জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি-বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন এই বঙ্গে by মুস্তাফা নূরউল ইসলাম
'ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। জয় বাংলা'- শেখ মুজিবুর রহমান। কখনো ইতিহাস নির্মাণ করে থাকে নির্বাচিত সেই কতিপয় জনকে, তাঁরা ইতিহাসের সন্তান। কখনো তাঁরাই ইতিহাস-সৃজনের কর্মটি সম্ভব করে থাকেন। আবার কখনো বা একে অপরের পরিপূরক।
মহাকালের পটে এমন উজ্জ্বল মানুষদের কথা আমাদের জানা রয়েছে। বর্তমান প্রসঙ্গে আমরা তেমনি একজন শেখ মুজিবকে অবলোকন করার প্রয়াস পাচ্ছি, যিনি এক মুক্ত দেশের প্রধানতম স্থপতি। কথাটাকে বরং আরেকভাবে উপস্থাপন করা যাক। তাতে করে বক্তব্য অধিকতর স্পষ্ট হবে বলে মনে করি। বর্তমান শতকের এশিয়া ভূখণ্ড থেকেই উদাহরণ টেনে বলি- আধুনিক তুরস্কের ত্রাতা কামালের ন্যায়, ভারতের বাপুজি গান্ধীর ন্যায়, ভিয়েতনামের আঙ্কল হো'র ন্যায় পবিত্র এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বলা বাহুল্য, বিশ্ব ইতিহাসে এই প্রকারের ত্রাতা পুরুষ যাঁরা, আপন নাম-পরিচিতির ঊধর্ে্ব এবং দেশ-সীমানা ছাড়িয়ে তাঁদের অবস্থান। তখন তাঁরা মহাকালের সম্পদ। ভাগ্য আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ক্ষুদ্রায়তন একটি প্রাচ্য দেশে সেই তাঁকে আমরা পেয়েছিলাম।
১৯৭১-এর বিশ্বপরিস্থিতির কথা স্মরণ করি। সর্বত্র সর্বাধিক আলোচিত দুটি দেশ- ভিয়েতনাম আর বাংলাদেশ। এক দেশে মার্কিন বিমানবাহিনীর কার্পেট বম্বিং, আরেক দেশে পাকিস্তানি সৈন্যের জেনোসাইড। আবার প্রতিরোধে উভয় দেশেই সাধারণ গণমানুষের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এইখানে একটি প্রশ্ন- ইতিহাসে কদাপি কি এমন দ্বিতীয় নজির রয়েছে যে দেশের সর্বাত্মক প্রতিরোধ সংগ্রাম উজ্জীবিত হয়েছে এবং বিজয়ী হয়েছে অনুপস্থিত নেতার প্রেরণায়? সবারই তা জানা, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ওই সময়টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেড় হাজার মাইল পশ্চিমে পাকিস্তানের জিন্দানখানায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বন্দি। মাতৃভূমির স্বাধীনতা সংগ্রামের সেনাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেশদ্রোহিতার। তাহলে জিজ্ঞাসা- ইমানের কী সেই প্রেরণা ওই সময়ে যা কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল? এই দুই যুগ কালব্যবধানে অবশ্যই আমরা বিস্মৃত হইনি, আমাদের আন্তর সত্যের মহৎ শপথ 'ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলার আমার ভাষা। জয় বাংলা।' আমরা স্মরণ করব মরণজয়ী ওই মন্ত্র কেমন আমাদের অকুতোভয়, দুঃসাহসী করে তুলেছিল। শেখ মুজিব নামের মানুষটি তখন আর রক্ত-মাংসের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দেহধারী মাত্র নন, আমাদের সমুদয় আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন নিয়ে তিনি একটি অনড়, অটুট বিশ্বাসে পরিণত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে অবলোকন করার প্রয়াস পাব- বাসনা