও তবলার শব্দে বেজে ওঠে বুলবুল মহলানবীশের কণ্ঠে ‘অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে’ নজরুলের গান। এভাবেই শুরু হয় নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠানটি।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের শুধু জাতীয় কবি নন, গর্বের কবি। জীবন বিচিত্র। তিনি জন্ম নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে আর মরদেহ রয়েছে বাংলাদেশে। এই দুইয়ের মাটিতে রয়েছে প্রাণের যোগসূত্র। নজরুল মাত্র ২০ বছর বেঁচে ছিলেন সাহিত্যে। প্রায় ৪০টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন।’ তিনি আরও বলেন, নজরুল ছিলেন চিরতরুণ। কবিতা ও গানে সেটা আমরা দেখতে পাই। নজরুল তাঁর কবিতায় লিখেছেন, ‘আমি যুগে যুগে আসি...’। তিনি আমাদের মাঝে যুগে যুগে আসবেন। তাই তো আমরা তাঁকে স্মরণ করি।’
ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নজরুল ইসলাম ছিলেন খাঁটি বাঙালি। তাঁর জন্মের বছরে জীবনানন্দ দাশ জন্মগ্রহণ করেন। দুজনেই ছিলেন বড় মাপের কবি। তাঁরা তাঁদের চিন্তা ও শব্দে ছিলেন দুই ধরনের মানুষ। নজরুল আন্তর্জাতিকতার জায়গায় নিয়ে গেছেন কবিতাকে। সারা জীবন চেয়েছেন অন্যায় দূর হয়ে সুন্দর একটা সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক। নজরুল নিজেই বলেছেন, “আমি ভাঙ্গতে চাই গড়বার জন্য”।’
তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু করেন তাঁর বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালির কবি, বাংলার কবি। মানবচেতনার কবি। তাঁর কবিতা, গান, গল্প ও উপন্যাস আমাদের সাহিত্য অঙ্গনে বেশ সাড়া জাগায়। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর কবিতা ও গান অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাঙালি সমগ্র জাদুঘরের নির্বাহী পরিচালক তারিক রহমান বলেন, ‘অনেকে আমাকে বলেছেন, নজরুলজয়ন্তী তো ১১ জ্যৈষ্ঠ। কিন্তু আপনি অনুষ্ঠান করছেন ২১ জ্যৈষ্ঠ। এই কথা ধরে বলতে চাই, নজরুল আমাদের শুধু ১১ জ্যৈষ্ঠ নয়, নজরুল আমাদের সারা বছরের জন্য।’
অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন নাট্যকার আতিকুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নজরুল ইসলাম প্রেমের কবি, বিরহের কবি, সর্বহারাদের কবি। সব ধরনের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। তিনি এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন, যেখানে কোনো পুঁজিবাদী থাকবে না, কোনো ধনতাত্ত্বিক থাকবে না; সমাজের মানুষ সমান অধিকারে থাকবে।’
বাঙালি সমগ্র জাদুঘরের মতো আমরাও আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করে রাখতে চাই, রাখার চেষ্টা করি, রাখি।
No comments