বাঘের দাপুটে জয় by সাইদুজ্জামান
ক্রিকেট ইতিহাসের অনন্য দিন হয়ে থাকবে ১৬ মার্চ ২০১২। শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির শুভেচ্ছাবার্তায় ভাসতে ভাসতে কিনা ম্যাচশেষে দেশজুড়ে আরেকবার বাঘের গর্জন! ৪ বল বাকি থাকতে মাহমুদউল্লাহর ম্যাচ জেতানো শটে মিরপুরের বিস্ফোরণে শচীনের কীর্তি যেন নিছকই একটি 'ল্যান্ডমার্ক'।
ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেটের অসাধারণ জয়ে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের টিকে থাকাটাই প্রধান ক্রিকেটীয় আলোচনা। ম্যাচের পরপরই স্টেডিয়ামের সাউন্ড সিস্টেমে বেজে ওঠা 'জয় বাংলা বাংলার জয়'ই শুক্রবারের ক্রিকেট গণসংগীত!
বাংলাদেশ দলের এ জয়টাও তো গণসংগীতই। তামিম ইকবাল ও জহুরুল ইসলাম মিলে দ্বিতীয় উইকেটে গড়ে দেন ১১৩ রানের জুটি। তখনো মিরপুরের আলোচনায় ভালোমতোই আছেন টেন্ডুলকার। কিন্তু এরপর সাকিব আল হাসান আর নাসির হোসেনের ঝড়ের সঙ্গে মিরপুরের আকাশে উড়ে বেড়াতে থাকে বাংলাদেশের সম্ভাবনা। অবশ্য সে সম্ভাবনা মিলিয়ে যেতে বসেছিল টিভি আম্পায়ারের ভুলে। টিভি রিপ্লেতে পুরো দুনিয়া যখন নিশ্চিত যে মহেন্দ্র সিং ধোনি স্টাম্প ভাঙার আগেই পা ভেতরে নিয়ে এসেছিলেন সাকিব, তখন রুচিরা পালি্লয়াগুরুগে ভাবলেন উল্টোটা। অধিনায়কত্বের পুরো দায় মেটানো ইনিংসটা মুশফিকুর রহিম কাল না খেললে শচীনের সেঞ্চুরির দিনে সাকিবের ওই আউটটাই হয়ে থাকত 'কলঙ্ক'।
ক্রিজে এসেই রান-বলের অসম অঙ্কটা সহজ করে দেন মুশফিক। ১৮ বলে ৩৩ রান টি-টোয়েন্টির যুগে অসম্ভব নয়। তবে সদ্যই ক্রিজে আসা মুশফিক কতটা কী করতে পারবেন? কিন্তু ইরফান পাঠানের করা ৪৮তম ওভারে দুই ছক্কায় ১৭ রান তুলে সে সংশয় দূর করে দেন মুশফিক। পরের ওভারে প্রবীণ কুমারকে একটি করে বাউন্ডারি আর ছক্কায় তিনি জয়ের একেবারে কাছে নিয়ে যান দলকে, যে আনুষ্ঠানিকতা কাভার ড্রাইভে শেষ করেন মাহমুদউল্লাহ।
অথচ অনেক প্রশ্ন জাগিয়ে ম্যাচ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ব্যাটিং উইকেট, আবার রাতে শিশিরের ঝক্কি নেই জেনেও কেন টস জিতে আবারও ফিল্ডিং নিলেন মুশফিকুর রহিম? ব্যাটিং-স্বর্গে বড় ইনিংস গড়ে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করার 'ডিজিটাল' চিন্তার ব্যাখ্যা বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে প্রার্থনীয়। তবে ২২ বছরের অভিজ্ঞতায় এ সুবিধার পুরোটা নিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার। পেছনে সেঞ্চুরির জন্য এক বছরের অপেক্ষা আর প্রত্যাশার চাপে কেমন যেন কুঁকড়ে গিয়েছিলেন তিনি। ২২ বছরের ক্রিকেট-জীবনে কখনোই বিপক্ষ বোলারের প্রতি অসৌজন্যমূলক কিছু তো বলেনইনি, ব্যাটের ঔদ্ধত্যেও সীমা ছাড়াননি টেন্ডুলকার। যেন সেই শুরুর দিনের ক্রিকেট পাঠশালার ছাত্র তিনি; বোলার নয়, প্রতিটি বলের মান বুঝে খেলো। তবে প্রত্যাশার বেলুন সমপ্রতি সমালোচনার কাঁটায় ফুটো হয়েছে বলেই কি না, এখন বোলারদের প্রতি আরো বেশি 'শ্রদ্ধাশীল' টেন্ডুলকার। সমালোচকের কলমে যা বিদায়ের ঘণ্টা শুনতে পাওয়ার অস্বস্তি।