এই প্রকারের। তাই থেকে নানান কথা মনে আসছে। তৎপূর্বে একটি প্রশ্ন- প্রকৃতির রাজ্যেই হোক কিংবা মানবজীবনেই হোক, ইহজাগতিকতার এলাকায় দৈব-ভূমিকা কতটা গ্রহণযোগ্য? অথবা কোনোই কার্যকারণহেতু নেই এমন আকস্মিকতার ভূমিকা? বিজ্ঞানবুদ্ধি তা সমর্থন করে না। অনুসন্ধিৎসু পণ্ডিতজন সন্ধান করেন বাস্তবতার পটভূমিতে। ইতিহাস যে সম্ভূত হয়ে ওঠে, নির্মিত হয় এবং বাঁক নেয়, ইতিহাসের গর্ভ থেকে যে নায়ক-সন্তানের জন্ম ওই দৈব বা আকস্মিকতা সে ক্ষেত্রে কদাপি মূলে কাজ করে না। তাই হঠাৎ করেই এক মাহেন্দ্রক্ষণে কোন অন্তরীক্ষ থেকে তিনি অবতীর্ণ হলেন, এমন হয় না। অবতারের ঠাঁই কল্প-পুরাণে। ইতিহাসে নয়। সেই প্রেক্ষিতে শেখ মুজিব কথা।
১৯৬৬-তে যখন ছয় দফার ঘোষণা আর ১৯৭১-এর ৭ মার্চে রমনা রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে তাঁর যে ঐতিহাসিক ভাষণ- ইতিমধ্যে সময় গড়িয়েছে পাঁচ বছর। আমরাই প্রত্যক্ষ করেছি, এই স্বল্পকাল ব্যবধানেই মানুষটি নেতৃত্বে আর ভালোবাসার কোন অভ্রংলিহ শিখরদেশে ধূমকেতু বেগে উত্থিত হয়ে গেলেন। একই করাঙ্গুলে গণনার কয়েকটি বছরের হিসাব মাত্র? কিংবা কোনো দৈব-নির্দেশের ব্যাপার? জিজ্ঞাসা এই খানে। বিশেষ একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের কর্মী, সংগঠক, নেতা কখন জনমত-নির্বিশেষে সারা দেশের সাত কোটি মানুষের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আসনে অভিষিক্ত হয়ে গেছেন। অবশ্যই ইতিহাসে আকস্মিকতার অবকাশ নেই। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশের জন্য বিস্ময়কর দ্রুততায় ইতিহাসের রথচক্রের আবর্তন ঘটে গেছে। অনুধাবন করতে চাই যে কোটি মানুষের নিঃশঙ্ক নিশ্চিত নির্ভর কোথায় সেই জননেতা এমন ভাষায় নির্দেশ উচ্চারণ করতে পারেন, 'প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।' আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাইনি, বজ্রকণ্ঠে তাঁর অজেয় আহ্বান শুনেছি, 'সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' সেই দিন কি তিনি অতিমানুষে পরিণত হয়েছিলেন? হবেও বা। আজ-কালের যে দূরত্বে এসেছি, এখন নির্মোহ বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ওই বক্তৃতাটির বিশ্লেষণ করার অবকাশ পাব। হ্যাঁ, আবেগ অবশ্যই ছিল। দেশবাসী একান্ত চিত্তে তাই চাইছিল। ব্যাপারটা এক দিনের নয়, দীর্ঘকালের। দীর্ঘকালব্যাপী মানুষের বঞ্চনা, ক্ষোভ, প্রতিবাদ এ সব কিছু সংগঠিত করে একটি বিশেষ স্রোতমুখে বইয়ে দেওয়ার ব্যাপক বিশাল কর্মকাণ্ড রয়েছে। সারা দেশের সর্বত্র অজস্র কর্মীকে নিয়ে প্রতিরোধের প্রাকারটি দৃঢ়মূল নির্মাণ করতে হয়েছে। আমাদের যাদের চোখে দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে, বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনে যাঁরা সক্রিয় অংশ নিয়েছেন তাঁরা জানেন বাংলাদেশের ইতিহাস কাজ করে গেছে শেখ মুজিব নামের মানুষটির ভেতর দিয়ে। জীবনের শ্রেষ্ঠ বছরগুলো তিনি দুঃশাসনের নির্যাতনের শিকার। হেতু? হেতু স্বদেশ, স্বদেশের মানুষের জন্য কর্মসাধন। কত অসংখ্যবার যে বৈরী