শনিবারের সুসংবাদ-কুঁচিয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা by রফিকুল ইসলাম
দেহের রং গাঢ় খয়েরি বা বাদামি। গোলাকৃতির লম্বা দেহ। ঠোঁট মাংসল। ওপরের চোয়াল নিচের চোয়াল অপেক্ষা অধিক লম্বাটে। পিঠে খুবই ছোট একটি পাখনা। সাধারণত বাইন মাছের মতো দেখতে। প্রাণীটির স্থানীয় নাম 'কুঁচিয়া'। সর্পাকৃতির মাছবিশেষ এই প্রাণী সারা দেশের জলাভূমিতেই দেখা যায়।
তবে জলাভূমির আধিক্যের কারণেই বুঝি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাছটির উৎপাদন ব্যাপক। তবে কুঁচিয়া আজও দেশে অন্য সব মাছের মতো সর্বজনভোগ্য হয়ে ওঠেনি। অনেকটা অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠা মাছটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় মাধ্যম হতে চলেছে।
চীন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের ভোক্তা পর্যায়ে কুঁচিয়ার বেশ কদর রয়েছে। সেই সুবাদে ওই সব দেশে মাছটি রপ্তানিও শুরু হয়ে গেছে। বিপরীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে দেশে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে কুঁচিয়ার কদরও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।
কুঁচিয়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু। তিনি বলেন, মূলত খাদ্য হিসেবে এটি দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়। তবে বাংলাদেশে আজও অনেকেই মাছটিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এটিকে সাপের পর্যায়ে ফেলে এড়িয়ে চলেন। তবে মাছটি কবিরাজি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা কম বলা যাবে না। তবে রাজধানীর বাজারে পাওয়া যায় কেবল আকারে বড় ও জীবিত কুঁচিয়াগুলোই। আর সেখান থেকেই রপ্তানি হয়।
বরিশালের উজিরপুর, গৌরনদী আর আগৈলঝাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী বিলাঞ্চল ঘিরে ছোট-বড় অন্তত অর্ধশত আড়ত রয়েছে। বিলাঞ্চল থেকে এসব আড়তে প্রতিদিন কুঁচিয়া নিয়ে আসা হয়। আড়তেই বিকিকিনি হয়। প্রতিটি আড়তে মাছ সংরক্ষণের জন্য চৌবাচ্চা রয়েছে। এলাকার ব্যবসায়ীরা শিকারিদের কাছ থেকে কুঁচিয়া কিনে তা ঢাকার রপ্তানীকারকদের কাছে বিক্রি করেন।
আড়তের মালিক প্রদীপ কুমার বাড়ৈ বলেন, ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি কুঁচিয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় কিনে নেন। বর্ষা মৌসুমে শুধু আগৈলঝাড়া থেকেই সপ্তাহে কয়েক লাখ টাকার কুঁচিয়া রপ্তানি হয়। বছরে দক্ষিণাঞ্চল থেকে লাখ লাখ টাকার কুঁচিয়া রপ্তানি হয়ে থাকে।
অন্য আড়তদার জয়দেব মণ্ডল বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু কুঁচিয়া রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে এগুলো রপ্তানি করেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। বরিশাল থেকে তাঁরা কুঁচিয়া কিনে নিয়ে রপ্তানি করেন। ফলে বছরে কী পরিমাণ বা কত টাকার কুঁচিয়া রপ্তানি হয় সে পরিসংখ্যান তাঁদের কাছে নেই।
আকৃতি ও আবাস : বরিশালের বিএম কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, কুঁচিয়া মাছটি Synbranchiformes বর্গের Synbranchidae গোত্রভুক্ত প্রাণী। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Monopterus cuchia। স্থানীয়ভাবে এটি কুচ্চা নামেও পরিচিত। পিঠে পাখনা দেহের পেছনের অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ লক্ষ করা যায়। তবে প্রাণীটির পায়ুপথ ও পুচ্ছ অনুপস্থিত।
