রাজনীতি-তত্ত্বাবধায়ক সরকার: ইতি, নেতি ও পরিণতি by শেখ হাফিজুর রহমান
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বয়স ৪০ বছর। এই ৪০ বছরে গণতন্ত্রের যেটুকু বিকাশ হয়েছে, তা ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কল্যাণে। রাজনৈতিক নেতারাই কবুল করেছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতির উদ্ভব হয়েছে। এবং আমরা এর সঙ্গে যোগ করতে চাই, রাজনৈতিক দলগুলোই এর শতভাগ সুবিধা
পেয়েছে। না হলে একদল সরকারে যাওয়ার পর যেভাবে ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিতে চায়, তাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ‘মনোপলি’ তৈরি হতো, ওই ‘মনোপলি’ পরিণামে তৈরি করত ভয়াবহ সব স্বৈরশাসক। স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে আমরা বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে এবং ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে দুটো তত্ত্বাবধায়ক সরকার পেয়েছি। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও বিকাশে এই দুই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। পরাজিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনের ব্যাপারে কারচুপি বা ‘সূক্ষ্ম’ কারচুপির অভিযোগ আনলেও এ দুটো নির্বাচনের স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা দুই-ই রয়েছে।
দুই
অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা একটি ‘অস্বাভাবিক’ ব্যবস্থা বা ‘আপৎকালীন’ ব্যবস্থা। একমাত্র জরুরি কোনো প্রয়োজন মেটানোর জন্যই এমন ব্যবস্থার দরকার হতে পারে। কিন্তু স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গণতান্ত্রিকও নয়, সাংবিধানিকও নয়। বিশ্বের সব সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে যেটি অনুসরণ করা হয় তা হচ্ছে, একটি নির্বাচিত সরকার নির্দিষ্ট মেয়াদে ক্ষমতায় থাকে। মেয়াদ শেষে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আগের সরকার বিদায় নেয়। নির্বাচন আয়োজন ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় যে সময়ে আগের সরকার ক্ষমতায় থাকে, সেটি তার মেয়াদ-অতিরিক্ত। এ জন্য জনগণ তাদের নির্বাচিত করেনি। কিন্তু এটি হচ্ছে গণতন্ত্রের ‘স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস’। বাংলাদেশের মূল সংবিধানেও তা-ই ছিল। কিন্তু ‘স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস’ যা-ই হোক, সংবিধানে যা-ই লেখা থাক, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে এটা অনুসরণ বা চর্চা—কোনোটাই করা গেল না।
তিন
দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিকচর্চার কথা মনে রেখে এবং সংবিধানের আক্ষরিক ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে এবং সংবিধানের উদার ব্যাখ্যা করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখি না। আগেই উল্লেখ করেছি, নির্বাচিত সরকার মেয়াদ শেষ করার পর ও নির্বাচনকালীন এবং নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত যে সময় ক্ষমতায় থাকে, ওই সময়ের জন্য আগের সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে বিবেচনা করা হয়। মূল সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা না থাকলেও, তার চেতনার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা ছিল। এটাকে ধরেই সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কিছুদিন আগে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ হলেও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক শূন্যতা ও জটিলতা এড়ানোর জন্য আরও দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। রায়ের দ্ব্যর্থবোধকতার জন্য কোনো কোনো সংবিধান বিশেষজ্ঞ এ রায়কে অস্পষ্ট ও পরস্পরবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন।
আমাদের মনে হয়েছে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত ত্রয়োদশ সংশোধনীসংক্রান্ত রায় ঘোষণার সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নেননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা না থাকলে তার ফল কী হবে, আমরা কি তা জানি না? একটি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিরোধী দল কি তা মানবে? ১৯৯৬ সালে বিএনপির অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ কি মেনে নিয়েছিল? তার পরিণতিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী এবং ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এসেই শেষে হাল ধরতে হয়েছিল। আর আইনের আক্ষরিক ব্যাখ্যা অনেক সময় খুব বিপজ্জনক! আবার অনেক সময় কোনো পদক্ষেপ বা কার্যক্রম বেআইনি বা অসাংবিধানিক হলেও জনগণের কল্যাণে তা করতে হয়। এবং জনগণের কল্যাণ ও জনমত দ্বারা তা সিদ্ধ ও বৈধ। সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ এবং নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আবার পূর্ব পদে ফিরে আসা ছিল সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ। কিন্তু পরে একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সর্বসম্মতভাবে এটিকে বৈধতা দেওয়া হয়।
চার
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ও বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিল, সেই তুলনায় বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নানা কর্মকাণ্ড ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এরপর ২০০৬ সালে নানা কূটকৌশলে নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জাতীয়তাবাদী কৌশলের ফল হিসেবে ক্ষমতায় এল সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রথম দিকে তাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রশংসা পেলেও, পরে ‘মাইনাস টু থিয়োরি’, ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতনসহ নানা কর্মকাণ্ডে জনগণ বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হলো। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে আবার পুনর্মূল্যায়নের দরকার হয়ে পড়েছিল। সংবিধানের বিশেষ কমিটিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ও সর্বোচ্চ আদালতের রায় তারই প্রতিফলন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা শুধু দুই মেয়াদে নয়, বরং যত দিন আমরা গণতন্ত্রের ‘স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিসের’ যোগ্য হয়ে না উঠি, যত দিন আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে না ওঠে, তত দিন পর্যন্ত চালু রাখা যেতে পারে। তবে এত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধ ও পরিমার্জন করতে পারি, যাতে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরকে মসৃণ ও নিয়মতান্ত্রিক করা যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তি। আর নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তরকে মসৃণ ও নিয়মতান্ত্রিক করা না গেলে গণতন্ত্র শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে না। অগণতান্ত্রিক ও প্রাসাদ-ষড়যন্ত্রীরা এতে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
