ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াড-তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশেতরুণদের সম্ভাবনা by মোহাম্মদ কায়কোবাদ
বিগত বছর কয়েক অলিম্পিক শব্দের পাশাপাশি অলিম্পিয়াড শব্দটিও বিশেষ করে, আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গণিত অলিম্পিয়াডের ১০ বছর পূর্তি হয়েছে। এর হাত ধরে ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াড (স্কুল-কলেজের ছাত্রদের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা) চলছে ২০০৪ সাল থেকে।
আমাদের ছাত্ররা সর্বপ্রথম ২০০৬ সালে মেক্সিকোর মেরিডা শহরে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তারপর কাগ্রেব, কায়রো, বুলগেরিয়ার ব্লভডিভ, কানাডা ঘুরে এবার হচ্ছে থাইল্যান্ডের পাতায়া শহরে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে মো. আবিরুল ইসলাম তাক লাগানো সাফল্য এনেছে—উপমহাদেশের আট প্রতিযোগীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফলাফল নিয়ে রৌপ্য পদক অর্জন—জ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগিতা অলিম্পিয়াডে এযাবৎকালে শ্রেষ্ঠ ফলাফল। ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো আমাদের ছাত্ররা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আমস্টারডাম), আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞানের অলিম্পিয়াড (ব্যাংকক, থাইল্যান্ড) এবং আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করছে।
বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে রসায়ন অলিম্পিয়াড ও মহাকাশবিদ্যার অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আশা করি, আমাদের ছেলেমেয়েরা রসায়নসহ অন্যান্য বিষয়ের অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে অচিরেই। গণিত অলিম্পিয়াডে এর আগে একাধিকবার আমাদের ছেলেমেয়েরা ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে এবং তাদের দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ এমআইটি, হার্ভার্ড, স্ট্যামফোর্ড, ক্যালটেক, কেমব্রিজসহ সারা বিশ্বের সবচেয়ে নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে পারছে বৃত্তিসহ। এবার চট্টগ্রামের ধনঞ্জয় আমাদের সর্বোচ্চ নম্বরকে বাড়িয়ে ২১ করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১ নম্বরের জন্য রৌপ্যপদক পায়নি। পদার্থবিজ্ঞানের অলিম্পিয়াডে অধন্ত বসাক নবাগতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছে।
আমাদের অর্ধেকের কম জনসংখ্যা নিয়ে থাইল্যান্ড একই বছরে দু-দুটি আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড আয়োজন করে সারা বিশ্বের সমীহ আদায় করে নিল। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নয়, থাইল্যান্ডের রাজপরিবার শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিতার গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার জন্য রাজকন্যা বালিয়ানি ভাদানার নেতৃত্বে অলিম্পিয়াড বিজ্ঞান শিক্ষা কার্যক্রম প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে ১৯৯০ সালে। এরই সুবাদে পদার্থবিজ্ঞানের অলিম্পিয়াডে বাঘা বাঘা দেশগুলোকে পেছনে ফেলে রানার আপ হয়েছে থাইল্যান্ডের প্রতিযোগী। আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডে থাই প্রতিযোগীরা নিয়মিতভাবে স্বর্ণপদক জিতে আসছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে থাইল্যান্ড প্রশংসনীয়ভাবে উন্নতি করছে। সাধে কি আর বাংলাদেশের রোগীরা ব্যাংককে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে?