ভারতের দুর্বল বোলিং এবং টেন্ডুলকারকে ঘিরে মনস্তাত্তি্বক চাপই ছিল ভারত ম্যাচের আগে বাংলাদেশের প্রকৃত 'হোম অ্যাডভান্টেজ'। কারণ ঢাকার উইকেট ভারতীয়দের অচেনা নয়। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন-সৌরভ গাঙ্গুলীরা সরে গেলে টেন্ডুলকারের পোস্টার শোভা পায় অনেকের ঘরে। সে কারণেই বোলার সাকিব আল হাসানকে দেখেও পুরো গ্যালারিতে উন্মাদনা, 'শচীন', 'শচীন'। ইতিহাসগড়া সেঞ্চুরি থেকে তখন যে মাত্র ১ রান দূরে তিনি! ফাইন লেগে খেলে সেটা পূর্ণ হতে মিরপুর যেন মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে। অসামান্য নৈপুণ্য আর আবেগের স্রোতে দেশ-জাতীয়তার সীমারেখা ধুয়েমুছে সাফ। নইলে পাকিস্তানের সাবেক ওপেনার রমিজ কেন দাবি করবেন, 'শচীন আমাদের ক্রিকেটার'। ভারতীয় ইনিংস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডের পক্ষ থেকে টেন্ডুলকারকে অভিনন্দন-বার্তা পাঠিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। আর সেঞ্চুরির পর ছুটে গিয়ে টেন্ডুলকারকে মাশরাফির অভিনন্দন জানানোর দৃশ্য তো দেখেছেন সবাই।
কিন্তু টেন্ডুলকার যে সেঞ্চুরিটা করলেন ১৩৮ বলে! যা তাঁর করা ওয়ানডে শতরানগুলোর মাঝে মন্থরতায় দ্বিতীয়। অথচ তাঁর প্রথম চারটি স্কোরিং শটই বাউন্ডারির। সরকারিভাবে চাপের কথা স্বীকার করেন না টেন্ডুলকার। কিন্তু সেঞ্চুরির চাপ না থাকলে বাংলাদেশের সাদামাটা বোলিংকেও এমন অপরিসীম শ্রদ্ধা কেন দেখাবেন তিনি? কেন প্রায় অসম্ভব দেখেও প্রান্তবদলের চেষ্টা করবেন টেন্ডুলকার? একবার তো সরাসরি থ্রোটা লেগে গেলে আউটই হয়ে যেতেন তিনি। তবে ওই একবারই। তার আগে একবারও তিনি আফসোসের সুযোগ দেননি বাংলাদেশি বোলারদের। বরং দর্শক আফসোসে পুড়ল নিজ দলের নখদন্তহীন বোলিংয়ে। নিজের তৃতীয় ওভারেই গৌতম গম্ভীরকে বোল্ড করে হাসি ফুটিয়েছিলেন শফিউল। কিন্তু বাউন্ডারি আটকানোর চেষ্টায় বেমক্কা কাঁধে চোট পাওয়ায় তাঁর বাকি ৫ ওভার ব্যবহারের সুযোগ পাননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। আর এ ম্যাচেই টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির পাশে ছিল শাহাদাতের বেহিসাবি বোলিংয়ের সম্ভাবনা-বিষয়ক আলোচনা। টেন্ডুলকার সেঞ্চুরি করে ভক্তদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। ১০ ওভারে ৮১ রান দিয়ে শাহাদাত কী প্রভাব ফেলেছেন ঘরের দর্শকদের মনে, তা উহ্যই থাকল! দুর্ভাগ্য যে, কাল বোলিংয়ে বাজে দিন গেছে সাকিবেরও। ১০ ওভারে ৬৩ রানে কোনো উইকেট নেই বাঁহাতি এ স্পিনারের। অতি সতর্ক শচীনের একমাত্র ছক্কাটিও সাকিবের বলে লং অফের ওপর দিয়ে। তবে ব্যতিক্রম আবদুর রাজ্জাক। ১০ ওভারে ৪১ রানের সঙ্গে ভালো বোলিংয়ের স্বীকৃতি হিসেবে আছে বিরাট কোহলির উইকেটটি।
