মত দ্বিমত-সরকারের জন্য অগ্নিপরীক্ষা by এম হাফিজউদ্দিন খান
পরবর্তী নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক রয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও সম্প্রতি সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলেছেন।
এ প্রস্তাব সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ এম কে আনোয়ার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের বক্তব্য এখানে ছাপা হলো
জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা ইতিবাচক হলেও যে প্রশ্নটি জরুরি তা হলো, এই সার্চ কমিটি গঠনের এখতিয়ার কার হাতে থাকবে? এটি যদি সরকারের হাতে থাকে তাহলে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, উদ্দেশ্য সফল হবে না।
পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক, অডিটর জেনারেল, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। তারা সম্ভাব্য নির্বাচন কমিশনারদের একটি নাতিদীর্ঘ তালিকা তৈরি করে জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির কাছে পাঠাবে। স্পিকারের নেতৃত্বাধীন কার্য উপদেষ্টা কমিটি সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে এবং তিনি তা অনুমোদন করবেন।
দুর্ভাগ্যজনক যে কেবল নির্বাচন কমিশন নয়, সাংবিধানিক কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে সংবিধানে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এটি থাকা অত্যন্ত জরুরি। এখন এসব সাংবিধানিক পদে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাতে দলীয় বিবেচনা কাজ করে।
এর মাধ্যমে দুটি সমস্যা হয়। প্রথমত, সাংবিধানিক পদগুলোর যে নিরপেক্ষ অবস্থান ও ভাবমূর্তি, তা ব্যাহত হয়। দলীয় বিবেচনায় লোক নিয়োগ হলে তারা দলের কাছেই দায়বদ্ধ থাকেন। দ্বিতীয়ত, নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা কাজ করার ফলে যোগ্য ব্যক্তিদের সেখানে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়। উদাহরণ হিসেবে আমরা উচ্চ আদালতের কথা বলতে পারি। আগে যাঁরা উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেতেন, তাঁদের বেশির ভাগই আসতেন জুডিশিয়াল সার্ভিস থেকে। এখন দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়ায় আইনজীবীরাই বেশি নিয়োগ পান। আমার মতে, জুডিশিয়াল সার্ভিস থেকে শতকরা ৮০ ভাগ ও আইনজীবীদের থেকে ২০ ভাগ আসা উচিত। এখন হচ্ছে তার উল্টো। যে কারণে কেবল দলীয়করণই বাড়ছে না, যোগ্যতারও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময়ই রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধে রাখতে হবে। আশা করা গিয়েছিল গণতান্ত্রিক আমলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা আরও বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। আর সংবিধান অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানে একবার কেউ যোগ দিলে পাঁচ বছরের জন্য তিনি স্থায়ী হয়ে যান। তিনি স্বেচ্ছায় চলে না গেলে অপসারণ করা যায় না।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবটি সংবিধান সংশোধনে গঠিত সংসদের বিশেষ কমিটি গ্রহণ করেনি। তারা যুক্তি দেখিয়েছিল যে, এটি সাধারণ আইন করেই করা যাবে, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আইন করে করার সমস্যা হলো, অন্য সরকার এলে তা উল্টে দিতে পারে। সংবিধানে স্পষ্ট রূপরেখা বা নির্দেশনা থাকলে সেটা উল্টানো সহজ নয়। সরকার যদি দলীয় লোক দিয়ে সার্চ কমিটি করে, তাহলে শুধু উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে না, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়াও কঠিন হবে।
আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকে বাদ দেওয়াই শ্রেয়। কেননা, জুডিশিয়াল সার্ভিস বা আইন পেশা থেকে যাঁরা আসেন তাঁদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকে না। আর নির্বাচন পরিচালনার কাজটি পুরোপুরি প্রশাসনিক। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশনের প্রধান পদে যখন প্রশাসনিকভাবে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তখন তাঁরা অধিকতর দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন। এ কথা সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা, এম এ সাঈদ কিংবা বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
