কলকাতার চিঠি-মুখোমুখি কংগ্রেস-তৃণমূল by অমর সাহা
কংগ্রেস একটু শক্ত হলো। রেল বাজেট নিয়ে যেভাবে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় কংগ্রেসের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, তার সামান্য জবাব দিল কংগ্রেস, বৃহস্পতিবার। বলা চলে, কংগ্রেস কিছুটা হলেও সাহস সঞ্চার করেছে এখন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। কংগ্রেস শুরুও করেছে তৃণমূলকে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক খেলা।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোনো দলই সরকার গড়ার মতো অবস্থানে না গেলে কংগ্রেস কয়েকটি দল নিয়ে তাদের গড়া সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা বা ইউপিএ নিয়ে সরকার গড়ে। সরকার গড়ার পর মমতা অঙ্কের মাধ্যমে বুঝে যান, ইউপিএ সরকারের রক্ষাকবজ তাঁর হাতে। মমতার ন্যায়-অন্যায় সব দাবি মানতে বাধ্যও হয় সরকার। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদন করার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় ইউপিএ সরকারের থাকলেও মমতার আপত্তিতে সেই চুক্তি করেনি মনমোহন সরকার। ফলে কংগ্রেসও দিন দিন তৃণমূলনির্ভর হয়ে পড়ে।
বিরোধী দল থেকে অভিযোগ ওঠে, ভারতের ইতিহাসে এত দুর্বল সরকার এর আগে ক্ষমতায় আসেনি। এত দুর্নীতিও হয়নি এর আগে কোনো সরকারের আমলে। জড়িয়ে পড়ে টু-জি স্পেকট্রাম, আদর্শ আবাসন, কমনওয়েলথ গেমসসহ নানা দুর্নীতিতে। আর সরকারের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই মমতা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রাখেন ইউপিএ সরকারকে।
এরই মধ্যে গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস অভূতপূর্ব ফলাফল করে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে। রাজ্যপাট থেকে বিদায় করে দেয় ৩৪ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টকে। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। এই ঘটনার পর দ্বিগুণ শক্তি সঞ্চার করে তৃণমূল।
কিন্তু এরই মধ্যে ‘কোমরভাঙা’ কংগ্রেস বড় আঘাত খায় রেল বাজেট নিয়ে। ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী ও তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী বুধবার সংসদে পেশ করেন রেল বাজেট। দীর্ঘ আট বছর পর তিনি যাত্রীভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব রাখেন। ব্যস, তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন মমতা। বুধবার রাতেই মমতা চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রীকে। জানিয়ে দেন দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে তৃণমূল নেতা মুকুল রায়কে রেলমন্ত্রী করার প্রস্তাবও পাঠান তিনি।
অন্যদিকে দীনেশ ত্রিবেদী বলেছেন, ‘দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন ক্ষুদিরাম, ভগর্যা সিংরা। আমি সামান্য একটি চেয়ার ছাড়তে পারব না কেন?’ শুধু কি তাই! রেল বাজেট পেশকালীন দীনেশ আরও একটি মারাত্মক কথা বলেছেন, রেলকে তিনি আইসিসিইউ (হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) থেকে টেনে বের করার জন্য রেলের ভাড়া বাড়িয়েছেন। তাঁর কাছে দেশ বড়, তারপর পরিবার এবং শেষে দল। এসব কথায় খেপে যান মমতা। ঘোষণা দেন, বাড়াতে দেবেন না রেলভাড়া। ফলে এই ইস্যু নিয়ে গোটা ভারতের রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে।
এসব ঘটনার মধ্যেই কংগ্রেস এবার নতুন করে সংবির্যা ফিরে পায়। এভাবে তো চলতে পারে না দেশ। মমতা যা বলবেন তা মেনে নিতে হবে? কিছুটা কড়া অবস্থান নেয় কংগ্রেস। পাশাপাশি মমতা ছাড়া সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য বন্ধুদল খুঁজতে শুরু করে কংগ্রেস।
বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশন শুরু হলে বিরোধীরা জানতে চান কে এখন ভারতের রেলমন্ত্রী? তখনই কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় সংসদে সুর ঘুরিয়ে জানিয়ে দেন, রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীই। তিনি ভারত সরকারের রেলমন্ত্রী, কোনো দলের নয়। আর রেল বাজেটও ভারত সরকারের সম্পত্তি। প্রণব মুখোপাধ্যায় সংসদে আরও জানিয়ে দেন, দীনেশ ত্রিবেদী পদত্যাগ করেননি। তবে প্রধানমন্ত্রী মমতার চিঠি পেয়েছেন। তাঁর জবাব দেওয়া হবে যথাসময়ে। কংগ্রেসও জানিয়ে দেয় রেল এবং সাধারণ বাজেট পাসের পর ৩০ মার্চের আগে রেলমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নও নেই। ফলে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক ধাক্কা খেল মমতার তৃণমূল কংগ্রেস।
কিন্তু হঠার্যা করে কেন কংগ্রেসের এই সুর বদল? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, মমতার সমর্থন ছাড়া সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য কংগ্রেস সমর্থন জোগাড় করে ফেলেছে ইতিমধ্যে। তাই আর মমতাকে রাজনৈতিক ছাড় নয়। এবার সরাসরি চ্যালেঞ্জ।
উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের পর সমাজবাদী পার্টির বিপুল বিজয়ে তৃণমূল চাইছিল সমাজবাদী দল, তাদের দল ইত্যাদি নিয়ে তৃতীয় অ-কংগ্রেসী, অ-বিজেপি এবং অ-বামদলের একটি বিকল্প মোর্চা গড়তে, যাতে করে ভারতের দুই শক্তিশালী দল কংগ্রেস এবং বিজেপিকে চাপের মধ্যে রাখা যাবে। কিন্তু এই তৃতীয় বিকল্প মোর্চা গড়ার ব্যাপারে সমাজবাদী পার্টি সবুজ সংকেত দেয়নি। বরং জানিয়ে দিয়েছে, তারা চায় না দেশে অন্তর্বর্তী নির্বাচন হোক। এদিকে বৃহস্পতিবার সমাজবাদী পার্টির পশ্চিমবঙ্গের নেতা ও রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী কিরণময় নন্দ জানিয়ে দিয়েছেন, মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি বর্তমান ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দেবে। তবে মন্ত্রিসভায় যাবে না। যদিও রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি খবর রটে যায়, মুলায়ম সিংকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আনা হতে পারে।
এর পাশাপাশি তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সাংসদ সংগীতশিল্পী কবীর সুমন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন মমতার বিরুদ্ধে। রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন রেলের অবস্থা শোচনীয়।
এসব ঘটনার পর এবার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তৃণমূল। আর ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চার করছে কংগ্রেস। কংগ্রেস এখন এই ভেবে আশ্বস্ত হয়েছে, মমতা সমর্থন প্রত্যাহার করলেও কেন্দ্রীয় সরকার হয়তো পড়ছে না। চলবে ২০১৪ সাল পর্যন্ত।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
বিরোধী দল থেকে অভিযোগ ওঠে, ভারতের ইতিহাসে এত দুর্বল সরকার এর আগে ক্ষমতায় আসেনি। এত দুর্নীতিও হয়নি এর আগে কোনো সরকারের আমলে। জড়িয়ে পড়ে টু-জি স্পেকট্রাম, আদর্শ আবাসন, কমনওয়েলথ গেমসসহ নানা দুর্নীতিতে। আর সরকারের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই মমতা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রাখেন ইউপিএ সরকারকে।
এরই মধ্যে গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস অভূতপূর্ব ফলাফল করে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে। রাজ্যপাট থেকে বিদায় করে দেয় ৩৪ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টকে। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। এই ঘটনার পর দ্বিগুণ শক্তি সঞ্চার করে তৃণমূল।
কিন্তু এরই মধ্যে ‘কোমরভাঙা’ কংগ্রেস বড় আঘাত খায় রেল বাজেট নিয়ে। ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী ও তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী বুধবার সংসদে পেশ করেন রেল বাজেট। দীর্ঘ আট বছর পর তিনি যাত্রীভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব রাখেন। ব্যস, তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন মমতা। বুধবার রাতেই মমতা চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রীকে। জানিয়ে দেন দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে তৃণমূল নেতা মুকুল রায়কে রেলমন্ত্রী করার প্রস্তাবও পাঠান তিনি।
