ধর্মভিত্তিক দলগুলোকেও কাছে টানছেন মহিউদ্দিন

নির্বাচনী মেরুকরণের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগও ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিজেদের দিকে টানার কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ইসলামিক ফ্রন্ট আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছে। আগামী দিনে আরও একাধিক ধর্মভিত্তিক দলকে টানার ইঙ্গিত দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এসব দল জামায়াতবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত।


তবে এসব মেরুকরণের প্রতি সাধারণ ভোটারদের তেমন আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ভোটারেরা এখনো তাঁদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেননি।
দলীয় সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে ইসলামিক ফ্রন্টের মেয়র পদপ্রার্থী সোলাইমান ফরিদ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ইসলামিক ফ্রন্টের নেতারা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ২৭ দফা দাবি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনে জয়ী হলে এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলমের পক্ষে তাদের প্রার্থী আফসার উদ্দিন চৌধুরীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে।
তবে বিএনপি ও জামায়াতের এ মেরুকরণকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এ আর এমনকি। তারা তো আগে থেকেই মিত্র ছিল। এখনো তাই আছে। তাতে আমাদের ভাবনার কোনো কারণ নেই। আগামী কয়েকদিনে আমাদের পক্ষে আরও একাধিক ইসলামি দল যোগ দেবে।’
জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী প্রত্যাহার করে বিএনপিকে সমর্থন দেওয়ায় চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জাতীয়ভাবে মিত্র দলগুলোকেও তাঁর সঙ্গে টানার চেষ্টা করছেন।
ইতিমধ্যে ১৪ দল তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সমর্থন পাওয়ার জন্য তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ একাধিকবার এ উদ্যোগ নেয়। তবে এখনো কোনো ফলাফল আসেনি। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলাইমান আলম শেঠ যদিও বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে অংশ নেবে।’ তাঁর অবস্থান শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে কি না তার জন্য আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে আওয়ামী লীগ সূত্র মন্তব্য করেন।
বাইরের দলকে নিজের সঙ্গে ভেড়ানোর চেষ্টা করলেও নিজ দলের কোন্দল এখনো পুরোপুরি মেটেনি আওয়ামী লীগে। নিজ দলের বিরোধী পক্ষ বলে পরিচিতদের নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকও করেননি মহিউদ্দিন চৌধুরী। সর্বশেষ গত রোববার নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম মেয়র পদ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে বলেছেন, ‘মহিউদ্দিনের সমর্থনে নয়, নেত্রীর নির্দেশে প্রত্যাহার করেছি।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার আ জ ম নাছির শতাধিক সমর্থক নিয়ে নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে যান। তাঁর আসার খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক ওরফে দানু কার্যালয়ের পেছনে একটি ছোট কক্ষে অবস্থান নেন। প্রায় এক ঘণ্টা আ জ ম নাছির নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে থাকলেও তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি দানু। এ সম্পর্কে কাজী ইনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভেতরের একটি কক্ষে সাংগঠনিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। পরে শুনেছি নাছির এসেছিল।’ তিনি বলেন, ‘আসলে তাঁরা এখানে আসেন অজুহাত খুঁজতে, কাজ করতে নয়।’
তবে সাধারণ ভোটারদের কাছে এসব কৌশল আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠেনি। তাঁদের কাছে চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে প্রধান দুই প্রার্থীর কারও প্রতিশ্রুতিই স্পষ্ট নয়। এবারের নির্বাচনে শুরু থেকেই প্রধান দুই দলের প্রার্থী কোনো সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ছাড়াই কার্যক্রম শুরু করেন। এখনো তাঁরা সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। মঞ্জুর আলমের পক্ষে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের নেতারা শুরুর দিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ১৭ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরলেও মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে, তাই কোনো প্রতিশ্রুতি তিনি দেবেন না। ২০০৫ সালের নির্বাচনের পর চট্টগ্রাম শহরে মোট ভোটার বেড়েছে পাঁচ লাখ। এসব ভোটারের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। এবারের নির্বাচনে তাঁদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তরুণ ব্যাংকার মোহাম্মদ ইউসুফ এ সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেন, শহরের ভোটারেরা অপেক্ষাকৃত বেশি সচেতন। তাঁরা প্রার্থীদের ব্যক্তিগত আচরণ, অতীত কর্মকাণ্ড ইত্যাদির পাশাপাশি প্রার্থীদের সততা, দক্ষতা ও জবাবদিহির মনোভাব দেখতে চান। এসব তরুণ ভোটারদের বেশির ভাগ এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন। কিন্তু দুই প্রার্থীর কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে এসব ভোটারের আবেদন তাঁদের এখনো স্পর্শ করতে পারেনি।

No comments

Powered by Blogger.