দেহের রং গাঢ় খয়েরি বা বাদামি। কোনো পার্শ্বরেখা নেই। বাইন আকৃতির মাছটি খেতে অন্যান্য মাছের মতোই সুস্বাদু। আকৃতিতে একেকটি কুঁচিয়া সর্বোচ্চ ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। কেবল অনভ্যস্ততার কারণেই কুঁচিয়াকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয়। এটি নিয়ে নানা অপপ্রচার রয়েছে। শহরের চায়নিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে কুঁচিয়ার ভালো চাহিদা থাকায় এখন কুঁচিয়ার দিকে মানুষের আগ্রহী নজর পড়েছে।
বাংলাদেশের প্রায় সব স্বাদুপানির জলাশয়েই (বিল, পুকুর, ডোবা) কুঁচিয়া দেখা যায়। পানির অগভীর ও তীরবর্তী অংশ এবং পাড়ে মাটির গর্তে এই মাছের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। বিল, পুকুর বা ডোবার কাদার অভ্যন্তরে এরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। পুকুর খননকালে মাটির অনেক গভীরেও এদের দেখা মেলে। দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে এই মাছের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে বিলাঞ্চল অন্যতম। প্লাবিত বোরো ধানক্ষেতেও এদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। অল্পবয়স্ক কুঁচিয়া ভাসমান কচুরিপানার মধ্যেও বেশ দেখা যায়। আবার অনেক সময় মাটির ওপরে এসে রোদেও অবস্থান করে।
যেভাবে সংগ্রহ করা হয় : নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুরের মাধব সরকার জানান, কুঁচিয়া মাছ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো বড়শির ব্যবহার। আবার বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের মধ্যে কেঁচো দিয়ে চাঁই পানিতে রাখা হয়। কেঁচো খেতে কুঁচিয়াগুলো চাঁইয়ের ভেতরে ঢুকলে আর বেরোতে পারে না। আবার জলাশয়ের পানি সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে বা শুকনো জলাশয়ের তলদেশে গর্ত করেও কুঁচিয়া ধরা হয়ে থাকে।
আরেক শিকারি রণজিৎ ঢালী বলেন, বর্ষা মৌসুমের মতো শীতে কুঁচিয়া সে রকম পাওয়া যায় না। অধিক শিকারের ফলে কুঁচিয়ার পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগৈলঝাড়ার গৌলার রথখোলা এলাকার মায়ের আশীর্বাদ মৎস্য আড়তের প্রদীপ কুমার বাড়ৈ বলেন, 'আমি ১০ বছর ধরে কুঁচিয়ার ব্যবসা করি। প্রতি শুক্রবার ঢাকার ক্রেতারা এসে আড়ত থেকে কুঁচিয়া কিনে নেন।'
আড়তে একদিন : আগৈলঝাড়ার পশ্চিম মোল্লাপাড়ার জয়দেব মণ্ডল ও উজিরপুরের বীরেন হালদারের আড়তে সরেজমিনে দেখা যায়, আড়তদাররা খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কুঁচিয়া কিনে বিশাল আকারের টাইলস লাগানো চৌবাচ্চায় জিইয়ে রাখেন। এ ছাড়া ড্রামের মধ্যেও রাখা হয়। সরকারের অনুমতি নিয়েই এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে জানান ওই দুই ব্যবসায়ী।
চীন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ আরো কয়েকটি দেশে কুঁচিয়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশে কুঁচিয়ার বাণিজ্যিক আবাদ হয় না। এখনো পুরোটাই প্রকৃতিনির্ভর। অথচ শিকারিরা ছোট-বড় বাছাই না করে কুঁচিয়া শিকার করায় এর প্রজনন কমে যাচ্ছে। অথচ একটি কুঁচিয়া বছরে একবারে হাজারটি বাচ্চা দিতে পারে।
উজিরপুরের জলসা ইউনিয়নের টাকাবাড়ী এলাকার আড়তে মাছ বিক্রির জন্য আসা শিকারি বাবুলাল অধিকারী বলেন, 'আমি প্রতিদিন দু-তিন কেজি কুঁচিয়া শিকার করি। এর মাধ্যমেই সংসার চলে।'
মৎস্যজীবী থেকে কুঁচিয়াজীবী : 'আগে আছিলাম মৎস্যজীবী। বাপ-দাদারাও তা-ই ছিল। হেই মাছ আর নাই, চলমু কেমনে? মাছের খোঁইজে গিয়া কুইচ্চা ধরি, জিউল দেই (জিইয়ে রাখা), পরে বেচি। মাইনষে আমরারে মৎস্যজীবী না, কুইচ্চাজীবী বইলাই জানে।' জলাশয়ের কোমর পানিতে ডোবানো একটি করে চাঁই তোলা আর কুঁচিয়া বের করে হাঁড়িতে জিইয়ে রাখার ফাঁকে কথাগুলো বলছিলেন আগৈলঝাড়ার পশ্চিম মোল্লাপাড়া গ্রামের জয়দেব মণ্ডলের আড়তে কর্মরত শিকারি লক্ষ্মণ হালদার।