ভারতীয় ইনিংসের ভিতটা টেন্ডুলকারের সঙ্গে মিলে গড়েন কোহলিই। দ্বিতীয় উইকেটে এ দুজনের ১৪৮ রানের জুটির কারণে তোপ দাগার সুযোগটা পেয়ে যান সুরেশ রায়না। ৩৫ বলে ফিফটি করা এ বাঁহাতিকে চূড়ান্ত আক্রমণটা করতে দেননি মাশরাফি। শচীনের পরের বলেই রায়নার উইকেট হ্যাটট্রিকের সুযোগ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ককে। তা হয়নি। তবে ইনিংসের শেষভাগে এসে বেশি রান দিয়ে ফেলার দুর্নাম মুছে দেওয়ার সঙ্গে ২ উইকেট মিলিয়ে কাল বাংলাদেশের সেরা বোলার মাশরাফিই।
আর ম্যাচের সমালোচিত ঘটনা দুটি। ৬৬ রান করা কোহলিকে প্রথম বলেই ফিরে যেতে হতো, যদি তাঁর বিপক্ষে শফিউলের যৌক্তিক এলবিডাবি্লউর আবেদন নাকচ করে না দিতেন আম্পায়ার পল রেইফেল। তবে টেন্ডুলকারের রেকর্ড গড়া ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত ভুলটি করেছেন টিভি আম্পায়ার রুচিরা পালি্লয়াগুরুগে। সাকিবের ওটা আউট ছিল না- এ মত যে ভারত থেকে আসা সাংবাদিকদেরও!
অসাধারণ জয়ের আনন্দস্রোতে যে হতাশা আর ক্ষোভ ধুয়েমুছে সাফ! শচীন টেন্ডুলকারের কীর্তিও কেমন যেন ফিকে! ভারতের বিপক্ষে যা বাংলাদেশের তৃতীয় জয়। কোনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশিও বটে।
প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন : ক্রিকেট দলের প্রত্যেক সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সবাইকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। গণভবনে বসে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর বোন শেখ রেহানা খেলা দেখেন এবং খেলা শেষে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিল কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানান।
মুশফিক-সাকিবরা ভাসলেন উচ্ছ্বাস আবেগে
বাংলাদেশ দলের এ জয়টাও তো গণসংগীতই। তামিম ইকবাল ও জহুরুল ইসলাম মিলে দ্বিতীয় উইকেটে গড়ে দেন ১১৩ রানের জুটি। তখনো মিরপুরের আলোচনায় ভালোমতোই আছেন টেন্ডুলকার। কিন্তু এরপর সাকিব আল হাসান আর নাসির হোসেনের ঝড়ের সঙ্গে মিরপুরের আকাশে উড়ে বেড়াতে থাকে বাংলাদেশের সম্ভাবনা। অবশ্য সে সম্ভাবনা মিলিয়ে যেতে বসেছিল টিভি আম্পায়ারের ভুলে। টিভি রিপ্লেতে পুরো দুনিয়া যখন নিশ্চিত যে মহেন্দ্র সিং ধোনি স্টাম্প ভাঙার আগেই পা ভেতরে নিয়ে এসেছিলেন সাকিব, তখন রুচিরা পালি্লয়াগুরুগে ভাবলেন উল্টোটা। অধিনায়কত্বের পুরো দায় মেটানো ইনিংসটা মুশফিকুর রহিম কাল না খেললে শচীনের সেঞ্চুরির দিনে সাকিবের ওই আউটটাই হয়ে থাকত 'কলঙ্ক'।
ক্রিজে এসেই রান-বলের অসম অঙ্কটা সহজ করে দেন মুশফিক। ১৮ বলে ৩৩ রান টি-টোয়েন্টির যুগে অসম্ভব নয়। তবে সদ্যই ক্রিজে আসা মুশফিক কতটা কী করতে পারবেন? কিন্তু ইরফান পাঠানের করা ৪৮তম ওভারে দুই ছক্কায় ১৭ রান তুলে সে সংশয় দূর করে দেন মুশফিক। পরের ওভারে প্রবীণ কুমারকে একটি করে বাউন্ডারি আর ছক্কায় তিনি জয়ের একেবারে কাছে নিয়ে যান দলকে, যে আনুষ্ঠানিকতা কাভার ড্রাইভে শেষ করেন মাহমুদউল্লাহ।