শেখ হাফিজুর রহমান: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
hrkarzon@yahoo.com
দুই
অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা একটি ‘অস্বাভাবিক’ ব্যবস্থা বা ‘আপৎকালীন’ ব্যবস্থা। একমাত্র জরুরি কোনো প্রয়োজন মেটানোর জন্যই এমন ব্যবস্থার দরকার হতে পারে। কিন্তু স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গণতান্ত্রিকও নয়, সাংবিধানিকও নয়। বিশ্বের সব সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে যেটি অনুসরণ করা হয় তা হচ্ছে, একটি নির্বাচিত সরকার নির্দিষ্ট মেয়াদে ক্ষমতায় থাকে। মেয়াদ শেষে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আগের সরকার বিদায় নেয়। নির্বাচন আয়োজন ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় যে সময়ে আগের সরকার ক্ষমতায় থাকে, সেটি তার মেয়াদ-অতিরিক্ত। এ জন্য জনগণ তাদের নির্বাচিত করেনি। কিন্তু এটি হচ্ছে গণতন্ত্রের ‘স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস’। বাংলাদেশের মূল সংবিধানেও তা-ই ছিল। কিন্তু ‘স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস’ যা-ই হোক, সংবিধানে যা-ই লেখা থাক, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে এটা অনুসরণ বা চর্চা—কোনোটাই করা গেল না।
তিন
দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিকচর্চার কথা মনে রেখে এবং সংবিধানের আক্ষরিক ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে এবং সংবিধানের উদার ব্যাখ্যা করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখি না। আগেই উল্লেখ করেছি, নির্বাচিত সরকার মেয়াদ শেষ করার পর ও নির্বাচনকালীন এবং নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত যে সময় ক্ষমতায় থাকে, ওই সময়ের জন্য আগের সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে বিবেচনা করা হয়। মূল সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা না থাকলেও, তার চেতনার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা ছিল। এটাকে ধরেই সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কিছুদিন আগে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ হলেও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক শূন্যতা ও জটিলতা এড়ানোর জন্য আরও দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। রায়ের দ্ব্যর্থবোধকতার জন্য কোনো কোনো সংবিধান বিশেষজ্ঞ এ রায়কে অস্পষ্ট ও পরস্পরবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন।
আমাদের মনে হয়েছে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত ত্রয়োদশ সংশোধনীসংক্রান্ত রায় ঘোষণার সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নেননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা না থাকলে তার ফল কী হবে, আমরা কি তা জানি না? একটি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিরোধী দল কি তা মানবে? ১৯৯৬ সালে বিএনপির অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ কি মেনে নিয়েছিল? তার পরিণতিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী এবং ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এসেই শেষে হাল ধরতে হয়েছিল। আর আইনের আক্ষরিক ব্যাখ্যা অনেক সময় খুব বিপজ্জনক! আবার অনেক সময় কোনো পদক্ষেপ বা কার্যক্রম বেআইনি বা অসাংবিধানিক হলেও জনগণের কল্যাণে তা করতে হয়। এবং জনগণের কল্যাণ ও জনমত দ্বারা তা সিদ্ধ ও বৈধ। সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ এবং নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আবার পূর্ব পদে ফিরে আসা ছিল সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ। কিন্তু পরে একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সর্বসম্মতভাবে এটিকে বৈধতা দেওয়া হয়।
চার
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ও বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিল, সেই তুলনায় বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নানা কর্মকাণ্ড ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এরপর ২০০৬ সালে নানা কূটকৌশলে নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জাতীয়তাবাদী কৌশলের ফল হিসেবে ক্ষমতায় এল সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রথম দিকে তাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রশংসা পেলেও, পরে ‘মাইনাস টু থিয়োরি’, ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতনসহ নানা কর্মকাণ্ডে জনগণ বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হলো। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে আবার পুনর্মূল্যায়নের দরকার হয়ে পড়েছিল। সংবিধানের বিশেষ কমিটিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ও সর্বোচ্চ আদালতের রায় তারই প্রতিফলন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা শুধু দুই মেয়াদে নয়, বরং যত দিন আমরা গণতন্ত্রের ‘স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিসের’ যোগ্য হয়ে না উঠি, যত দিন আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে না ওঠে, তত দিন পর্যন্ত চালু রাখা যেতে পারে। তবে এত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধ ও পরিমার্জন করতে পারি, যাতে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরকে মসৃণ ও নিয়মতান্ত্রিক করা যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তি। আর নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তরকে মসৃণ ও নিয়মতান্ত্রিক করা না গেলে গণতন্ত্র শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে না। অগণতান্ত্রিক ও প্রাসাদ-ষড়যন্ত্রীরা এতে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
শেখ হাফিজুর রহমান: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
hrkarzon@yahoo.com
No comments