সরকারের হুলিয়া দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত অবধি তাঁকে তাড়া করে ফিরেছে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ এই সময়কালে প্রায়শ কারাবাস, কারাভ্যন্তরে কখনো প্রতিবাদ অনশন, বাইরে রাজপথে যখন দুঃশাসনের সরকারবিরোধী মিছিলের নেতৃত্বে তখন পুলিশের লাঠিচার্জ- এসব যেন তাঁর অঙ্গসত্যে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। প্রচণ্ড সাংগঠনিক ক্ষমতা, অমিত সাহস আর গভীর ভালোবাসা, মনে করি যে এই তিনে মিলিয়ে মানুষটি শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিদানে দেশবাসীও তেমনি তাঁকে ওই ভালোবাসারই অপর নাম 'বঙ্গবন্ধু' অভিধায় হৃদয়ে আপন করে নিয়েছে। আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে তাঁর সঙ্গে খানিক উপমিত করতে পারি কেবল আরেকজনকে। তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। উভয়েই এঁরা বাংলাদেশের অন্তর থেকে উঠে এসেছিলেন।
দেশ তাঁর গোপালগঞ্জ, সেই কালে দক্ষিণ বাংলার একটি অখ্যাতপ্রায় জনপদ। বংশ উপাধিতে শেখ বটে, তবে অবস্থানে দূর মফস্বলের বাসিন্দা সাধারণ মধ্যবিত্তের অধিক নয়। পিতা শেখ লুৎফর রহমান আদালত-আপিসে মোটামুটি ধরনের চাকরিজীবী ছিলেন। পরিণত বয়সে সাত কোটি বাঙালির কিংবদন্তিতুল্য নেতা শেখ মুজিবকে যথার্থ করে চিনতে হলে ওই পটভূমিটা বুঝে নিতে হবে। তাঁর আপন শিকড়টা কোথায়? এবং তখন আমরা জানব, তাঁর শৈশব-বাল্য-কৈশোর-প্রথম যৌবনের লালন গ্রামীণ পরিমণ্ডলের ওই গোপালগঞ্জে। কথাটাকে এখন এইভাবে বলতে চাই, কৃষির আর নদীর বাংলা ভিত তৈরি হয়েছিল শেখ মুজিবের। পরবর্তীকালে জীবনের অধিকাংশই তো কাটালেন মেট্রোপলিটন সিটি কলকাতায়, ঢাকায়। তবে ঘনিষ্ঠজনরা অধিকতর অবগত, আসলে মনে-প্রাণে গভীরতায় নগর কতটা অধিকার করেছিল তাঁকে? শেখ মুজিবুর রহমান যে আরেকজন সি আর দাস কিংবা এইচ এস সোহ্রাওয়ার্দী হননি, ধারণা করি মূলে কাজ করেছে ওই শিকড়ের সম্পর্ক। এখানেই তাঁর আপন অনন্যতা। অতঃপর এলেন কলকাতায় ১৯৪২-এ, ভর্তি হলেন ইসলামিয়া কলেজে, জড়িয়ে পড়লেন প্রত্যক্ষ রাজনীতির আন্দোলনের সঙ্গে। তাঁর জন্য সেইটেই যেন স্বাভাবিক, অনিবার্য ছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দুই বছর আগে সুভাষ বসুর নেতৃত্বে যে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলন এবং সেই সময়ে 'সিরাজ দিবস' উদ্যাপনের সূত্রপাত, ওই সব কর্মকাণ্ডে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ইসলামিয়া কলেজ থেকে মুসলমান ছাত্ররা অংশ নিয়েছিল। কলকাতার রাজপথে-ময়দানে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মুসলমান ছাত্রদের সেই প্রথম শামিল হওয়া। পুলিশের লাঠিচার্জে ছাত্রনেতা আবদুল ওয়াসেকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। ঘরোয়া কথাবার্তায় স্মৃতিচারণা করছিলেন শেখ মুজিব। জানিয়েছিলেন, তাঁদের ইসলামিয়ার ছাত্রদের মধ্যে, বেকার হোস্টেলে কারমাইকেল হস্টেলে ছেলেদের মধ্যে সেই তাপটা তখনো ছিল। পরে এসে তিনিও খানিক আঁচ পেয়েছিলেন। এর পরপর '৪২-এর আগস্ট আন্দোলন, যে বছর থেকে