অথচ অনেক প্রশ্ন জাগিয়ে ম্যাচ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ব্যাটিং উইকেট, আবার রাতে শিশিরের ঝক্কি নেই জেনেও কেন টস জিতে আবারও ফিল্ডিং নিলেন মুশফিকুর রহিম? ব্যাটিং-স্বর্গে বড় ইনিংস গড়ে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করার 'ডিজিটাল' চিন্তার ব্যাখ্যা বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে প্রার্থনীয়। তবে ২২ বছরের অভিজ্ঞতায় এ সুবিধার পুরোটা নিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার। পেছনে সেঞ্চুরির জন্য এক বছরের অপেক্ষা আর প্রত্যাশার চাপে কেমন যেন কুঁকড়ে গিয়েছিলেন তিনি। ২২ বছরের ক্রিকেট-জীবনে কখনোই বিপক্ষ বোলারের প্রতি অসৌজন্যমূলক কিছু তো বলেনইনি, ব্যাটের ঔদ্ধত্যেও সীমা ছাড়াননি টেন্ডুলকার। যেন সেই শুরুর দিনের ক্রিকেট পাঠশালার ছাত্র তিনি; বোলার নয়, প্রতিটি বলের মান বুঝে খেলো। তবে প্রত্যাশার বেলুন সমপ্রতি সমালোচনার কাঁটায় ফুটো হয়েছে বলেই কি না, এখন বোলারদের প্রতি আরো বেশি 'শ্রদ্ধাশীল' টেন্ডুলকার। সমালোচকের কলমে যা বিদায়ের ঘণ্টা শুনতে পাওয়ার অস্বস্তি।
ভারতের দুর্বল বোলিং এবং টেন্ডুলকারকে ঘিরে মনস্তাত্তি্বক চাপই ছিল ভারত ম্যাচের আগে বাংলাদেশের প্রকৃত 'হোম অ্যাডভান্টেজ'। কারণ ঢাকার উইকেট ভারতীয়দের অচেনা নয়। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন-সৌরভ গাঙ্গুলীরা সরে গেলে টেন্ডুলকারের পোস্টার শোভা পায় অনেকের ঘরে। সে কারণেই বোলার সাকিব আল হাসানকে দেখেও পুরো গ্যালারিতে উন্মাদনা, 'শচীন', 'শচীন'। ইতিহাসগড়া সেঞ্চুরি থেকে তখন যে মাত্র ১ রান দূরে তিনি! ফাইন লেগে খেলে সেটা পূর্ণ হতে মিরপুর যেন মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে। অসামান্য নৈপুণ্য আর আবেগের স্রোতে দেশ-জাতীয়তার সীমারেখা ধুয়েমুছে সাফ। নইলে পাকিস্তানের সাবেক ওপেনার রমিজ কেন দাবি করবেন, 'শচীন আমাদের ক্রিকেটার'। ভারতীয় ইনিংস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডের পক্ষ থেকে টেন্ডুলকারকে অভিনন্দন-বার্তা পাঠিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। আর সেঞ্চুরির পর ছুটে গিয়ে টেন্ডুলকারকে মাশরাফির অভিনন্দন জানানোর দৃশ্য তো দেখেছেন সবাই।
কিন্তু টেন্ডুলকার যে সেঞ্চুরিটা করলেন ১৩৮ বলে! যা তাঁর করা ওয়ানডে শতরানগুলোর মাঝে মন্থরতায় দ্বিতীয়। অথচ তাঁর প্রথম চারটি স্কোরিং শটই বাউন্ডারির। সরকারিভাবে চাপের কথা স্বীকার করেন না টেন্ডুলকার। কিন্তু সেঞ্চুরির চাপ না থাকলে বাংলাদেশের সাদামাটা বোলিংকেও এমন অপরিসীম শ্রদ্ধা কেন দেখাবেন তিনি? কেন প্রায় অসম্ভব দেখেও প্রান্তবদলের চেষ্টা করবেন টেন্ডুলকার? একবার তো সরাসরি থ্রোটা লেগে গেলে আউটই হয়ে যেতেন তিনি। তবে ওই একবারই। তার আগে