বখাটেপনার শেষ কোথায়-এক কিশোরীর মৃত্যু

বখাটেদের উৎপাতের কারণে নারীর আত্মহত্যার খবর আসছে ধারাবাহিকভাবে। বিগত কয়েক বছরে বখাটেপনার শিকার বহু নারী আত্মহত্যা করেছে। নানা সহিংসতার শিকার হয় নারী, অথচ নারীকেই এসবের বোঝা মাথা পেতে নিতে হয়। সামাজিক মর্যাদাহানির ভয় তাকেই তাড়া করে ফেরে।


এমনই আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিচারবোধ—যে মর্যাদাহানি ঘটায় সে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায়, আর যে মর্যাদাহানির শিকার হয়, তার ওপরই নেমে আসে কলঙ্কের দাগ।
এবার বখাটেপনার শিকার হয়ে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নয়াবাদ গ্রামের এক কিশোরী আত্মহত্যা করল। তার নাম পারুল; স্থানীয় এক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। তার প্রতি বেল্লাল হোসেন নামের এক বখাটের অশালীন আচরণের কথা জানাজানি হওয়ায় ভেঙে গিয়েছিল তার বিয়ে। বরপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, বেল্লালের সেই কাণ্ডের জন্য পারুলকে তারা বধূ হিসেবে গ্রহণ করবে না। অপরাধ করল পুরুষ, শাস্তি পেল নারী। মনের দুঃখে মেয়েটি বিষপানে আত্মহত্যা করল। আবারও দেখা গেল আমাদের সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কাছে নারীরা আজও কত অসহায়।
বখাটেরা হরহামেশাই পথেঘাটে শিশু, কিশোরী ও নারীদের উত্ত্যক্ত করে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, শুধু উত্ত্যক্ত করার কারণে চার মাসে আত্মহত্যা করেছে ১৪ জন নারী। এভাবে একের পর এক জীবন বিসর্জন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সমাজের বেশির ভাগ মানুষ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে, আইন প্রয়োগকারীরা তাদের পাশে দাঁড়ালে, রাজনৈতিক দলগুলো একে প্রশ্রয় না দিলে এই অন্যায় চলতে পারত না।
বখাটেদের প্রতিরোধে সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলোতে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বখাটেপনার বিরুদ্ধে আমাদের সব নাগরিক প্রচারণা আর উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যাবে, যদি না আমরা সমাজের মানসিকতায় বড় ধরনের পরিবর্তন না নিয়ে আসতে পারি। এ জন্য গড়ে তুলতে হবে জোরদার সামাজিক আন্দোলন। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সব নারী আর পুরুষের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কোনো নারী যেন আত্মহত্যার পথে না গিয়ে প্রতিরোধী হয়, সে জন্য তার পাশে দাঁড়াতে হবে রাষ্ট্র ও সমাজকে। উত্ত্যক্ততার মূল কারণগুলো মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.