কলকাতায় মুজিবের ছাত্রজীবন। দেশজুড়ে তখন গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাল তরঙ্গ- 'কুইট ইন্ডিয়া', 'ইংরাজ হটাও' তুঙ্গে। এদিকে ১৯৪৪ নাগাদ মুসলিম লীগের পাকিস্তান আন্দোলন ক্রমে দানা বাঁধছে, ছড়িয়ে পড়ছে নানা জায়গায়। মুসলমান ছাত্ররা জড়ো হচ্ছে অঙ্গসংগঠন মুসলিম ছাত্রলীগে। মূলকেন্দ্র কলকাতার ওই ইসলামিয়া কলেজ। মুসলিম লীগের রাজনীতিতে তখন দুটি ধারা- খানিকটা বামঘেঁষা এঁরা- নুরুদ্দিন আহমেদ, মোয়াজ্জেম চৌধুরী, জহিরুদ্দিন আহমেদ, নুরুল আলম প্রমুখ। এখন থেকে পরিবারভুক্ত হলেন আরেক সহযোগী শেখ মুজিবুর রহমান।
চলি্লশের দশকে সেই সময়কার চেহারা কেমনতরো ছিল নিরীক্ষণ করার প্রয়োজন বোধ করছি। আমাদের মধ্যে বটে বিশ্বাস এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল পাকিস্তান আন্দোলনে। সেই সঙ্গে পাশাপাশি তৎকালীন ইতিহাস-চালচিত্রের আরো একটা দিক ছিল গভীর তাৎপর্যবাহী। ১৯৪৫-'৪৬-এ কলকাতায়, বাংলায় তথা ভারতবর্ষজুড়ে তখন ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সে কী প্রচণ্ড গণ-অভ্যুত্থান!- বোম্বাই করাচিতে নৌসেনাদের বিদ্রোহ, আই এন এ দিবস উদ্যাপন, ক্যাপ্টেন রশীদ আলীর মুক্তি দাবি, শত-সহস্র কণ্ঠে গর্জন 'চলো চলো দিলি্ল চলো', 'লাল কিল্লা তোড় দো', সারা ভারত ডাক তার ধর্মঘট এবং গ্রামাঞ্চলের কোথাও কোথাও তেভাগা আন্দোলনের বিস্তার। আবার এদিকে কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে 'লীগ-কংগ্রেস এক হও' স্লোগানে মিছিল-জমায়েত, মুসলিম লীগের অর্ধচন্দ্রখচিত সবুজ পতাকা, কংগ্রেসের তেরঙ্গা পতাকা আর দুয়ের মাঝে কমিউনিস্টদের কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্নিত লাল পতাকা- তিনটে একই গুচ্ছে বাঁধা- ছবিটা এখনো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর ক্রান্তিকালে পরাশক্তির অধীন ভারতবর্ষের ইতিহাসে তখন দ্রুত পালাবদলের ক্রিয়া। স্বাভাবিক যে তার প্রভাব সর্ববিস্তারী হবে। বিশেষ করে তরুণচিত্তে। এখন বুঝি, আর আর সহযোগীদের সঙ্গে ছাত্রকর্মী মুজিব বেড়ে উঠছে দেশকালের সেই পটভূমিতে। কে জানত তখন মুসলিম লীগের পাকিস্তানিত্বের কোটর থেকে কোন অলক্ষ্যে জন্ম নিচ্ছে একজন, দুই যুগ অন্তের ভবিষ্যতেই তিনি হয়ে উঠবেন বাঙালিত্ব স্থাপনার মহত্তম নিশানবরদার।
বর্ণনা করা গেল অবশ্য সংক্ষেপে, সরল বাক্যবিন্যাসে। তবে সচেতনজনের জানা রয়েছে, ইতিহাসের যাত্রাপথ মোটে সহজ নিশানার নয়। তা বহু বঙ্কিম, বহু ভঙ্গিম, পথ হারানোর এবং পুনরায় পথ খুঁজে পাওয়ার। এখানে বলে রাখার প্রয়োজন বোধ করছি যে বর্তমান প্রয়াসটি ইতিহাস রচনার কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী রচনার নয়। বরং পূর্বকথার পুনরুক্তি করি, বঙ্গবন্ধুকে অবলোকন করার প্রয়াস পাব। অন্তত কিয়দংশে হলেও সে কাজটি সাধন করতে চেয়েছি। বলা বাহুল্য, সংকটের কাল। সময় এবং পরিস্থিতি অস্থির। একাত্তরের পরাজিত শক্তির নানা রকম কূটকৌশল তো আছেই। আছে আরো বহুবিধ সমস্যা সংকট, যা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সবার উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। উত্তরণের আলোকরশ্মির আভাস কোথায়? কত জিজ্ঞাসা উৎসুক সন্তানের চিত্তে? তবু রক্ষা- রিক্ত, ক্লিন্ন আমাদের এই জীবনে কতিপয় বিশেষ অবকাশ এসে থাকে। সন্তানকে তখন দৃঢ় অবলম্বনের সন্ধান দিতে সমর্থ হই। অনেক কিছুর প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জোরটা সেখানে, যেখানে আমাদের সবার জন্য গর্বের উৎস- আমরা তো হাজার বছরের আবহমান বাংলা, আমরাই করেছি ভাষা আন্দোলন, বিজয়ী হয়েছি বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে এবং আমাদের বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন এই বঙ্গে।
লেখক : শিক্ষাবিদ
১৯৭১-এর বিশ্বপরিস্থিতির কথা স্মরণ করি। সর্বত্র সর্বাধিক আলোচিত দুটি দেশ- ভিয়েতনাম আর বাংলাদেশ। এক দেশে মার্কিন বিমানবাহিনীর কার্পেট বম্বিং, আরেক দেশে পাকিস্তানি সৈন্যের জেনোসাইড। আবার প্রতিরোধে উভয় দেশেই সাধারণ গণমানুষের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এইখানে একটি প্রশ্ন- ইতিহাসে কদাপি কি এমন দ্বিতীয় নজির রয়েছে যে দেশের সর্বাত্মক প্রতিরোধ সংগ্রাম উজ্জীবিত হয়েছে এবং বিজয়ী হয়েছে অনুপস্থিত নেতার প্রেরণায়? সবারই তা জানা, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ওই সময়টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেড় হাজার মাইল পশ্চিমে পাকিস্তানের জিন্দানখানায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বন্দি। মাতৃভূমির স্বাধীনতা সংগ্রামের সেনাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেশদ্রোহিতার। তাহলে জিজ্ঞাসা- ইমানের কী সেই প্রেরণা ওই সময়ে যা কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল? এই দুই যুগ কালব্যবধানে অবশ্যই আমরা বিস্মৃত হইনি, আমাদের আন্তর সত্যের মহৎ শপথ 'ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলার আমার ভাষা। জয় বাংলা।' আমরা স্মরণ করব মরণজয়ী ওই মন্ত্র কেমন আমাদের অকুতোভয়, দুঃসাহসী করে তুলেছিল। শেখ মুজিব নামের মানুষটি তখন আর রক্ত-মাংসের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দেহধারী মাত্র নন, আমাদের সমুদয় আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন নিয়ে তিনি একটি অনড়, অটুট বিশ্বাসে পরিণত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে অবলোকন করার প্রয়াস পাব- বাসনা এই প্রকারের। তাই থেকে নানান কথা মনে আসছে। তৎপূর্বে একটি প্রশ্ন- প্রকৃতির রাজ্যেই হোক কিংবা মানবজীবনেই হোক, ইহজাগতিকতার এলাকায় দৈব-ভূমিকা কতটা গ্রহণযোগ্য? অথবা কোনোই কার্যকারণহেতু নেই এমন আকস্মিকতার ভূমিকা? বিজ্ঞানবুদ্ধি তা সমর্থন করে না। অনুসন্ধিৎসু পণ্ডিতজন সন্ধান করেন বাস্তবতার পটভূমিতে। ইতিহাস যে সম্ভূত হয়ে ওঠে, নির্মিত হয় এবং বাঁক নেয়, ইতিহাসের গর্ভ থেকে যে নায়ক-সন্তানের জন্ম ওই দৈব বা আকস্মিকতা সে ক্ষেত্রে কদাপি মূলে কাজ করে না। তাই হঠাৎ করেই এক মাহেন্দ্রক্ষণে কোন অন্তরীক্ষ থেকে তিনি অবতীর্ণ হলেন, এমন হয় না। অবতারের ঠাঁই কল্প-পুরাণে। ইতিহাসে নয়। সেই প্রেক্ষিতে শেখ মুজিব কথা।