বংশপরম্পরায় মাছ ধরা ছেড়ে লক্ষ্মণের মতো আগৈলঝাড়া, গৌরনদী আর উজিরপুর উপজেলার কয়েক শ পরিবারের সাত হাজার লোকের একমাত্র পেশা এখন কুঁচিয়া শিকার। দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় বরিশাল অঞ্চলে কুঁচিয়া বেশি পাওয়া যাওয়ায় এখানকার জেলেরাও অধিক হারে ঝুঁকছে কুঁচিয়া শিকারে।
চীন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের ভোক্তা পর্যায়ে কুঁচিয়ার বেশ কদর রয়েছে। সেই সুবাদে ওই সব দেশে মাছটি রপ্তানিও শুরু হয়ে গেছে। বিপরীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে দেশে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে কুঁচিয়ার কদরও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।
কুঁচিয়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু। তিনি বলেন, মূলত খাদ্য হিসেবে এটি দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়। তবে বাংলাদেশে আজও অনেকেই মাছটিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এটিকে সাপের পর্যায়ে ফেলে এড়িয়ে চলেন। তবে মাছটি কবিরাজি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা কম বলা যাবে না। তবে রাজধানীর বাজারে পাওয়া যায় কেবল আকারে বড় ও জীবিত কুঁচিয়াগুলোই। আর সেখান থেকেই রপ্তানি হয়।
বরিশালের উজিরপুর, গৌরনদী আর আগৈলঝাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী বিলাঞ্চল ঘিরে ছোট-বড় অন্তত অর্ধশত আড়ত রয়েছে। বিলাঞ্চল থেকে এসব আড়তে প্রতিদিন কুঁচিয়া নিয়ে আসা হয়। আড়তেই বিকিকিনি হয়। প্রতিটি আড়তে মাছ সংরক্ষণের জন্য চৌবাচ্চা রয়েছে। এলাকার ব্যবসায়ীরা শিকারিদের কাছ থেকে কুঁচিয়া কিনে তা ঢাকার রপ্তানীকারকদের কাছে বিক্রি করেন।
আড়তের মালিক প্রদীপ কুমার বাড়ৈ বলেন, ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি কুঁচিয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় কিনে নেন। বর্ষা মৌসুমে শুধু আগৈলঝাড়া থেকেই সপ্তাহে কয়েক লাখ টাকার কুঁচিয়া রপ্তানি হয়। বছরে দক্ষিণাঞ্চল থেকে লাখ লাখ টাকার কুঁচিয়া রপ্তানি হয়ে থাকে।
অন্য আড়তদার জয়দেব মণ্ডল বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু কুঁচিয়া রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে এগুলো রপ্তানি করেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। বরিশাল থেকে তাঁরা কুঁচিয়া কিনে নিয়ে রপ্তানি করেন। ফলে বছরে কী পরিমাণ বা কত টাকার কুঁচিয়া রপ্তানি হয় সে পরিসংখ্যান তাঁদের কাছে নেই।
আকৃতি ও আবাস : বরিশালের বিএম কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, কুঁচিয়া মাছটি Synbranchiformes বর্গের Synbranchidae গোত্রভুক্ত প্রাণী। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Monopterus cuchia। স্থানীয়ভাবে এটি কুচ্চা নামেও পরিচিত। পিঠে পাখনা দেহের পেছনের অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ লক্ষ করা যায়। তবে প্রাণীটির পায়ুপথ ও পুচ্ছ অনুপস্থিত।
দেহের রং গাঢ় খয়েরি বা বাদামি। কোনো পার্শ্বরেখা নেই। বাইন আকৃতির মাছটি খেতে অন্যান্য মাছের মতোই সুস্বাদু। আকৃতিতে একেকটি কুঁচিয়া সর্বোচ্চ ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। কেবল অনভ্যস্ততার কারণেই কুঁচিয়াকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয়। এটি নিয়ে নানা অপপ্রচার রয়েছে। শহরের চায়নিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে কুঁচিয়ার ভালো চাহিদা থাকায় এখন কুঁচিয়ার দিকে মানুষের আগ্রহী নজর পড়েছে।