এবার দল নিয়ে যাত্রার প্রাক্কালে বাংলাদেশ ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং শুভানুধ্যায়ী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক সিলেট থেকে যানজট পেরিয়ে বিমানবন্দরে দলকে বিদায় জানালেন। নিজেদের প্রস্তুত করা সফটওয়্যার ব্যবহারে অগ্রগামী পূবালী ব্যাংকের অর্থায়নে আমাদের এ বছরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেও আশা করি, ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই পৃষ্ঠাপোষকতার ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি।
২২ তারিখ সকালে ব্যাংকক বিমানবন্দরে নেমে অলিম্পিয়াডের জন্য দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের লাইন দিয়ে বেরিয়ে পড়তেই অলিম্পিয়াডের ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে দেখা। ঘণ্টা দেড়েক ভ্রমণের পথে কত যে ফ্লাইওভার দেখলাম, তা ভাবাই যায় না। পৌঁছে গেলাম রয়্যাল ক্লিফ হোটেলে। সমুদ্রসৈকতে অবস্থিত হোটেলটিকে আকারের দিক থেকে গ্রামও বলা যায়। অলিম্পিয়াডের আয়োজনে থাইদের আন্তরিকতা, আগ্রহ ও দৃঢ়তা দেখে অভিভূত হতে হয়, আমার দেখা আয়োজনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। থাকার ব্যবস্থা, খাওয়াদাওয়া, অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন ও গাম্ভীর্য—সবই অবাক হওয়ার মতো।
২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করলেন প্রধানমন্ত্রী আপিসিত ভেজ্জাজিওয়া আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিদ ও পৃষ্ঠপোষকদের অকৃপণ হস্তে স্বীকৃতিসূচক পুরস্কারও দিলেন। এত বড় অনুষ্ঠানকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নাগরিকদের জন্য স্মরণীয় রাখতে ১০ হাজার স্কুলছাত্রছাত্রীকে দাওয়াত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে। চুলালংকরণ, ক্যাসেটসাট, অ্যাজামপশনসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তৈরি সফটওয়্যারের ৩০-৪০টি স্টল রয়েছে।
এই মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জাপান, কোরিয়া কিংবা তাইওয়ানের বাঘা বাঘা সফটওয়্যার নির্মাতাকে দাওয়াত না করে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তৈরি সফটওয়্যার দেখাচ্ছে ৮০টি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশারদদের। শুধু তা-ই নয়, স্কুল-কলেজের ছাত্রদের দাওয়াত করে তাদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তাদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে অবদান রাখছে।
আমাদের দেশে ই-এশিয়া নামের একটি প্রোগ্রাম আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। তাতে একজন মার্কেটিং-গুরুকে আনতে নাকি দৈনিক ২০-২৫ হাজার ডলার করে দিতে হবে। তা ছাড়া সারা বিশ্ব থেকে বড় বড় সফটওয়্যার কোম্পানিকে নিয়ে আসতে পারলে নাকি আমাদের মানমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে (!?)। বিদেশের যেকোনো প্রদর্শনীতে একটি ক্ষুদ্র স্টল দিতেও নিশ্চয়ই আমাদের হাজার হাজার ডলার গুনতে হয়। দেশের এমন প্রোগ্রামে অবশ্যই আমাদের দক্ষতা, আমাদের সফটওয়্যার দেখানোই মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
বিদেশি সফটওয়্যারের মার্কেটিং নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন দেখি না। বরং বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংকল্প সামনে রেখে আমাদের তরুণদের সফটওয়্যার তৈরির প্রতিযোগিতায় নামিয়ে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করলে ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দযুগলের উচ্চারণ মানানসই হবে।
আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডে ৮০টির বেশি দেশের অংশগ্রহণ রয়েছে। কিন্তু সফটওয়্যারের প্রদর্শনীতে কিন্তু কেবল থাইল্যান্ডের তরুণদের তৈরি সফটওয়্যার প্রদর্শিত হলো। শুধু তা-ই নয়, ওই প্রদর্শনী দেখতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আসতেও কিছুটা বিলম্ব হলো। এযাবৎকালে আমাদের দেশের অগ্রগতিতে শুধু বিদেশি গুরু ও কনসালট্যান্টরা যে প্রশংসনীয় অবদান রাখতে পারেনি তা-ই নয়, বিদেশি অর্থায়নের কোনো প্রকল্প থেকেও আমাদের দুঃখী দেশ যে লাভবান হয়েছে, তার উদাহরণও মেলা ভার। এতে বাংলাদেশের স্বার্থের বিনিময়ে কিছু লোক উচ্চ বেতনে চাকরিই পায়, যা কেবল দেশের মুদ্রাস্ফীতিতেই অবদান রাখতে পারে।