১৯৬৬-তে যখন ছয় দফার ঘোষণা আর ১৯৭১-এর ৭ মার্চে রমনা রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে তাঁর যে ঐতিহাসিক ভাষণ- ইতিমধ্যে সময় গড়িয়েছে পাঁচ বছর। আমরাই প্রত্যক্ষ করেছি, এই স্বল্পকাল ব্যবধানেই মানুষটি নেতৃত্বে আর ভালোবাসার কোন অভ্রংলিহ শিখরদেশে ধূমকেতু বেগে উত্থিত হয়ে গেলেন। একই করাঙ্গুলে গণনার কয়েকটি বছরের হিসাব মাত্র? কিংবা কোনো দৈব-নির্দেশের ব্যাপার? জিজ্ঞাসা এই খানে। বিশেষ একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের কর্মী, সংগঠক, নেতা কখন জনমত-নির্বিশেষে সারা দেশের সাত কোটি মানুষের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আসনে অভিষিক্ত হয়ে গেছেন। অবশ্যই ইতিহাসে আকস্মিকতার অবকাশ নেই। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশের জন্য বিস্ময়কর দ্রুততায় ইতিহাসের রথচক্রের আবর্তন ঘটে গেছে। অনুধাবন করতে চাই যে কোটি মানুষের নিঃশঙ্ক নিশ্চিত নির্ভর কোথায় সেই জননেতা এমন ভাষায় নির্দেশ উচ্চারণ করতে পারেন, 'প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।' আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাইনি, বজ্রকণ্ঠে তাঁর অজেয় আহ্বান শুনেছি, 'সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' সেই দিন কি তিনি অতিমানুষে পরিণত হয়েছিলেন? হবেও বা। আজ-কালের যে দূরত্বে এসেছি, এখন নির্মোহ বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ওই বক্তৃতাটির বিশ্লেষণ করার অবকাশ পাব। হ্যাঁ, আবেগ অবশ্যই ছিল। দেশবাসী একান্ত চিত্তে তাই চাইছিল। ব্যাপারটা এক দিনের নয়, দীর্ঘকালের। দীর্ঘকালব্যাপী মানুষের বঞ্চনা, ক্ষোভ, প্রতিবাদ এ সব কিছু সংগঠিত করে একটি বিশেষ স্রোতমুখে বইয়ে দেওয়ার ব্যাপক বিশাল কর্মকাণ্ড রয়েছে। সারা দেশের সর্বত্র অজস্র কর্মীকে নিয়ে প্রতিরোধের প্রাকারটি দৃঢ়মূল নির্মাণ করতে হয়েছে। আমাদের যাদের চোখে দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে, বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনে যাঁরা সক্রিয় অংশ নিয়েছেন তাঁরা জানেন বাংলাদেশের ইতিহাস কাজ করে গেছে শেখ মুজিব নামের মানুষটির ভেতর দিয়ে। জীবনের শ্রেষ্ঠ বছরগুলো তিনি দুঃশাসনের নির্যাতনের শিকার। হেতু? হেতু স্বদেশ, স্বদেশের মানুষের জন্য কর্মসাধন। কত অসংখ্যবার যে বৈরী সরকারের হুলিয়া দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত অবধি তাঁকে তাড়া করে ফিরেছে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ এই সময়কালে প্রায়শ কারাবাস, কারাভ্যন্তরে কখনো প্রতিবাদ অনশন, বাইরে রাজপথে যখন দুঃশাসনের সরকারবিরোধী মিছিলের নেতৃত্বে তখন পুলিশের লাঠিচার্জ- এসব যেন তাঁর অঙ্গসত্যে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। প্রচণ্ড সাংগঠনিক ক্ষমতা, অমিত সাহস আর গভীর ভালোবাসা, মনে করি যে এই তিনে মিলিয়ে মানুষটি শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিদানে দেশবাসীও তেমনি তাঁকে ওই ভালোবাসারই অপর নাম 'বঙ্গবন্ধু' অভিধায় হৃদয়ে আপন করে নিয়েছে। আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে তাঁর সঙ্গে খানিক উপমিত করতে পারি কেবল আরেকজনকে। তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। উভয়েই এঁরা বাংলাদেশের অন্তর থেকে উঠে এসেছিলেন।