একবারও তিনি আফসোসের সুযোগ দেননি বাংলাদেশি বোলারদের। বরং দর্শক আফসোসে পুড়ল নিজ দলের নখদন্তহীন বোলিংয়ে। নিজের তৃতীয় ওভারেই গৌতম গম্ভীরকে বোল্ড করে হাসি ফুটিয়েছিলেন শফিউল। কিন্তু বাউন্ডারি আটকানোর চেষ্টায় বেমক্কা কাঁধে চোট পাওয়ায় তাঁর বাকি ৫ ওভার ব্যবহারের সুযোগ পাননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। আর এ ম্যাচেই টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির পাশে ছিল শাহাদাতের বেহিসাবি বোলিংয়ের সম্ভাবনা-বিষয়ক আলোচনা। টেন্ডুলকার সেঞ্চুরি করে ভক্তদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। ১০ ওভারে ৮১ রান দিয়ে শাহাদাত কী প্রভাব ফেলেছেন ঘরের দর্শকদের মনে, তা উহ্যই থাকল! দুর্ভাগ্য যে, কাল বোলিংয়ে বাজে দিন গেছে সাকিবেরও। ১০ ওভারে ৬৩ রানে কোনো উইকেট নেই বাঁহাতি এ স্পিনারের। অতি সতর্ক শচীনের একমাত্র ছক্কাটিও সাকিবের বলে লং অফের ওপর দিয়ে। তবে ব্যতিক্রম আবদুর রাজ্জাক। ১০ ওভারে ৪১ রানের সঙ্গে ভালো বোলিংয়ের স্বীকৃতি হিসেবে আছে বিরাট কোহলির উইকেটটি।
ভারতীয় ইনিংসের ভিতটা টেন্ডুলকারের সঙ্গে মিলে গড়েন কোহলিই। দ্বিতীয় উইকেটে এ দুজনের ১৪৮ রানের জুটির কারণে তোপ দাগার সুযোগটা পেয়ে যান সুরেশ রায়না। ৩৫ বলে ফিফটি করা এ বাঁহাতিকে চূড়ান্ত আক্রমণটা করতে দেননি মাশরাফি। শচীনের পরের বলেই রায়নার উইকেট হ্যাটট্রিকের সুযোগ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ককে। তা হয়নি। তবে ইনিংসের শেষভাগে এসে বেশি রান দিয়ে ফেলার দুর্নাম মুছে দেওয়ার সঙ্গে ২ উইকেট মিলিয়ে কাল বাংলাদেশের সেরা বোলার মাশরাফিই।
আর ম্যাচের সমালোচিত ঘটনা দুটি। ৬৬ রান করা কোহলিকে প্রথম বলেই ফিরে যেতে হতো, যদি তাঁর বিপক্ষে শফিউলের যৌক্তিক এলবিডাবি্লউর আবেদন নাকচ করে না দিতেন আম্পায়ার পল রেইফেল। তবে টেন্ডুলকারের রেকর্ড গড়া ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত ভুলটি করেছেন টিভি আম্পায়ার রুচিরা পালি্লয়াগুরুগে। সাকিবের ওটা আউট ছিল না- এ মত যে ভারত থেকে আসা সাংবাদিকদেরও!
অসাধারণ জয়ের আনন্দস্রোতে যে হতাশা আর ক্ষোভ ধুয়েমুছে সাফ! শচীন টেন্ডুলকারের কীর্তিও কেমন যেন ফিকে! ভারতের বিপক্ষে যা বাংলাদেশের তৃতীয় জয়। কোনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশিও বটে।
প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন : ক্রিকেট দলের প্রত্যেক সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সবাইকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। গণভবনে বসে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর বোন শেখ রেহানা খেলা দেখেন এবং খেলা শেষে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিল কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানান।
মুশফিক-সাকিবরা ভাসলেন উচ্ছ্বাস আবেগে
No comments