কেবল নির্বাচন কমিশন নয়, সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন একটি পদ্ধতি বের করতে হবে, যাতে দলীয়করণের সুযোগ রহিত করা যায়। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সরকারের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। সরকার নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলছে, ভালো কথা। কিন্তু কমিশন কীভাবে গঠিত হবে বা নির্বাচন কমিশনারদের কারা নিয়োগ করবেন, সেটি আগে ঠিক করা প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা ইতিবাচক হলেও যে প্রশ্নটি জরুরি তা হলো, এই সার্চ কমিটি গঠনের এখতিয়ার কার হাতে থাকবে? এটি যদি সরকারের হাতে থাকে তাহলে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, উদ্দেশ্য সফল হবে না।
পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক, অডিটর জেনারেল, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। তারা সম্ভাব্য নির্বাচন কমিশনারদের একটি নাতিদীর্ঘ তালিকা তৈরি করে জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির কাছে পাঠাবে। স্পিকারের নেতৃত্বাধীন কার্য উপদেষ্টা কমিটি সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে এবং তিনি তা অনুমোদন করবেন।
দুর্ভাগ্যজনক যে কেবল নির্বাচন কমিশন নয়, সাংবিধানিক কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে সংবিধানে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এটি থাকা অত্যন্ত জরুরি। এখন এসব সাংবিধানিক পদে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাতে দলীয় বিবেচনা কাজ করে।
এর মাধ্যমে দুটি সমস্যা হয়। প্রথমত, সাংবিধানিক পদগুলোর যে নিরপেক্ষ অবস্থান ও ভাবমূর্তি, তা ব্যাহত হয়। দলীয় বিবেচনায় লোক নিয়োগ হলে তারা দলের কাছেই দায়বদ্ধ থাকেন। দ্বিতীয়ত, নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা কাজ করার ফলে যোগ্য ব্যক্তিদের সেখানে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়। উদাহরণ হিসেবে আমরা উচ্চ আদালতের কথা বলতে পারি। আগে যাঁরা উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেতেন, তাঁদের বেশির ভাগই আসতেন জুডিশিয়াল সার্ভিস থেকে। এখন দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়ায় আইনজীবীরাই বেশি নিয়োগ পান। আমার মতে, জুডিশিয়াল সার্ভিস থেকে শতকরা ৮০ ভাগ ও আইনজীবীদের থেকে ২০ ভাগ আসা উচিত। এখন হচ্ছে তার উল্টো। যে কারণে কেবল দলীয়করণই বাড়ছে না, যোগ্যতারও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময়ই রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধে রাখতে হবে। আশা করা গিয়েছিল গণতান্ত্রিক আমলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা আরও বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। আর সংবিধান অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানে একবার কেউ যোগ দিলে পাঁচ বছরের জন্য তিনি স্থায়ী হয়ে যান। তিনি স্বেচ্ছায় চলে না গেলে অপসারণ করা যায় না।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবটি সংবিধান সংশোধনে গঠিত সংসদের বিশেষ কমিটি গ্রহণ করেনি। তারা যুক্তি দেখিয়েছিল যে, এটি সাধারণ আইন করেই করা যাবে, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আইন করে করার সমস্যা হলো, অন্য সরকার এলে তা উল্টে দিতে পারে। সংবিধানে স্পষ্ট রূপরেখা বা নির্দেশনা থাকলে সেটা উল্টানো সহজ নয়। সরকার যদি দলীয় লোক দিয়ে সার্চ কমিটি করে, তাহলে শুধু উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে না, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়াও কঠিন হবে।
আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকে বাদ দেওয়াই শ্রেয়। কেননা, জুডিশিয়াল সার্ভিস বা আইন পেশা থেকে যাঁরা আসেন তাঁদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকে না। আর নির্বাচন পরিচালনার কাজটি পুরোপুরি প্রশাসনিক। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশনের প্রধান পদে যখন প্রশাসনিকভাবে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তখন তাঁরা অধিকতর দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন। এ কথা সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা, এম এ সাঈদ কিংবা বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
কেবল নির্বাচন কমিশন নয়, সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন একটি পদ্ধতি বের করতে হবে, যাতে দলীয়করণের সুযোগ রহিত করা যায়। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সরকারের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। সরকার নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলছে, ভালো কথা। কিন্তু কমিশন কীভাবে গঠিত হবে বা নির্বাচন কমিশনারদের কারা নিয়োগ করবেন, সেটি আগে ঠিক করা প্রয়োজন।
No comments