দেশ তাঁর গোপালগঞ্জ, সেই কালে দক্ষিণ বাংলার একটি অখ্যাতপ্রায় জনপদ। বংশ উপাধিতে শেখ বটে, তবে অবস্থানে দূর মফস্বলের বাসিন্দা সাধারণ মধ্যবিত্তের অধিক নয়। পিতা শেখ লুৎফর রহমান আদালত-আপিসে মোটামুটি ধরনের চাকরিজীবী ছিলেন। পরিণত বয়সে সাত কোটি বাঙালির কিংবদন্তিতুল্য নেতা শেখ মুজিবকে যথার্থ করে চিনতে হলে ওই পটভূমিটা বুঝে নিতে হবে। তাঁর আপন শিকড়টা কোথায়? এবং তখন আমরা জানব, তাঁর শৈশব-বাল্য-কৈশোর-প্রথম যৌবনের লালন গ্রামীণ পরিমণ্ডলের ওই গোপালগঞ্জে। কথাটাকে এখন এইভাবে বলতে চাই, কৃষির আর নদীর বাংলা ভিত তৈরি হয়েছিল শেখ মুজিবের। পরবর্তীকালে জীবনের অধিকাংশই তো কাটালেন মেট্রোপলিটন সিটি কলকাতায়, ঢাকায়। তবে ঘনিষ্ঠজনরা অধিকতর অবগত, আসলে মনে-প্রাণে গভীরতায় নগর কতটা অধিকার করেছিল তাঁকে? শেখ মুজিবুর রহমান যে আরেকজন সি আর দাস কিংবা এইচ এস সোহ্রাওয়ার্দী হননি, ধারণা করি মূলে কাজ করেছে ওই শিকড়ের সম্পর্ক। এখানেই তাঁর আপন অনন্যতা। অতঃপর এলেন কলকাতায় ১৯৪২-এ, ভর্তি হলেন ইসলামিয়া কলেজে, জড়িয়ে পড়লেন প্রত্যক্ষ রাজনীতির আন্দোলনের সঙ্গে। তাঁর জন্য সেইটেই যেন স্বাভাবিক, অনিবার্য ছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দুই বছর আগে সুভাষ বসুর নেতৃত্বে যে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলন এবং সেই সময়ে 'সিরাজ দিবস' উদ্যাপনের সূত্রপাত, ওই সব কর্মকাণ্ডে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ইসলামিয়া কলেজ থেকে মুসলমান ছাত্ররা অংশ নিয়েছিল। কলকাতার রাজপথে-ময়দানে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মুসলমান ছাত্রদের সেই প্রথম শামিল হওয়া। পুলিশের লাঠিচার্জে ছাত্রনেতা আবদুল ওয়াসেকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। ঘরোয়া কথাবার্তায় স্মৃতিচারণা করছিলেন শেখ মুজিব। জানিয়েছিলেন, তাঁদের ইসলামিয়ার ছাত্রদের মধ্যে, বেকার হোস্টেলে কারমাইকেল হস্টেলে ছেলেদের মধ্যে সেই তাপটা তখনো ছিল। পরে এসে তিনিও খানিক আঁচ পেয়েছিলেন। এর পরপর '৪২-এর আগস্ট আন্দোলন, যে বছর থেকে কলকাতায় মুজিবের ছাত্রজীবন। দেশজুড়ে তখন গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাল তরঙ্গ- 'কুইট ইন্ডিয়া', 'ইংরাজ হটাও' তুঙ্গে। এদিকে ১৯৪৪ নাগাদ মুসলিম লীগের পাকিস্তান আন্দোলন ক্রমে দানা বাঁধছে, ছড়িয়ে পড়ছে নানা জায়গায়। মুসলমান ছাত্ররা জড়ো হচ্ছে অঙ্গসংগঠন মুসলিম ছাত্রলীগে। মূলকেন্দ্র কলকাতার ওই ইসলামিয়া কলেজ। মুসলিম লীগের রাজনীতিতে তখন দুটি ধারা- খানিকটা বামঘেঁষা এঁরা- নুরুদ্দিন আহমেদ, মোয়াজ্জেম চৌধুরী, জহিরুদ্দিন আহমেদ, নুরুল আলম প্রমুখ। এখন থেকে পরিবারভুক্ত হলেন আরেক সহযোগী শেখ মুজিবুর রহমান।