এ পর্যন্ত আমাদের যা কিছু দেখানো হলো তা শুধু থাই, থাই আর থাই। নং নুচ গ্রীষ্মকালীন বাগান ভ্রমণে প্রতিটি স্থানে থাইল্যান্ডের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ঐতিহ্যগত থাই আতিথেয়তা সহজেই হূদয় কেড়ে নেয়। নিজেদের সংস্কৃতির ছোট-বড় সবকিছুরই এমন যত্নে উপস্থাপন দেখে মনে হয়, ‘কত রূপ স্নেহ করি/ দেশের কুকুর ধরি/ বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া’ কবিতাংশটি কোনো থাই কবিই লিখেছিলেন, আমাদের কেউ নয়।
আমাদের দেশপ্রেম জাগ্রত হোক, দেশের প্রতি মমত্ববোধ প্রতিষ্ঠিত হোক, দেশের মানুষের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধের সৃষ্টি হোক, দেশীয় পণ্য ব্যবহার আমাদের গর্বিত করুক, এই আশায় রইলাম।
মোহাম্মদ কায়কোবাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে রসায়ন অলিম্পিয়াড ও মহাকাশবিদ্যার অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আশা করি, আমাদের ছেলেমেয়েরা রসায়নসহ অন্যান্য বিষয়ের অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে অচিরেই। গণিত অলিম্পিয়াডে এর আগে একাধিকবার আমাদের ছেলেমেয়েরা ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে এবং তাদের দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ এমআইটি, হার্ভার্ড, স্ট্যামফোর্ড, ক্যালটেক, কেমব্রিজসহ সারা বিশ্বের সবচেয়ে নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে পারছে বৃত্তিসহ। এবার চট্টগ্রামের ধনঞ্জয় আমাদের সর্বোচ্চ নম্বরকে বাড়িয়ে ২১ করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১ নম্বরের জন্য রৌপ্যপদক পায়নি। পদার্থবিজ্ঞানের অলিম্পিয়াডে অধন্ত বসাক নবাগতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছে।
আমাদের অর্ধেকের কম জনসংখ্যা নিয়ে থাইল্যান্ড একই বছরে দু-দুটি আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড আয়োজন করে সারা বিশ্বের সমীহ আদায় করে নিল। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নয়, থাইল্যান্ডের রাজপরিবার শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিতার গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার জন্য রাজকন্যা বালিয়ানি ভাদানার নেতৃত্বে অলিম্পিয়াড বিজ্ঞান শিক্ষা কার্যক্রম প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে ১৯৯০ সালে। এরই সুবাদে পদার্থবিজ্ঞানের অলিম্পিয়াডে বাঘা বাঘা দেশগুলোকে পেছনে ফেলে রানার আপ হয়েছে থাইল্যান্ডের প্রতিযোগী। আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডে থাই প্রতিযোগীরা নিয়মিতভাবে স্বর্ণপদক জিতে আসছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে থাইল্যান্ড প্রশংসনীয়ভাবে উন্নতি করছে। সাধে কি আর বাংলাদেশের রোগীরা ব্যাংককে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে?
এবার দল নিয়ে যাত্রার প্রাক্কালে বাংলাদেশ ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং শুভানুধ্যায়ী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক সিলেট থেকে যানজট পেরিয়ে বিমানবন্দরে দলকে বিদায় জানালেন। নিজেদের প্রস্তুত করা সফটওয়্যার ব্যবহারে অগ্রগামী পূবালী ব্যাংকের অর্থায়নে আমাদের এ বছরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেও আশা করি, ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই পৃষ্ঠাপোষকতার ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি।
২২ তারিখ সকালে ব্যাংকক বিমানবন্দরে নেমে অলিম্পিয়াডের জন্য দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের লাইন দিয়ে বেরিয়ে পড়তেই অলিম্পিয়াডের ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে দেখা। ঘণ্টা দেড়েক ভ্রমণের পথে কত যে ফ্লাইওভার দেখলাম, তা ভাবাই যায় না। পৌঁছে গেলাম রয়্যাল ক্লিফ হোটেলে। সমুদ্রসৈকতে অবস্থিত হোটেলটিকে আকারের দিক থেকে গ্রামও বলা যায়। অলিম্পিয়াডের আয়োজনে থাইদের আন্তরিকতা, আগ্রহ ও দৃঢ়তা দেখে অভিভূত হতে হয়, আমার দেখা আয়োজনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। থাকার ব্যবস্থা, খাওয়াদাওয়া, অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন ও গাম্ভীর্য—সবই অবাক হওয়ার মতো।
