মত দ্বিমত-সার্চ কমিটি নতুন ভাঁওতাবাজি by এম কে আনোয়ার
পরবর্তী নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক রয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও সম্প্রতি সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলেছেন।
এ প্রস্তাব সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ এম কে আনোয়ার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের বক্তব্য এখানে ছাপা হলো
সার্চ কমিটি নিয়ে প্রথমেই নিজের অভিজ্ঞতার কথাটি বলে নিই। তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের বাছাইয়ের জন্য একটি সার্চ কমিটি আছে। প্রধান বিচারপতি মনোনীত একজন বিচারপতি, বিরোধী দলের নেতার মনোনীত একজন প্রতিনিধি, সরকারি দলের একজন প্রতিনিধি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও তথ্যসচিব মিলে এই কমিটি। গিয়ে দেখি অদ্ভুত ব্যাপার। তথ্যসচিব একটি তালিকা এনেছেন। গত বছরে আমি সেই প্রতিনিধি হিসেবে এতে যোগ দিই। সরকারি দলের সাংসদ জনাব শরিফও একটি তালিকা দিলেন। দেখলাম দুটো একই। এরপর বেরোল মন্ত্রিপরিষদ সচিবের তালিকা। সেটাতেও ওই একই নাম। বিচারপতি এম এ মতিন (বর্তমানে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান) ছিলেন সার্চ কমিটির চেয়ারম্যান। প্রথম দিন আলোচনায় কে চেয়ারম্যান হবেন সেটা বিচার্য ছিল। কিন্তু দেখলাম খোলামেলা আলোচনায় তাঁরা আগ্রহী নন। সরকার কী চায়, সেটা জেনে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই তাঁদের ঝোঁক। আলোচনা এভাবেই স্থগিত হলো। সব দেখেশুনে আমি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলাম।
নির্বাচন কমিশন এখন একটি কমিটির সুপারিশ করেছে। এর চেয়ারম্যান হবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। মহা হিসাব নিরীক্ষক, পিএসসির চেয়ারম্যান—এ রকম যত সাংবিধানিক পদধারী আছেন, তাঁরা হবেন প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য। সিইসিকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তিনি এখনো আমার একটি প্রশ্নের জবাব দেননি। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমি ভোটার হয়েছি। অথবা বলা যায়, ভোটার হতে আমাকে মিথ্যা ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। সেটা ভোটার হতে স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার নিয়ে ঘটেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ নিয়ে চিঠি লিখেছিলাম। আজও জবাব পাইনি।
এটা নির্বাচন কমিশনের নতুন ভাঁওতাবাজি। গত নির্বাচনে তারা যত অপকর্ম করেছে, ভবিষ্যতে এর তদন্ত হবে। তারা অতীতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও যে সক্ষম, সেটা দেখাতে চাইছে। কেউ কেউ সরকার যেটা শুনতে চায়, তেমন কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। সিইসি হওয়ার টোপ আছে কারও সামনে। কিন্তু এ ধরনের ভাঁওতাবাজি করে নির্বাচন করা যাবে না। নির্বাচন করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অনেক অপকর্মের অভিযোগ আমরা নির্দিষ্টভাবে তাদের বলেছি। তারা একবার বলেছিল জবাব দেবে। তারপর বলল, না তারা জবাব দেবে না।
এখন তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নিরপেক্ষ হওয়ার ভাণ করছে। সে জন্য তারা এখন সার্চ কমিটি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বড় কথা হচ্ছে, এই নির্বাচন কমিশনের বয়স আর ছয় মাসও নেই। এরপর একটি নির্বাচন কমিশন আসবে। সেই কমিশনের দায়িত্ব হবে সাধারণ নির্বাচন করা। প্রশ্ন হলো, পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা কেন এত অস্থির হয়ে গেল। কেন তারা বলল, আগামী নির্বাচন ইভিএম দিয়েই হতে হবে। পরে অবশ্য অবস্থান বদলিয়েছে।
আমরা দল থেকে জেনেছি, ইভিএম ম্যানুপুলেট করা খুব কঠিন নয়। ভারতেও সীমিত আকারে হচ্ছে। তবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে তারা এটা করে দেখতে পারত। তারা ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। কমিশনের এক সভাতেই একজন অনানুষ্ঠানিকভাবে বললেন, নিকট ভবিষ্যতে আপনারা ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আশা করবেন না। সরকার নির্বাচন চায় না। কমিশন চায়। তাহলেই প্রশ্ন, তারা কেন আইনের প্রয়োগ থেকে বিরত থাকছে। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’ তাহলে তারা যথা দায়িত্ব পালন করছে না কেন? সরকারের মুখ রক্ষা নয়, কমিশনের অর্পিত দায়িত্ব পালন করতেই তারা কিন্তু শপথ নিয়েছিলেন।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে চুপ করে থাকা। তারা অনেক নির্বাচন করেছে। সেগুলো ভালো হোক, খারাপ হোক, ইতিহাস বিচার করবে। তবে আমরা একান্তভাবে আশা করব, তারা যেন এখন দয়া করে ক্ষান্ত হন। তাদের বিদায়বেলায় তাদের কাছ থেকে স্রেফ নীরবতা কাম্য।
আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। মীমাংসিত বিষয়কে অমীমাংসিত করা হয়েছে। জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন যাতে আর পানি ঘোলা না করে। বিএনপির অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আর সেটা হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো বিকল্প চিন্তা করার সুযোগ নেই। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যে যদি কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়, যেমন প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন এবং নির্বাচন কমিশনকে আরও কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিষয়ে আমরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে এর বাইরে নয়।