বাংলাদেশের প্রায় সব স্বাদুপানির জলাশয়েই (বিল, পুকুর, ডোবা) কুঁচিয়া দেখা যায়। পানির অগভীর ও তীরবর্তী অংশ এবং পাড়ে মাটির গর্তে এই মাছের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। বিল, পুকুর বা ডোবার কাদার অভ্যন্তরে এরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। পুকুর খননকালে মাটির অনেক গভীরেও এদের দেখা মেলে। দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে এই মাছের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে বিলাঞ্চল অন্যতম। প্লাবিত বোরো ধানক্ষেতেও এদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। অল্পবয়স্ক কুঁচিয়া ভাসমান কচুরিপানার মধ্যেও বেশ দেখা যায়। আবার অনেক সময় মাটির ওপরে এসে রোদেও অবস্থান করে।
যেভাবে সংগ্রহ করা হয় : নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুরের মাধব সরকার জানান, কুঁচিয়া মাছ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো বড়শির ব্যবহার। আবার বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের মধ্যে কেঁচো দিয়ে চাঁই পানিতে রাখা হয়। কেঁচো খেতে কুঁচিয়াগুলো চাঁইয়ের ভেতরে ঢুকলে আর বেরোতে পারে না। আবার জলাশয়ের পানি সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে বা শুকনো জলাশয়ের তলদেশে গর্ত করেও কুঁচিয়া ধরা হয়ে থাকে।
আরেক শিকারি রণজিৎ ঢালী বলেন, বর্ষা মৌসুমের মতো শীতে কুঁচিয়া সে রকম পাওয়া যায় না। অধিক শিকারের ফলে কুঁচিয়ার পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগৈলঝাড়ার গৌলার রথখোলা এলাকার মায়ের আশীর্বাদ মৎস্য আড়তের প্রদীপ কুমার বাড়ৈ বলেন, 'আমি ১০ বছর ধরে কুঁচিয়ার ব্যবসা করি। প্রতি শুক্রবার ঢাকার ক্রেতারা এসে আড়ত থেকে কুঁচিয়া কিনে নেন।'
আড়তে একদিন : আগৈলঝাড়ার পশ্চিম মোল্লাপাড়ার জয়দেব মণ্ডল ও উজিরপুরের বীরেন হালদারের আড়তে সরেজমিনে দেখা যায়, আড়তদাররা খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কুঁচিয়া কিনে বিশাল আকারের টাইলস লাগানো চৌবাচ্চায় জিইয়ে রাখেন। এ ছাড়া ড্রামের মধ্যেও রাখা হয়। সরকারের অনুমতি নিয়েই এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে জানান ওই দুই ব্যবসায়ী।
চীন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ আরো কয়েকটি দেশে কুঁচিয়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশে কুঁচিয়ার বাণিজ্যিক আবাদ হয় না। এখনো পুরোটাই প্রকৃতিনির্ভর। অথচ শিকারিরা ছোট-বড় বাছাই না করে কুঁচিয়া শিকার করায় এর প্রজনন কমে যাচ্ছে। অথচ একটি কুঁচিয়া বছরে একবারে হাজারটি বাচ্চা দিতে পারে।
উজিরপুরের জলসা ইউনিয়নের টাকাবাড়ী এলাকার আড়তে মাছ বিক্রির জন্য আসা শিকারি বাবুলাল অধিকারী বলেন, 'আমি প্রতিদিন দু-তিন কেজি কুঁচিয়া শিকার করি। এর মাধ্যমেই সংসার চলে।'
মৎস্যজীবী থেকে কুঁচিয়াজীবী : 'আগে আছিলাম মৎস্যজীবী। বাপ-দাদারাও তা-ই ছিল। হেই মাছ আর নাই, চলমু কেমনে? মাছের খোঁইজে গিয়া কুইচ্চা ধরি, জিউল দেই (জিইয়ে রাখা), পরে বেচি। মাইনষে আমরারে মৎস্যজীবী না, কুইচ্চাজীবী বইলাই জানে।' জলাশয়ের কোমর পানিতে ডোবানো একটি করে চাঁই তোলা আর কুঁচিয়া বের করে হাঁড়িতে জিইয়ে রাখার ফাঁকে কথাগুলো বলছিলেন আগৈলঝাড়ার পশ্চিম মোল্লাপাড়া গ্রামের জয়দেব মণ্ডলের আড়তে কর্মরত শিকারি লক্ষ্মণ হালদার।
বংশপরম্পরায় মাছ ধরা ছেড়ে লক্ষ্মণের মতো আগৈলঝাড়া, গৌরনদী আর উজিরপুর উপজেলার কয়েক শ পরিবারের সাত হাজার লোকের একমাত্র পেশা এখন কুঁচিয়া শিকার। দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় বরিশাল অঞ্চলে কুঁচিয়া বেশি পাওয়া যাওয়ায় এখানকার জেলেরাও অধিক হারে ঝুঁকছে কুঁচিয়া শিকারে।
No comments