বিকল্প বাজেট দেওয়ার অধিকার কারও নেই by আবদুল মান্নান

মত দ্বিমত বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার সংসদের বাইরে একটি বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। সংসদে জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের আগে এই বিকল্প বাজেট পেশ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ নিয়ে দুটি লেখা ছাপা হলো।


সংবিধান অনুযায়ী, বাজেট প্রস্তাবনা দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র অর্থমন্ত্রীর। তিনি সংসদে একটি অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা সে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবেন, তারপর সেটি সংসদে পাস হবে। এ নিয়মই এত দিন চলে আসছে।
এর বিপরীত কিছু গণতন্ত্র ও সংবিধান অনুমোদন করে না। তবে সংসদের বাইরে বিরোধী দল বাজেট সম্পর্কে যেকোনো মতামত ও পরামর্শ দিতে পারে। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষও তা দিতে পারে। ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে তাঁরা তা দিয়েছেনও।
আবার বাজেট প্রস্তাবের আগে সরকার বা অর্থমন্ত্রীও বিভিন্ন মহলের মতামত নিতে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বলেছেনও। বাজেট প্রস্তাবের আগে বিরোধী দল চাইলে তাঁর কাছে নির্দিষ্ট সুপারিশ করতে পারত। কিন্তু একেবারে বাজেটের আদলে আরেকটি ছায়া বাজেট উত্থাপনের সুযোগ নেই। এ ধরনের বিকল্প বা তথাকথিত ছায়া বাজেট দেওয়ার অধিকার কারও নেই। এর মাধ্যমে বিরোধী দল একটি বৈধ ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারকে রীতিমতো চালেঞ্জ করেছে। এটি যেমন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, তেমনি সংবিধানবিরোধীও বটে। জনগণ বিরোধী দলকে ভোট দিয়েছে সংসদে গিয়ে কথা বলার জন্য। সংসদের বাইরে বিকল্প বা ছায়া বাজেট পেশ করার জন্য নয়।
আমি মনে করি, সংসদে না গিয়ে সংসদের বাইরে এ ধরনের বাজেট প্রস্তাব দেওয়া দায়িত্বশীল কাজ নয়। সংসদীয় ব্যবস্থায় বিরোধী দল সরকারের সম্পূরক। সংসদে গিয়ে তারা বাজেট সম্পর্কে যেকোনো পরামর্শ দিতে পারে, সংশোধনী আনতে পারে।
দেশে যখন সাংবিধানিক সরকার ছিল না, তখন সংসদও অকার্যকর ছিল। বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় বসা সামরিক শাসকেরা কখনো সংবাদ সম্মেলন করে, কখনো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের ডেকে বাজেট প্রস্তাব পেশ করতেন। তাঁরা যা প্রস্তাব করতেন, সেটিই ছিল চূড়ান্ত। আলোচনা বা বিতর্কের সুযোগ ছিল না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও বিরোধী দল সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটাল। এটি দুর্ভাগ্যজনক। সংসদে না গিয়ে সংসদের বাইরে কেন তারা বাজেট প্রস্তাব পেশ করবে?
এর মাধ্যমে বিরোধী দল কেবল দেশবাসীকেই যে হতাশ করেছে তাই নয়, নিজ দলের সাংসদদেরও বাজেট আলোচনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করল। বিএনপিতে অনেক প্রবীণ সাংসদ আছেন, সংসদে গিয়ে তাঁরা সুচিন্তিত পরামর্শ দিতে পারতেন। আবার অনেক নবীন সদস্য আছেন, যাঁরা বাজেট-প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করতে পারতেন।
এখনো সময় আছে। আজ (১০ জুন) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে বাজেট পেশ করবেন। বিরোধী দলের উচিত হবে সংসদে গিয়ে তার ওপর আলোচনায় সক্রিয় অংশ নিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। যে জনগণ তাদের নির্বাচিত করেছে, তাদের বঞ্চিত করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।
অধিবেশনের সঙ্গে বাজেট অধিবেশন মেলানো ঠিক নয়। বাজেট অধিবেশনে বিরোধী দলের অনেক প্রস্তাব ও সংশোধনী গৃহীত হয়েছে। সেই সুযোগটি কাজে না লাগিয়ে বাইরে বিরোধী দলের বিকল্প বাজেট পেশের মহড়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
আবদুল মান্নান: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.