চলি্লশের দশকে সেই সময়কার চেহারা কেমনতরো ছিল নিরীক্ষণ করার প্রয়োজন বোধ করছি। আমাদের মধ্যে বটে বিশ্বাস এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল পাকিস্তান আন্দোলনে। সেই সঙ্গে পাশাপাশি তৎকালীন ইতিহাস-চালচিত্রের আরো একটা দিক ছিল গভীর তাৎপর্যবাহী। ১৯৪৫-'৪৬-এ কলকাতায়, বাংলায় তথা ভারতবর্ষজুড়ে তখন ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সে কী প্রচণ্ড গণ-অভ্যুত্থান!- বোম্বাই করাচিতে নৌসেনাদের বিদ্রোহ, আই এন এ দিবস উদ্যাপন, ক্যাপ্টেন রশীদ আলীর মুক্তি দাবি, শত-সহস্র কণ্ঠে গর্জন 'চলো চলো দিলি্ল চলো', 'লাল কিল্লা তোড় দো', সারা ভারত ডাক তার ধর্মঘট এবং গ্রামাঞ্চলের কোথাও কোথাও তেভাগা আন্দোলনের বিস্তার। আবার এদিকে কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে 'লীগ-কংগ্রেস এক হও' স্লোগানে মিছিল-জমায়েত, মুসলিম লীগের অর্ধচন্দ্রখচিত সবুজ পতাকা, কংগ্রেসের তেরঙ্গা পতাকা আর দুয়ের মাঝে কমিউনিস্টদের কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্নিত লাল পতাকা- তিনটে একই গুচ্ছে বাঁধা- ছবিটা এখনো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর ক্রান্তিকালে পরাশক্তির অধীন ভারতবর্ষের ইতিহাসে তখন দ্রুত পালাবদলের ক্রিয়া। স্বাভাবিক যে তার প্রভাব সর্ববিস্তারী হবে। বিশেষ করে তরুণচিত্তে। এখন বুঝি, আর আর সহযোগীদের সঙ্গে ছাত্রকর্মী মুজিব বেড়ে উঠছে দেশকালের সেই পটভূমিতে। কে জানত তখন মুসলিম লীগের পাকিস্তানিত্বের কোটর থেকে কোন অলক্ষ্যে জন্ম নিচ্ছে একজন, দুই যুগ অন্তের ভবিষ্যতেই তিনি হয়ে উঠবেন বাঙালিত্ব স্থাপনার মহত্তম নিশানবরদার।
বর্ণনা করা গেল অবশ্য সংক্ষেপে, সরল বাক্যবিন্যাসে। তবে সচেতনজনের জানা রয়েছে, ইতিহাসের যাত্রাপথ মোটে সহজ নিশানার নয়। তা বহু বঙ্কিম, বহু ভঙ্গিম, পথ হারানোর এবং পুনরায় পথ খুঁজে পাওয়ার। এখানে বলে রাখার প্রয়োজন বোধ করছি যে বর্তমান প্রয়াসটি ইতিহাস রচনার কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী রচনার নয়। বরং পূর্বকথার পুনরুক্তি করি, বঙ্গবন্ধুকে অবলোকন করার প্রয়াস পাব। অন্তত কিয়দংশে হলেও সে কাজটি সাধন করতে চেয়েছি। বলা বাহুল্য, সংকটের কাল। সময় এবং পরিস্থিতি অস্থির। একাত্তরের পরাজিত শক্তির নানা রকম কূটকৌশল তো আছেই। আছে আরো বহুবিধ সমস্যা সংকট, যা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সবার উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। উত্তরণের আলোকরশ্মির আভাস কোথায়? কত জিজ্ঞাসা উৎসুক সন্তানের চিত্তে? তবু রক্ষা- রিক্ত, ক্লিন্ন আমাদের এই জীবনে কতিপয় বিশেষ অবকাশ এসে থাকে। সন্তানকে তখন দৃঢ় অবলম্বনের সন্ধান দিতে সমর্থ হই। অনেক কিছুর প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জোরটা সেখানে, যেখানে আমাদের সবার জন্য গর্বের উৎস- আমরা তো হাজার বছরের আবহমান বাংলা, আমরাই করেছি ভাষা আন্দোলন, বিজয়ী হয়েছি বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে এবং আমাদের বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন এই বঙ্গে।
লেখক : শিক্ষাবিদ
No comments