অন্যদিকে দীনেশ ত্রিবেদী বলেছেন, ‘দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন ক্ষুদিরাম, ভগর্যা সিংরা। আমি সামান্য একটি চেয়ার ছাড়তে পারব না কেন?’ শুধু কি তাই! রেল বাজেট পেশকালীন দীনেশ আরও একটি মারাত্মক কথা বলেছেন, রেলকে তিনি আইসিসিইউ (হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) থেকে টেনে বের করার জন্য রেলের ভাড়া বাড়িয়েছেন। তাঁর কাছে দেশ বড়, তারপর পরিবার এবং শেষে দল। এসব কথায় খেপে যান মমতা। ঘোষণা দেন, বাড়াতে দেবেন না রেলভাড়া। ফলে এই ইস্যু নিয়ে গোটা ভারতের রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে।
এসব ঘটনার মধ্যেই কংগ্রেস এবার নতুন করে সংবির্যা ফিরে পায়। এভাবে তো চলতে পারে না দেশ। মমতা যা বলবেন তা মেনে নিতে হবে? কিছুটা কড়া অবস্থান নেয় কংগ্রেস। পাশাপাশি মমতা ছাড়া সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য বন্ধুদল খুঁজতে শুরু করে কংগ্রেস।
বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশন শুরু হলে বিরোধীরা জানতে চান কে এখন ভারতের রেলমন্ত্রী? তখনই কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় সংসদে সুর ঘুরিয়ে জানিয়ে দেন, রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীই। তিনি ভারত সরকারের রেলমন্ত্রী, কোনো দলের নয়। আর রেল বাজেটও ভারত সরকারের সম্পত্তি। প্রণব মুখোপাধ্যায় সংসদে আরও জানিয়ে দেন, দীনেশ ত্রিবেদী পদত্যাগ করেননি। তবে প্রধানমন্ত্রী মমতার চিঠি পেয়েছেন। তাঁর জবাব দেওয়া হবে যথাসময়ে। কংগ্রেসও জানিয়ে দেয় রেল এবং সাধারণ বাজেট পাসের পর ৩০ মার্চের আগে রেলমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নও নেই। ফলে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক ধাক্কা খেল মমতার তৃণমূল কংগ্রেস।
কিন্তু হঠার্যা করে কেন কংগ্রেসের এই সুর বদল? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, মমতার সমর্থন ছাড়া সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য কংগ্রেস সমর্থন জোগাড় করে ফেলেছে ইতিমধ্যে। তাই আর মমতাকে রাজনৈতিক ছাড় নয়। এবার সরাসরি চ্যালেঞ্জ।
উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের পর সমাজবাদী পার্টির বিপুল বিজয়ে তৃণমূল চাইছিল সমাজবাদী দল, তাদের দল ইত্যাদি নিয়ে তৃতীয় অ-কংগ্রেসী, অ-বিজেপি এবং অ-বামদলের একটি বিকল্প মোর্চা গড়তে, যাতে করে ভারতের দুই শক্তিশালী দল কংগ্রেস এবং বিজেপিকে চাপের মধ্যে রাখা যাবে। কিন্তু এই তৃতীয় বিকল্প মোর্চা গড়ার ব্যাপারে সমাজবাদী পার্টি সবুজ সংকেত দেয়নি। বরং জানিয়ে দিয়েছে, তারা চায় না দেশে অন্তর্বর্তী নির্বাচন হোক। এদিকে বৃহস্পতিবার সমাজবাদী পার্টির পশ্চিমবঙ্গের নেতা ও রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী কিরণময় নন্দ জানিয়ে দিয়েছেন, মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি বর্তমান ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দেবে। তবে মন্ত্রিসভায় যাবে না। যদিও রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি খবর রটে যায়, মুলায়ম সিংকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আনা হতে পারে।
এর পাশাপাশি তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সাংসদ সংগীতশিল্পী কবীর সুমন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন মমতার বিরুদ্ধে। রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন রেলের অবস্থা শোচনীয়।
এসব ঘটনার পর এবার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তৃণমূল। আর ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চার করছে কংগ্রেস। কংগ্রেস এখন এই ভেবে আশ্বস্ত হয়েছে, মমতা সমর্থন প্রত্যাহার করলেও কেন্দ্রীয় সরকার হয়তো পড়ছে না। চলবে ২০১৪ সাল পর্যন্ত।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
No comments