সমুদ্রসীমা-প্রত্যাশিত একটি মিছিলের ছবি
সঠিক পরিসংখ্যানই হয়তো বলে দিতে পারে_ প্রতিদিন কত মিছিল আয়োজিত হয় বাংলাদেশে। তবে অনুমানে বলা যায়, সংখ্যাটা কম নয়। প্রতিদিনই রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক নানা কারণে সহসাই সরব হয়ে ওঠে জমায়েত। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে জনপদ।
বড় দাবি আদায়ের জন্য, বড় নেতাদের স্বাগত জানানোর জন্য তো বটেই, দেখা যায়_ ছোট একটি দাবি আদায়ের জন্য, কিংবা পাতি-নেতাকেও স্বাগত জানাতে মিছিল হয়। ক্রিকেটে জাতীয় দল জিতলে রীতিমতো বিপুল সাড়া পড়ে যায় শহরে-গ্রামে। খোদ রাজধানীর রাস্তাও লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। মুহুর্মুহু হর্ষধ্বনি ওঠে। মিছিলে-স্লোগানে সরব হয়ে ওঠে শহর। দু'পাড়ার মধ্যে আয়োজিত খেলার বিজয়ী পক্ষ মিছিল করছে_ এমন দৃশ্যও আমাদের চেনা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংগঠনগুলো তো রীতিমতো রুটিন কাজ হিসেবে মিছিল করে। বলতে গেলে, মিছিল আমাদের সমাজের যৌথ অভিব্যক্তিকেই প্রকাশ করে। যৌথ অভিব্যক্তির এই প্রকাশের সবটাই অবশ্য শুভ নয়। হঠাৎ হঠাৎ মিছিল নাগরিক দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়। বড় শহরের রাস্তায় একবার মিছিল শুরু হলে দীর্ঘ যানজট পড়ে যায়। চলার পথে নাগরিকরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। তবুও মিছিল হয়, রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ হয়। সমালোচনা করলেও নাগরিকরা একে মেনে নেন। কিছু ক্ষেত্রে, কোনো কোনো বিষয়ে মিছিল উঠুক_ তা প্রত্যাশাও করেন। কিন্তু সবসময় মিছিল হয় না। সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের সঙ্গে লড়ে জিতল বাংলাদেশ। অনেক বড় ঘটনা। কিন্তু এ ঘটনায় উল্লাসে ফেটে পড়ল না কোনো শহর। চোখে পড়ার মতো কিছু ঘটল না। ব্যতিক্রম দিনাজপুরের একটি বালিকা বিদ্যালয়। বাংলাদেশের বিজয় উদযাপন করতে সেখানকার ছাত্রীরা হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়। প্রদক্ষিণ করেছে শহর। এ দেশে শুধু মেয়েদের মিছিল এখনও দুর্লক্ষ্য। যথেষ্ট সাহসেরও কাজ বটে। দিনাজপুরের মেয়েরা মিছিল করে বাংলাদেশের এ অর্জন উদযাপন করে সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, তারা উদযাপনের একটি বিষয়কে নীরবে চলে যেতে দেয়নি। বলতে হয়, তারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। সমকালে স্কুল ড্রেস পরা মেয়েদের ছবি দেখে যে কারও মনে হবে_ কেন আমরাও নেমে পড়লাম না মিছিলে! মেয়েদের অভিনন্দন। অভিনন্দন বাংলাদেশকেও।
No comments