২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করলেন প্রধানমন্ত্রী আপিসিত ভেজ্জাজিওয়া আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিদ ও পৃষ্ঠপোষকদের অকৃপণ হস্তে স্বীকৃতিসূচক পুরস্কারও দিলেন। এত বড় অনুষ্ঠানকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নাগরিকদের জন্য স্মরণীয় রাখতে ১০ হাজার স্কুলছাত্রছাত্রীকে দাওয়াত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে। চুলালংকরণ, ক্যাসেটসাট, অ্যাজামপশনসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তৈরি সফটওয়্যারের ৩০-৪০টি স্টল রয়েছে।
এই মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জাপান, কোরিয়া কিংবা তাইওয়ানের বাঘা বাঘা সফটওয়্যার নির্মাতাকে দাওয়াত না করে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তৈরি সফটওয়্যার দেখাচ্ছে ৮০টি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশারদদের। শুধু তা-ই নয়, স্কুল-কলেজের ছাত্রদের দাওয়াত করে তাদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তাদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে অবদান রাখছে।
আমাদের দেশে ই-এশিয়া নামের একটি প্রোগ্রাম আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। তাতে একজন মার্কেটিং-গুরুকে আনতে নাকি দৈনিক ২০-২৫ হাজার ডলার করে দিতে হবে। তা ছাড়া সারা বিশ্ব থেকে বড় বড় সফটওয়্যার কোম্পানিকে নিয়ে আসতে পারলে নাকি আমাদের মানমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে (!?)। বিদেশের যেকোনো প্রদর্শনীতে একটি ক্ষুদ্র স্টল দিতেও নিশ্চয়ই আমাদের হাজার হাজার ডলার গুনতে হয়। দেশের এমন প্রোগ্রামে অবশ্যই আমাদের দক্ষতা, আমাদের সফটওয়্যার দেখানোই মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
বিদেশি সফটওয়্যারের মার্কেটিং নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন দেখি না। বরং বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংকল্প সামনে রেখে আমাদের তরুণদের সফটওয়্যার তৈরির প্রতিযোগিতায় নামিয়ে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করলে ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দযুগলের উচ্চারণ মানানসই হবে।
আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডে ৮০টির বেশি দেশের অংশগ্রহণ রয়েছে। কিন্তু সফটওয়্যারের প্রদর্শনীতে কিন্তু কেবল থাইল্যান্ডের তরুণদের তৈরি সফটওয়্যার প্রদর্শিত হলো। শুধু তা-ই নয়, ওই প্রদর্শনী দেখতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আসতেও কিছুটা বিলম্ব হলো। এযাবৎকালে আমাদের দেশের অগ্রগতিতে শুধু বিদেশি গুরু ও কনসালট্যান্টরা যে প্রশংসনীয় অবদান রাখতে পারেনি তা-ই নয়, বিদেশি অর্থায়নের কোনো প্রকল্প থেকেও আমাদের দুঃখী দেশ যে লাভবান হয়েছে, তার উদাহরণও মেলা ভার। এতে বাংলাদেশের স্বার্থের বিনিময়ে কিছু লোক উচ্চ বেতনে চাকরিই পায়, যা কেবল দেশের মুদ্রাস্ফীতিতেই অবদান রাখতে পারে।
এ পর্যন্ত আমাদের যা কিছু দেখানো হলো তা শুধু থাই, থাই আর থাই। নং নুচ গ্রীষ্মকালীন বাগান ভ্রমণে প্রতিটি স্থানে থাইল্যান্ডের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ঐতিহ্যগত থাই আতিথেয়তা সহজেই হূদয় কেড়ে নেয়। নিজেদের সংস্কৃতির ছোট-বড় সবকিছুরই এমন যত্নে উপস্থাপন দেখে মনে হয়, ‘কত রূপ স্নেহ করি/ দেশের কুকুর ধরি/ বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া’ কবিতাংশটি কোনো থাই কবিই লিখেছিলেন, আমাদের কেউ নয়।
আমাদের দেশপ্রেম জাগ্রত হোক, দেশের প্রতি মমত্ববোধ প্রতিষ্ঠিত হোক, দেশের মানুষের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধের সৃষ্টি হোক, দেশীয় পণ্য ব্যবহার আমাদের গর্বিত করুক, এই আশায় রইলাম।
মোহাম্মদ কায়কোবাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
No comments