সার্চ কমিটি নিয়ে প্রথমেই নিজের অভিজ্ঞতার কথাটি বলে নিই। তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের বাছাইয়ের জন্য একটি সার্চ কমিটি আছে। প্রধান বিচারপতি মনোনীত একজন বিচারপতি, বিরোধী দলের নেতার মনোনীত একজন প্রতিনিধি, সরকারি দলের একজন প্রতিনিধি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও তথ্যসচিব মিলে এই কমিটি। গিয়ে দেখি অদ্ভুত ব্যাপার। তথ্যসচিব একটি তালিকা এনেছেন। গত বছরে আমি সেই প্রতিনিধি হিসেবে এতে যোগ দিই। সরকারি দলের সাংসদ জনাব শরিফও একটি তালিকা দিলেন। দেখলাম দুটো একই। এরপর বেরোল মন্ত্রিপরিষদ সচিবের তালিকা। সেটাতেও ওই একই নাম। বিচারপতি এম এ মতিন (বর্তমানে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান) ছিলেন সার্চ কমিটির চেয়ারম্যান। প্রথম দিন আলোচনায় কে চেয়ারম্যান হবেন সেটা বিচার্য ছিল। কিন্তু দেখলাম খোলামেলা আলোচনায় তাঁরা আগ্রহী নন। সরকার কী চায়, সেটা জেনে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই তাঁদের ঝোঁক। আলোচনা এভাবেই স্থগিত হলো। সব দেখেশুনে আমি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলাম।
নির্বাচন কমিশন এখন একটি কমিটির সুপারিশ করেছে। এর চেয়ারম্যান হবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। মহা হিসাব নিরীক্ষক, পিএসসির চেয়ারম্যান—এ রকম যত সাংবিধানিক পদধারী আছেন, তাঁরা হবেন প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য। সিইসিকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তিনি এখনো আমার একটি প্রশ্নের জবাব দেননি। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমি ভোটার হয়েছি। অথবা বলা যায়, ভোটার হতে আমাকে মিথ্যা ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। সেটা ভোটার হতে স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার নিয়ে ঘটেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ নিয়ে চিঠি লিখেছিলাম। আজও জবাব পাইনি।
এটা নির্বাচন কমিশনের নতুন ভাঁওতাবাজি। গত নির্বাচনে তারা যত অপকর্ম করেছে, ভবিষ্যতে এর তদন্ত হবে। তারা অতীতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও যে সক্ষম, সেটা দেখাতে চাইছে। কেউ কেউ সরকার যেটা শুনতে চায়, তেমন কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। সিইসি হওয়ার টোপ আছে কারও সামনে। কিন্তু এ ধরনের ভাঁওতাবাজি করে নির্বাচন করা যাবে না। নির্বাচন করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অনেক অপকর্মের অভিযোগ আমরা নির্দিষ্টভাবে তাদের বলেছি। তারা একবার বলেছিল জবাব দেবে। তারপর বলল, না তারা জবাব দেবে না।
এখন তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নিরপেক্ষ হওয়ার ভাণ করছে। সে জন্য তারা এখন সার্চ কমিটি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বড় কথা হচ্ছে, এই নির্বাচন কমিশনের বয়স আর ছয় মাসও নেই। এরপর একটি নির্বাচন কমিশন আসবে। সেই কমিশনের দায়িত্ব হবে সাধারণ নির্বাচন করা। প্রশ্ন হলো, পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা কেন এত অস্থির হয়ে গেল। কেন তারা বলল, আগামী নির্বাচন ইভিএম দিয়েই হতে হবে। পরে অবশ্য অবস্থান বদলিয়েছে।
আমরা দল থেকে জেনেছি, ইভিএম ম্যানুপুলেট করা খুব কঠিন নয়। ভারতেও সীমিত আকারে হচ্ছে। তবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে তারা এটা করে দেখতে পারত। তারা ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। কমিশনের এক সভাতেই একজন অনানুষ্ঠানিকভাবে বললেন, নিকট ভবিষ্যতে আপনারা ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আশা করবেন না। সরকার নির্বাচন চায় না। কমিশন চায়। তাহলেই প্রশ্ন, তারা কেন আইনের প্রয়োগ থেকে বিরত থাকছে। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’ তাহলে তারা যথা দায়িত্ব পালন করছে না কেন? সরকারের মুখ রক্ষা নয়, কমিশনের অর্পিত দায়িত্ব পালন করতেই তারা কিন্তু শপথ নিয়েছিলেন।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে চুপ করে থাকা। তারা অনেক নির্বাচন করেছে। সেগুলো ভালো হোক, খারাপ হোক, ইতিহাস বিচার করবে। তবে আমরা একান্তভাবে আশা করব, তারা যেন এখন দয়া করে ক্ষান্ত হন। তাদের বিদায়বেলায় তাদের কাছ থেকে স্রেফ নীরবতা কাম্য।
আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। মীমাংসিত বিষয়কে অমীমাংসিত করা হয়েছে। জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন যাতে আর পানি ঘোলা না করে। বিএনপির অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আর সেটা হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো বিকল্প চিন্তা করার সুযোগ নেই। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যে যদি কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়, যেমন প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন এবং নির্বাচন কমিশনকে আরও কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিষয়ে আমরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে এর বাইরে নয়।
No comments